X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

ভোট নেই, তাই ‘ঈদের রাজনীতি’ও নেই

এমরান হোসাইন শেখ
০৬ জুন ২০১৯, ২১:৩৮আপডেট : ০৭ জুন ২০১৯, ০৮:১৯




৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগের ঈদগুলোয় নেতারা যেমন এলাকামুখী ও ভোটারমুখী ছিলেন, এই ঈদের চিত্র তেমন নয়। এবার ঈদে রাজনৈতিক নেতাদের এলাকামুখী হতে কম দেখা গেছে। বেশিরভাগ নেতাই ঈদুল ফিতর পালন করেছেন রাজধানীতে। কেউ কেউ পরিবার-পরিজন নিয়ে দেশের বাইরেও ঈদ উদযাপন করেছেন। কিছুসংখ্যক নেতা এলাকায় গেলেও অন্য সময়ের মতো এবার ঈদে সামাজিক-পারিবারিক অনুষ্ঠানে অংশ নেননি। তাদের চলাফেরার গণ্ডি ছিল ঈদের মাঠ থেকে নিজেদের বাসা।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও এর প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগের ঈদগুলোয় নেতারা যেমন এলাকামুখী ও ভোটারমুখী ছিলেন, এই ঈদের চিত্র তেমন নয়। এবার এলাকায় চোখে পড়ার মতো কোনও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ছিল না তাদের।
ঈদকেন্দ্রিক ‘রাজনৈতিক নিষ্ক্রিয়তা’র জন্য কাছাকাছি সময়ে নির্বাচন না থাকার কথা বলেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে তারা বলেছেন, এই নির্বাচনের কারণে গত কয়েকটি ঈদে নেতাদের এলাকামুখী হতে দেখা গেছে। এখন কাছাকাছি সময়ে আর নির্বাচন নেই। তাই হয়তো কিছুটা এলাকাবিমুখ তারা। আর আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এবারের ঈদে দেশে না থাকা এবং বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারাবন্দি থাকাও দল দুটির নেতাদের ঈদে এলাকামুখী না হওয়ার কারণ বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা। তবে ভোটের সময় ঘনিয়ে এলে ঈদ-পার্বণে আবার মানুষের কাছাকাছি হবেন বলে মনে করেন তারা।
রাজনৈতিক নেতারাও এলাকায় না যাওয়ার কারণ হিসেবে নির্বাচনের কথা বলেছেন। তবে তাদের ব্যাখ্যা ভিন্ন। তাদের ভাষ্য, জাতীয় নির্বাচনসহ বিভিন্ন কারণে এতদিন তাদের পুরোপুরি এলাকার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে হয়েছে। নির্বাচন যেহেতু কিছুদিন আগেই হয়েছে, ফলে এবার হয়তো একটু রিল্যাক্স মুডে আছেন তারা। পরিবার-পরিজনকে সময় দিচ্ছেন।
নিয়মতান্ত্রিকভাবে নতুন জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে আরও সাড়ে ৪ বছর পর। গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনের পরপরই শেষ হয়েছে পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ছাড়া কাছাকাছি সময়ের মধ্যে স্থানীয় সরকার পরিষদ নির্বাচনও নেই। তৃণমূল পর্যায়ের দুটো বড় নির্বাচন ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভা নির্বাচনের আরও দেড় বছরের বেশি সময় বাকি রয়েছে।
এবারের ঈদুল ফিতরে রাজনীতিক নেতাদের কম এলাকামুখী হওয়ার পেছনে দুটি কারণের কথা বলেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক তারেক শামসুর রেহমান। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের এই অধ্যাপক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ঈদের সময় রাজনৈতিক নেতাদের এলাকামুখী হওয়াই আমাদের সংস্কৃতির অংশ। তবে, এবার সেটা কম চোখে পড়েছে। একটি কারণ হতে পারে প্রধানমন্ত্রী ঈদের কয়েকদিন আগে দেশের বাইরে গেছেন। এ কারণে তার কোনও নির্দেশনা নেতাকর্মীরা পাননি। আর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া জেলে থাকায় তাদের মধ্যেও সেভাবে আগ্রহ নেই। তারা স্ক্যাটার্ড (ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা) হয়ে গেছেন।’
তিনি বলেন, ‘আরেকটি বড় কারণ, নির্বাচন তো হয়ে গেছে, কাজেই নেতাদের কাছে কর্মীদের প্রয়োজন এই মুহূর্তে নেই। তাই নেতাদেরও কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময়ের প্রবণতাটা নেই, তাই নেতারা ঢাকামুখী।’ তবে আগামী নির্বাচনের কাছাকাছি সময় এলাকায় যাওয়ার ভিড় আবার বাড়বে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক নিজাম উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘সামনে ভোট না থাকায় এলাকায় যাননি, এটা একটি কারণ হতে পারে। আরেকটা হতে পারে, ভোটের বিষয়ে রাজনীতিকদের আত্মতৃপ্তি বা ঠিক তার বিপরীতটি।’ তিনি বলেন, ‘ভোট নিয়ে তো সম্প্রতি নানা ধরনের কথা উঠছে। আদৌ জনগণের ভোট কতটা প্রয়োজন, ভোটারের গুরুত্ব কতটা, সেটা বোঝাও মুশকিল।’ তবে সাময়িক এলাকায় না গিয়ে হয়তো থাকতে পারছেন। প্রকৃত রাজনীতিকদের এলাকায় তো যেতেই হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। আওয়ামী লীগ নেতাদের এলাকামুখী না হওয়ার কারণ হিসেবে এই রাজনৈতিক বিশ্লেষক প্রধানমন্ত্রীর দেশে না থাকার কথাও বলেন।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘নির্বাচনসহ সার্বিক বিষয় নিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে বড় একটি ব্যস্ততার সময় সম্প্রতি পার হয়েছে। যার কারণে এবারের ঈদে হয়তো সবাই একটু রিলাক্স থাকার চেষ্টা করেছেন।’ তিনি বলেন, ‘রাজনীতিকদেরও পারিবারিক একটি জীবন রয়েছে, তাদেরও কিছু পাওয়ার আছে। এজন্য এবার হয়তো পরিবার-পরিজনকে একটু সময় দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। তবে এর অর্থ এই নয় যে, এলাকা বা জনগণের প্রতি দায়িত্ববোধ কমে গেছে।’
এলাকায় যাওয়ার প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রীর কোন নির্দেশনা ছিল কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘নির্দেশনার কোনও বিষয় নয়। রাজনীতি করা বা দেশ ও দেশের মানুষের জন্য কাজ করার কোনও নির্দেশনার প্রয়োজন পড়ে না। এটা বোধের বিষয়। যিনি কেবল নির্দেশনায় চলবেন, তাহলে বুঝতে হবে তার নিজের মধ্যেই সংকট আছে।’
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু অবশ্য বলেন ভিন্ন কথা। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘দেশে একটি অস্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করছে। এই সরকার একটা অস্বাভাবিক সরকার। কোনও ক্ষেত্রেই স্বাভাবিক পরস্থিতি চলছে না। কাজেই রাজনীতি বা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড স্বাভাবিক থাকবে, তা বলার সুযোগ নেই। ফলে দেশে থাকা, গ্রামের বাড়িতে যাওয়া, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড কোনোটিই নিরাপদ নয়।’
কারা ঢাকায়, কারা এলাকায়
জানা গেছে, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ দলের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, মোহাম্মদ নাসিম, মতিয়া চৌধুরী, সাহারা খাতুন, পীযূষ কান্তি ভট্টাচার্য্য, লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান, নুরুল ইসলাম নাহিদ, ড. আবদুর রাজ্জাক, জাহাঙ্গীর কবির নানক, ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, ফরিদুন্নাহার লাইলী, অসীম কুমার উকিল, দেলোয়ার হোসেন, ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া প্রমুখ ঢাকায় ঈদ করেছেন। দেশের বাইরে আছেন মাহবুবউল আলম হানিফ, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, আবদুর রহমান ও শাম্মী আহমেদসহ আরও কয়েকজন। এলাকায় ঈদ করেছেন আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, কাজী জাফর উল্লাহ, আবদুল মতিন খসরু, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, আহমদ হোসেন, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, এনামুল হক শামীম, মহিবুল হাসান নওফেল প্রমুখ।
বিএনপি নেতাদের মধ্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, সেলিমা রহমান, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, শওকত মাহমুদ, অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খান প্রমুখ ঈদ করেছেন ঢাকায়। অবশ্য মহাসচিব মির্জা ফখরুল ঈদের পরদিন বৃহস্পতিবার ঠাকুরগাঁওয়ে যান। এছাড়া ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ড. আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ কয়েকজন এলাকায় ঈদ করেন। বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাস ও নজরুল ইসলাম খান পবিত্র ওমরাহ পালনে সৌদি আরবে রয়েছেন।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গাসহ বেশিরভাগ শীর্ষনেতা ঢাকায় ঈদ উদযাপন করেছেন।
গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বরাবরের মতো এবারও ঢাকায় ঈদ করেন। এছাড়া অন্যান্য দলের নেতাদের মধ্যে বিকল্প ধারার প্রেসিডেন্ট ও সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব, এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না ঈদ করেন ঢাকায়। বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক, বাসদের খালেকুজ্জামান, গণসংহতির জোনায়েদ সাকী প্রমুখ ঢাকায় ঈদ করেন।

/এসটিএস/এইচআই/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
৫ বছর বন্ধ সুন্দরবন টেক্সটাইল, সংকটে শ্রমিকরা
৫ বছর বন্ধ সুন্দরবন টেক্সটাইল, সংকটে শ্রমিকরা
বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা গোল্ডকাপের ফাইনাল আজ
বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা গোল্ডকাপের ফাইনাল আজ
টিভিতে আজকের খেলা (২০ এপ্রিল, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (২০ এপ্রিল, ২০২৪)
চাটমোহরে ঐতিহ্যবাহী ঘোড় দৌড় প্রতিযোগিতা শুরু
চাটমোহরে ঐতিহ্যবাহী ঘোড় দৌড় প্রতিযোগিতা শুরু
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া