X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

শ্রমিক দিবসে কদর বাড়ে শ্রমিক দলের

আদিত্য রিমন
২১ মার্চ ২০১৯, ০৯:৪৫আপডেট : ২১ মার্চ ২০১৯, ১১:৪৬

জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল বিএনপির অঙ্গ সংগঠন জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে শ্রমিকদের স্বার্থ সংরক্ষণ ও জীবনমান উন্নয়ন, শোষণ ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে আন্দোলন- সংগ্রামে সমর্থন দেওয়াই হচ্ছে এই সংগঠনটির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।  কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে, বছরের পহেলা মে অর্থাৎ শ্রমিক দিবসে যেনতেন একটি আলোচনা সভা ছাড়া শ্রমিকদের কল্যাণে কোনও দৃশ্যমান কর্মসূচি নেই এই শ্রমিক দলের। সংগঠনের নেতারা বলছেন— শ্রমিক দল নিয়ে কেন্দ্রীয় বিএনপির তেমন কোনও আগ্রহ নেই। শুধুমাত্র পহেলা মে শ্রমিক দিবস আসলে দলীয় নেতাদের কাছে তাদের কিছুটা কদর বাড়ে। বছরের অন্য সময় কেউই  শ্রমিক দলের খোঁজ রাখেন না। এছাড়া, বর্তমান সরকারের আমলে পুলিশ প্রশাসন যেহেতু কোনও আন্দোলন-সংগ্রাম করতে দেয় না,  তাই শ্রমিক দলের দৃশ্যমান কোনও কর্মসূচি নেই।

সংগঠনটির নেতারা বলছেন, কেন্দ্রের কাছে তাদের যেমন গুরুত্ব নেই, তেমনই শ্রমিক দলের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির নেতাদের গ্রুপিং ও কোন্দলের কারণে তাদের সাংগঠনিক ভিত্তি ভেঙে পড়েছে। বর্তমান কমিটি হয়েছিল ২০১৪ সালে। এরপর পদ-পদবী নিয়ে কোন্দলে জড়িয়ে পড়েন নেতারা। পাল্টাপাল্টি কমিটিও গঠন করেন তারা। একপক্ষের বিরুদ্ধে আরেক পক্ষ আদালতে মামলাও করে। ফলে নেতারা নিজের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়েই বেশি ব্যস্ত থাকেন। সাধারণ শ্রমিকদের স্বার্থে কোনও কর্মসূচি নিয়ে তাদেরকে মাঠে দেখা যায় না।

শ্রমিক দলের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সভাপতি আনোয়ার হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দেশের পরিবেশ পরিস্থিতির কারণে আমরা শ্রমিকদের ওপরে শোষণ ও নির্যাতন এবং তাদের স্বার্থের বিষয়ে আন্দোলন সংগ্রাম করতে পারি নি। কোনও দাবিতে রাস্তায় নামলেই পুলিশের হামলা-মামলা অব্যাহত ছিল। তবে আমাদের সংগঠনের অনেক নেতাই শ্রকিদের বিভিন্ন ট্রেড ইউনিয়নের মাধ্যমে শ্রমিকদের কল্যাণে কাজ করছেন।’

তিনি  বলেন, ‘পহেলা মে যেহেতু শ্রমিক দিবস। ফলে এ দিবসের আলোচনা সভায় শ্রমিক দলের বাড়তি মূল্যায়ন হওয়াটাই স্বভাবিক।  শ্রমিক দিবসের কর্মসূচি ছাড়াও বিএনপির বিভিন্ন কর্মসূচিতে আমরা অংশ নিই।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, ২০১৪ সাল থেকে বিএনপি কেন্দ্রীয়ভাবে কোনও কার্যকর আন্দোলন গড়ে তুলতে পারে নাই। সেখানে কিভাবে শ্রমিক দলকে শ্রমিকদের সমস্যা নিয়ে কর্মসূচি দিতে বলবে। পহেলা মে যেহেতু শ্রমিক দিবস, তাই ওইদিন আলোচনা সভা বা র‌্যালির আয়োজন করা হয়। অনেক সময় কর্মসূচির জন্য পুলিশের অনুমতিও পাওয়া যায় না। এ কারণেই  শ্রমিক দলের এই দুরাবস্থা।’

তিনি জানান, এবার বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনকে পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এরইমধ্যে তিনটি সংগঠনের আহ্বায়ক কমিটিও করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সবগুলোর সংগঠনের কমিটি পুনর্গঠন করা হবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান তিন যুগেরও বেশি সময় শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন। বর্তমানে তিনি এই সংগঠনের উপদেষ্টা। এ বিষয়ে জানতে তাকে ফোন করা হলেও অসুস্থ থাকায় তিনি কথা বলেননি।

প্রসঙ্গত, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের বিশেষ আগ্রহে ১৯৭৯ সালের ৩ সেপ্টেম্বর শ্রমিক দল গঠন করা হয়। ওই সময় সংগঠনটির সভাপতি ছিলেন এস্কাদার আলী আর সাধারণ সম্পাদক ছিলেন নজরুল ইসলাম খান। এরপর ১৯৮৪ ও ১৯৮৯ সালের সম্মেলনেও এই দুই নেতাই পুনরায় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হন। ১৯৯৬ সালে এস্কাদার আলী মারা গেলে শ্রমিক দলের সভাপতির পদে আসেন আবদুল্লাহ আল নোমান। এরপর ২০০৩ সালের সম্মেলনে সভাপতি হন নজরুল ইসলাম খান, আর সাধারণ সম্পাদক নির্বাহন বিএনপির সাবেক  শ্রম বিষয়ক সম্পাদক জাফরুল হাসান। সর্বশেষ ২০১৪ সালের সম্মেলনে মো. আনোয়ার হোসাইনকে সভাপতি ও নুরুল ইসলাম খান নাসিমকে সাধারণ সম্পাদক করে  শ্রমিক দলের নতুন কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়। সংগঠনটি প্রতিষ্ঠার ৩৯ বছরে ১৯ বার কেন্দ্রীয় সম্মেলন হওয়ার কথা থাকলেও  হয়েছে মাত্র ছয়বার।

দুই বছরের কমিটি দিয়ে পাঁচ বছর পার

২০১৪ সালের ১৯-২০ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হয় শ্রমিক দলের সপ্তম কেন্দ্রীয় কাউন্সিল।  এর একসপ্তাহ পর মো.আনোয়ার হোসাইনকে সভাপতি ও নুরুল ইসলাম খান নাসিমকে সাধারণ সম্পাদক করে নতুন কমিটি ঘোষণা হয়। কিন্তু ওই কমিটিকে প্রত্যাখান করে এ এম নাজিম উদ্দীনকে সভাপতি এবং আবুল খায়ের খাজাকে সাধারণ সম্পাদক করে  আরেকটি পাল্টা কমিটি করা হয়। পাশাপাশি আনোয়ার ও নাসিমের কমিটির বৈধতা নিয়ে  শ্রম আদালতে মামলাও করেন বিদ্রোহী কমিটির আবুল খায়ের খাজা। পরে  ২০১৭ সালে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আশ্বাসে ওই মামলা প্রত্যাহার করে নিয়ে আনোয়ার-নাসিমের কমিটিকে মেনে নেয় বিদ্রোহী কমিটি।

এদিকে,২০১৬ সালে আনোয়ার-নাসিমের কমিটির মেয়াদ শেষ হলেও নতুন করে আর কোনও কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়নি। ফলে দুই বছর মেয়াদের  কমিটি দিয়েই পাঁচ বছর ধরে চলছে শ্রমিক দলের কার্যক্রম। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ৩৫ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটির দুজন সদস্য  মারা গেছেন। একজনকে বহিষ্কার করা হয়েছে,  আর বাকি সদস্যরা অনেকেই নিষ্ক্রিয় হয়ে আছেন।

শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম খান নাসিম বলেন, ‘‘২০১৬ সালে কমিটির মেয়াদ শেষ হলে ম্যাডাম খালেদা জিয়াকে আমরা বলেছি,  কাউন্সিল করে নতুন কমিটি দিতে। কিন্তু  তিনি বলেছেন— ‘তোমরা কাজ করো। পরে কমিটি দেওয়া হবে।’  এরপর  খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার কারণে নতুন করে আর কাউন্সিল হয়নি।’

অন্যদিকে, বিদ্রোহী কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবুল খায়ের খাজা বলেন, ‘২০১৭ সালের শুরুর দিকে খালেদা জিয়া মামলা প্রত্যাহার করে নিতে বলেছিলেন। তিনি আরও বলেন, কাউন্সিলের মাধ্যমে শ্রমিক দলের নতুন কমিটি করা হবে। সেই কারণে আমি মামলা প্রত্যাহার করে নিয়েছি। কিন্তু পরে বিভিন্ন অজুহাতে বর্তমান কমিটির নেতারা সম্মেলন করেননি।’

বিএনপির সূত্র জানায়, আগামী ৩০ মার্চ শ্রমিক দলের  সভা  হওয়ার কথা রয়েছে। সেদিনই সংগঠনটির পরবর্তী কাউন্সিলের তারিখ ঘোষণা করা হতে পারে। ফলে নতুন করে পদের আশায় শ্রমিক দলের নেতারা বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ে নেতাদের বাসায় গিয়ে তদবির শুরু করেছেন। আগামী কমিটিতে সংগঠনটির শীর্ষ দুটি পদ পেতে বর্তমান কমিটির দুই নেতা আনোয়ার হোসাইন, নুরুল ইসলাম খান নাসিম, বিদ্রোহী কমিটির আবুল খায়ের খাজা জোর তদবির শুরু করেছেন। 

নুরুল ইসলাম খান নাসিম বলেন, ‘সব পর্যায়ের নেতাদের নিয়ে ৩০ মার্চ আমাদের বৈঠক আছে। সেখানে দলের শ্রমিক দলের সাবেক সভাপতি ও বর্তমানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানও থাকবেন। সেদিনই আগামী কাউন্সিলের তারিখ ঘোষণা  হতে পারে।’

কার্যালয় ছাড়াই চলে শ্রমিক দলের কার্যক্রম

শ্রমিক দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, ঢাকা নগরীতে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থাকার কথা। কিন্তু বাস্তবে এ সংগঠনের আলাদা কোনও কার্যালয় নেই। নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের তিন তলায় সংগঠনটির নামে একটি সাইনবোর্ড থাকলেও কার্যালয়ের কোনও অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি।

শ্রমিক দলের প্রচার সম্পাদক মঞ্জুরুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কয়েক বছর আগে পুলিশ  বিএনপির কেন্দ্রীয় অফিসে ভাঙচুর চালায়।  সেই সয়ম আমাদের অফিসের চেয়ার-টেবিল ভাঙচুর করা হয়। সেই কারণে অফিসের এই অবস্থা।’

/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
রাজশাহীতে দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হলো বিভাগীয় সর্বজনীন পেনশন মেলা
রাজশাহীতে দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হলো বিভাগীয় সর্বজনীন পেনশন মেলা
রুবেলকে শোকজ দিলো উপজেলা আ’লীগ, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের নির্দেশ পলকের
নাটোরে উপজেলা নির্বাচনরুবেলকে শোকজ দিলো উপজেলা আ’লীগ, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের নির্দেশ পলকের
এমপি দোলনের গাড়ি লক্ষ্য করে ইট নিক্ষেপ, সাংবাদিক আহত
এমপি দোলনের গাড়ি লক্ষ্য করে ইট নিক্ষেপ, সাংবাদিক আহত
চরের জমি নিয়ে সংঘর্ষে যুবলীগ কর্মী নিহত, একজনের কব্জি বিচ্ছিন্ন
চরের জমি নিয়ে সংঘর্ষে যুবলীগ কর্মী নিহত, একজনের কব্জি বিচ্ছিন্ন
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া