X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

দুর্নীতি-সন্ত্রাস দমন অভিযান যেভাবে দেখছে আ.লীগ

এমরান হোসাইন শেখ
২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১২:২৮আপডেট : ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ২১:৪৮

আওয়ামী লীগ

পরিকল্পিতভাবেই দুর্নীতি-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে সরকার। নির্বাচনি ইশতেহারে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণের লক্ষ্যে এ অভিযান চালানো হচ্ছে। নতুন দফায় সরকার গঠনের পরপরই মাদকের বিরুদ্ধে অভিযানও চালানো হয়েছে ইশতেহারের কথা মাথায় রেখেই। ক্ষমতাসীন দলের নেতারা সরকারের এই কঠোর অবস্থানকে স্বাগত জানিয়ে অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন। তারা মনে করেন, এতে সরকারের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল হবে।

আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দলের নাম ভাঙিয়ে অবৈধ ব্যবসা পরিচালনা করা, আঙুল ফুলে কলাগাছে পরিণত হয়ে ক্ষমতার দাপট দেখানো ও বলয় তৈরি করে রাজনীতি করা কথিত নেতাদের লাগাম টেনে ধরতেই করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের সর্বস্তরে শুদ্ধি অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে তিনি দলকে পরিশুদ্ধ করে জনগণের কাছে আওয়ামী লীগকে জনপ্রিয় সংগঠন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছেন।

ক্ষমতাসীন দলটির একাধিক নেতা বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, গত ১১ বছর আওয়ামী লীগ সরকারে থেকে দেশের উন্নয়নে যেভাবে অবদান রেখে চলেছে, সেভাবে দল ও সরকারের ইমেজ বাড়েনি। সরকারের সেক্টর-ভিত্তিক ঈর্ষণীয় উন্নয়ন হলেও তা ম্লান হয়েছে কতিপয় দুর্নীতিবাজ আর সন্ত্রাসীর অপকর্মে। এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে মাদক। আর এসবের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বেশির ভাগই ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে কোনও না কোনোভাবে সম্পৃক্ত। আর এসব অনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে সরকারি দলের কারো না কারো ছত্রচ্ছায়ায়। বদনামটা শেষ পর্যন্ত দল বা সরকারের ওপরই এসে পড়ছে। ফলে সরকারের সব উন্নয়ন ছাপিয়ে এসব অপকর্ম সামনে চলে আসছে।

আওয়ামী লীগ নেতারা জানান, এসব বিষয় বিবেচনা করে সরকার এবার মাদক নির্মূল ও দুর্নীতি-সন্ত্রাস দমনের ওপর জোর দিয়েছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’ শিরোনামে ইশতেহার ঘোষণা করা হয়েছে। সেটির দুটো ধারায় দুর্নীতি-সন্ত্রাস ও মাদক নির্মূলের ভূমিকা পালনে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। ধারা দুটি হলো— ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ’ এবং ‘সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, সাম্প্রদায়িকতা ও মাদক নির্মূল’।

এই প্রতিশ্রুতি পূরণের অংশ হিসেবে অপকর্মে জড়িতদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করা হয়েছে। আর এর মধ্য দিয়ে সরকারপ্রধান দল ও সরকারের ইমেজ আরও বাড়াতে চান বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের নেতারা। তারা জানান, চলমান অভিযান আপাতদৃষ্টিতে আকস্মিক মনে হলেও এর পূর্বপরিকল্পনা সরকারের ছিল। আগে হোক, পরে হোক এটা হতোই।

সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) মেহেরপুরে এক অনুষ্ঠানে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘শেখ হাসিনার নির্দেশেই দলের মধ্যে শুদ্ধি অভিযান পরিচালনা শুরু হয়েছে। এ বিষয়ে তিনি কখনও পিছপা হননি। নির্বাচনি ইশতেহার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নিজেদের থেকেই আমরা শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছি।’

এদিন সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, ‘চুনোপুঁটি-রাঘববোয়াল বলতে কিছু বুঝি না। গডফাদার বা গ্র্যান্ডফাদার বলতে আমরা কাউকে চিনি না। যারা অপরাধ করবে তাদেরই শাস্তি পেতে হবে। অবৈধ ব্যবসা ও টেন্ডারবাজির মতো অপকর্মের বিরুদ্ধে সরকারের এই অভিযান চলছে। চাঁদাবাজি, অবৈধ দখল— এগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান চলছে, চলবে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান আমরা আগেই শুরু করেছি। এই দুর্নীতিবাজ-সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযানটা আমরা আরও আগেই শুরু করতে পারতাম। নির্বাচন, ঈদ, শোকের মাসসহ বিভিন্ন কারণে মাঝে কিছুটা পিছিয়েছে।’

দলের একজন কর্মী হিসেবে অভিযানের জন্য নিজের গর্ববোধের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এটা খুবই ভালো পদক্ষেপ। দলীয়ভাবে আমরা এটার জন্য খুবই খুশি। যে পদক্ষেপগুলো হচ্ছে তা প্রো-পিপল। মানুষ এতে খুব খুশি। কারণ, আমরা খুব চাপে ছিলাম ছাত্রলীগ কী করলো, যুবলীগ কী করলো, বড় বড় নেতারা, গডফাদাররা পর্দার পেছনে থেকে কী করলো, তা নিয়ে। আর একটা কথা মনে রাখবেন, এসব যারা করে তারা সংখ্যায় কিন্তু খুবই অল্প।’ ঢালাওভাবে তারা সবাই কেন গুটিকয়েক নেতাকর্মীর অপকর্ম আর দোষের ভাগ নিতে যাবেন বলে প্রশ্ন তোলেন তিনি।

এবারের নির্বাচনি ইশতেহারে সন্ত্রাস-দুর্নীতি বন্ধ ও মাদক নির্মূলের ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, “আমাদের নেত্রী মাদক ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির ঘোষণা দিয়েছেন।”

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘শেখ হাসিনার মহৎ উদ্দেশ্যের মহৎ উদ্যোগ, এই অভিযানকে এভাবে দেখি। সারাদেশের মানুষের কাছে এটা প্রশংসিত হয়েছে।’ তার মতে, এই অব্যাহত থাকলে জনগণের কাছে শেখ হাসিনার গ্রহণযোগ্যতা আরও বাড়বে।

বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, সবাই খুশি হলেও একটি দল দেখছি এটাকে ভালোভাবে নিতে পারছে না। তাদের অন্য কোনও রাজনীতি নেই বলেই এটাকে সমালোচনা করছে। এটা সমালোচনা করে তারা জনগণের আস্থার ডাস্টবিনে নিক্ষিপ্ত হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

/এইচআই/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
যুদ্ধ কোনও সমাধান আনতে পারে না: প্রধানমন্ত্রী
যুদ্ধ কোনও সমাধান আনতে পারে না: প্রধানমন্ত্রী
শপথ নিলেন আপিল বিভাগের নতুন তিন বিচারপতি
শপথ নিলেন আপিল বিভাগের নতুন তিন বিচারপতি
চীনে আমেরিকার কোম্পানিগুলোর প্রতি ন্যায্য আচরণের আহ্বান ব্লিঙ্কেনের
চীনে আমেরিকার কোম্পানিগুলোর প্রতি ন্যায্য আচরণের আহ্বান ব্লিঙ্কেনের
সারা দেশে আরও ৭২ ঘণ্টার ‘হিট অ্যালার্ট’ জারি
সারা দেশে আরও ৭২ ঘণ্টার ‘হিট অ্যালার্ট’ জারি
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা
২৪ ঘণ্টা পর আবার কমলো সোনার দাম
২৪ ঘণ্টা পর আবার কমলো সোনার দাম
আপিল বিভাগে নিয়োগ পেলেন তিন বিচারপতি
আপিল বিভাগে নিয়োগ পেলেন তিন বিচারপতি