X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

ডাকসুর ১০ প্যানেলে নারী প্রার্থী মাত্র ২৫, অভিযোগ অমূল্যায়নের

সিরাজুল ইসলাম রুবেল
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৭:৫২আপডেট : ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ২১:০৭

ডাকসু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন ১০টি প্যানেল ঘোষণা করেছে। ঘোষিত প্যানেলগুলোতে ডাকসুর কেন্দ্রীয় পদগুলোতে মাত্র ২৫ নারী প্রার্থী রয়েছেন। এরমধ্যে সহ-সভাপতি (ভিপি), সাধারণ সম্পাদক (জিএস) ও সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) এই তিনটি শীর্ষ পদে তিনজন নারী প্রার্থী রয়েছেন। অনেকেই অভিযোগ করছেন, পদ পাওয়ার যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও তাদের বাদ দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে নারীদের সঠিক মূল্যায়ন হয়নি বলে তারা অভিযোগ করেছেন। 

ডাকসুকে বলা হয়ে থাকে নেতৃত্ব তৈরির কারখানা। কিন্তু নারী নেতৃত্ব না রাখায় ভবিষ্যতে নারী নেতৃত্বে সংকট তৈরি হবে বলে মনে করছেন ১৯৬৬-৬৭ সালে ডাকসুর নির্বাচিত ভিপি মাহফুজা খানম। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে মেয়েরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনেক এগিয়ে এসেছে। রাজনীতিতেও এগিয়ে আসতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীর সংখ্যা আগের চেয়ে বেড়েছে। সেক্ষেত্রে ডাকসুতে ছাত্রীদের প্রতিনিধি হিসেবে কথা বলার জন্য নারী নেতৃত্ব রাখা উচিত ছিলো। প্রত্যেকটি সংগঠনের এ বিষয়টি মনে রাখা উচিত।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে ডাকসুতে পদ প্রত্যাশী বাদ পড়া একজন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ডাকসুর কেন্দ্রীয়  ২৫টি পদের মধ্যে,  ছাত্রলীগের মাত্র ছয়জন নারী প্রার্থী রাখা হয়েছে। তাদেরকেও মূলপদগুলোতে রাখা হয়নি। অধিকাংশকেই সদস্যপদে রাখা হয়েছে। পদের ক্ষেত্রে “বৈষম্য এবং অমূল্যায়ন” করা হয়েছে।’ 

ছাত্রলীগ থেকে কেন্দ্রীয় সংসদের কমনরুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক পদে প্রার্থী রোকেয়া হলের সভাপতি বিএম লিপি আক্তার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের (নারী প্রার্থীদের) পক্ষ থেকে ডাকসুর ভিপি, জিএস এবং এজিএস এ তিনটি পদে প্রার্থী হতে অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু আমাকে দেওয়া হয়নি। আমাকে কমনরুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক পদ দেওয়া হয়েছে। কেন দেওয়া হয়নি তা বলতে পারবো না। তবে, আগে থেকেই পুরুষতান্ত্রিক মনোভাব থেকে আমরা কাটিয়ে উঠতে পারিনি। আমাদের মধ্যে  অনেকের প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা ছিল।’ 

ছাত্র রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ কম থাকা প্রসঙ্গে ছাত্র ফেডারেশনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি উম্মে হাবিবা বেনজীর বলেন, ‘বাংলাদেশে ছাত্র রাজনীতির যে অবস্থা তাতে নারীরা নিরাপত্তার অভাবে রাজনীতিতে যুক্ত হতে আগ্রহ প্রকাশ করে না। অন্যদিকে সংগঠনগুলোও নারী প্রার্থীদের যথাযথ মূল্যায়ন করো না। তবে বামপন্থি সংগঠনগুলোতে নারীদের মূল্যায়ন হয়। হয়তো ছাত্রলীগ, ছাত্রদলের মধ্যে নারীদের মূল্যায়ন কম হয়।’

উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী শেখ সায়িদা আফরিন শাফি বলেন, ‘আসলে রাজনীতিতে নারীদের অনাগ্রহের প্রধান কারণ হলো তাদের জন্য রাজনীতি নিরাপদ নয়। এছাড়াও পরিবারও আমাদের এ বিষয়ে সমর্থন করে না। আর যারা রাজনীতি করে তাদেরকে সমাজের মানুষ ভালো চোখে দেখে না। সব জায়গাতেই তারা অবমূল্যায়নের শিকার হয়।’

ছাত্রদলের প্যানেলে শীর্ষ পদে নারী প্রার্থী না রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক ও ডাকসু নির্বাচন সম্পর্কিত ছাত্রদলের বিষয়গুলো দেখভাল করার জন্য গঠিত কমিটির নেতা শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘নারীদের আমরা অবশ্যই মূল্যায়ন করেছি। যারা মনোনয়ন চেয়েছে তাদের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। তবে, যে ছাত্রী নির্বাচন স্থগিত চেয়ে হাইকোর্টের রিট করেছে। তাকে শীর্ষপদে রাখতে চেয়েছি, কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তার ছাত্রত্ব আটকে রেখেছে। পরে সে মেয়েটি হাইকোর্টে যেতে বাধ্য হয়েছে। হাইকোর্ট যখন ওই ছাত্রী নির্বাচন করতে পারবে বলে জানালো তখন আমাদের হাতে আর সময় ছিল না। বাধ্য হয়ে প্যানেল ঘোষণা করতে হয়েছে।’

নারী নেতৃত্বের সংকটের কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. রোবায়েত ফেরদৌস বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মাত্র আট শতাংশ নারী নেতৃত্ব এসেছে। আমার কাছে মনে হয়েছে, আসলে রাজনীতির প্রতি আমাদের নারীদের একধরনের অনাগ্রহ তৈরি হয়েছে। এর কারণ হলো, ছাত্ররাজনীতির একটি কলুষিত দিক আছে, মাস্তানতন্ত্র আছে। এই কারণে তারা পরিবার থেকে একধরনের বাধার সম্মুখীন হয়। পুরুষতান্ত্রিক সমাজ কাঠামো থেকে বেরিয়ে নারীদের স্বাধীনভাবে রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন ঘটার মতো জায়গাটি এখনও নিশ্চিত হয়নি। পরিবার থেকে বাধার কারণে মেয়েরা একটা সময় চিন্তা করে যে, আসলে সে একটি প্রগতিশীল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া সত্ত্বেও রাজনীতিতে ক্যারিয়ারের জায়গাটা তৈরি হয়নি।’

এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘ছাত্র রাজনীতির মধ্যে কালিমা লেগে গেছে। তাই ছাত্ররাজনীতির প্রতি মেয়েদের আগ্রহ তৈরি হয় না। আর পুরুষতান্ত্রিক রাজনীতির মধ্যে মেয়েদের স্পেস দেওয়ার যে জায়গাটা রয়েছে, সেটিও সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। অথচ আরপিওতে কিন্তু বলা আছে, রাজনীতির সমস্ত কমিটিগুলোতে এবং নমিনেশনে ৩৩ শতাংশ নারী থাকতে হবে। এ ৩৩ শতাংশ জায়গা আমাদের জাতীয় সংসদেও নেই। কিন্তু সেটি নিশ্চিত হচ্ছে না। এর কারণ হলো, পুরুষতান্ত্রিক যে সমাজ কাঠামো সেখান থেকে ছাত্ররাজনীতি মুক্ত নয়। আর একটা কারণ হলো, ছাত্ররাজনীতির খারাপ একটি ইমেজ তৈরি হয়ে গেছে। এজন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আগের চেয়ে নারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা অনেক বেড়েছে। সে তুলনায় ছাত্র রাজনীতিতে নারী শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বাড়ছে না।’

এ বিষয়ে কথা বলতে ছাত্রলীগের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদককে একাধিকবার ফোন দিলেও তারা রিসিভ করেননি।

ছাত্রলীগের প্যানেলে বিভিন্ন পদে নারী প্রার্থীর সংখ্যা

বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্যানেলে নারী প্রার্থীর সংখ্যা সর্বমোট ২৫ জন। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় ২৫টি পদের মধ্যে মাত্র ৬টি পদে নারী প্রার্থী রয়েছেন। তারা হলেন– কমনরুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক বিএম লিপি আক্তার, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শাহরিমা তানজিমা অর্ণি এবং সদস্য সাবরিনা ইতি, ফরিদা পারভিন, নিপু ইসলাম তন্বী, তিলোত্তমা শিকদার। 

জাসদ ছাত্রলীগের প্যানেলে নারী প্রার্থীর সংখ্যা

জাসদ ছাত্রলীগের প্যানেলে মাত্র একজন নারী প্রার্থী রাখা হয়েছে। তিনি হলেন স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক শিরিন আক্তার।

বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (জাসদ-ইনু) 

হাসানুল হক ইনু সমর্থিত বাংলাদেশ ছাত্রলীগ থেকে সাধারণ সম্পাদক পদে শাফিকা রহমান শৈলী এবং কেন্দ্রীয় সংসদে দুজন নারী প্রার্থী রয়েছেন। তারা হলেন– বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক মনিরা ইসমাইল মীম, সাহিত্য সম্পাদক ইশরাত জাহান।

ছাত্রদল

বিএনপির ছাত্র সংগঠন ছাত্রদল থেকে কেন্দ্রীয় সংসদে মাত্র একজন নারী প্রার্থী রাখা হয়েছে। তিনি হলেন কমনরুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক পদে কানতা ইয়ালামলাম।

প্রগতিশীল ছাত্রজোটের মোর্চা

প্রগতিশীল ছাত্রজোট থেকে সদস্যপদে দুজন নারী প্রার্থী রয়েছেন। তারা হলেন– আফনান আক্তার, মনীষা আখতার।

বাংলাদেশ ছাত্রমৈত্রী

বাংলাদেশ ছাত্রমৈত্রী থেকে শীর্ষ পদে সহ-সাধারণ সম্পাদক সানজীদা বারী, কমনরুম ও ক্যাফেটারিয়া সম্পাদক এমিলি শেখ রয়েছেন।

কোটা আন্দোলনকারীদের প্ল্যাটফর্ম

বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ থেকে কেন্দ্রীয় সংসদে দুজন নারী প্রার্থী। তারা হলেন– শেখ এমিলি জামাল, উম্মে কুলসুম বন্যা।

ছাত্র মুক্তিজোটের প্যানেল

এই প্যানেল থেকে কেন্দ্রীয় সংসদে তিনজন নারী প্রার্থী রাখা হয়েছে। তারা হলেন– কমনরুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক সুমাইয়া ইয়াসমিন স্মৃতি, সমাজসেবা সম্পাদক নওরিন আক্তার নিশাত, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক পদে জাকিয়া সুলতানা এবং সদস্য পদে দুজন রাখা হয়েছে। তারা হলেন– মোছা. রহিমা খাতুন সাদিয়া আফরিন তৃষ্ণা।

স্বতন্ত্রজোট

অরণি সেমন্তি খানকে ভিপি (সহ-সভাপতি) স্বাধীনতাসংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক পদে শ্রবণা শফিক, সদস্য নহলি নাফিসা খান।

 

 

 

/এসআইআর/
সম্পর্কিত
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
রমজানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে সাপ্তাহিক ছুটি কমতে পারে
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নির্যাতন চলতে পারে না: মানবাধিকার কমিশন
সর্বশেষ খবর
করোনার পর মাধ্যমিকে ১০ লাখের বেশি শিক্ষার্থী কমেছে
করোনার পর মাধ্যমিকে ১০ লাখের বেশি শিক্ষার্থী কমেছে
দক্ষিণ আফ্রিকায় বাস দুর্ঘটনায় ৪৫ তীর্থযাত্রী নিহত
দক্ষিণ আফ্রিকায় বাস দুর্ঘটনায় ৪৫ তীর্থযাত্রী নিহত
পায়ুপথে ৭০ লাখ টাকা সোনা নিয়ে ভারতে যাচ্ছিল পাচারকারী
পায়ুপথে ৭০ লাখ টাকা সোনা নিয়ে ভারতে যাচ্ছিল পাচারকারী
বিশ্বকাপের আগে আয়ারল্যান্ডে টি-টোয়েন্টি খেলবে পাকিস্তান
বিশ্বকাপের আগে আয়ারল্যান্ডে টি-টোয়েন্টি খেলবে পাকিস্তান
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়