X
মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪
৩১ বৈশাখ ১৪৩১

বিএনপিতে এখন গণভাটা চলছে: ওবায়দুল কাদের

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
১২ ডিসেম্বর ২০১৮, ১৬:০০আপডেট : ১২ ডিসেম্বর ২০১৮, ১৬:৪৯

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন ওবায়দুল কাদের বিএনপির গণজোয়ার নেই দাবি করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপিতে এখন গণভাটা চলছে। বুধবার (১২ ডিসেম্বর) দুপুরে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের নির্বাচনি প্রচারণা সভায় এ মন্তব্য করেন তিনি।

কাদের বলেন, ‘আমি গত তিন-চারদিন ঢাকায় ছিলাম না। ফেনী, কুমিল্লা এবং আমার নির্বাচনি এলাকায় গিয়েছি। আমি শুধু আপনাদের এতটুকু বলতে পারি, যা সত্য নয় তা প্রচার করে লাভ নেই। ৩০ তারিখ তো আমরা চাপা দিতে পারবো না। যখন ফলাফল বের হবে তখনই বোঝা যাবে। এবার প্রচারণায় গিয়ে এরকম জনস্রোত আমি এর আগে কখনও নৌকার পক্ষে দেখিনি। এটা আসলেই গণজোয়ার।’

তিনি বলেন, ‘এই যে মওদুদ আহমদ সাহেব বড় বড় কথা বলেন, তিনি গত পাঁচ বছরেও তার নির্বাচনি এলাকায় যাননি। এখন নির্বাচনের কারণে তিনি যাচ্ছেন—এজন্য তাকে স্বাগত জানাই। প্রতিপক্ষ শক্তিশালী না হলে তো নির্বাচন জমবে না। প্রতিদ্বন্দ্বিতা জমতে হবে, না হলে নির্বাচন কিসের। উনি কিন্তু জমাতে পারছেন না, বিএনপির ভাঙা হাট কোথাও জমছে না। নোয়াখালী-কুমিল্লা এলাকায় কোনও প্রার্থী এখন পর্যন্ত মাঠে নেই, কিন্তু তারা বলছে গণজোয়ার। আমার কাছে বিষয়টি বড় হাস্যকর মনে হয়। এটা গণজোয়ার না, এটা গণভাটা। বিএনপিতে এখন গণভাটা চলছে। জোয়ারের মুখ গত ১০ বছরেও বিএনপি দেখেনি, এমনকি ছোট ঢেউ কোথাও কেউ লক্ষ করেনি। এর আগে মওদুদ সাহেব কতবার বলেছেন চেহারা পাল্টে যাবে।’

বিএনপির রাজনীতি দিন দিন সংকুচিত হচ্ছে দাবি করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘গতকাল (১১ ডিসেম্বর) মওদুদ আহমদ প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছেন। আমি বিভিন্নজনকে জিজ্ঞেস করে জানতে পেরেছি, তার জনসভার লোকসংখ্যা ১৫শ’ থেকে ২ হাজার। এটা যদি গণজোয়ার হয়, তাহলে গণজোয়ার কাকে বলে আমি জানি না। নির্বাচনি প্রচারণায় যাওয়ার সময় তাদের হাতে লাঠিসোঁটা ককটেল এগুলো থাকে। এসবের বেধড়ক ব্যবহার করে আমাদের কিছু কর্মীকে আহত করেছে। এরপরে জনগণের প্রতিরোধের মুখে তিনি উপজেলায় একটি সভা-সমাবেশও করতে পারেননি। গণজোয়ার থাকলে তিনি জনগণের প্রতিরোধ ভেঙে সভাস্থলে পৌঁছাতে পারতেন। তিনি এত বড়মাপের নেতা যে, তার সভাস্থল থেকে তিন কিলোমিটার দূরে একটি চায়ের দোকানে বসে সাত-আটজন নিয়ে সভা করেন। নেতিবাচক জনপ্রিয়তার কারণে বিএনপির রাজনীতি দিন দিন সংকুচিত হচ্ছে।’

আওয়ামী লীগের প্রচারণা সভা বিএনপিকে শান্তিপূর্ণ পথে আসার আহ্বান জানিয়ে কাদের বলেন, ‘৫০ শতাংশ সুষ্ঠু ভোট কেন বলছেন, শতভাগ সুষ্ঠু ভোট হবে। আর সেই ভোটে আপনারা যে মুসলিম লীগের কাছাকাছি চলে গেছেন, সেটা পরিষ্কার হয়ে যাবে। আমি মির্জা ফখরুলের মতো সংখ্যাতত্ত্বের হিসাব করি না। আপনারা নির্বাচনে থাকুন, আপনারা সরবেন না। আপনাদের শেষ পর্যন্ত থাকা দরকার। আপনাদের জনপ্রিয়তা কতটুকু সেটা ৩০ তারিখে জনগণ বুঝিয়ে দেবে। সেটা দেখার জন্য হলেও আপনাদের থাকা উচিত। কেউ কেউ মতলবে আছেন, একসময় এই অজুহাত, ওই অজুহাত দিয়ে বলবেন—নির্বাচনের পরিবেশ নেই। হারা যে কত শোচনীয় হারা হবে, সেটা আপনারা টের পাবেন। বহু আসনে ২০০৮ সাল থেকেও খারাপ অবস্থা হবে। আপনাদের সেই শোচনীয় পরাজয়ের জন্য অপেক্ষা করুন, শান্তিপূর্ণ পথে আসুন। নিজেরা গোলমাল করে আওয়ামী লীগের ঘাড়ে দোষ দেবেন না। আজকে রাজনীতি কোথায় গেছে? কামাল হোসেন সাহেব তারেক জিয়ার নির্দেশে চলেন। মোস্তফা মহসিন মন্টু, মান্না এদের মতো নেতা আজ তারেক জিয়ার নাটাইয়ের টানে চলে, লন্ডন থেকে রশি টানে, আর লন্ডন থেকে রশি ছাড়ে।’

বিএনপি দেখছে যে তাদের ভাঙাহাট জমছে না উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপির নির্বাচনের হাট ভেঙে গেছে। আন্দোলনের হাট অনেক আগেই ভেঙে গেছে। আমি সড়ক পথে ফেনী থেকে নোয়াখালী গিয়েছি, ধানের শীষের একটি স্লোগানও শুনিনি। তারা নির্বাচন করবে তাদের একটা প্রার্থীও মাঠে নেই। আর মাঠে থাকবে কেন? মনোনয়নের জন্য টাকা দিয়েছে, সেই টাকা পাচ্ছে না। এখন তারা কখনও ফখরুলের অফিস ভাঙে, কখনও তারা খালেদা জিয়ার গুলশানের কার্যালয়ে ভাঙচুর চালায়। আবার কখনও নয়াপল্টন অফিসে তালা ঝুলিয়ে দেয়, কখনও গুলশান অফিসে তালা ঝুলিয়ে দেয়।’

মিডিয়া কর্মীদের সচেতন হওয়ার পরামর্শ জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘ঠাকুরগাঁওয়ে ফখরুলের কর্মীরা বিক্ষোভ করেছে কোনও কোনও মিডিয়া প্রচার করেছে, অথচ আমাদের দুই কর্মী নৃশংসভাবে নিহত হলো, সেই খবর কোনও মিডিয়ায় নেই। দুঃখের সঙ্গে বলছি—আপনারা কেন আমাদের সঙ্গে এই ব্যবহারটা করছেন? একটা দল হিসেবে আমরা তো অতিরিক্ত কিছু চাইছি না। আমাদের দুজন কর্মীকে যে নৃশংসভাবে হত্যা করা হলো, সেটা এত বড় কোনও নিউজ না, হেডলাইন হলো ফখরুল। অথচ ফখরুলের গাড়ির একটি কাঁচও ভাঙেনি। আমাদের আওয়ামী লীগের অফিস ভেঙে তছনছ করে দিয়েছে, সে খবর কোথাও নেই। মিডিয়ার একাংশ আমাদের বিরুদ্ধে ক্রমাগত ক্যাম্পিং করছে। মনে হচ্ছে তারাই ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র। মনে হচ্ছে তারাই বিএনপির কাগজ। বাংলাদেশের বহুল প্রচারিত মিডিয়ার একটি অংশ দলের হয়ে মাঠে নেমেছে। তাদের মনে রাখা উচিত, তাদের মিথ্যাচারে বাংলাদেশের জনগণ বিভ্রান্ত হবে না। ফখরুল হয়েছে তাদের শিরোনাম, দুটি মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড তাদের শিরোনাম হতে পারেনি।’

আওয়ামী লীগের প্রচারণা সভায় ওবায়দুল কাদের ওবায়দুল কাদের বালেন, ‘জামায়াতে ইসলামীর কায়দায় তারা আজকে প্রচারণা চালাচ্ছে। বড় বড় লাঠির সঙ্গে জাতীয় পতাকা ব্যবহার করেছে। আজকে তারা লাঠির সঙ্গে পতাকা ব্যবহার করছে এবং সেটাকে প্লাকার্ড হিসেবে ব্যবহার করছে। আজকে বিকালে এইচটি ইমাম সাহেব নির্বাচন কমিশনে যাবেন এ বিষয়ে অভিযোগ জানাতে। তারা ধানের শীষের নিচে ধামা-চাপাতি ব্যবহার করছে। এটা পুলিশ সেখানে লক্ষ করেছে, এটা নির্বাচন কমিশনকে জানানো উচিত।’

পল্টনের নারকীয় তাণ্ডব তারা এখনও চালাচ্ছে দাবি করে কাদের বলেন, ‘পল্টনে যে নারকীয় তাণ্ডব তারা শুরু করেছিল, সেটা এখনও তারা চালাচ্ছে। আওয়ামী লীগের এক কর্মীকে পাঁচবালিয়া ইউনিয়নে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে। হানিফ নামের যুবলীগের এক কর্মীকে প্রথমে চোখের মধ্যে মরিচের গুঁড়া দিয়েছে, এরপর ইট দিয়ে মাথা থেঁতলে দিয়েছে, এরপর গুলি করে তাকে স্পটে হত্যা করেছে। এ ধরনের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বিএনপি আবারও প্রমাণ করলো তারা সন্ত্রাসী দল। গতকালকে (মঙ্গলবার) যে দুটি হত্যাকাণ্ড হয়েছে সে দুটি হত্যাকাণ্ড বিএনপি করেছে। এটার প্রমাণ আমাদের হাতে আছে, এটা কোনও সাজানো বানানো কথা নয়। এরপরও আজকে আপনারা বলছেন সারাদেশে অত্যাচার নিপীড়ন চলছে।’

আওয়ামী লীগের প্রচারণা সভা বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের অভিযোগের জবাবে কাদের বলেন, ‘মওদুদ সাহেব অভিযোগ করেছেন— আমি নাকি সরকারি সুযোগ-সুবিধা ও প্রটোকল ব্যবহার করে নির্বাচনি প্রচারণা চালাচ্ছি। এখানে সাংবাদিকরা প্রত্যক্ষ করেছেন, আমার জনসভায় কমপক্ষে লোক হয়েছে ৭০ হাজার আর মওদুদ সাহেব যে জনসভায় যেতে পারেননি, তিনি সেখানে পথে পথে সহিংসতা চালিয়েছেন। কাজেই এখন গণভাটাকে গণজোয়ার বলছে বিএনপি। কাজেই আমি চ্যালেঞ্জ করে বলছি—আমি কোনও সরকারি গাড়ি ব্যবহার করি না। আমার সঙ্গে একজন মন্ত্রী হিসেবে ও একটি দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে যে নিরাপত্তা প্রহরী থাকার কথা, সেই হিসাবে আমার সঙ্গে কিছু পুলিশ থাকে। নির্বাচনি এলাকায় প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে আমার গাড়ির পতাকা নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমি আবারও চ্যালেঞ্জ করে বলছি— এ গাড়ি সরকারি গাড়ি নয়। মওদুদ সাহেবের সঙ্গেও পুলিশ আছে, এটা তার নিরাপত্তার জন্য। তিনি মিথ্যাচার করছেন, জনগণ সাড়া দিচ্ছে না। তিনি ভেবেছিলেন তার নির্বাচনি এলাকায় গেলে হাজার হাজার জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে নেমে আসবেন।’

সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান এইচটি ইমাম, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, উপ-সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, উপ-দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া। তারকাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন— শমী কায়সার, শাকিল খান, তানভীন সুইটি, অরুণা বিশ্বাস, শাহরিয়ার নাজিম জয়, রোকেয়া প্রাচী, শুভ্র দেব, ব্যবসায়ী নেতা আতিকুল ইসলাম আতিক প্রমুখ।

ছবি: নাসিরুল ইসলাম

/এসও/এপিএইচ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ডিআইইউ’তে বুধবার জেএমসি মিডিয়া বাজের পঞ্চম আসর
ডিআইইউ’তে বুধবার জেএমসি মিডিয়া বাজের পঞ্চম আসর
কোহলির রেকর্ড ভেঙে পাকিস্তানকে সিরিজ জেতালেন বাবর
কোহলির রেকর্ড ভেঙে পাকিস্তানকে সিরিজ জেতালেন বাবর
প্রার্থীর অভিযোগে পাল্টানো হলো নির্বাচন কর্মকর্তা
প্রার্থীর অভিযোগে পাল্টানো হলো নির্বাচন কর্মকর্তা
অ্যান্টার্কটিকায় তেলের বিশাল ভাণ্ডার পেয়েছে রাশিয়া?
অ্যান্টার্কটিকায় তেলের বিশাল ভাণ্ডার পেয়েছে রাশিয়া?
সর্বাধিক পঠিত
শুক্রবারও চলবে মেট্রোরেল
শুক্রবারও চলবে মেট্রোরেল
শেখ হাসিনার তিন গুরুত্বপূর্ণ সফর: প্রস্তুতি নিচ্ছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
শেখ হাসিনার তিন গুরুত্বপূর্ণ সফর: প্রস্তুতি নিচ্ছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
সজনে পাতা খেলে মিলবে এই ১২ উপকারিতা
সজনে পাতা খেলে মিলবে এই ১২ উপকারিতা
রংপুরের চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে অভিযোগ
রংপুরের চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে অভিযোগ
সাকিব-তামিমের কারণে দলের পরিবেশ নষ্ট হয়েছে: ইমরুল 
সাকিব-তামিমের কারণে দলের পরিবেশ নষ্ট হয়েছে: ইমরুল