X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আ. লীগের মুখোমুখি আ. লীগ!

পাভেল হায়দার চৌধুরী
২২ মার্চ ২০১৬, ০১:৫৮আপডেট : ২২ মার্চ ২০১৬, ০২:১২

আওয়ামী লীগ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের  মুখোমুখি এখন আওয়ামী লীগ। এতে বেড়েছে নেতায়-নেতায় দ্বন্দ্ব-কোন্দল, সংঘাত-সংঘর্ষ। ইউপি নির্বাচনের মাধ্যমে তৃণমূল আওয়ামী লীগ চাঙ্গা হবে বলে মনে করেছিলেন ক্ষমতাসীনরা। ভেবেছিলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয়ভাবে করা হলে শক্তিশালী হবে তৃণমূলের রাজনীতি। এমন আস্থার কারণে শেষ পর্যন্ত অনেকটা তড়িগড়ি করেই দলীয়ভাবে নিবাচন করার আইন করা হয়।  কার্যত তার উল্টো চিত্র ফুটে উঠেছে। এ পর্যন্ত যেসব জেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে প্রার্থীরা দলের চূড়ান্ত মনোনয়ন পেয়েছেন, এর প্রায় অর্ধেক অংশে আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেই চলেছে। কোথাও কোথাও এসব হামলায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের কার্যালয়ও ভাঙচুর করেছেন উভয় পক্ষের কর্মী-সমর্থকরা। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারাও এ কথা স্বীকার করেছেন। অবস্থা এতই বেগতিক যে, প্রতিপক্ষের চেয়েও এখন ভয়ানক দলের তৃণমূল নেতাকর্মীরাই।
এ নিয়ে দ্বিতীয় দফার প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে আওয়ামী লীগ। তাদের হাতে নৌকা প্রতীকের চিঠিও তুলে দিয়েছে ক্ষমতাসীন দলটি। তৃতীয় দফার প্রার্থীদের চূড়ান্তকরণ প্রক্রিয়া চলছে। প্রায় প্রতিদিনই কোনও না কোনও জেলা-উপজেলা ও ইউনিয়নে আওয়ামী লীগে-আওয়ামী লীগে মারামারির ঘটনা ঘটতে শুরু করেছে। এতে করে আওয়ামী লীগের ভেতরে তৃণমূল দুর্বল হওয়ার একটি ভীতি তৈরি করেছে।
জানতে চাইলে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজি জাফরউল্যাহ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ইউনিয়ন নির্বাচনের কারণে তৃণমূল আওয়ামী লীগে কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছে। মনোনয়ন পাওয়া না পাওয়া নিয়ে মূলত বৈরি অবস্থা সৃষ্টি করেছে তৃণমূল আওয়ামী লীগে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ অনেক বড় সংগঠন। এটা সবাইকে মনে রাখলে আর সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনা ঘটত না।

দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবউল আলম হানিফ বলেন, আওয়ামী লীগ বড় একটি সংগঠন। এ দলের নেতাকর্মী অসংখ্য। যোগ্য লোকেরও অভাব নেই। তাই মনোনয়ন-প্রত্যাশী লোকেরও ছড়াছড়ি। একজনকে দিলে আরেকজন ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছেন এবং আরেকজনকে পথের কাঁটা মনে করে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ছেন। তিনি বলেন, খুব শিগগিরই এগুলো বন্ধ হয়ে যাবে। 

গত সোমবার রাতে নেত্রকোনার খালিয়াজুরী উপজেলার সদর ইউনিয়নের গছিখাই গ্রামে আওয়ামী লীগের প্রার্থী গোলাম আবু ইছহাক ও বিদ্রোহী প্রার্থী ছানোয়ারুজ্জামান জোশেফের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হন। তাঁরা হলেন গছিখাই গ্রামের জসীম মিয়া, আস্তর আলী, বিল্লাল মিয়া, রিয়াজুল, তারু মিয়া, রহিম আলী, খালিয়াজুরী সদরের শহর আলী, আঙ্গুর মিয়া, আক্তার আলী, আবুল খায়ের, হেজেল মিয়া, আবু কায়সার, রোপ্তম মিয়া, আবু কাউসার, শাহাজাহান, রানা মিয়া প্রমুখ। সংঘর্ষের জন্য দুই প্রার্থী একে অন্যকে দায়ী করেছেন।

সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার কুলিয়া ইউপিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে ১০ জন আহত হন। এরা সবাই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী। এ সময় ভাঙচুর করা হয় সাত-আটটি মোটরসাইকেল। আহত ব্যক্তিরা হলেন বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষের আসাদুল ইসলাম, সোহেল গাজী, মোশারফ হোসেন, আক্তারুল ইসলাম, জিয়াউর রহমান ও আবদুল আজিজ এবং আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষের শরীফ হোসেন, ওমর ফারুক, আরিফ বিল্লাহ ও মিঠু। তাদের সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালসহ বিভিন্ন ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে।

লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার সানিয়াজান ইউপিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবুল হাশেম তালুকদার ও বিদ্রোহী প্রার্থী আবদুল গফুরের সমর্থকদের মধ্যে গত শুক্রবার স্থানীয় নয়ারবাজার এলাকায় সংঘর্ষ হয়। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ১৫ জন আহত হন। সংঘর্ষের জন্য দুই প্রার্থী একে অপরকে দায়ী করেছেন।

শেরপুরের নকলা উপজেলার উরফা ইউপিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে গত সোমবার সন্ধ্যায় বারমাইসা বাজারে ধাক্কাধাক্কি হয়। এরপর মধ্যরাতে নূরে আলমের তিনটি নির্বাচনী কার্যালয়ে ভাঙচুর হয়। বিদ্রোহী প্রার্থী নূরে আলম তালুকদারের পক্ষের অভিযোগ, আওয়ামী লীগের প্রার্থী রেজাউল হকের সমর্থকেরা এই ভাঙচুর চালিয়েছেন।

গত শনিবার (১২ মার্চ) সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জে আওয়ামী লীগ ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া এবং দোকানপাট ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয়পক্ষের কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়েছেন। সন্ধ্যার আগে উপজেলার পাঙ্গাসী ইউনিয়নের হাট পাঙ্গাসীবাজারে এ ঘটনা ঘটে।

একই দলের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী আলমগীর কবির খানের চাচাতো ভাই ওমর ফারুক রাজু ও সাইদুল ইসলাম রাত ৯টার দিকে জানান, শনিবার বিকেলে তারা পাঙ্গাসীহাটে মিছিল করছিলেন। এ সময় আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী আব্দুল সালাম ও তার লোকজন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হঠাৎই হামলা চালায় ও মারপিট করে। এতে তিনিসহ প্রার্থীর ছেলে ইমরান খান, শ্যালক কামরুল ইসলাম, গ্রাম পাঙ্গাসীর জাকির, শওকত আলী, হরিদাস, নিজামগাঁতীর বারিক, কৃষ্ণদিয়া গ্রামের রাজিবুল, মংলা মধু ও কালিঞ্জার স্বপন আহত হন।

বগুড়ার শেরপুর উপজেলায় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে শুক্রবার (১১ মার্চ) দলীয় প্রার্থী মনোনয়নকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় উভয়পক্ষের মধ্যে ২০জন আহত হয়েছেন।

সোমবার (১৪ মার্চ) লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও পাটোয়ারি হাট ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) বর্তমান চেয়ারম্যান এ কে এম রাশেদ বিল্লাহ ও তার ভাই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি গিয়াস উদ্দিন মাহমুদকে দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অব্যাহতি দেওয়া হয়। পরে ওই এলাকায় মারামারির ঘটনা ঘটে।   

/এমএনএইচ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
প্রথম ধাপে ভোটের হার ৬০ শতাংশ, সর্বোচ্চ পশ্চিমবঙ্গে
লোকসভা নির্বাচনপ্রথম ধাপে ভোটের হার ৬০ শতাংশ, সর্বোচ্চ পশ্চিমবঙ্গে
কুকি চিনকে পৃষ্ঠপোষকতা করেছে আমাদের গোয়েন্দা সংস্থা: নুর
কুকি চিনকে পৃষ্ঠপোষকতা করেছে আমাদের গোয়েন্দা সংস্থা: নুর
মিয়ানমারের ২৮৫ জন সেনা ফেরত যাবে, ফিরবে ১৫০ জন বাংলাদেশি
মিয়ানমারের ২৮৫ জন সেনা ফেরত যাবে, ফিরবে ১৫০ জন বাংলাদেশি
১৬ বছর ধরে পুনরুদ্ধার করা ‘নেপোলিয়ন’ দেখাবে কান
কান উৎসব ২০২৪১৬ বছর ধরে পুনরুদ্ধার করা ‘নেপোলিয়ন’ দেখাবে কান
সর্বাধিক পঠিত
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানের ওপর কোনও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়নি: ইরানি কর্মকর্তা   
ইরানের ওপর কোনও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়নি: ইরানি কর্মকর্তা  
ভ্রমণ শেষে ভারত থেকে তিন দিনে ফিরলেন ১৫ হাজার পর্যটক
ভ্রমণ শেষে ভারত থেকে তিন দিনে ফিরলেন ১৫ হাজার পর্যটক