আবাহনী লিমিটেড ও বসুন্ধরা কিংসের ম্যাচ মানেই টানটান উত্তেজনা। আজও তাই হলো। শুরুতে দুই গোলে এগিয়ে ছিল কিংস। পিছিয়ে থেকে পরবর্তীতে আবাহনী এক গোল শোধ দিয়ে বারবারই সমতায় ফেরার ইঙ্গিত দেয়। কিন্তু দুর্ভাগ্য কর্নেলিয়াস-ওয়াশিংটনদের টানা গোল মিসের ব্যর্থতায় ও শেষ দিকে এসে হৃদয়ের জোরালো শট ক্রসবারে লেগে প্রতিহত হলে সমতায় ফিরতে পারেনি তারা। তাতে কিংসের তিন পয়েন্ট নিশ্চিত হয়ে যায়। প্রিমিয়ার লিগে আরও একবার বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের কাছে হারলো আবাহনী।
লিগে ১৪ ম্যাচে ১২ জয়ে ৩৭ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে কিংস। পরের ম্যাচে মোহামেডানকে হারাতে পারলেই শিরোপা নিশ্চিত হবে তাদের। সমান ম্যাচে তৃতীয় হারে আগের ২৫ পয়েন্টে এখন রানার্সআপ হওয়ার লড়াইয়ে থাকতে হবে আবাহনীকে। যদিও মোহামেডান তিন পয়েন্টে এগিয়ে আছে।
শনিবার কিংস অ্যারেনাতে দুই ডিফেন্ডার মিলাদ শেখ ও অ্যারন ইভানকে নিয়ে একাদশ সাজায় আবাহনী। দেখেশুনে খেলার চেষ্টা করে। বিপরীতে তপু বর্মণকে ছাড়া কিংস আগের মতোই লড়াকু মনোভাব নিয়ে খেলে। শুরুর দিকেই স্বাগতিকরা এগিয়ে যায়।
৫ মিনিটে রাকিব হোসেনের গোলে কিংসের হাসি। আবাহনী তাদের ডিফেন্ডারদের ভুলের মাশুল দেয়। মিগেলের শর্ট কর্নারের বল ঘুরে আসে তারই পায়ে, বক্সে ঢুকে এই ব্রাজিলিয়ান জোরালো শট নিলেও গোলকিপার শহিদুল আলম সোহেল ঠিকমতো প্রতিহত করতে পারেননি। ফিরতি বলে জটলা থেকে অ্যারন বল ক্লিয়ার করতে না পারলে রাকিব শট নেন। সেটা দোরিয়েলতন হয়ে আবার পোস্টের সামনে এলে আলতো টোকায় জালে জড়িয়ে কিংস অ্যারেনার দর্শকদের আনন্দে ভাসান রাকিব।
এক গোলে পিছিয়ে পড়ে আবাহনী ম্যাচে ফেরার চেষ্টা করে। কর্নেলিয়াস-ওয়াশিংটন মিলে বিশ্বনাথ-রিমনদের চাপে রাখেন। ৭ মিনিটে পাপন সিংহের শট ক্রসবারের অনেক ওপর দিয়ে যায়। কর্নেলিয়াস বক্সে ঢুকে ক্রস বাড়িয়েছিলেন, কিন্তু এনামুল গাজী কিছু করার আগেই জিকো তালুবন্দি করেন। ১৫ মিনিটে মিগেলের শট পোস্টের বাইরে দিয়ে গেলে ব্যবধান বাড়েনি।
১৮ মিনিটে আবাহনী দারুণ সুযোগ পায়। এনামুল গাজীর মাপা ক্রসে কর্নেলিয়াসের হেড বিশ্বনাথ ব্লক করেন। যদিও গ্রানাডার স্ট্রাইকার পেনাল্টির দাবি তুলেছিলেন। তবে রেফারি নাসির উদ্দিন তাতে সায় দেননি।
পরের মিনিটে মিলাদ শেখের বাঁ পায়ের সাইড ভলি জিকো দ্বিতীয় প্রচেষ্টায় প্রতিহত করেন। তবে এসময় কর্নেলিয়াসের সঙ্গে সংঘর্ষে জিকোর মাথা ফেটে রক্ত পড়তে দেখা যায়। একটু পর অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে নিতে হয়েছে তাকে। বদলি হয়ে মাঠে নামেন মেহেদী হাসান শ্রাবণ।
তবে আবাহনী যখন গোলের সুযোগ খুঁজছিল, তখনই তাদের আবার স্তব্ধ করে দেয় কিংস।
৩২ মিনিটে কিংস পেনাল্টি পায়। মিগেলকে বক্সের মধ্যে ফেলে দেন মিলাদ শেখ। রহমতসহ অন্যরা প্রতিবাদ করলেও রেফারির সিদ্ধান্তে পরিবর্তন আসেনি। স্পটকিক থেকে মিগেলই গোলকিপারের বিপরীত দিক দিয়ে লক্ষ্যভেদ করে কিংসকে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে নেন।
প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে দোরিয়েলতন দৌড়ে এসে বাঁ পায়ে ব্যাক হিল করতে পারেননি। পারলে হয়তো সামনে থাকা গোলকিপার পরাস্ত হওয়ার সুযোগ ছিল।
বিরতির পর আবাহনী চাপে রাখে কিংসকে। ৪৯ মিনিটে একটি গোলও শোধ দেয়। ওয়াশিংটনকে পাসটা দিয়ে বক্সে ঢুকে পড়েন কর্নেলিয়াস, ব্রাজিলিয়ানের ক্রসে এক ডিফেন্ডারের পা ছুঁয়ে ৬ গজের ভিতরে জায়গা করে নিলে গ্রানাডিয়ান দারুণ প্লেসিং করে সমর্থকদের মুখে হাসি ফোটান। বদলি গোলকিপার শ্রাবণ বাঁদিকে পা বাড়িয়ে আটকানোর চেষ্টা করেও নাগাল পাননি।
৫৬ মিনিটে স্কোরলাইন ২-২ করার কাছাকাছি গিয়েও সফল হতে পারেনি আবাহনী। দুই ডিফেন্ডারের মাঝ দিয়ে বল পেয়ে বক্সে ঢুকে গোলকিপারকে সামনে একা পেয়ে পোস্টের বাইরে দিয়ে মারেন কর্নেলিয়াস।
৬৪ মিনিটে আবাহনীর দুর্ভাগ্য। দুই ডিফেন্ডারের মাঝ দিয়ে কর্নেলিয়াসের রক্ষণ চেড়া পাসে বল পেয়ে ওয়াশিংটন বক্সে ঢুকে সামনে থাকা শ্রাবণকে পরাস্ত করতে পারেননি। পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক সেভ করে নিজের কৃতিত্ব দেখান গোলকিপার।
৬৯ মিনিটে কর্নেলিয়াসের শট অল্পের জন্য পোস্ট ঘেঁষে যায়। যোগ করা সময়ে চূড়ান্ত হতাশ হতে হয় আন্দ্রেস ক্রুসিয়ানির দলকে। বক্সের বাইরে থেকে মোহাম্মদ হৃদয়ের জোরালো শট ক্রসবারে লেগে প্রতিহত হলে আবাহনীর হার নিশ্চিত হয়। এরই সঙ্গে লিগে আকাশি-নীল জার্সিধারীদের বিপক্ষে কিংস অক্ষত থাকে। তাদের বিপক্ষে ১০ লড়াইয়ে কিংসের এটি অষ্টম জয়, অন্য দুটি ড্র।