X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

যে কারণে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন বিএনপির তিন নেতা

সালমান তারেক শাকিল ও আদিত্য রিমন
২৮ নভেম্বর ২০১৮, ২৩:১১আপডেট : ২৮ নভেম্বর ২০১৮, ২৩:৩০

আবদুল আউয়াল মিন্টু, মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ও হাবিবুন নবী খান সোহেল আকস্মিকভাবেই নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ তিন নেতা।  তারা হলেন—দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, যুগ্ম মহাসচিব হাবিবুন নবী খান সোহেল ও  মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল। দৃশ্যত তারা প্রত্যেকেই নির্বাচন না করার যুক্তি হিসেবে, দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার কথা বললেও কার্যত ভিন্ন কারণ রয়েছে বলে মনে করছেন দলটির বিভিন্ন স্তরের নেতারা। 

বুধবার রাতে বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে বিএনপির কয়েক স্তরের নেতাকর্মীদের কথা হয়। তাদের মতে, মূলত নির্বাচনি আসনকেন্দ্রিক জটিলতার কারণে তারা নির্বাচনে অনীহা প্রকাশ করে মনোনয়নপত্র দাখিল করেননি। বিএনপির চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইং সদস্য শায়রুল কবির খান তাদের মনোনয়নপত্র দাখিল না করার বিষয়টি নিশ্চিত করলেও কারণ জানাতে পারেননি। তিনি বলেন, ‘তাদের নির্বাচন না করার কারণ আমার জানা নেই।’

বিএনপির সিনিয়র কয়েকজন নেতার ভাষ্য, একাদশ জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত এসেছে দলের হাইকমান্ড থেকে। জেল থেকে খালেদা জিয়ার পরিষ্কার বার্তা এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সরাসরি তত্ত্বাবধানে নির্বাচন কার্যক্রম পরিচালনা করছে বিএনপি।

বুধবার সন্ধ্যার দিকে বিএনপির তিনজন গুরুত্বপূর্ণ নেতার নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার বিষয়টি দলের ভেতরে ও বাইরে আলোচনা তৈরি করে। পরে নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মূলত আসন জটিলতার কারণেই তিন নেতার প্রস্থান। যদিও তারা প্রকাশ্যে বলছেন, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে নির্বাচনের বাইরে রেখে তারা নির্বাচন করবেন না। সেক্ষেত্রে তৃণমূলে ভুলবার্তা যেতে পারে, এমন শঙ্কা রয়েছে নেতাদের। অন্যদিকে হাইকমান্ডের নির্দেশনাও অমান্য করা হচ্ছে।  

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘তারা কী কারণ বলছেন, জানি না। তবে বিএনপি নির্বাচনে গেছে কারাবন্দি চেয়ারপারসন ও লন্ডনে অবস্থানরত ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সরাসরি নির্দেশনায়। এক্ষেত্রে তাদের বাইরে রেখে নির্বাচনে না যাওয়ার বক্তব্য এসে থাকলে তা সত্য নয়।’

বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান ও উপদেষ্টাদের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বরিশাল-৫ (সদর) আসন থেকে মনোনয়ন চেয়েছিলেন। কিন্তু দল থেকে তাকে বরিশাল-২ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। এই কারণে তিনি মনক্ষুণ্ন হন।

ঢাকা ৮ থেকে নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন হাবিবুন নবী খান সোহেল। কিন্তু তাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল ঢাকা-৯ আসন থেকে। আর ঢাকা-৮ আসন থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে। হয়তো এই কারণে তিনি নির্বাচন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এছাড়া নির্বাচনের আগে তার মুক্তি পাওয়া নিয়েও সন্দেহ আছে।

আরেকটি সূত্র জানায়, আবদুল আউয়াল মিন্টু বিএনপির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির অন্যতম সদস্য। আর সারাদেশে ২৩০ থেকে ২৪০টি আসনে বিএনপির প্রার্থী নির্বাচন করবে, সেখানে তাদের যে টাকা-পয়সার খরচ হবে তার দেখভাল করতে হবে নির্বাচন পরিচালনা কমিটিকে। এই কারণে আবদুল আউয়াল মিন্টু নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন।

বিএনপির দায়িত্বশীল একটি সূত্রের দাবি, একটি প্রভাবশালী মহল আবদুল আউয়াল মিন্টুকে নির্বাচন করতে নিষেধ করেছে। যদিও আরেকটি সূত্রের ভাষ্য, মিন্টু ঋণখেলাপি হয়ে থাকতে পারেন। যদিও এ তথ্যের যাচাই করা সম্ভব হয়নি। যদিও বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্যের ভাষ্য, আবদুল আউয়াল মিন্টু ঋণখেলাপি হয়ে থাকতে পারেন। সে কারণেই হয়তো সরে দাঁড়িয়েছেন। এ বিষয়ে আবদুল মিন্টুকে অসংখ্যবার ফোন করা হলেও রিসিভ করেননি।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘তারা কেউ নির্বাচন না করার ঘোষণা দিয়েছেন, এই বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে তাদের এই ঘোষণা বিএনপির মধ্যে কোন প্রভাব পড়বে না। সারাদেশে বিএনপির নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ আছে দলের যেকোনও সিদ্ধান্ত মেনে নিতে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এক আসনে বিএনপি একাধিক প্রার্থী দিয়েছে। বিভিন্ন কারণে কেউ যদি বাদ পড়ে বা নির্বাচন করেত না চায়, তাহলে সেখানে বিকল্প প্রার্থী নির্বাচন করবে।’

বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী বলেন, ‘দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আন্দোলনের অংশ হিসেবে বিএনপি নির্বাচনে যাচ্ছে। ফলে তাদের এই সিদ্ধান্তে দলের মধ্যে কোনও প্রভাব পড়বে না। হয়তো কোনও টেকনিক্যাল কারণে তারা নির্বাচন করছে না।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য বলেছেন, ‘মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল প্রথমে চেয়েছিলেন মোহাম্মদপুরের আসনটি। পরে বরিশাল সদর চান। সেখানে দেওয়া যাচ্ছে না, কারণ সেখানে মজিবুর রহমান সরোয়ার আছেন। তাকে বাদ দেওয়া যাবে না। ঢাকার মোহাম্মদপুরের আসনে তাকে প্রার্থী করা হলে তিনি বিজয়ী হতেন। আবদুল আউয়াল মিন্টু ফেনী থেকে করার কথা থাকলেও সে করেনি কেন বলা যাচ্ছে না।’  তবে সোহেলের আসন নিয়ে গোলমাল আছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

উল্লেখ্য, গত ৮ নভেম্বর নির্বাচন কমিশন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে। এর চারদিনের মাথায় ইসি নির্বাচন একসপ্তাহ পিছিয়ে পুনঃতফসিল দেয়। তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ সময় ২৮ নভেম্বর। প্রার্থিতা বাছাই ২ ডিসেম্বর। মনোয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ সময় ৯ ডিসেম্বর। আর ভোট গ্রহণ করা হবে ৩০ ডিসেম্বর।

 

/এমএনএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
২৪ ঘণ্টার মধ্যে মেট্রোরেল লাইনের ওপর থেকে ক্যাবল সরানোর অনুরোধ
২৪ ঘণ্টার মধ্যে মেট্রোরেল লাইনের ওপর থেকে ক্যাবল সরানোর অনুরোধ
ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ‘জেনোসাইড কর্নার’ বন্ধ থাকায় সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রীর অসন্তোষ
ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ‘জেনোসাইড কর্নার’ বন্ধ থাকায় সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রীর অসন্তোষ
ইতিহাস বিকৃত করে বিএনপি সফল হয়নি, এখন আবোল-তাবোল বলছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
ইতিহাস বিকৃত করে বিএনপি সফল হয়নি, এখন আবোল-তাবোল বলছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
শাহীনকে সরিয়ে বাবরকে নেতৃত্বে ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে পিসিবি!
শাহীনকে সরিয়ে বাবরকে নেতৃত্বে ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে পিসিবি!
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়