বিজয়ের এই মাসে জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে পাকিস্তান দূতাবাস কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ জনমনে প্রশ্নের সঞ্চার করে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান। রবিবার (৯ ডিসেম্বর) দুপুরে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
আব্দুর রহমান বলেন, ‘একটি রাষ্ট্রের সঙ্গে আরেকটি রাষ্ট্রের কূটনৈতিক সম্পর্কের কারণে দূতাবাসে যাতায়াত থাকতে পারে। তবে বিজয়ের এই মাসে আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে পাকিস্তান দূতাবাসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ জনমনে প্রশ্নের সঞ্চার করে। একদিকে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত লন্ডনে তারেক রহমানের সঙ্গে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই’র গোপন বৈঠক, অন্যদিকে পাকিস্তানি দূতাবাসে মির্জা ফখরুলের সাক্ষাৎ ও গোপন বৈঠক ষড়যন্ত্রের আভাস দেয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘দুই বৈঠক একই সূত্রে গাঁথা। সেই জায়গা থেকে আমরা মনে করি, এই সাক্ষাৎ আসন্ন নির্বাচন বানচালে ষড়যন্ত্রের অংশ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার রাজনীতিকে বিনষ্ট করার দুরভিসন্ধি।’
বিএনপি কার্যালয়ে হামলা ও ভাঙচুর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘গতকাল (শনিবার) ও আজকে বিএনপির মনোনয়ন বাণিজ্য নিয়ে সারাদেশে তাদের নেতাকর্মীরা যে সন্ত্রাস ও অগ্নিকাণ্ড চালাচ্ছে, তারই অংশ হিসেবে আমরা দেখতে পাই বিএনপির গুলশান ও পল্টন কার্যালয়ে ভাঙচুর। এই হামলা কেবল আসন্ন নির্বাচনের পরিবেশকেই বিঘ্নিত করে না, গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির সুষ্ঠু ধারাকেও ব্যাহত করে।’
এ ধরনের আচরণ সামাজিক পরিবেশ নষ্ট করে উল্লেখপূর্বক আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ‘আদর্শ বিবর্জিত একটি দলের প্রধান যখন দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত হয় এবং দলের গুরুত্বপূর্ণ কর্ণধার দুর্নীতির দায়ে যখন পালিয়ে বিদেশে অবস্থান করে, তখন বিএনপি নেতাকর্মীদের এ ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের আস্ফালন শুধু রাজনৈতিক পরিবেশকে নয়, সামাজিক পরিবেশকেও বিনষ্ট করে।’
বিএনপি একটি করপোরেট সংস্থা দাবি করে আব্দুর রহমান বলেন, ‘ইতোমধ্যে গণমাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি বিএনপি মনোনয়ন নিয়ে কী ধরনের বাণিজ্য করেছে। একটি রাজনৈতিক দলের মনোনয়ন নিয়ে এ ধরনের বাণিজ্য হতে পারে না। এটা থেকে বোঝা যায়, বিএনপি কোনও রাজনৈতিক দল না, বরং একটি করপোরেট সংস্থা।’
জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির গাঁটছড়া সম্পর্ক দাবি করে আব্দুর রহমান বলেন, ‘মনোনয়ন বাণিজ্যের পরিপ্রেক্ষিতেই বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীদের বিক্ষোভ এবং এর মাধ্যমে দলের নেতৃত্বের ওপর আস্থাহীনতার প্রকাশ পায়। এমন মনোনয়ন বাণিজ্যের নেতৃত্বে আছেন মির্জা ফখরুল ও রুহুল কবির রিজভী, যার নেপথ্যের নায়ক সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি তারেক রহমান। একটি নীতিভ্রষ্ট, দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনৈতিক দলের কাছে দেশের জনগণ এর বেশি কিছু প্রত্যাশা করতে পারে না বলে মনে করি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা বারবার বলে এসেছি, বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের জোট কোনও রাজনৈতিক জোট নয়, বরং এটা আদর্শিক। বিএনপির প্রধান শরিক ঐক্যফ্রন্ট নয়, জামায়াত। গতকাল (শনিবার, ৮ ডিসেম্বর) মনোনয়ন ভাগাভাগির মধ্য দিয়েই আবারও সেটা প্রমাণিত হয়েছে। আপনারা ইতোমধ্যে জানতে পেয়েছেন, শরিক হিসেবে জামায়াত আসন পেয়েছে ২৩টি এবং ঐক্যফ্রন্ট পেয়েছে ১৭টি। এর মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয় জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির গাঁটছড়া সম্পর্ক, যা অবিচ্ছেদ্য।’
আওয়ামী লীগের শরিক জাতীয় পার্টি কতগুলো আসন পাচ্ছে, জানতে চাইলে আব্দুর রহমান বলেন, ‘আজকে মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন। এ বিষয়টি আমরা পরিষ্কার করতে পারবো আজ বিকাল নাগাদ। এ ব্যাপারটা জানার জন্য আরও কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে।’
কত আসনে জাতীয় পার্টির সঙ্গে মীমাংসা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে আনুমানিক কিছু সংবাদ মাধ্যমে বলা উচিত হবে না। আমরা আশা করি সন্তোষজনক একটি মীমাংসা হবে।’
আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘যে কয়জন বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন, আমাদের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দুই থেকে তিনজন বাকি আছেন মনোনয়ন প্রত্যাহারে। আমরা আশা করছি বাকিগুলো আজকে প্রত্যাহার হয়ে যাবে। আমাদের দলীয় প্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার খোলা চিঠির আহ্বানে সবাই সাড়া দিয়েছেন। যে দু-একজন বাকি আছেন, তাদের সঙ্গেও যোগাযোগের চেষ্টা চলছে। আমরা আশা করছি তারাও প্রত্যাহার করে নেবেন। আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কোনও বিদ্রোহী প্রার্থী থাকবে না।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের আরেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, আহমদ হোসেন, আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম, তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী প্রমুখ।