X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

নির্বাচন কমিশন সরকারি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে: রিজভী

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
১৬ নভেম্বর ২০১৮, ১৩:০৮আপডেট : ১৬ নভেম্বর ২০১৮, ১৩:২০

রুহুল কবির রিজভী (ফাইল ছবি) সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হওয়া সত্ত্বেও নির্বাচন কমিশন সরকারি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, ‘বিগত ৫ জানুয়ারির মতো আরেকটি একতরফা ও প্রহসনমূলক নির্বাচন আয়োজনের দিকে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনে সরকারি দলকে বিশেষ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে, তবে বিরোধী দলকে আইন অনুযায়ী প্রাপ্য সুবিধাও দেওয়া হচ্ছে না।’ শুক্রবার (১৬ নভেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন তিনি।

রিজভী অভিযোগ করেন, ‘আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে সরকারি দলের লোকজনদের অবাধ বিচরণ ঘটছে। নির্বাচন ভবনটি আওয়ামী লীগের অফিসে পরিণত হয়েছে। আওয়ামী লীগের নির্দেশেই পরিচালিত হচ্ছে কমিশনের কয়েকজন কর্মকর্তা। সরকারের নির্দেশ প্রতিফলনের জন্য নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়মিত নির্বাচন ভবনে আসা-যাওয়া করছেন আওয়ামী লীগের নির্বাচনবিষয়ক উপকমিটির সদস্য মুস্তাফিজুর রহমান বাবলা।’

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘২০১৭ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কোচেয়ারম্যান এইচ টি ইমামের নেতৃত্বে ২১ সদস্যের প্রতিনিধি দলের যে সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছিল, সেই প্রতিনিধি দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন মুস্তাফিজুর রহমান বাবলা। এরপর সর্বশেষ গত ৭ নভেম্বর ও ১৪ নভেম্বর দুদফা আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলের সদস্য হিসেবে নির্বাচন কমিশনে যান বাবলা। তিনি নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের ভয়-ভীতি দেখিয়ে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে থাকেন। বাবলার ভয়ে তটস্থ থাকেন কমিশনের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তারা। গোপনে তথ্য না দিলে তাদের সরকারবিরোধী লোক বলে অভিযুক্ত করে বদলিসহ নানা ধরণের হুমকি-ধামকি দিয়ে থাকেন। গত এক দেড় বছরে এ ধরণের অসংখ্য ঘটনা নির্বাচন কমিশনের নজরে আনা হলেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।’

রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালউদ্দিন আহমদ নানাভাবে বাবলাদের সাহায্য সহযোগিতা করে থাকেন। বাবলা অনুমতি ছাড়াই অবাধে কমিশনের কর্মকর্তাদের কক্ষে যাতায়াত করেন। ইসির গোপনীয় তথ্য আওয়ামী লীগের অফিসে পাচার করে থাকেন। নির্বাচন কমিশন থেকেও তাকে দেওয়া হয় বিশেষ ধরনের সুবিধা। তবে কমিশনের কিছু সরকারি সুবিধাভোগী কর্মকর্তাদের সঙ্গে রয়েছে তার বিশেষ সখ্যতা। আমাদের কাছে এ ধরণের তথ্য প্রমাণ রয়েছে। বিশেষ করে নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার যুগ্ম সচিব ফরহাদ আহমেদ খানের সঙ্গে তার সম্পর্ক খুবই ভালো। এই ফরহাদ আহমেদ খান সরকারের বিশেষ সুবিধাভোগী।’

বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, ‘বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে হামলার আগের দিন পুলিশের আইজিকে রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ে সভা-সমাবেশ বন্ধের নির্দেশ দিয়ে যে চিঠি দেওয়া হয়েছিল সেই চিঠিতে স্বাক্ষরকারী এই ফরহাদ আহমেদ খান। ফরহাদ ও বাবলা যৌথভাবে ইসি ও সরকারে নানা ধরনের এজেন্ডা বাস্তবায়নে লিপ্ত। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদেরকে স্মার্ট পরিচয়পত্র নির্বাচন কমিশন থেকে সংগ্রহ করে দেন বাবলা।’

রুহুল কবীর রিজভী বলেন, ‘নির্বাচনি তফসিল ঘোষণা করা হলেও এখনও পর্যন্ত মন্ত্রী-এমপিরা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানসহ নানা অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছেন, বক্তব্য রাখছেন, কিন্তু এখনও পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনও প্রকার আচরণবিধি তৈরি হয়নি। পুরো নির্বাচন ব্যবস্থায় জগাখিচুড়ি অবস্থা বিরাজ করছে। নির্বাচনি আচরণবিধি প্রতিপালন না ঘটিয়ে বরং সরকারবিরোধীদের নানাভাবে কোণঠাসা করা হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘সরকারের আচরণবিধি ভঙ্গ করলেও নির্বাচন কমিশন থেকে কোনও ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। বরং নির্বাচন কমিশনকে নানাভাবে ব্যবহার করছে সরকার। নির্বাচন কমিশন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হলেও আজ সরকারি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। কমিশনে বাবলার অবাধ বিচরণই সেটির প্রমাণ। সময় থাকতে আপনারা পরিবর্তন হন, তা না হলে জনগণ আপনাদের অবৈধ কর্মকাণ্ডের দাঁতভাঙা জবাব দেবে।’

রিজভী বলেন, ‘গত পরশুদিন বিএনপির নয়াপল্টনস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতা ও তাদের সঙ্গে আসা বিপুল সংখ্যক কর্মীদের উপস্থিতি ছিল শান্তিপূর্ণ। শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থানরত নেতাকর্মীদের ওপর পরিকল্পিতভাবে পুলিশ ও আওয়ামী ক্যাডারদের সহিংস আক্রমণ ও নাশকতার ঘটনাকে ভিন্ন খাতে নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে সরকার। এজন্য নিজেদের অপকর্ম ঢাকতে গতকাল (বৃহস্পতিবার) বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট নিপুণ রায় এবং জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সহসাধারণ সম্পাদক আরিফা সুলতানা রুমাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এর আগের দিন মনোনয়নপ্রত্যাশীসহ বিভিন্ন জেলা থেকে আসা ৬৮ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এদের মধ্যে ৩৮ জনকে পাঁচদিন করে পুলিশি রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘পুলিশের কতিপয় কর্মকর্তার আচরণ ও বিভিন্ন দফতরে দৌড়ঝাঁপ দেখে মনে হচ্ছে, আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করতে নির্বাচন ইজারা নিয়েছেন তারা। এসব দলবাজ পুলিশ কর্মকর্তাদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিতে হবে। নিপুণ রায় এবং আরিফা সুলতানা রুমাকে গ্রেফতারের ঘটনায় আমি তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে তাদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি করছি।’

বিএনপির এই সিনিয়র নেতা আরও বলেন, ‘গতরাতে জাতীয়তাবাদী যুবদল ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি রফিকুল আলম মজনুর বাসভবনে পুলিশ তল্লাশির নামে ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়েছে। মজনুকে বাসায় না পেয়ে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে অশালীন আচরণ করা হয়েছে। এছাড়াও দেশব্যাপী বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে তল্লাশির নামে পুলিশের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড অব্যাহত আছে। আমি পুলিশের এই ন্যাক্কারজনক ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

 

 

 

/এসটিএস/আইএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
একসঙ্গে ইফতার করলেন ছাত্রলীগ-ছাত্রদলসহ সব ছাত্রসংগঠনের নেতারা
একসঙ্গে ইফতার করলেন ছাত্রলীগ-ছাত্রদলসহ সব ছাত্রসংগঠনের নেতারা
শনিবার সকালে আবার অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা বুয়েট শিক্ষার্থীদের
শনিবার সকালে আবার অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা বুয়েট শিক্ষার্থীদের
ইসরায়েল যা যা অস্ত্র চেয়েছিল সব পায়নি: মার্কিন সেনাপ্রধান
ইসরায়েল যা যা অস্ত্র চেয়েছিল সব পায়নি: মার্কিন সেনাপ্রধান
ছুটির দিনে নিউ মার্কেটে জনসমুদ্র
ছুটির দিনে নিউ মার্কেটে জনসমুদ্র
সর্বাধিক পঠিত
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
বাড়লো ব্রয়লার মুরগির দাম, কারণ জানেন না কেউ
বাড়লো ব্রয়লার মুরগির দাম, কারণ জানেন না কেউ
‘ভারতের কঠোর অবস্থানের কারণেই পিটার হাস গা ঢাকা দিয়েছেন’
‘ভারতের কঠোর অবস্থানের কারণেই পিটার হাস গা ঢাকা দিয়েছেন’
২৪ ঘণ্টার মধ্যে মেট্রোরেল লাইনের ওপর থেকে ক্যাবল সরানোর অনুরোধ
২৪ ঘণ্টার মধ্যে মেট্রোরেল লাইনের ওপর থেকে ক্যাবল সরানোর অনুরোধ