আগামী সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে ঘরের মাঠে বসবে নারীদের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। এই বিশ্বকাপের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে বাংলাদেশ সফরে এসেছে ভারত। সফরকারীদের প্রস্তুতিটা খুব ভালো করে হলেও বাংলাদেশের মেয়েদের এতদিনের ‘ফেইক’ আত্মবিশ্বাস বেরিয়ে এলো। ৫ ম্যাচ সিরিজের প্রথম তিনটিতে জিতে ভারত দুই ম্যাচ আগেই সিরিজ নিশ্চিত করে ফেলেছে।
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দারুণ শুরুর পরও ১১৭ রানে থেমে যায় বাংলাদেশের স্কোর। ১১৮ রানের সহজ লক্ষ্যে খেলতে নেমে স্মৃতি মান্ধানা ও শেফালী ভার্মার ব্যাটে ৯ বল আগে ৭ উইকেটের জয় নিশ্চিত করে ভারত।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তিনটি ওয়ানডে ও তিনটি টি-টোয়েন্টিতে ভরাডুবি হয়েছিল। ওই সিরিজের পর অধিনায়ক নিগার সুলতানা জোড় গলায় বলেছিলেন, একটি সিরিজ খারাপ যাওয়া মানে তারা খারাপ দল নয়। পাল্টা প্রশ্নও রেখেছিলেন, খারাপ দল হলে আগে কী করে জিততো?
চলমান সিরিজের পর নিগারের এই ‘ফেইক’আত্মবিশ্বাস ধোপে টিকছে না। ধারাবাহিক ভাবেই ব্যর্থ হচ্ছে বাংলাদেশ। বিশেষ করে ব্যাটিংয়ে উন্নতির কোনও ছাপই নেই। একই ভুলে ব্যর্থতার বৃত্তটাই কেবল বড় হচ্ছে। ভারতের বিপক্ষে সিরিজ হারের মধ্য দিয়ে ব্যর্থতার ষোলোকলাও পূর্ণ হলো। আসন্ন বিশ্বকাপের আগে নিজেদের ভুলগুলো শোধরাতে না পারলে কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়তে হবে লাল-সবুজ জার্সিধারীদের।
বৃহস্পতিবার ১১৮ রানের সহজ লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে ভারতের দুই ওপেনার শেফালী ও স্মৃতি দারুণ শুরু করেছিলেন। প্রথম পাওয়ার প্লেতেই কোন উইকেট না হারিয়ে তুলে ফেলে ৫৯ রান। ৬ষ্ঠ ওভারে নাহিদা আক্তারকে প্রথম তিন বলে তিন চার মেরে রানটা বাড়িয়ে নেন শেফালী। ১৩তম ওভারের প্রথম বলে রিতু মনি জুটি ভাঙেন।
স্ট্যাস্পের সোজা খেলতে চেয়েছিলেন শেফালী। কিন্তু রিতু দারুণ ক্ষীপ্রতায় বলটি তালুবন্দি করলে ৯১ রানে ভাঙে ওপেনিং জুটি। আউট হওয়ার আগে অবশ্য শেফালী আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের নবম হাফ সেঞ্চুরিও তুলে নেন। ৩৮ বলে ৮ চারে ৫১ রানের ইনিংস খেলে আউট হন এই ওপেনার। সঙ্গীকে হারিয়ে স্মৃতিও ফেরেন সাজঘরে। নাহিদার বলে ফাহিমাকে ক্যাচ দিয়ে ৪৭ রানে বিদায় নেন তারকা এই ব্যাটার। পরে দেয়ালন হেমালত ৪ রানে রাবেয়ার বলে এলবিডাব্লিউ হলেও ভারত সহজেই ম্যাচ জেতে। হারমানপ্রীত কৌর (৬) ও রিচা ঘোষের (৫) অপরাজিত ইনিংসে ৯ বল আগেই জয়ের বন্দরে পৌছে যায় তারা।
বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে রাবেয়া, রিতু ও নাহিদা প্রত্যেকে একটি করে উইকেট নিয়েছেন।
এর আগে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে বাংলাদেশও দারুণ শুরু করেছিল। এদিন প্রথম পাওয়ার প্লেতে কোনও উইকেট না হারিয়ে তুলে ফেলে ৪৪ রান। যা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে দারুণ সংগ্রহ। তবে পাওয়ার প্লের পরের ওভারেই মোর্শেদা খাতুনকে হারায় তারা। ১৬ বলে ৯ রান করে রান আউট হন আগের ম্যাচে দারুণ ইনিংস খেলা বাঁহাতি ব্যাটার। এরপর মোর্শেদাকে সঙ্গে নিয়ে ওপেনিং জুটিতে বিস্ফোরক ব্যাটিং করতে থাকা দিলারা আক্তার সাজঘরে ফেরেন। ২৭ বলে ৫ চারে ৩৯ রানের ইনিংস খেলেন এই ওপেনার।
দিলারার বিদায়ের পর অধিনায়ক নিগার সুলতানা টপ অর্ডারের আরেক ব্যাটার সোবাহানা মোস্তারিকে নিয়ে দলকে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু সোবাহানা ব্যক্তিগত ১৫ রানে আউট হলে বিপদ বাড়ে। দলের রান তখন ৮৫। সোবাহানার রান আউটের পরের বলেই ফাহিমা লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়ে সাজঘরে ফেরেন। এরপর অধিনায়কের ওপর চাপ বাড়ে। রান করার চাপ থেকেই আউট হন জ্যোতি। ৩৬ বলে ১ চারে ২৮ রানের ইনিংস খেলেছেন উইকেট কিপার এই ব্যাটার। জ্যোতির এলবিডাব্লিউ আউটটা দুর্ভাগ্যজনক বলতে হবে। বল অনেকটাই স্ট্যাম্প ছাড়িয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু অভিষিক্ত আম্পায়ার সাজেদুল ভারতের আবেদনের প্রেক্ষিতে আঙুল তুলে দিয়েছেন।
প্রথম ১০ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে ৬৬ রান করা বাংলাদেশ শেষ দুই ওভারে তুলতে পারে ৫১ রান, হারায় আরও ৬ উইকেট। সবমিলিয়ে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশের সংগ্রহ দাঁড়ায় ১১৭ রান। ভারতকে জিততে হলে করতে হবে ১১৮ রান।
ভারতের বোলারদের মধ্যে রাধা যাদব দুটি এবং পূজা বস্ত্রাকার, রেনুকা সিং ও শ্রেয়াঙ্কা পাতিল প্রত্যেকে একটি করে উইকেট নিয়েছেন।