আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জোট তাদের ইশতেহার প্রকাশ করছে। এরই মধ্যে অনেকে ইশতেহার চূড়ান্ত করেছে, অনেকে প্রকাশের তারিখও ঘোষণা করেছে। তবে ধর্মভিত্তিক দলগুলোর এ ব্যাপারে তেমন কোনও আগ্রহ নেই। ব্যতিক্রম কেবল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। দলটি ইশতেহার প্রকাশের তারিখ নির্ধারণ করেছে।
নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করলে রাজনৈতিক দলগুলো কী কী করবে, সে ব্যাপারে মূলত প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে তারা ইশতেহারে। তাই ইশতেহারকে ভোটারদের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর একধরনের লিখিত চুক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আগামী ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় নির্বাচনকে সামনে রেখে ইশেতেহার নিয়ে ভোটারদের মধ্যেও রয়েছে বিশেষ আগ্রহ।
আজ শুক্রবার (১৪ ডিসেম্বর) এইচ এম এরশাদের জাতীয় পার্টি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে তাদের ইশতেহার ঘোষণা করেছে। ১৭ ডিসেম্বর ইশতেহার প্রকাশ করবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। পৃথকভাবে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটও প্রকাশ করবে ইশতেহার। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ আগামী ১৮ ডিসেম্বর তাদের ইশতেহার প্রকাশ করবে। অন্যদিকে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী দলগুলোর মধ্যে সবার আগে গত ১ ডিসেম্বর ইশতেহার প্রকাশ করেছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি—সিপিবি।
ইশতেহার তৈরির জন্য এসব দল গঠন করেছিল আলাদা কমিটি। দলের রাজনৈতিক মতাদর্শ, ভিশন, লক্ষ্য ইত্যাদি সামনে রেখে প্রণয়ন করা হয়েছে তাদের ইশতেহার।
তবে ধর্মভিত্তিক দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে কথা বলে ইশতেহার নিয়ে তাদের মধ্যে কোনও আগ্রহ দেখা যায়নি। কোনও কোনও দলের নেতার বক্তব্যে আভাস পাওয়া গেছে, বড় রাজনৈতিক দলের ইশতেহার অনুকরণের। তবে ইসলামী আন্দোলন ইশতেহার প্রণয়নে গঠন করেছে তিন সদস্যের কমিটি। চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন এ দলটি ছাড়া এখন পর্যন্ত কোনও ধর্মভিত্তিক দল ইশতেহার প্রকাশের তারিখ চূড়ান্ত করতে পারেনি।
ইশতেহার প্রসঙ্গে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ইশতেহার নিয়ে এখন কোনও কিছু চূড়ান্ত নয়। আমরা এখন ভাবছি, কী করা যায়।’
ইশতেহার প্রণয়নে কোনও কমিটি করেনি ইসলামী ঐক্যজোট। দলটির চেয়ারম্যান মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের বিভিন্ন সময়ে অনেক দাবি ছিল, সেগুলোই দলের মূল লক্ষ্য। এছাড়া, ইসলামি দল হিসেবে আমাদের প্রধান লক্ষ্য দেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করা। সেসব বিষয় নিয়ে হয়তো একটি ইশতেহার হতে পারে।’ তবে কবে নাগাদ ইশতেহার প্রকাশ হতে পারে তা জানাতে পারেননি মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী।
২০ দলীয় জোটভুক্ত ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম কোনও ইশতেহার প্রকাশ করছে না। এপ্রসঙ্গে দলটির প্রচার সম্পাদক মাওলানা জয়নুল আবেদীন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘২০ দলের ইশতেহারই আমাদের ইশতেহার, আমরা নিজেরা আলাদা কোনও ইশতেহার করছি না।’
তবে ২০ দলীয় জোটভুক্ত আরেকটি দল খেলাফত মজলিস দলীয় ইশতেহার প্রকাশের প্রস্তুতি নিচ্ছে। দলটির যুগ্ম মহাসচিব শেখ গোলাম আসগর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, “আমরা দলের দুইজন ২০ দলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে ‘ধানের শীষ’ নিয়ে নির্বাচন করছেন। তাই জোটের ইশতেহারই আমাদের ইশতেহার। কিন্তু আমাদের দলের নিজস্ব ১০ জন প্রার্থী আছেন, তারা খেলাফত মজলিসের দলীয় প্রতীক ‘দেওয়াল ঘড়ি’ নিয়ে নির্বাচনে লড়বেন। তাই আমরা একটি ইশতেহার করছি। তবে এখনও চূড়ান্ত হয়নি কবে প্রকাশ করা হবে।”
ইশতেহারের বিষয়বস্তু প্রসঙ্গে শেখ গোলাম আসগর বলেন, ‘কর্মসংস্থানের বিষয়টি প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, ইসলামি দল হিসেবে ধর্ম অববমানার জন্য ব্লাসফেমি আইনসহ অন্যান্য বিষয়গুলো থাকবে।’
নির্বাচনে ৯৩টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে জাকের পার্টি। তবে ইশতেহারের নিয়ে কোনও তথ্য জানাতে পারেনি দলটি। জাকের পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তফা আমীর ফয়সলের প্রেস সেক্রেটারি শামীম হায়দার বলেন, ‘ইশতেহার নিয়ে এখনও চূড়ান্ত কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। যদি হয়, পরে আমরা জানাতে পারবো।’
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এককভাবে সবচেয়ে বেশি প্রার্থী দিয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। ২৯৮ আসনে লড়বে দলটির প্রার্থীরা। দলের ইশতেহার নিয়েও গঠিত হয়েছে একটি কমিটি। আগামী ১৮ ডিসেম্বর ইশতেহার প্রকাশের সম্ভাব্য তারিখও নির্ধারণ করা হয়েছে।
ইসলামী আন্দোলনের ইশতেহার প্রণয়ন কমিটির প্রধান ও দলের রাজনৈতিক উপদেষ্টা আশরাফ আলী আকন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা মানুষকে মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে ক্ষমতা দখলের রাজনীতি করি না। ইসলামি আদর্শে বিশ্বাস করি। দেশের উন্নয়নের বড় বাধা দুর্নীতি, তাই দুর্নীতি প্রতিরোধ আমাদের মূল লক্ষ্য। এ বিষয়টি ইশতেহারে থাকবে। এছাড়া কর্মসংস্থান, শিক্ষা, কৃষি খাতের উন্নয়নের বিষয়গুলোও থাকবে।’
