X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

মরে গেলেও ভোট বর্জন করবো না: ড. কামাল হোসেন

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
১৭ ডিসেম্বর ২০১৮, ১৭:১৩আপডেট : ১৭ ডিসেম্বর ২০১৮, ১৯:৩৬

নির্বাচন কমিশনে ড. কামাল হোসেনসহ ঐক্যফ্রন্টের নেতারা মরে গেলেও ভোট বর্জন করবেন না বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম প্রধান নেতা ড. কামাল হোসেন। সোমবার ( ১৭ ডিসেম্বর) নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ মন্তব্য করেন। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী ও সমর্থকদের দেশের বিভিন্ন স্থানে নির্বাচনি প্রচারে বাধা দেওয়া, গ্রেফতার, পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা ইত্যাদি অভিযোগ নিয়ে আজ দুপুর দুইটায় ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ১৩ সদস্যের প্রতিনিধি দল নির্বাচন কমিশনে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য যান। সেখানে বিকাল ৪টা পর্যন্ত বৈঠকে এসব সমস্যা একদিনের মধ্যে সমাধানের জন্য নির্বাচন কমিশনের কাছে দাবি জানান তারা।

নির্বচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ড. কামাল হোসেন বলেন, সরকার যদি বুদ্ধি খাটিয়ে এরকম একটি পরিস্থিতি সৃষ্টি করে যে আমরা নির্বাচন বর্জন করবো তো বলে দিচ্ছি তা তারা পারবে না। মরে গেলেও আমরা ভোট বর্জন করবো না। আমার লাশ নিয়ে নির্বাচন কমিশনে ভোট দিতে যাবেন। আমার আঙুল দিয়ে টিপ দেবেন। নির্বাচন হতে হবে। তারা যদি চায় এ ধরনের জঘন্য ধরনের আক্রমণ করবে আর আমরা আবেগের চোটে বলবো নির্বাচন করবো না। আমরা তা বলবো না। আমার লাশও বলবে না।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের এই অন্যতম প্রধান নেতা বলেন, আমরা নির্বাচন কমিশনকে তথ্য দিয়ে বিস্তারিতভাবে জানিয়েছি যে সারা দেশের সব জায়গায় একই ধরনের অভিযোগ পেয়েছি পেশি শক্তি নিয়ে প্রার্থী ও তাদের কর্মীদের ওপর আক্রমণ হচ্ছে। কেউ পোস্টার লাগাতে পারছেন না। বক্তব্য দিতে পারছেন না। একটি ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করা হচ্ছে। যারা নির্বাচন করতে এগিয়ে এসেছে তাদের নিরুৎসাহিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

ঘটনাগুলোকে ভয়াবহ আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, নির্বাচনের বিষয়ে আমার ৫৫ বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে। আমি ১৯৭০ সালে বঙ্গবন্ধুর নির্বাচনি এজেন্ট ছিলাম। তখন থেকে এ পর্যন্ত ভালোমন্দ সব নির্বাচনই দেখেছি। কিন্তু এই অবস্থা কোনদিনই দেখিনি। যে জঘন্য ঘটনাগুলো ঘটছে এ ব্যাপারে উনারা (ইসি) কিছু কিছু বিষয়ে বিব্রতবোধের কথা বলেছেন। কিন্তু বিব্রতবোধ করা তো যথেষ্ট নয়। এর বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। আমরা ঘটনার কার্যকর পদক্ষেপ চাই। প্রতিকার চাই।
তিনি বলেন, ইসিকে আমরা বলেছি এখনই এই বিষয়ে তদন্ত চান (করান), একদিনের মধ্যে রিপোর্ট দেন। তারপর পদক্ষেপগুলো নেন, যাতে সবাই বুঝতে পারে কমিশন এই সকল পরিস্থিতি থেকে সমাজ ও দেশকে মুক্ত করতে চায়। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ন্যূনতম পরিবেশ আমরা পাই।
এখন সব ক্ষমতাই কমিশনের হাতে। সরকার এখন রুটিন ওয়ার্কের বাইরে কোনও ক্ষমতা পালন করতে পারে না।
ড. কামাল হোসেন আরও বলেন, কমিশনের কাছে জানতে চেয়েছিলাম, ঢাকা শহরে কেবল একদলের পোস্টার। অন্য কোনও দলের পোস্টার আপনারা দেখেছেন কি না। দেখে থাকলে আমাকে ফোন করে বলবেন। আমি নিজে গিয়ে দেখে আসবো। এই ধরনের পরিস্থিতি আমি জীবনেও দেখিনি। শুধু একদলের পোস্টার থাকে। অন্য দলের নামগন্ধ থাকে না। প্রার্থীরা মাঠে নামার সময় তাদের ওপর যেভাবে আক্রমণ হয়েছে তা বর্বরোচিত।
তিনি বলেন, বেঁচে যতদিন থাকবো এই কথাগুলো মানুষের সামনে বলবো। প্রতিকার দাবি করবো। যাতে জনগণের যে ভোটাধিকার। সরকার নির্বাচিত করার ক্ষমতা একাত্তরের লাখো শহীদেরা দিয়ে গেছেন তা থেকে জনগণকে যেন বঞ্চিত করা না হয়।
তিনি বলেন, এখন যে প্রক্রিয়া চলছে তাতে জনগণকে ভোটাধিকার প্রয়োগ থেকে বঞ্চিত করার অপচেষ্টা অব্যাহত। এটা দ্রুত বন্ধ করতে হবে।
ইসির ব্যবস্থা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কমিশন বলছে তদন্ত করছে। কিন্তু এই তদন্ত দু’একদিনের মধ্যে হওয়া উচিত। এই তদন্ত ৩০ তারিখের পরে করে কোনও অর্থ হবে না। একদিনের মধ্যে রিপোর্ট চেয়ে পরশুর মধ্যে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া উচিত বলে মনে করি। দুইদিনের মধ্যে আমরা দেখতে চাই কিছু অ্যাকশন হচ্ছে। না হলে তো আমাদের প্রত্যেক দিন বসে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
বার বার অভিযোগ দেওয়ার পরও প্রতিকার হচ্ছে না কেন? এমন প্রশ্নে জবাবে তিনি বলেন, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু প্রয়োগ কেন করছে না তা আপনারা (সাংবাদিকরা) উনাদের জিজ্ঞেস করেন।
নির্বাচন সুষ্ঠু করতে কমিশনকে বাধ্য করতে পারবেন কী না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চেষ্টা করতেছি। চেষ্টা করতে থাকবো। আমাদের দেশের মানুষের ওপর ভরসা আছে। আপনাদের (গণমাধ্যম) ওপর ভরসা আছে।
এদিকে লিখিত বক্তব্যে ঐক্যফ্রন্ট বলেছে গ্রেফতার হয়রানি বন্ধে সরকারের ‍উচ্চ পর্যায় ও নির্বাচন কমিশনের প্রতিশ্রুতির বিন্দুমাত্র প্রতিফলন নির্বাচনি মাঠে দৃশ্যমান হচ্ছে না। উল্টো তফসিল ঘোষণার পর থেকে গ্রেফতার হয়রানি, প্রচার-প্রচারণার বাধা প্রদান, নেতৃবৃন্দ ও প্রার্থীদের ওপর পুলিশি ও আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী হামলা, প্রার্থীদের গ্রেফতার, আদালতের মাধ্যমে প্রার্থিতা স্থগিতসহ নানা প্রতিবন্ধকতায় নির্বাচনি মাঠ আমাদের জন্য অত্যন্ত প্রতিকূল ও সমস্যাসংকুল করে তোলা হচ্ছে। মির্জা ফখরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত ওই লিখিত বক্তব্যে ড. কামাল হোসেনসহ ঐক্যজোটের ৩০ জন নেতার ওপর হামলা ও প্রচারে বাধা দেওয়ার অভিযোগ তোলা হয়। চিঠিতে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য তাদের অভিযোগের বিষয়ে জরুরি ভিত্তিতে কার্যকর ও দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানানো হয়। না হলে ‘প্রশ্নবিদ্ধ ও বিতর্কিত‘ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সকল দায়-দায়িত্ব ইসির ওপর বর্তাবে।
বৈঠকে ঐক্যফ্রন্টের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী, জেএসডি সভাপতি আ স ম রব, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, ২০ দলীয় জোটের সমন্বয়ক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, বিএনপির স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য ড. মঈন খান, গণফোরামের মহাসচিব মোস্তফা মহসিন মন্টু, গণস্বাস্থ্যকেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী প্রমুখ।

অন্যদিকে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদাসহ বৈঠকে অন্যান্য কমিশনার ও নির্বাচন কমিশন সচিব উপস্থিত ছিলেন।

/ইএইচএস/টিএন/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
মিয়ানমার থেকে চোরাই পথে আসা ৫ টন কফি পাউডার জব্দ
মিয়ানমার থেকে চোরাই পথে আসা ৫ টন কফি পাউডার জব্দ
শিশুকে পালাক্রমে ধর্ষণের অভিযোগে ৪ কিশোর সংশোধনাগারে
শিশুকে পালাক্রমে ধর্ষণের অভিযোগে ৪ কিশোর সংশোধনাগারে
পাঞ্জাবের আশুতোষের ঝড়ও যথেষ্ট হলো না, মুম্বাইয়ের তৃতীয় জয়
পাঞ্জাবের আশুতোষের ঝড়ও যথেষ্ট হলো না, মুম্বাইয়ের তৃতীয় জয়
কানের সমান্তরাল বিভাগে ঢাকার দুই নির্মাতার স্বল্পদৈর্ঘ্য
কানের সমান্তরাল বিভাগে ঢাকার দুই নির্মাতার স্বল্পদৈর্ঘ্য
সর্বাধিক পঠিত
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন