একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ‘কলঙ্কিত’ নির্বাচন বলে দাবি করেছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। জোটের প্রার্থীরা ভোটের চিত্র তুলে ধরতে জনগণের কাছে যাবেন তারা। এছাড়া, রাজপথে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায় করা হবে বলেও জানিয়েছেন বাম জোটের নেতারা।
শুক্রবার (১১ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে ‘ভোট ডাকাতি, জবর দখল ও অনিয়মের নানা চিত্র’ শীর্ষক দিনব্যাপী গণশুনানিতে বাম জোটের নেতারা এসব কথা বলেন। এবারের নির্বাচনে ১৩১টি আসনে বাম জোটের ১৪৭ জন প্রার্থী অংশ নেন। এরমধ্যে ৮২ জন প্রার্থী গণশুনানি অনুষ্ঠানে নিজ নিজ নির্বাচনি এলাকার ভোটের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন।
সকাল ১০টায় বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক মো. শাহ আলমের বক্তব্য দিয়ে গণশুনানি শুরু হয়ে সন্ধ্যা ৬টায় শেষ হয়।
সমাপনী বক্তব্যে শাহ আলম বলেন, ‘গত ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন নিয়ে অনেক অভিযোগ রয়েছে। এটি নজিরবিহীন একটি ভুয়া ভোটের নির্বাচন। আমাদের প্রার্থীদের বর্ণনায় ভোট চুরির চিত্র ফুটে উঠেছে। তারা এসব নিয়ে জনগণের কাছে যাবেন। সামাজিক ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। এর মাধ্যমে রাজপথে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায় করা হবে।’
ঢাকা-১২ আসন থেকে কোদাল মার্কায় নির্বাচনে অংশ নেওয়া গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘নির্বাচনের আগের দিন রাতেই কেন্দ্রভেদে ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ ব্যালট পেপারে সিল মেরে বাক্স ভরে ফেলা হয়। সকালে বিভিন্ন কেন্দ্র ঘুরে দেখেছি— কেন্দ্রে ভোটারের উপস্থিতি না থাকলেও ৯টা- সাড়ে ৯টার মধ্যেই ব্যালট বাক্স ভরে গেছে।’
দেশের ইতিহাসে এর মতো কলঙ্কজনক নির্বাচন আর হয়নি দাবি করে জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণে একটা নির্বাচন হলো। কিন্তু তাতে জনগণকে অংশ নিতে দেওয়া হলো না। তফসিলের পর থেকেই বিরোধী প্রার্থীদের ওপর হামলা-মামলা-গ্রেফতার করে নির্বাচনের আগে একটা একতরফা পরিবেশ তৈরি করা হয়েছিল। মানুষ যাতে ভোটকেন্দ্রে আসতে না পারে, ভয় পায় এটাই তাদের লক্ষ্য ছিল।’
ঢাকা-৮ আসনের মই মার্কার প্রার্থী শম্পা বসু বলেন, ‘‘সকালে সেগুনবাগিচা হাইস্কুল ভোটকেন্দ্রে গিয়ে দেখি— কেন্দ্রে কোনও ভোটার নেই। প্রিজাইডিং অফিসারকে জিজ্ঞেস করতেই বললেন, ‘মাত্র ১০০টি ভোট পড়েছে।’ অথচ ব্যালট বাক্স ভরা।’’
দিনাজপুর-৪ আসনের বাম জোটের প্রার্থী রিয়াজুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, ‘ভোটের আগের দিন রাতে প্রত্যেক ভোটকেন্দ্রে আধমণ থেকে একমণ মাংস রান্না করে ভোটের আয়োজন করা হয়। পুলিশ, নির্বাচনি কর্মকর্তা ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এতে অংশ নেন। এরপর রাত তিনটা পর্যন্ত ব্যালটে সিল মেরে বাক্স ভরা হয়। একটি কেন্দ্রে তার এক আত্মীয় প্রিজাইডিং কর্মকর্তা ছিলেন। সেই কেন্দ্রে গেলে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘সব ব্যালট বই আওয়ামী লীগের লোকজজন নিয়ে গেছে। তার (বাম জোটের প্রার্থীর) জন্য চারটা বই (৪০০ ভ্যালট) রেখেছেন।’
গাজীপুর-৪ আসনের সিপিবি’র প্রার্থী মানবেন্দ্র দেব বলেন, ‘একাদশ সংসদ জাতীয় নির্বাচন হয়েছে ভূতে কিলানো নির্বাচনের মতো। এবার সরকারি দলের জন্য কোনও আচরণবিধি ছিল না। আচরণবিধি ছিল শুধু বিরোধীদলের জন্য।’
গণশুনানিতে আরও উপস্থিত ছিলেন— সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, বাসদ মার্কসবাদীর মবিনুল হায়দার চৌধুরী, সিপিবি নেতা কাজী সাজ্জাদ জহির চন্দন, রুহিন হোসেন প্রিন্স ও মোশরেফা মিশু প্রমুখ।