X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

কাউন্সিলের আগে আন্দোলনে যাবে না বিএনপি?

সালমান তারেক শাকিল
৩০ ডিসেম্বর ২০১৯, ২২:১৪আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০১৯, ২২:৫১

কাউন্সিলের আগে আন্দোলনে যাবে না বিএনপি? বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কারামুক্ত করতে কিংবা নতুন নির্বাচনে সরকারের ওপর চাপ দিতে এখনই কঠোর কোনও আন্দোলনে যেতে চান না দলটির নেতারা। দলের সাধারণ নেতাকর্মী, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোর নেতারা কার্যকর কর্মসূচির চাপ দিলেও দলটির নীতি-নির্ধারকরা আন্দোলনে যাওয়ার জন্য আরও সময়ের পক্ষে। তাদের ধারণা, এই মুহূর্তে রাজনৈতিক-সাংগঠনিক বাস্তবতায় ‘শক্ত আন্দোলন’ গড়ে তোলার মতো সক্ষমতা বিএনপির নেই। এছাড়া, আন্দোলন ইস্যুতে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও  ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মনোভাবেও কোনও পরিবর্তন আসেনি। এসব কারণে সংগঠনকে শক্তিশালী করতে রাজপথে কঠোর আন্দোলনে না গিয়ে নতুন বছরে কেন্দ্রীয় কাউন্সিল করার পক্ষে দলটির স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য। যদিও কেন্দ্রীয় সম্মেলনের বিষয়ে শীর্ষ নেতৃত্বের ভাবনা কী, তা এখনও পরিষ্কার নয়। বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের একাধিক নেতার সঙ্গে আলাপকালে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। 

বিএনপির উচ্চপর্যায়ের একটি সূত্রে জানা গেছে, রাজনৈতিকভাবে বিএনপি যে পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে, তাতে জনসম্পৃক্ততা নেই। দলের তৃণমূল ও সাধারণ নেতাকর্মীরা খালেদা জিয়ার মুক্তির লক্ষ্যে কিংবা নতুন নির্বাচনের জন্য সরকারকে বাধ্য করতে আন্দোলনের জন্য আগ্রহ দেখালেও তাতে জনসমর্থনের বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে খোদ দলের হাইকমান্ডেরই। তবে কেন জনসম্পৃক্ত হতে ব্যর্থ হয়েছে বিএনপি—সেই ব্যাখ্যা না দিলেও শিগগিরই এই বিষয়ে সমাধান চান নেতারা।

দলের স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য জানান, কথায়-কথায় নেতা-কর্মীরা আন্দোলনের কথা বললেও আদতে সে সক্ষমতা বিএনপির নেই। আর এই অক্ষমতার বিষয়টি খোদ তারেক রহমানও জানেন। তারেকের ঘনিষ্ঠ নেতারা যতবারই তার কাছে কর্মসূচির বিষয়টি তুলেছেন, ততবারই তিনি এড়িয়ে গেছেন। বিএনপির একাধিক সিনিয়র নেতার মতে, গত ১০ বছরে বিএনপির নেতাকর্মীরা যেভাবে হামলা-মামলা ও হয়রানির শিকার হয়েছেন, তাতে নতুন দলের নেতাকর্মীদের সমস্যার দিকে ঠেলে দেওয়ার মতো কোনও সিদ্ধান্ত নিতে চান না তারেক রহমান। বিএনপির বর্তমান সাংগঠনিক পরিস্থিতি নিয়ে তিনি নিজেও সন্দিহান বলে জানান দলটির নেতারা।

রবিবার (২৯ ডিসেম্বর) খালেদা জিয়ার পরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র দাবি করে, ‘নিজের মুক্তি প্রসঙ্গে এখনও আগের অবস্থানেই রয়েছেন খালেদা জিয়া। শর্তসাপেক্ষে জামিনে মুক্তি পেয়ে উন্নত চিকিৎসা নিতে বিদেশ যেতে চান না তিনি। উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর প্রস্তাব দিলেও স্বাভাবিক জামিনের পক্ষেই বিএনপি চেয়ারপারসন। এদিন সন্ধ্যায় খালেদা জিয়ার ভাই শামীম ইস্কান্দার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছি না। সরকার কিছু করতে দিচ্ছে না। গত ১৪ ডিসেম্বর খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেছিলাম। তারপর আর দেখা করতে দেওয়া হয়নি। আমরা আবার আবেদন করেছি।’ খালেদা জিয়া নিজে কী চান—জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমি কিছু বলতে চাই না।’

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফরানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায়ে খালেদা জিয়াকে ৫ বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত। এরপর উচ্চ আদালতে গেলে আরও পাঁচ বছর সাজা বাড়ে। বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রিজন সেলে চিকিৎসাধীন আছেন।

গত শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক জেএসডির সম্মেলনে গিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও এ কথাটি উল্লেখ করেছেন। তিনি সেখানে জোর দিয়েই বলেছেন, ‘সব দলকে একসঙ্গে এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন প্রভাবশালী সদস্য বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দলের কাউন্সিল করতে হবে আগে। কারণ, তিন ধারায় বিভক্ত নেতৃত্বের মধ্য দিয়ে মৌলিকভাবে বিএনপির অর্জন খুব কম। আগামী দিনের রাজনীতিতে খালেদা জিয়া কারাবন্দি থাকায় তার অবস্থান আরও মজবুত করলেও দল হিসেবে বিএনপির ব্যর্থতা অনেক। আর এই ব্যর্থতার জন্য বড় দায় বর্তমান নেতৃত্বেরই। সে কারণে কাউন্সিল করা জরুরি।’

‘এখনও কাউন্সিল নিয়ে স্থায়ী কমিটিতে কোনও আলোচনা হয়নি’ জানিয়ে এই সদস্য আরও বলেন, ‘আগামী বছরের মার্চ-এপ্রিল নাগাদ কাউন্সিল করে ফেলা উচিত।’ দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে বিষয়টি চিন্তা-ভাবনা করারও অনুরোধ করেন তিনি।

কাউন্সিল ও আন্দোলন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বলেন, ‘দেশে যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে, তার পলিটিক্যাল ক্যারেক্টার দাঁড় করাতে হবে। সর্বদলীয় বিরোধী ঐক্য না করে দাবি মানতে সরকারকে বাধ্য করা যাবে না। সেই লক্ষ্যেই কাজ করছে বিএনপি।’

এরআগে, ২০১৬ সালের মার্চে সর্বশেষ কাউন্সিল করে বিএনপি। ওই কাউন্সিলে খালেদা জিয়া দলের চেয়ারপারসন হিসেবে পুনঃনির্বাচিত হন। আর ‘ভারপ্রাপ্ত’ থেকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পূর্ণ মহাসচিবের দায়িত্ব পান।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোর নেতারাও চাইছেন, বিএনপি সক্রিয় হোক রাজপথে। তাদের ধারণা, বিএনপি নিষ্ক্রিয় বলেই খালেদা জিয়ার মুক্তি মিলছে না। এরই সুযোগ নিয়ে আওয়ামী লীগ বিতর্কিত নির্বাচন করে দুই দফায় সরকার গঠন করেছে বলেও তারা মনে করেন।

ফ্রন্টের উদ্যোক্তা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিএনপিকে রাজপথে নেমেই দাবি আদায়ে সরকারকে বাধ্য করতে হবে। আন্দোলনের বাইরে আর কোনও পথ নেই। কিন্তু বিএনপির নেতৃত্ব এটা চায় না বলেই মনে হয়। আমি মনে করি, বিএনপিকে নতুনভাবে ঘুড়ে দাঁড়াতে হলে, নেতাকর্মীদের চাঙা করতে হলে দলকে নতুন করে গড়ে তুলতে হবে। বয়স্ক নেতাদের সম্মানের সঙ্গে বিদায় নিতে হবে। তরুণদের জায়গা করে দিতে হবে।’

জাফরুল্লাহ চৌধুরীর অভিযোগ, ‘খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলন না হওয়ার জন্য বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা দায়ী। তারা ভাবছেন, তাদের নেত্রী এমনিতে মুক্তি পাবেন।’

ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেনও দু’দিন আগে জোটটির নেতাদের সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তবে, সোমবার এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি কথা বলতে অনীহা প্রকাশ করেন।

জোটটির অন্যতম নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না সোমবার ‘গণতন্ত্র উদ্ধার আন্দোলন’ নামে নতুন ব্যানারে সমাবেশ করেছেন। সমাবেশে আ স ম আবদুর রব, মাওলানা নুর হোসাইন কাসেমী, অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, শাহ মো. আবু জাফর, বিএনপি নেতা শওকত মাহমুদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসিফ নজরুল, আলোকচিত্রী শহিদুল আলম, জগলুল হায়দার আফ্রিকসহ অনেকে বক্তব্য রাখেন।

‘গণতন্ত্র উদ্ধার আন্দোলন’ প্রসঙ্গে মাহমুদুর রহমান মান্না বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এটি কোনও সংগঠন নয়, আজকে একটি ব্যানারে সমাবেশ হয়েছে। সমাবেশে বলেছি, আমরা আবার আসবো। শেখ হাসিনার পতন না হওয়া পর্যন্ত আমরা আছি।’

গত কয়েকদিন আগে ফ্রন্টের শীর্ষপর্যায়ের একজন নেতা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আন্দোলন বা কর্মসূচি, খালেদা জিয়ার মুক্তি—এসবের কোনও কিছুতেই বিএনপির আগ্রহ নেই। তারা আগে লক্ষ্য ঠিক করুক, এরপর ছোট দলগুলোর করণীয় নিয়ে বলা যাবে।’

ফ্রন্টের একনেতা বলেন, ‘বিএনপি ভবিষ্যতে কী করবে, এটা খুব সহজেই ঠিক হবে না। বিশেষ করে জামায়াতের সঙ্গে দলটির সম্পর্ক কী হবে, তা আগে স্পষ্ট করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধবিরোধী দলটি তাদের সঙ্গে জোটগতভাবে থাকলে এক হিসাব, না থাকলে অন্য হিসাব।’

জামায়াতের আমিরের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্রে মতে, সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক সম্ভাবনা না থাকলে বিএনপির ডাকে রাজপথে সাড়া দেবে না দলটি।

/এমএনএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
করোনার পরে মাধ্যমিকে ১০ লাখের বেশি শিক্ষার্থী কমেছে
করোনার পরে মাধ্যমিকে ১০ লাখের বেশি শিক্ষার্থী কমেছে
দক্ষিণ আফ্রিকায় বাস দুর্ঘটনায় ৪৫ তীর্থযাত্রী নিহত
দক্ষিণ আফ্রিকায় বাস দুর্ঘটনায় ৪৫ তীর্থযাত্রী নিহত
পায়ুপথে ৭০ লাখ টাকা সোনা নিয়ে ভারতে যাচ্ছিল পাচারকারী
পায়ুপথে ৭০ লাখ টাকা সোনা নিয়ে ভারতে যাচ্ছিল পাচারকারী
বিশ্বকাপের আগে আয়ারল্যান্ডে টি-টোয়েন্টি খেলবে পাকিস্তান
বিশ্বকাপের আগে আয়ারল্যান্ডে টি-টোয়েন্টি খেলবে পাকিস্তান
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়