X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ছাত্রলীগের কেন্দ্রেই নজর সবার, তৃণমূলে কমিটি হয় না বছরের পর বছর

মাহবুব হাসান
০২ অক্টোবর ২০১৯, ১২:০০আপডেট : ০২ অক্টোবর ২০১৯, ২২:২৬

বাংলাদেশ ছাত্রলীগ

কেন্দ্রীয় কমিটি ছাড়া মাত্র চারটি মেয়াদকালীন কমিটি দিয়ে চলছে ছাত্রলীগ। সংগঠনটির ১১১টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে ১০৭টি কমিটির মেয়াদোত্তীর্ণ। ছাত্রলীগ থেকে সম্প্রতি অব্যাহতিপ্রাপ্ত সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী যে চারটি কমিটি করে গেছেন, শুধু সেগুলোরই মেয়াদ আছে। এমন অনেক কমিটি আছে যেগুলো চলছে আট  থেকে নয় বছর ধরে। আবার আহ্বায়ক কমিটি দিয়েই কোনও কোনও  শাখা চলছে বছরের পর বছর। অনেক জায়গায় নেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি নেই। শুধু সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক দিয়ে চলছে অন্তত তিনটি কমিটি।

সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ছাত্রলীগে কেন্দ্রের চেয়েও তৃণমূলে চলছে বেশি বিশৃঙ্খলা। কেননা, কমিটির মেয়াদ পার হয়ে যাওয়ায় এখন আর মেয়াদোত্তীর্ণ শাখার শীর্ষ নেতাদের মানতে চাইছেন না কর্মীরা। বরং পদ প্রত্যাশীরা নিজেরাই এখন   বলয় সৃষ্টি করছেন। আবার অনেক শাখায় সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক বা আহ্বায়কের ছাত্রত্ব শেষ হয়ে যাওয়ায় তারা পেশাগত জীবন শুরু করেছেন। যদিও তারা এখনও পদ ছাড়েননি। সব মিলিয়ে মেয়াদোত্তীর্ণ শাখাগুলোর চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়েছে। এদিকে দ্বিতীয় বা মধ্যমসারির যেসব নেতা শীর্ষ নেতৃত্বে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছেন, কমিটি না হওয়ায় তাদেরও বয়সসীমা পার হয়ে যাচ্ছে। হতাশাগ্রস্ত হয়ে তারা রাজনীতি ছেড়ে চাকরির দিকে ঝুঁকছেন।

তবে, ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য বলেন— ‘এসব জটিলতা নিরসনে তারা কাজ করছেন। বেশি খারাপ অবস্থা বিবেচনায় এরইমধ্যে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে একটি তালিকা করা হচ্ছে। প্রথমে সেই কমিটিগুলো করা হবে। পর্যায়ক্রমে মেয়াদোত্তীর্ণ সব কমিটি গঠন করা হবে।’

উল্লেখ্য, রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন সভাপতি এবং গোলাম রাব্বানী সাধারণ সম্পাদক হিসেবে চারটি কমিটি দিয়েছেন। এগুলো হলো— ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ, কুষ্টিয়া বিশ্ববিদ্যালয় এবং চট্টগ্রাম বিশ্বদ্যিালয়ের কমিটি গঠন করে গেছেন তারা। এর বাইরে সবগুলো জেলা বা জেলার মর্যাদাসম্পন্ন কমিটি এবং কেন্দ্রের অধীনে যেসব সাংগঠনিক ইউনিট আছে সেগুলোর সবই মেয়াদোত্তীর্ণ।

ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী— কেন্দ্রীয় কমিটির মেয়াদ দুই বছর এবং জেলা ইউনিটের মেয়াদ একবছর, আর  আহ্বায়ক কমিটির মেয়াদ তিন মাস। দেখা গেছে, শোভন-রাব্বানী দায়িত্ব নেওয়ার আগেই মেয়াদ পার হয়েছে অর্ধ শতাধিক কমিটির। তারা দায়িত্ব নেওয়ার পর মেয়াদ শেষ হয়েছে বাকি কমিটিগুলোর। তারা দায়িত্ব নেওয়ার আগেই মেয়াদ পার হওয়া ২৫ থেকে ৩০টি কমিটির বয়স ছয় থেকে নয় বছর।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে চলছে টাঙ্গাইল জেলা, ঢাকা কলেজ এবং ইডেন কলেজের কমিটি। শুধু সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দিয়ে চলছে ময়মনসিংহ জেলা, রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটি। আর  শুধু সভাপতি দিয়ে চলছে বরিশাল মহানগরের কমিটি। এদিকে ২০১৬ সালের নভেম্বরে গঠিত ঢাকা কলেজের আহ্বায়ক কমিটির আহ্বায়ককে এক মাসের মাথায় বহিষ্কারের পর আজ  অবধি সেখানে কমিটি হয়নি, নতুন করে কাউকে আহ্বায়কের দায়িত্বও দেওয়া হয়নি।

ছাত্রলীগ সূত্র জানায়, ফরিদপুর, মাদারীপুর, দিনাজপুর, চট্টগ্রাম মহানগর, বাগেরহাট, খুলনা মহানগর, কিশোরগঞ্জ, গোপালগঞ্জ, শরীয়তপুর, মুন্সীগঞ্জ, গাজীপুর জেলা ও মহানগর, রাজশাহী জেলা ও মহানগর, নাটোর, বগুড়া, জয়পুরহাট, সিলেট জেলা ও মহানগর, নেত্রকোনা, জামালপুর, বরিশাল জেলা ও বরিশাল মহানগরের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে কমিটির মেয়াদ সাত থেকে নয় বছর। আর ছাত্রলীগের সোহাগ-জাকিরের আমলে করা অর্ধশতাধিক কমিটির মেয়াদ চার থেকে পাঁচ বছর হয়েছে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো— রংপুর জেলা ও মহানগর, পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও, ঝালকাঠি, ভোলা, বরগুনা, কুমিল্লা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ, ফেনী, কক্সবাজার, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ। 

শোভন-রাব্বানী চারটি কমিটি গঠন ছাড়াও সম্মেলন করেছিল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের। কিন্তু দুই মাস পার হলেও সেগুলোর কমিটি হয়নি। এছাড়া, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটি ভেঙে দেওয়া হলেও সেখানে সম্মেলন করে যেতে পারেননি তারা। ফলে কমিটি ছাড়াই চলছে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতি।

প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের ১১ ও ১২ মে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন ছাড়াই ছাত্রলীগের দুই দিনব্যাপী ২৯তম জাতীয় সম্মেলন শেষ হয়। পরে ৩১ জুলাই রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনকে সভাপতি এবং গোলাম রাব্বানীকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি গঠিত হয়। কিন্তু বিভিন্ন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৪ সেপ্টেম্বর শোভন-রাব্বানীকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে প্রথম সহ-সভাপতি আল নাহিয়ান জয়কে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এবং প্রথম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এর আগে ২০১৫ সালের ২৬ ও ২৭ জুলাই সম্মেলনের মাধ্যমে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন সাইফুর রহমান সোহাগ ও এসএম জাকির হোসেন। তারও আগে ২০১১ সালে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন এইচএম বদিউজ্জামান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম। আর ২০০৬ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন মাহমুদ হাসান রিপন ও সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটন।

 

 

/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
প্রতিবন্ধী শিল্পীদের আয়োজনে মঞ্চস্থ হলো ‘সার্কাস সার্কাস’ নাটক
প্রতিবন্ধী শিল্পীদের আয়োজনে মঞ্চস্থ হলো ‘সার্কাস সার্কাস’ নাটক
‘শো মাস্ট গো অন’
চিকিৎসা সুরক্ষা আইন জরুরি‘শো মাস্ট গো অন’
ছাদে আম পাড়তে গিয়ে নিচে পড়ে শিশুর মৃত্যু
ছাদে আম পাড়তে গিয়ে নিচে পড়ে শিশুর মৃত্যু
বেয়ারস্টো-শশাঙ্কে হেসেখেলে ২৬২ রান করে জিতলো পাঞ্জাব
বেয়ারস্টো-শশাঙ্কে হেসেখেলে ২৬২ রান করে জিতলো পাঞ্জাব
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!