X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

মাহফুজ উল্লাহ সত্য বলার ঝুঁকি নিতেন: নাগরিক শোকসভায় বিশিষ্টজনরা

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
১৩ মে ২০১৯, ২৩:৫৫আপডেট : ১৪ মে ২০১৯, ০০:০২





মাহফুজ উল্লাহ সত্য বলার ঝুঁকি নিতেন: নাগরিক শোকসভায় বিশিষ্টজনরা প্রয়াত জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহ সব সময় সত্যের পক্ষে কথা বলেছেন, সত্য কথা লিখতেন। ঝুঁকি সত্ত্বেও তিনি অবিরাম সত্যের পক্ষে লিখে গেছেন। সোমবার (১৩ মে) বিকালে রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত নাগরিক শোকসভায় বিশিষ্টজনেরা মাহফুজ উল্লাহ সম্পর্কে বলতে গিয়ে এমন মত ব্যক্ত করেন। গত ২৮ এপ্রিল থাইল্যান্ডের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান দেশের অন্যতম বিশিষ্ট সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহ।

মাহফুজ উল্লাহ সত্য বলার ঝুঁকি নিতেন: নাগরিক শোকসভায় বিশিষ্টজনরা
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা আকবর আলি খানের সভাপতিত্বে ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রুবায়েত ফেরদৌসের পরিচালনায় নাগরিক সভায় ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেন, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. সা’দত হুসেন, গণস্বাস্থ্য সংস্থার ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) সভাপতি মোস্তফা জামাল হায়দার, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, জেএসডি সভাপতি আসম আবদুর রব, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মুহাম্মদ জমির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সদরুল আমিন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী, টিআইবি’র ইফতেখারুজ্জামান, মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, নিউজ এজের সম্পাদক নুরুল কবির, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ, প্রয়াত মাহফুজ উল্লাহ’র মেয়ে নুসরাত হুমায়রা বক্তব্য রাখেন। নাগরিক সভার শুরুতে সূচনা বক্তব্য রাখেন মাহফুজ উল্লাহ’র বড় ভাই অধ্যাপক মাহবুবউল্লাহ।

মাহফুজ উল্লাহ সত্য বলার ঝুঁকি নিতেন: নাগরিক শোকসভায় বিশিষ্টজনরা এছাড়া বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, আবদুল আউয়াল মিন্টু, ইসমাইল জবিউল্লাহ, অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, শামা ওবায়েদ, জহিরউদ্দিন স্বপন, তাবিথ আউয়াল, শায়রুল কবির খান, ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, বিকল্পধারার শমসের মবিন চৌধুরী, সুশাসনের বদিউল আলম মজুমদার, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক এম এ আজিজ, আবদুল হাই শিকদার, সৈয়দ আবদাল আহমেদ, নবনীতা চৌধুরী, এনাম আবেদীন, লোটন একরামসহ প্রয়াত সাংবাদিকের পরিবারের সদস্যরাও ছিলেন নাগরিক সভায়।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন বলেন, আমি যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করি তখন থেকে তাকে (মাহফুজ উল্লাহ) চিনি। আজকে আমি মোটেও নিরাশ নই। কারণ, মাহফুজ উল্লাহকে শ্রদ্ধা জানাতে সব মহলের লোক এখানে একত্রিত হয়েছেন। তাকে সম্মান জানাচ্ছেন কেন, কারণ তিনি ঝুঁকি নিয়েছিলেন, সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছিলেন। যখন উচিত কথা বলা ঝুঁকিপূর্ণ ছিল, তখন তিনি উচিত কথা বলেছিলেন।

ষাটের দশকে মাহফুজ উল্লাহর সঙ্গে পরিচয়ের স্মৃতিচারণ করে ড. কামাল বলেন, ‘আজকে সব মহলের লোক এখানে একত্রিত হয়েছেন। উনাকে (মাহফুজ উল্লাহ) সম্মান জানাচ্ছেন কেন? উনি ঝুঁকি নিয়েছিলেন, সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছিলেন, উচিত কথা বলার জন্য। যখন উচিত কথা বলা ঝুঁকিপূর্ণ ছিল, আজকেও ঝুঁকিপূর্ণ আছে।’



মাহফুজ উল্লাহ সত্য বলার ঝুঁকি নিতেন: নাগরিক শোকসভায় বিশিষ্টজনরা ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘মাহফুজ উল্লাহ তাড়াতাড়ি চলে যাবেন আমি ভাবিনি। তাকে আমি জানি ছাত্রজীবন থেকে। তার অনেক বই আছে, অনেক লেখা আছে। তবে আমি বলবো, একটি বইয়ের জন্য তিনি চিরজীবন স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। তা হচ্ছে, ‘পূর্ব পাকিস্তানের ছাত্র ইউনিয়নের ইতিহাস’ যেটা গৌরবের ও ঐতিহ্যের।’

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অশ্রুসজল ও আবেগ আপ্লুত কণ্ঠে বলেন, ‘মাহফুজ উল্লাহ আমার অত্যন্ত প্রিয় মানুষ। সে এত তাড়াতাড়ি চলে যাবে এটা কখনও ভাবিনি। তার সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত সম্পর্ক এত ঘনিষ্ঠ ছিল, আমি কখনও ভাবিনি সে আমার পাশে থাকবে না। তার চলে যাওয়ার কিছু দিন আগে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সের একটি সভায় মাহফুজ উল্লাহ এসেছিলেন। আমাদের অনেক নেতৃবৃন্দ ছিলেন। সেখানে তিনি বিএনপির কঠিন সমালোচনা করেছিলেন। এটাই ছিল তার বড় গুণ। সত্যকে সত্য বলতে কখনও সে দ্বিধা করেনি। তার অভাব কোনও দিন পূরণ হবে না।’

বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আমাদের যারা গর্ব বুদ্ধিজীবী ও বিশিষ্ট ব্যক্তিরা যে সমাজে মুখ খুলতে সাহস পান না, সেখানে মাহফুজ উল্লাহ অনেক বলেছেন। টকশোতে গিয়ে সত্য কথা বলার দায়ে বা যুক্তিপূর্ণ কথা বলায় তিনি নানাভাবে নির্যাতিত হয়েছেন এবং বিভিন্ন জায়গা থেকে হুমকির শিকার হয়েছেন।’

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য নুহ আলম লেলিন বলেন, ‘মাহফুজ উল্লাহ ও আমি বলা যেতে পারে একই লক্ষ্যে দুই পথের যাত্রী। ইন্টারমিডিয়েটে সে ঢাকা কলেজে পড়তো, আমি জগন্নাথে পড়তাম। রাজনৈতিকভাবে আমরা দুই মেরুর মানুষ। আমি ছিলাম মতিয়া গ্রুপ ছাত্র ইউনিয়নের, সে ছিল ছাত্র ইউনিয়নের মেনন গ্রুপে। আমি ছিলাম মস্কোপন্থী, সে ছিল পিকিংপন্থী। পরবর্তী জীবনে স্বাধীনতার পরে আমি বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি হয়েছি। সেও আরেক ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি হয়েছে। আমি আওয়ামী লীগ করি আর সে বিএনপি ধারার সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন। কাজেই আমাদের মতের পার্থক্য দুইজনের দুই বিপরীত মেরুতে। এভাবেই আমরা এগিয়ে গিয়েছি। দুই মেরুতে থেকেও শেষের দিনগুলোতে টকশোতে আমরা প্রায়ই একসঙ্গে বসতাম, কেউ কাউকে ছাড় দিতাম না। কিন্তু কোনও দিন আমাদের মধ্যে কোনও অশালীন কথা হতো না। অশুভ বা উত্তেজনা সৃষ্টি হতো না। আমরা পরস্পরকে যুক্তি দিয়ে খণ্ডাতে চেষ্টা করতাম। কিন্তু আজকের সমাজে মতপার্থক্য হলেই কথা নাই, বার্তা নাই। এই যে একটা বৈরী সংস্কৃতি চলছে, সেটা আমাদের মধ্যে ছিল না।’

নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘জনাব মাহফুজ উল্লাহ একজন রাজনীতিবিদ ছিলেন। আপাদমস্তক রাজনীতির চিন্তাধারায় পরিচালিত হতেন। যে কয়টা টকশোতে আমি তার সঙ্গে ছিলাম, আমার সবচাইতে ভালো লেগেছে এটা দেখে যে, নিজের রাজনৈতিক বিশ্বাসকে ধারণ করার পরেও অন্যের বিশ্বাসের প্রতি সম্মান দেখাতেন। এই দেখানোয় অপরিসীম ভালোলাগা ছিল। আজকে সবাই মিলে তাকে আমরা স্মরণ করছি।’

মাহফুজ উল্লাহ সত্য বলার ঝুঁকি নিতেন: নাগরিক শোকসভায় বিশিষ্টজনরা অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, ‘মাহফুজ উল্লাহর সাহসিকতা, সদাচারিতা, সুস্পষ্টবাদী চিন্তাভাবনা, বক্তব্য উপস্থাপনার সক্ষমতা- এই গুণগুলো আমাদের তরুণদের আয়ত্তে আসুক এই আশা রেখে আমি প্রার্থনা করছি আল্লাহ যেন তাকে বেহেশত নসিব করেন।’

মাহফুজ উল্লাহ সত্য বলার ঝুঁকি নিতেন: নাগরিক শোকসভায় বিশিষ্টজনরা নিউ এজ পত্রিকার সম্পাদক নুরুল কবির বলেন, ভিন্নমত বা বিতর্ক হলেও তিনি সবার সঙ্গে যে আচরণ করতেন তা উদাহরণ হয়ে থাকবে।

টেলিভিশনের টকশোতে মাহফুজ উল্লাহ একপাক্ষিক কথার বিরুদ্ধে ভারসাম্যমূলক কথা বলতেন বলে জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক আসিফ নজরুল।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, মাহফুজ উল্লাহ হেসে কঠিন কথা বলতেন। দলের আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, গণতন্ত্রহীনতার দেশে অতি সাহসের সঙ্গে কলম ধরেছেন এবং কথা বলতেন মাহফুজ উল্লাহ।

মাহফুজ উল্লাহ সত্য বলার ঝুঁকি নিতেন: নাগরিক শোকসভায় বিশিষ্টজনরা মেরুদণ্ড সোজা করে হাঁটবার মতো সাংবাদিক কমই আছে উল্লেখ করে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি সাইফুল আলম বলেন, সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহ ছিলেন তেমন একজন ব্যক্তি।

মাহফুজ উল্লাহ সত্য বলার ঝুঁকি নিতেন: নাগরিক শোকসভায় বিশিষ্টজনরা উল্লেখ্য, ২৮ এপ্রিল থাইল্যান্ডের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান মাহফুজ উল্লাহ। গুরুতর অসুস্থ হয়ে গত তিন সপ্তাহ এ হাসপাতালটিতে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি।

৬৯ বছর বয়সী মাহফুজ উল্লাহ গত ২ এপ্রিল হৃদরোগে আক্রান্ত হলে তাকে ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করে আইসিইউতে রাখা হয়েছিল। স্কয়ারে কয়েকদিন লাইফ সাপোর্টে থাকার পর উন্নত চিকিৎসার জন্য গত ১১ এপ্রিল এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে নিয়ে বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। তিনি হৃদরোগ, কিডনি ও উচ্চ রক্তচাপজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন। এর আগে ব্যাংককে একবার তার বাইপাস সার্জারিও হয়েছিল।



/এসটিএস/টিটি/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
আরও কমলো সোনার দাম  
আরও কমলো সোনার দাম  
 ১ পদে ২৩৮ জনকে চাকরি দেবে ভূমি মন্ত্রণালয়, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ
 ১ পদে ২৩৮ জনকে চাকরি দেবে ভূমি মন্ত্রণালয়, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ
চুয়াডাঙ্গার তাপমাত্রা ৪২.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস
চুয়াডাঙ্গার তাপমাত্রা ৪২.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস
৬ মামলায় জামিন পেলেন বিএনপি নেতা গয়েশ্বর
৬ মামলায় জামিন পেলেন বিএনপি নেতা গয়েশ্বর
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
সিনিয়র শিক্ষককে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি জুনিয়র শিক্ষকের
সিনিয়র শিক্ষককে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি জুনিয়র শিক্ষকের
ভুল সময়ে ‘ঠিক কাজটি’ করবেন না
ভুল সময়ে ‘ঠিক কাজটি’ করবেন না