X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

‘শক্ত রাজনীতি’র শক্তি পাচ্ছে না বিএনপি

সালমান তারেক শাকিল
০৬ জুন ২০১৯, ২১:৫১আপডেট : ০৭ জুন ২০১৯, ১৯:৪৯

ঈদ উৎসবে নেতাকর্মীদের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করলেও গত কয়েক বছর ধরে সেই ধারাবাহিকতায় ছন্দপতন ঘটেছে। এছাড়া, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে গত রমজান ও কোরবানির ঈদে দলটির নেতারা নির্বাচনি এলাকায় উপস্থিত থাকলেও এবার ব্যতিক্রম। প্রায় সব স্তরের নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা থাকায় ঈদকেন্দ্রিক রাজনৈতিক কর্মসূচিতেও যেতে পারছে না দলটি। সব মিলিয়ে বছরের অন্য সময়ের মতো প্রায় রাজনৈতিক ‘কর্মসূচিশূন্য’ সময় কাটছে বিএনপির। এ কারণে ‘শক্ত রাজনীতি’ও করতে পারছেন না দলটির নেতারা।

বিএনপির নেতারা বলছেন, রাজনৈতিকভাবে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। অর্থনৈতিকভাবে দেশের অবস্থা সঙ্গীন। ঈদের সময় ‘কৃষকের পাশাপাশি’ বিএনপির নেতাকর্মীদের ঘরেও আনন্দ ছিল না। নেতাকর্মীরা সাধারণত নিজ নিজ এলাকায় ঈদ পালন করলেও এবার অনেক ক্ষেত্রেই তার ব্যতিক্রম ঘটেছে।

জানতে চাইলে দলটির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘দেশে একটি অস্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করছে। নির্বাচনের সময় একটি আশানির্ভরতা তৈরি করলেও ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন তো হয়ে গেছে ২৯ ডিসেম্বর রাতেই। এই সরকার একটা অস্বাভাবিক সরকার। প্রধানমন্ত্রী নিজেও দেশে ঈদ করতে পারেননি। স্বাভাবিক কারণেই দেশের মধ্যে একটা উৎকট পরিবেশ তৈরি হয়েছে। তার ছাপ প্রত্যেক মানুষের মধ্যে, প্রত্যেক ক্ষেত্রেই রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, অর্থনীতি, শিক্ষাব্যবস্থাসহ সবক্ষেত্রেই দেখা যাবে ভালো পরস্থিতি চলছে না। সেজন্যই রাজনীতি স্বাভাবিক থাকবে, এটা বলার কোনও সুযোগ নেই।’

বিএনপির প্রভাবশালী এই নেতা এও বলেন, ‘রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড স্বাভাবিক থাকবে, এটাও বলার সুযোগ নেই। বর্তমান সরকারের সময় সবচেয়ে সংকটাপন্ন হচ্ছে রাজনীতি। এখন রাজনৈতিক কর্মীরা যে স্বাভাবিকভাবে চলতে পারবেন, এটা আমার মনে হয় না। দেশে থাকা, গ্রামের বাড়িতে যাওয়া, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড কোনোটিই নিরাপদ নয়।’

দলটির সিনিয়র নেতাদের মধ্যে ঈদুল ফিতরের সময় দু’জন ছিলেন ওমরা উপলক্ষে সৌদি আরবে। তারা হলেন, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও নজরুল ইসলাম খান। সাধারণত, কোনও কোনও নেতা গ্রামের বাড়িতে ঈদ করলেও এবার ঈদ করেছেন ঢাকায়। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন—ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। গয়েশ্বর চন্দ্র রায় তার নির্বাচনি এলাকায় ঈদ কাটিয়েছেন। ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ছিলেন নোয়াখালীর বাড়িতে। নেতাকর্মীদের সঙ্গে বিনিময় করেছেন শুভেচ্ছা-কুশল। আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান মোর্শেদ খান, আবদুল্লাহ আল নোমান, মীর নাছির উদ্দিন ঈদ করেছেন চট্টগ্রামে নিজ বাড়িতে।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঢাকায় কেন্দ্রীয় কর্মসূচি পালন করেছেন। দলটির কেন্দ্রীয় ও মহানগরের নেতাকর্মীদের নিয়ে দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মাজার জিয়ারত করেছেন। ঈদের পরদিন বৃহস্পতিবার তিনি তার গ্রামের বাড়ি ঠাঁকুরগাওয়ে গেছেন। এছাড়া ব্যক্তিগত উদ্যোগে আরাফাত রহমান কোকোর মাজার জিয়ারত করেছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। তবে রাজনৈতিকভাবে নেতাকর্মীদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে শুভেচ্ছা বিনিময়ের কোনও অনুষ্ঠান ছিল না। ঈদের রাতে কূটনীতিকদের ডেকে নিয়ে নৈশভোজ করিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান।

দলটির কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, সেলিমা রহমান, শামসুজ্জামান দুদু, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, শওকত মাহমুদ ও অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খান ঢাকায় ঈদ করেছেন। আনুষ্ঠানিকভাবে না হলেও ঘরোয়াভাবে নেতাকর্মী ও পরিচিতজনদের সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন তারা। বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ ঢাকায় ঈদ করলেও ঈদের আগের দুদিন তিনি ফরিদপুরে নিজের নির্বাচনি এলাকায় ছিলেন। সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবন ঈদ করেছেন নির্বাচনি এলাকা হবিগঞ্জেই।

বিএনপির দায়িত্বশীলরা বলছেন, নেতাদের মধ্যে অনেকেই কারাগারে ঈদ করেছেন। চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ছাড়াও দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুস সালাম পিন্টু, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও যুগ্ম-মহাসচিব আসলাম চৌধুরী, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুসহ অনেকের ঈদই কারাগারে কেটেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইং সদস্য শায়রুল কবির খান বলেন, ‘ঈদকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক নেতারা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড রাখেন। কিন্তু সব ঈদের যে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থাকে, তা কিন্তু না। নির্বাচন সামনে এলে, সেটা যে নির্বাচনই হোক, স্থানীয় বা জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখেই নেতাকর্মীরা উৎসব উপলক্ষে তাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে রাখেন। দেশে স্বস্তিদায়ক-আনন্দদায়ক পরিবেশ নেই। আমাদের তো অনেকগুলো বিপর্যয়, এই বিপর্যয় উজিয়ে পরিকল্পিতভাবে-অপরিকল্পিতভাবে আয়োজন হয়েছে। কিন্তু সাধ্যমতো করেছে। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো, আমাদের নেত্রী কারাগারে। পাশাপাশি মামলা ও হয়রানি তো এখনও আছে।’ এ কারণেই আয়োজনে ছন্দপতন থাকতে পারে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

/এমএনএইচ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ইতিহাস বিকৃত করে বিএনপি সফল হয়নি, এখন আবোল-তাবোল বলছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
ইতিহাস বিকৃত করে বিএনপি সফল হয়নি, এখন আবোল-তাবোল বলছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
শাহীনকে সরিয়ে বাবরকে নেতৃত্বে ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে পিসিবি!
শাহীনকে সরিয়ে বাবরকে নেতৃত্বে ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে পিসিবি!
মেঘলা আকাশ থেকে ঝরতে পারে বৃষ্টি, বাড়বে গরম
মেঘলা আকাশ থেকে ঝরতে পারে বৃষ্টি, বাড়বে গরম
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত সাংবাদিকের সংখ্যা বেড়ে ১৩৭
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত সাংবাদিকের সংখ্যা বেড়ে ১৩৭
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়