প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি র্যাংকিং ২০১৯ গবেষণায় দু’টি প্রধান উপাদান নিয়ে কাজ করা হয়েছে। প্রথমত, ফ্যাকচুয়াল ডাটা; দ্বিতীয়ত, পারসেপচুয়াল ডাটা। ফ্যাকচুয়াল ডাটা হলো–ক্যাম্পাসের আয়তন, শিক্ষার্থী সংখ্যা, শিক্ষক সংখ্যা, গবেষণা ইত্যাদি। অন্যদিকে পারসেপচুয়াল ডাটা নেওয়া হয়েছে দু’টি উৎস থেকে জরিপের মাধ্যমে। একটি জরিপ চালানো হয় ইউনিভার্সিটিগুলোর অ্যাকাডেমিকসদের (ডিন, বিভাগীয় প্রধান, রেজিস্ট্রার, সিনিয়র শিক্ষক) ওপর; আরেকটি জরিপ চালানো হয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মানবসম্পদ ব্যবস্থাপক, যারা ইউনিভার্সিটি থেকে উত্তীর্ণদের চাকরি দিয়ে থাকেন, তাদের ওপর। এই দুই জরিপ থেকে পাওয়া যায় পারসেপচুয়াল স্কোর।
চূড়ান্ত স্কোর তৈরি করা হয়েছে পারসেপচুয়াল স্কোরের ৬০ শতাংশ ও ফ্যাকচুয়াল স্কোরের ৪০ শতাংশের সমন্বয়ে।
সূচক নির্ধারণ প্রক্রিয়া
সূচক নির্ধারণে বাংলাদেশের শিক্ষাবিদ ও প্রতিবেশী দেশগুলোতে যারা এ ধরনের গবেষণা কাজ করেছেন, তাদের কাছ থেকে পরামর্শ নেওয়া হয়। এসব উৎস থেকে পাওয়া প্রাথমিক ধারণাকে একটি ওয়ার্কশপের মাধ্যমে কয়েকজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা বিশেষজ্ঞের সামনে উপস্থাপন করে তাদের পরামর্শ অনুযায়ী সূচকে প্রয়োজনীয় সংশোধনীও আনা হয়।
সূচক নির্ধারণ প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত নিচে দেওয়া হলো:
প্রথম ধাপ: এই গবেষণার উপদেষ্টা কমিটির সঙ্গে বেশ কয়েকজন শিক্ষা বিষয়ক বিশেষজ্ঞের সঙ্গে আলোচনা করা হয়।
দ্বিতীয় ধাপ: পার্শ্ববর্তী দেশে এমন কাজ করার অভিজ্ঞতাসম্পন্নদের পরামর্শ নেওয়া হয়।
তৃতীয় ধাপ: এসব আলোচনা ও গবেষণার পরিপ্রেক্ষিতে প্রাথমিকভাবে কয়েকটি সূচক নির্ধারণ করা হয়।
চতুর্থ ধাপ: আরও পরিমার্জনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি ওয়ার্কশপ আয়োজন করা হয়।
পঞ্চম ধাপ: ওয়ার্কশপে আলোচনা শেষে জরিপ পরিচালনা করার জন্য কয়েকটি সূচক ও উপ-সূচক চূড়ান্ত করা হয়।
পারফরম্যান্স সূচক: দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষে আমরা নিচের ভেরিয়েবলগুলোকে সূচক হিসেবে চূড়ান্ত করি।
পারসেপচুয়াল সূচক: পারসেপচুয়াল জরিপটি পরিচালনা করা হয় দুই ধরনের গ্রুপের ওপর।
এক. বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের (ডিন, বিভাগীয় প্রধান, রেজিস্ট্রার, সিনিয়র শিক্ষক) ওপর;
দুই. চাকরিদাতাদের (মানবসম্পদ ব্যবস্থাপক) ওপর।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ওপর চালানো জরিপের সূচকগুলো |
বিশ্ববিদ্যালয়ের সুখ্যাতি |
শিক্ষার্থীদের মান |
পাস করা শিক্ষার্থীদের মান |
শিক্ষকদের দক্ষতা |
শিক্ষা ও কাজের পরিবেশ |
অবকাঠামো: ক্লাসরুম, লাইব্রেরি, ল্যাব ও অন্যান্য সুবিধা |
চাকরিদাতাদের ওপর চালানো জরিপের সূচকগুলো |
অ্যাকাডেমিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের খ্যাতি |
উত্তীর্ণদের চাকরিতে পারফরম্যান্স |
উত্তীর্ণদের উদ্যোগ নেওয়ার ক্ষমতা |
উত্তীর্ণদের যোগাযোগের ক্ষমতা |
উত্তীর্ণদের পাসকৃতদের চাকরিক্ষেত্রে টিমওয়ার্ক ক্ষমতা |
উত্তীর্ণদের সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা/মনোভাব |
র্যাংকিংয়ের জন্য ইউনিভার্সিটি নির্বাচন
২০১৯ সালের র্যাংকিং প্রক্রিয়ার শুরুতে বাংলাদেশে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির সংখ্যা ছিল ১০১টি। এর মধ্য থেকে ৩৬টিকে র্যাংকিংয়ের জন্য বিবেচ্য ধরা হয়েছে। ৬৫টিকে এই র্যাংকিংয়ে বিবেচনা করা হয়নি। এসব প্রতিষ্ঠান বাদ পড়ার কারণ হচ্ছে, শিক্ষা কার্যক্রম শুরু না হওয়া, একটিও সমাবর্তন অনুষ্ঠিত না হওয়া, সরকারের কালো তালিকায় থাকা, যথেষ্ট বিষয় না পড়ানো এবং এক হাজারের কম শিক্ষার্থী থাকা।
কোন কারণে কয়টি ইউনিভার্সিটি র্যাংকিং থেকে বাদ পড়লো তার টেবিল
বাদ দেওয়ার কারণ | ইউনিভার্সিটির সংখ্যা |
এখনও শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করেনি | ৮ |
ইউজিসি কর্তৃক কালো তালিকায় থাকা | ১২ |
এখনও কোনও সমাবর্তন না হওয়া | ৪১ |
একটি বা বিশেষায়িত বিষয়ে পাঠদান | ৩ |
এক হাজারের কম ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা | ১ |
মোট | ৬৫ |
ফ্যাকচুয়াল সূচকগুলো
ফ্যাকচুয়াল ডাটা গ্রহণের ক্ষেত্রে সরাসরি ৩৬টি নির্বাচিত ইউনিভার্সিটি কাছে তথ্য চাওয়া হয়। এরমধ্যে ২৫টি ইউনিভার্সিটি তথ্য যথাযথভাবে দিলেও ১১টি তথ্য দেয়নি। এই ১১টি ইউনিভার্সিটির ক্ষেত্রে ইউনিভার্সিটি গ্র্যান্ড কমিশনের ২০১৭ সালের প্রতিবেদন থেকে নির্ধারিত তথ্য নেওয়া হয়।
ইউনিভার্সটি চারটির ক্ষেত্রকে ফ্যাকচুয়াল সূচক হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে।
১. শিক্ষকের মান
২. শিক্ষার্থীদের প্রাপ্ত সেবা
৩. গবেষণা
৪. শিক্ষা উপকরণ
ওপরের চারটি সূচকের প্রতিটিতে কয়েকটি করে উপ-সূচক নির্ধারণ করা হয়। যা নিচের টেবিলের মাধ্যমে দেখানো হয়েছে। সূচকগুলো উল্লিখিত ওয়ার্কশপের আলোচনার মাধ্যমে নির্ধারণ করা হয়েছে। এসব সূচকে স্কোর নির্ধারণ করা হয় শিক্ষকদের অভিমতের মাধ্যমে। প্রতিটি উপ-সূচকের মধ্যে ১০০ পয়েন্টকে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। যেহেতু ইউনিভার্সিটির জন্য শিক্ষকের মান সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, তাই শিক্ষকের মানকে ৫০ পয়েন্ট দেওয়া হয়। বাকি উপ-সূচকগুলোর মধ্যে ৫০ পয়েন্ট ভাগ করে দেওয়া হয়।
ফ্যাকচুয়াল সূচকগুলোর মান বিতরণ
ভেরিয়েবল | নির্ধারিত পয়েন্ট |
ছাত্রসেবা | ২০ |
ছাত্র ও শিক্ষকের অনুপাত (ছাত্রসংখ্যা/শিক্ষক সংখ্যা) | ৫ |
মোট শিক্ষকের সংখ্যা | ৫ |
বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়তন ও ছাত্রসংখ্যার অনুপাত | ৫ |
মোট আয়তন | ৫ |
গবেষণা | ২০ |
বিভাগ অনুপাতে প্রকাশিত গবেষণাপত্রের সংখ্যা | ৫ |
প্রকাশিত গবেষণার সংখ্যা | ৫ |
বিভাগ অনুপাতে সম্পন্ন প্রকল্পের সংখ্যা | ২.৫ |
সম্পন্ন গবেষণা প্রকল্পের সংখ্যা | ২.৫ |
মোট ব্যয়ের অনুপাতে গবেষণা ব্যয় | ২.৫ |
মোট গবেষণা ব্যয় | ২.৫ |
শিক্ষা উপকরণ | ১০ |
ছাত্রসংখ্যা ও লাইব্রেরিতে মোট বইয়ের অনুপাত | ৫ |
লাইব্রেরিতে মোট বইয়ের সংখ্যা | ৫ |
মোট | ৫০ |
ডাটা সংগ্রহ
পারসেপচুয়াল ডাটা: পারসেপচুয়াল ডাটা দু’টি উৎস থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। অংশগ্রহণকারীদের বিবরণ নিচে দেওয়া হলো।
অ্যাকাডেমিকস: এই গ্রুপের মধ্যে আছেন ইউনিভার্সিটির ডিন, বিভাগীয় প্রধান, রেজিস্ট্রার ও সিনিয়র শিক্ষকরা।
চাকরিদাতা: ইউনিভার্সিটি থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের চাকরি দেয়, এমন প্রতিষ্ঠানগুলোর মানবসম্পদ বিভাগের ব্যবস্থাপকরা।
এই দুই গ্রুপ থেকে ডাটা সংগ্রহ করা হয়েছে ফেস-টু-ফেস ইন্টারভিউ ও ফরমের মাধ্যমে। ইউনিভার্সিটির শিক্ষকদের তালিকা নেওয়া হয়েছে ওয়েবসাইট থেকে প্রাপ্ত তথ্য ও সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যমে। অন্যদিকে, মানবসম্পদ ব্যবস্থাপকদের তালিকা সংগ্রহ করা হয়েছে বিভিন্ন ব্যবসায়িক সংগঠনের ডিরেক্টরি ও বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের ২০১৫ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন থেকে।
পারসেপচুয়াল জরিপের নমুনা সংখ্যা: পারসেপচুয়াল জরিপটি মোট ৩৫০ জনের ওপর পরিচালনা করা হয়েছে, যার মধ্যে ২০০ জন শিক্ষক এবং ১৫০ জন মানবসম্পদ ব্যবস্থাপক।
ফ্যাকচুয়াল ডাটা: প্রথমত, নির্বাচিত ইউনিভার্সিটিগুলোর প্রয়োজনীয় তথ্যের জন্য ৩৬টিতে নির্ধারিত ফরম আনুষ্ঠানিকভাবে পাঠানো হয়। ২৫টি নিজেদের সর্বশেষ হালনাগাদ করা তথ্য দেয়। বাকিদের তথ্য নেওয়া হয়েছে ইউজিসি’র প্রকাশিত ২০১৭ সালের প্রতিবেদন থেকে। এর মধ্য থেকে অসঙ্গত ও অস্বাভাবিক তথ্য ইউনিভার্সিটিতে যোগাযোগ করে সত্যতা যাচাই করা হয় এবং প্রয়োজনে সংশোধন করা হয়। কিছু ক্ষেত্রে শারীরিকভাবে উপস্থিত হয়ে তথ্যের সত্যতা যাচাই করা হয়েছে, বিশেষ করে শিক্ষা কার্যক্রম ও প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রস্তুত ইউনিভার্সিটির আয়তনের তথ্যের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়।
স্কোর ক্যালকুলেশন ও র্যাংকিং পদ্ধতি:
ফ্যাকচুয়াল: প্রতিটি সূচকের ফ্যাকচুয়াল তথ্যগুলো ধরন অনুযায়ী স্কেল বা রেশিও ডাটা হিসেবে ইনপুট করা হয়েছে। এক্ষেত্রে টুকির ফেন্সেস পদ্ধতি ব্যবহার করে আউটলায়ার শনাক্ত করা হয়েছে। এক্ষেত্রে ইন্টারকোয়ার্টাইল রেঞ্জ (আইসিআর) ধরা হয়েছে ১.৭৫। স্কোর টেবিল অনুযায়ী রেশিওগুলোকে পয়েন্টে রূপান্তর করা হয়েছে।
চূড়ান্ত র্যাংকিং পাওয়া গেছে পারসেপচুয়াল ও ফ্যাকচুয়াল স্কোরের সমন্বয়ে। এই সমন্বয়ে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ওয়েট রেডিও নেওয়া হয়েছে ৬০:৪০। সব বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কোর নিরূপণ করা হয়েছে ১০০-এর স্কেলে।
পারসেপচুয়াল: শিক্ষক ও চাকরিদাতাদের ওপর চালানো জরিপের তথ্য থেকে আলাদা আলাদা পারসেপচুয়াল স্কোর বের করা হয়েছে। এরপর নিচের ধাপ অনুযায়ী এই দুই স্কোরের সমন্বয় করা হয়েছে।
ধাপ-১: পারসেপচুয়াল সূচকের গুরুত্ব নির্ধারণ
জরিপে অংশগ্রহণকারীকে প্রথমে ছয়টি সূচকের মধ্যে কোনটির গুরুত্ব তার কাছে কতখানি তা নির্ধারণ করতে বলা হয়। ১০-এর স্কেলে এই অভিমত নেওয়া হয়। যেখানে স্কোর ১০ মানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং যখন স্কোর ১ হবে, তখন তা মোটেও গুরুত্বপূর্ণ নয়।
ধাপ-২: সূচকে গুরুত্বের রেটিংয়ের প্রয়োগ ও ওয়েটেড স্কোর ক্যালকুলেশন
প্রতিটি ইউনিভার্সিটির পারসেপচুয়াল স্কোর নির্ণয়ের ক্ষেত্রে প্রতিটি সূচকের স্কোরের সঙ্গে সূচকের রেটিংয়ের সমন্বয় করা হয়েছে।
ধাপ-৩: সমন্বিত ওয়েটেড স্কোরের গড় গণনা
ছয়টি সূচকের ওয়েটেড স্কোরের সমষ্টিকে ছয় দিয়ে ভাগ করে এই মান পাওয়া গেছে।
ধাপ-৪: মোট পারসেপচুয়াল স্কোর
মোট পারসেপচুয়াল স্কোর পাওয়ার জন্য ওয়েটেড স্কোরের গড়কে ১০-এর স্কেল থেকে ১০০-এর স্কেলে আনুপাতিক হারে বাড়ানো হয়েছে।
ধাপ-৫: চূড়ান্ত পারসেপচুয়াল স্কোর
চূড়ান্ত পারসেপচুয়াল স্কোর পেতে শিক্ষক ও চাকরিদাতাদের জরিপ থেকে প্রাপ্ত স্কোরকে ৫০:৫০ অনুপাতে যোগ করা হয়েছে।
শীর্ষ ২০টি বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে বিস্তারিত
যে উদ্দেশ্যে এই র্যাংকিং