X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

পৌরসভা নির্বাচন: উভয় সংকটে আ.লীগ

পাভেল হায়দার চৌধুরী
১৩ ডিসেম্বর ২০১৫, ০৭:৫১আপডেট : ১৩ ডিসেম্বর ২০১৫, ০৭:৫২

BAL-PEপৌরসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে উভয় সংকট দেখছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। নির্বাচনে ফলাফল খারাপ হলে সরকার বিরোধী মহল প্রশ্ন তুলবে সরকারের জনপ্রিয়তা নিয়ে। আবার ফলাফল ভাল হলে চাউর হবে কারচুপির। উভয় সংকট দেখলেও পৌরসভা নির্বাচনে ভাল ফলাফলই আশা ক্ষমতাসীনদের। তাদের মতে, সমালোচকরা সমালোচনা করবেই!
তবে গুরুত্বপূর্ণ সূত্রগুলো জানায়, নির্বাচনকে নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য করে তোলা এবং অধিক সংখ্যক পৌরসভায় দলীয় প্রার্থীর বিজয় আওয়ামী লীগের টার্গেট।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নূহ-উল আলম লেনিন বলেন, পৌরসভা নির্বাচনে জিতলেও অন্তহীন অভিযোগ উঠবে, হারলে তো গেল গেল রব উঠবে। এটা অনেক পুরনো এবং আমাদের জানা।
জানতে চাইলে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবউল আলম হানিফ বলেন, নির্বাচনে জিতলেও সরকারের সমালোচনা হবে, হারলেও হবে। এটা নিয়ে ভাবি না। সমালোচকরা সমালোচনা করবেই। এগুলো আমলে নিলে চলবে না।
আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা জানান পৌরসভা নির্বাচন দলের জন্যে উভয় সংকট হলেও বিজয়ের পাল্লা ভারী রাখতে আওয়ামী লীগ খুবই ‘সিরিয়াস’। তবে তা হবে নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে। আওয়ামী লীগ জিততেও চায়, নিরপেক্ষ নির্বাচনও চায়। তবে তারা বলেন, নির্বাচন নিরপেক্ষ করার দায়িত্ব আসলে নির্বাচন কমিশনের। এটা সরকারের বিষয় নয়। দল হিসেবে আওয়ামী লীগের টার্গেট কিভাবে বেশি পৌরসভায় বিজয়ী হওয়া যায়। আর সে লক্ষ্যে আওয়ামী লীগ কাজ করছে। ওইসব নেতারা জানান, এবার দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হচ্ছে। সুতরাং এর সঙ্গে দলের এবং সরকারের ভাবমূর্তি  জড়িত এ নির্বাচনে। তাই রাজনৈতিক ‘স্ট্যাটেজি’ হল দলীয় প্রার্থীদের বিজয় নিশ্চিত করা।

সূত্রগুলো বলছে, আওয়ামী লীগের ভেতরে দুশ্চিন্তাও রয়েছে। পৌরসভা নির্বাচন নিরপেক্ষ করে তুলতে না পারলে দেশে-বিদেশে সমালোচনার মুখে পড়তে হবে সরকারকে। সরকার বিরোধী একটি আন্দোলন ইস্যু হতে পারে। তাছাড়া নির্বাচনের পরপরই সরকারের দুই বছর মেয়াদ পূর্ণ হবে এবং ৫ জানুয়ারি আসছে। তাই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কোনও ইস্যু বা অযাচিত কিছু ঘটুক তা চায় না ক্ষমতাসীন দলটির সর্বোচ্চ মহল। অন্যদিকে নির্বাচনে সরকারদলীয় প্রার্থীদের ভরাডুবি হলে সরকারের ও দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে। নেতাকর্মীদের আস্থা-বিশ্বাসে ফাটল ধরবে। সেটাও দল ও সরকারের জন্যে ক্ষতিকর হতে পারে। তাই দুটোই আওয়ামী লীগের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। একটি ছাড়া আরেকটি অপূর্ণ থেকে যাওয়ার মতো হবে। তবুও কোনও অবস্থাতেই ভরাডুবি হোক তা চায় না আওয়ামী লীগ। আবার প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন করে আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখেও পড়তে চায় না সরকার।

তবে নিরপেক্ষ নির্বাচন প্রশ্নে আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের বক্তব্য, নিরপেক্ষ পরিবেশ বজায় রাখার দায়িত্ব শুধু সরকারের নয়, এ বিষয়টি নির্ভর করে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর ওপরেও। রাজনৈতিক দলগুলোর সদিচ্ছা এক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখবে। জিতলে যেমন খুশি হবে, হারলেও তেমনই মেনে নিতে হবে। কয়েকজন বলেন, অবশ্য নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। এখানে সরকারের দায়-দায়িত্ব তেমন একটা নেই। তাছাড়া নির্বাচন কমিশন সচিবালয় এখন সম্পূর্ণ স্বাধীন।

আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর দুই নেতা বলেন, নিরপেক্ষ নির্বাচন ও বেশি পৌরসভায় বিজয় অর্জন আমাদের অন্যতম লক্ষ্য। তবে নিরপেক্ষতা বজায় রাখার বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের। এ বিষয়টি নিশ্চিত করবেন ইসি। সরকার নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্যে যা যা সহযোগিতা করার দরকার তার সবই করবে।

সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বেশি সংখ্যক মেয়রকে বিজয়ী করতে প্রার্থী বাছাইকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে প্রার্থীদের ওপর কয়েকদফা জরিপ চালানো হয়েছে। এরপর যোগ্যতার ভিত্তিতে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। তৃণমূলের পছন্দকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে বেশি জনপ্রিয় যে প্রার্থী পাওয়া গেছে তাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এই প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়েছে জয় নিশ্চিত করতে।

জানতে চাইলে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, এই মুহুর্তে পৌরসভা নির্বাচন সরকারের জন্যে চ্যালেঞ্জ এটা ঠিক, তবে সেই চ্যালেঞ্জে প্রাথমিকভাবে সফল হয়েছে সরকার। জ্বালাও-পোড়াও করে একটি রাজনৈতিক দল অসাংবিধানিক, অগণতান্ত্রিক ও অরাজনৈতিক পথ সৃষ্টি করতে চেয়েছিল। সেখান থেকে  দলটিকে নির্বাচনমুখী করতে পেরেছে সরকার। এটি সরকারের সফলতা। তিনি বলেন, নির্বাচনে কে জিতল, কে হারল এটা বড় কথা নয়, এ নির্বাচন গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির বিকাশ ঘটাতে সাহায্য করবে।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেন, সরকার প্রথম থেকেই সংকটের মুখে, চ্যালেঞ্জের মুখে। এটা নতুন কিছু নয়। তিনি বলেন, সবকিছু মোকাবেলা করে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়াই শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের এবং আওয়ামী লীগের লক্ষ্য।

/টিএন/

/আপ-এএ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
প্রতি শ্রেণিতে ৫৫ শিক্ষার্থী ভর্তির নির্দেশ শিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর
প্রতি শ্রেণিতে ৫৫ শিক্ষার্থী ভর্তির নির্দেশ শিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর
উত্তাল চুয়েটে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা, শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ
উত্তাল চুয়েটে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা, শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
‘বিএনপি যেকোনও উপায়ে ক্ষমতায় আসার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে’
‘বিএনপি যেকোনও উপায়ে ক্ষমতায় আসার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে’
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
সিনিয়র শিক্ষককে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি জুনিয়র শিক্ষকের
সিনিয়র শিক্ষককে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি জুনিয়র শিক্ষকের
ভুল সময়ে ‘ঠিক কাজটি’ করবেন না
ভুল সময়ে ‘ঠিক কাজটি’ করবেন না