X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৪ বৈশাখ ১৪৩১

জানুয়ারিতেই তিন সিটির প্রার্থী ঠিক করেছে বিএনপি?

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
০২ জুলাই ২০১৯, ২৩:৫৭আপডেট : ০৩ জুলাই ২০১৯, ০১:০৪

ঢাকা উত্তর, দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের পরবর্তী নির্বাচন নিয়ে যা ভাবছে বিএনপি জোট ও বামদলগুলো

ঢাকা উত্তর, দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব অনেক আগে থেকেই ইতিবাচক। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হেরে গিয়েও সংসদে যোগ দেওয়ার নেপথ্যে এ মনোভাব কাজ করেছে হাইকমান্ডের। আর এই মনোভাব থেকে চলতি বছরের জানুয়ারিতেই তিন সিটির সম্ভাব্য প্রার্থীকে কাজে মনোযোগ দেওয়ার নির্দেশ দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।  তবে বিএনপির দায়িত্বশীল একটি পক্ষ জানিয়েছে, বামজোটের সঙ্গে নির্বাচনের আগে কোনও সমঝোতা হলে বাম দলগুলোর কোনও নেতাকে প্রার্থী করার বিষয়ে সমর্থন দিতে পারে বিএনপি। এক্ষেত্রে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রার্থী চূড়ান্ত করতে আরও সময় নেবে দলটি।

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে ঘিরে বিএনপির যেসব প্রার্থী আলোচনায়

বিএনপির স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য জানান, ২০১৫ সালে ঢাকা উত্তরে তাবিথ আউয়াল, দক্ষিণে মির্জা আব্বাস ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এম মনজুর আলম প্রার্থী হিসেবে মনোনীত হয়েছিলেন। আসন্ন তিন সিটি নির্বাচনে একমাত্র তাবিথ আউয়াল ছাড়া বাকি দুটোতে পরিবর্তন আসতে পারে। ঢাকা দক্ষিণে সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাক হোসেন ও চট্টগ্রামে ডা. শাহাদাত হোসেন দলের হাইকমান্ডের ইতিবাচক ইঙ্গিত পেয়েছেন। এই তিন প্রার্থীর ঘনিষ্ঠ একাধিক বিএনপি নেতা বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, গত জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেছেন তারেক রহমান। তাদেরকে প্রাথমিকভাবে কাজ করার জন্য তিনি নির্দেশনাও দেন ওই সময়। তবে বিএনপির একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, ঢাকা উত্তর ছাড়া বাকি দুটোতে এখনও চূড়ান্ত নয়। ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে হাবিবুন নবী খান সোহেলের নামও জানায় সূত্রটি।

২০১৫ সালে ডিএনসিসিতে বিএনপির প্রার্থী হতে মনোনয়ন তুলেছিলেন তাবিথ আউয়ালসহ পাঁচজন। এরা হলেন, বিএনপির বিশেষ সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপন, সাবেক সংসদ সদস্য মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান, বিএনপির সহ-প্রচার সম্পাদক শাকিল ওয়াহেদ ও ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সভাপতি এম এ কাইয়ুম। বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন প্রবীণ সদস্য অগ্রিম জানিয়ে রাখলেন, ‘ডিএনসিসিতে তাবিথ আউয়ালই চূড়ান্ত হবেন।’

অবিভক্ত ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন বাংলা ট্রিবিউন বলেন, ‘নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে দল বগুড়া-৬ উপনির্বাচনে প্রার্থী দিয়েছে। সেখানে আমাদের দলীয় প্রার্থী বিশাল ব্যবধানে জয়লাভ করেছে। এখন সিটি নির্বাচনে দল আমাকে যোগ্য মনে মনোনয়ন দেয় নির্বাচনের জন্য আমি প্রস্তুত আছি।’

দলের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গণতান্ত্রিক দল হিসেবে নির্বাচনের জন্য আমরা সব সময় প্রস্তুত আছি। দল থেকে সিটি নির্বাচনে যাকে মনোনয়ন দেবে তার পক্ষে কাজ করবো। দেশের জনগণকে সরকার যদি ভোট দেওয়া সুযোগ দেয়, তাহলে মানুষ তার দেবে। যেমনটি বগুড়া-৬ উপ নির্বাচনে দিয়েছে।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য জানান, গত ২৪ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় নির্বাচনে না যাওয়ার। ওই সিদ্ধান্তের পর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেয়নি বিএনপি। এমনকি দলীয়ভাবে স্বতন্ত্র প্রার্থিতায়ও অনাগ্রহ দেখানো হয়। ওই বৈঠকের পর বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংবাদ মাধ্যমে বলেছিলেন, ‘বিএনপি এখন থেকে এই সরকারের অধীনে কোনও নির্বাচনেই অংশ নেবে না। ডিএনসিসি, উপজেলা নির্বাচনেও বিএনপি অংশ নেবে না।’

যদিও বিএনপির ওই ঘোষণার কয়েকদিন পরেই সম্ভাব্য প্রার্থীদের নির্বাচনের বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেন লন্ডনে অবস্থানরত তারেক রহমান। অবশ্য বিএনপি নেতারা এখনই এ বিষয়ে স্পষ্ট করে বক্তব্য দিতে নারাজ। জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এখনও হয়নি। নির্বাচনের তো এখন সময় আছে। ফলে সময়মতো এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলু বলেন, ‘নির্বাচনে তো এখন অনেক সময় বাকি আছে। ফলে নির্বাচনে অংশগ্রহণ সিদ্ধান্ত বা প্রার্থী ঠিক করার সঠিক সিদ্ধান্ত সময়মতো নেওয়া হবে।’

ঢাকা উত্তর সিটিতে প্রার্থী হতে ইচ্ছুক এলডিপি’র যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম

এদিকে, বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরিক এলডিপির যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম প্রার্থী হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি জোট, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও জাতীয় মুক্তি মঞ্চের পক্ষ থেকে মনোনয়ন চাইবেন। বাংলা ট্রিবিউনকে এলডিপির এই নেতা বলেন, ‘আমি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে চিন্তাভাবনা করছি। জোটগতভাবে বিষয়টি আলোচনা হবে। আমরা ২০ দলীয় জোটের শরিক, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে বিএনপি আছে, আমাদের জাতীয় মুক্তি মঞ্চ আছে, আশা করি তিনজোটের পক্ষ থেকেই আমি সমর্থন পাবো। ঢাকা উত্তর সিটিতে আমার ভালো পরিচিতি আছে। এ অঞ্চলের ভোটাররা আমার নিয়ামক শক্তি।’

বিএনপি-জোটের অন্যতম শরিক জামায়াতে ইসলামীর নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত এখনও গ্রহণ করেনি। গত নির্বাচনে দলটির ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি মো. সেলিম উদ্দিন প্রার্থী হতে চাইলেও পরে সরে দাঁড়ান। পরে একাদশ জাতীয় নির্বাচনের পর বিএনপির মতো এ বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি দলের আমির মকবুল আহমাদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের বৈঠকে বর্তমান সরকারের অধীনে আর কোনও নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নেয় জামায়াতে ইসলামী।

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বাম দলগুলোর প্রার্থী হতে পারেন গত নির্বাচনের প্রার্থীরাই

 

বাম ও ইসলামী দলগুলোর পুরনো প্রার্থীদের সম্ভাবনা বেশি

বিএনপির মতো কয়েকটি বামদল ও ইসলামী আন্দোলনও তিন সিটিতে প্রার্থী দেওয়ার বিষয়ে ইতিবাচক। সিদ্ধান্ত এখনও চূড়ান্ত না করলেও  সম্ভাবনা রয়েছে অংশগ্রহণের, এমন কথা জানিয়েছেন দলগুলোর নেতারা।

২০১৫ সালে ডিএনসিসি নির্বাচনে ‘আগামীর ঢাকা, সকলে মিলে’ শীর্ষক ব্যানারে স্বতন্ত্রভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি। পরে নির্বাচনের দিনদুপুরে সংবাদ সম্মেলন ডেকে ব্যাপক ভোট কারচুপির অভিযোগ এনে ফলাফল আগাম প্রত্যাখ্যান করেন তিনি। আসন্ন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন কিনা, এ নিয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেননি সাকি। তিনি বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে মানুষের কোনও আগ্রহ নেই। কারণ, এই সরকার মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছে ৩০ জানুয়ারি নির্বাচনে। নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা বা না করা নিয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি উল্লেখ করে জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘কারণ নির্বাচনের এখনও সময় আছে। ফলে কোনও সম্ভাবনাই উড়িয়ে দেওয়া যায় না।’

২০১৫ সালের ডিএনসিসি নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন সিপিবির প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুল্লাহ আল ক্বাফী রতন। ওই নির্বাচনে তিনি হাতি প্রতীক নিয়ে ২ হাজার ৪৭৫টি ভোট পেয়েছিলেন। সেবার তিনি ‘সবার জন্য বাসযোগ্য ঢাকা আন্দোলন’ ব্যানারে প্রার্থিতা করেছিলেন।

বাংলা ট্রিবিউনকে আবদুল্লাহ আল ক্বাফী রতন বলেন, ‘নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার বিষয়ে সিপিবি ইতিবাচক। তবে আমরা কিভাবে নির্বাচন করবো, আমাদের জোট আছে, এসব বিষয় এখনও চূড়ান্ত হয়নি।’

ডিএসসিসি ও ডিএনসিসি নির্বাচনে ইসলামী দলগুলোর সম্ভাব্য প্রার্থীরা

সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নেবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। অন্যান্য ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলো এখনও এই তিন সিটি নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। ইসলামী আন্দোলন প্রার্থী ঘোষণা না দিলেও দলটির দুই নেতাকে চলছে আলোচনা। দলটির ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ উত্তরে এবং কেন্দ্রীয় মহিলাও পরিবার কল্যাণ সম্পাদক আব্দুর রহমান দক্ষিণে প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় এগিয়ে রয়েছেন।

এ বিষয়ে প্রচার সম্পাদক মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম বলেন,  নির্বাচনে প্রার্থীর বিষয়টি এখনও চূড়ান্ত হয়নি। তফসিল ঘোষণা হলে প্রার্থীদের নাম আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা করা হবে।

আরও পড়ুন: 

মাহী-রনি-সাকি-ক্বাফিসহ ৪২ মেয়রপ্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত

 

 

 

 

/এএইচআর/সিএ/এসটিএস/টিএন/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
দ্বিতীয় বিয়ে করায় ছেলের আঘাতে প্রাণ গেলো বাবার
দ্বিতীয় বিয়ে করায় ছেলের আঘাতে প্রাণ গেলো বাবার
নুসিরাত শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি হামলা, শিশুসহ নিহত ৮
নুসিরাত শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি হামলা, শিশুসহ নিহত ৮
দক্ষিণে ‘ডায়াবেটিক ধানের’ প্রথম চাষেই বাম্পার ফলন, বীজ পাবেন কই?
দক্ষিণে ‘ডায়াবেটিক ধানের’ প্রথম চাষেই বাম্পার ফলন, বীজ পাবেন কই?
লাল কৃষ্ণচূড়া, বেগুনি জারুলে ছুঁয়ে যায় তপ্ত হৃদয়
লাল কৃষ্ণচূড়া, বেগুনি জারুলে ছুঁয়ে যায় তপ্ত হৃদয়
সর্বাধিক পঠিত
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!