X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

খালেদা জিয়াসহ বিএনপির ৭ নেতার নির্বাচনের পথ বন্ধ

বাহাউদ্দিন ইমরান
২৮ নভেম্বর ২০১৮, ২০:৫৪আপডেট : ২৮ নভেম্বর ২০১৮, ২০:৫৬

 

৮ ফেব্রুয়ারি রায়ের পর আদালতে খালেদা জিয়া ফৌজদারি অপরাধে দুই বছর বা তারও বেশি সাজা হলে ওই ব্যক্তি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না বলে হাইকোর্ট পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন। এছাড়া সাজার রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিল বিচারাধীন থাকলেও দণ্ডিত ব্যক্তি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। হাইকোর্টের ওই পর্যবেক্ষণ দেশের সর্বোচ্চ আদালত আপিল বিভাগেও বহাল রাখা হয়েছে। এতে বিচারিক আদালতে দণ্ডপ্রাপ্তদের আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পথ বন্ধ হয়েছে। আইনজীবীরা জানিয়েছেন, হাইকোর্টের সিদ্ধান্ত আপিল বিভাগে বহাল থাকায় দুর্নীতির দুই মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ তার দলের সাত শীর্ষ নেতাও নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ হারিয়েছেন।

নির্বাচনে অংশ নিতে সাজা স্থগিত চেয়ে গত ২২ নভেম্বর খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য ওয়াদুদ ভূঁইয়া ও ঝিনাইদহ-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মো. আব্দুল ওহাব হাইকোর্টে পৃথক দুই আবেদন করেন। এরপর দুর্নীতির মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উলাহ আমান, বিএনপি সমর্থিত চিকিৎসকদের নেতা ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন ও ঝিনাইদহ-২-এর সাবেক সংসদ সদস্য ও ঝিনাইদহ বিএনপির সভাপতি  মো. মশিউর রহমান দণ্ড স্থগিত চেয়ে হাইকোর্টে আরও তিন আবেদন করেন।

ওই ৫ আবেদনের ওপর শুনানি শেষে গত ২৭ নভেম্বর বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ পর্যবেক্ষণসহ বিএনপির পাঁচ নেতার জামিন স্থগিতের আবেদন খারিজ করে দেন।

হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চ মামলার পর্যবেক্ষণে বলেন, ‘আসামিদের পক্ষে ফৌজদারী কার্যবিধির ৪২৬ ধারায় দণ্ড স্থগিত চেয়ে আবেদন করেছিল। কিন্তু আদালত বলেছেন, যে ধারায় (ফৌজদারি কার্যবিধির ৪২৬ ধারা) আবেদনগুলো করা হয়েছে, সে ধারায় সাজা স্থগিতের কোনও বিধান নেই।’

রায় ঘোষণাকালে আদালত তার পর্যবেক্ষণে বলেন, বিচারিক আদালতের সাজার রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে (হাইকোর্ট) দণ্ড স্থগিত না হলে বা আপিল চলাকালে, কোনও ব্যক্তি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। তবে যদি হাইকোর্ট আসামির দণ্ড স্থগিত করেও থাকেন, তবু কোনও লাভ হবে না। কেননা, দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তির নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে সংবিধানে বাধা রয়েছে। যেহেতু সংবিধানে বাধা আছে, সেহেতু অন্য কোনও আইনে দণ্ড স্থগিত হলেও কোনও লাভ হবে না।

হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণে আরও বলা হয়, আপিল চলার সময় সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। আপিল পেন্ডিং থাকলে সাজা স্থগিত হয় না। সে কারণে সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তি নির্বাচন করতে পারবে না। তবে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে দণ্ড স্থগিত কিংবা বাতিল হলে ওই ব্যক্তির নির্বাচনে অংশ নিতে কোনও বাধা থাকবে না।

তবে হাইকোর্টের ওই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন জানান বিএনপি সমর্থিত চিকিৎসকদের নেতা ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন। বুধবার (২৮ নভেম্বর) তার আবেদনটির ওপর শুনানি নিয়ে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ নো অর্ডার (কোনও আদেশ নয়) দেন। এর ফলে হাইকোর্ট বিভাগ তার দণ্ড স্থগিতের বিষয়ে পর্যবেক্ষণসহ যে আদেশ দিয়েছিলেন তা বহাল থাকছে।

ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেনের আইনজীবী ব্যারিস্টার খায়রুল আলম চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে দণ্ড স্থগিত চেয়ে আপিল করা হলে আপিল বিভাগ নো অর্ডার দেন। এর ফলে এজেডএম জাহিদ হোসেনের সাজা স্থগিতের বিষয়ে সব আইনি প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে গেলো। তবে তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন কিনা সে বিষয়টি এখন রিটার্নিং অফিসারের ওপর নির্ভর করছে।

অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ‘হাইকোর্টের আদেশের পর আজ পাচঁজনের মধ্যে একজন (ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন) আপিলে আবেদন নিয়ে গেছে। সব পক্ষকে শুনে আপিল বিভাগ কোনও রকম দণ্ড স্থগিত করেননি, কোন আদেশ (নো অর্ডার) প্রদান করেননি। ফলে হাইকোর্ট বিভাগের আদেশটি আপিলে বহাল আছে। আর যেহেতু ডা. জাহিদের আবেদনের বিষয়ে আপিল বিভাগ কোনও আদেশ দেননি, সুতরাং অন্য আসামিদের ব্যাপারেও একই আদেশ হবে বলে আমরা ধরে নিতে পারি।’

এদিকে, দুর্নীতির দুই মামলায় খালেদা জিয়ার আপিল প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এছাড়া, স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলামের আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেছেন হাইকোর্ট। কিন্তু হাইকোর্টের আদেশের ফলে চূড়ান্তভাবে খালেদা জিয়ার দণ্ড বাতিল না হওয়া এবং ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়ার আপিলে খালাস না পাওয়া পর্যন্ত তারাও নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না বলে মনে করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান।

মাহবুবে আলম বলেন, ‘আপিল বিভাগের আদেশের ফলে বিচারিক আদালতে দণ্ডপ্রাপ্ত অন্য আসামিদের মতো খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রেও আদেশটি প্রযোজ্য হবে। এ কারণে এবারের নির্বাচনে তার অংশ গ্রহণের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। কারণ, আদালতের আদেশ সবার জন্য প্রযোজ্য। ’ তিনি আরও বলেন, ‘নৈতিক স্খলনজনিত কারণে যদি কারও অন্যূন দুই বছরও সাজা হয়, তবে তিনি নির্বাচন করতে পারবেন না। আবার তিনি যদি আপিলে মুক্তি লাভ করেন অর্থাৎ তিনি যদি ওই মামলায় খালাস পান, তবু নির্বাচনে অংশ নিতে হলে তাকে মুক্ত হওয়ার পর পাচঁ বছর অপেক্ষা করতে হবে।’

আপিলে মুক্তির পর নির্বাচনে অংশ নিতে প্রার্থীকে কতদিন অপেক্ষা করতে হবে তা জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ‘আপিলে দণ্ড বাতিল করে মুক্তির দিন কিংবা সাজাভোগ শেষে মুক্তির দিন থেকে সময় গণনা শুরু হবে। দণ্ড বাতিল কিংবা কারাভোগ শেষ হওয়ার দিন থেকে তাকে নির্বাচনের জন্য পাঁচ বছর অপেক্ষা করতে হবে।’

/এমএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ভ্যাটেই মিলবে রাজস্ব, অথচ ভ্যাট বাড়াতে অনীহা
ভ্যাটেই মিলবে রাজস্ব, অথচ ভ্যাট বাড়াতে অনীহা
বাংলাদেশে দক্ষতা উন্নয়নে বিনিয়োগের ফল দৃশ্যমান হচ্ছে
গ্লোবাল স্কিলস ফোরামে বক্তারাবাংলাদেশে দক্ষতা উন্নয়নে বিনিয়োগের ফল দৃশ্যমান হচ্ছে
ভারতের লোকসভা নির্বাচনে দ্বিতীয় দফার ভোট কাল
ভারতের লোকসভা নির্বাচনে দ্বিতীয় দফার ভোট কাল
তীব্র গরমে পানি চাইতে চাইতেই ট্রাফিক পুলিশের মৃত্যু
তীব্র গরমে পানি চাইতে চাইতেই ট্রাফিক পুলিশের মৃত্যু
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা