এমনিতে তারা ভালো বন্ধু। ক্লাবে তাদের সম্পর্কটাও দারুণ। কিন্তু গতকাল শনিবার বন্ধুত্ব ছাপিয়ে এই দুই খেলোয়াড়ের ‘কদর্য রূপটাই’ প্রকাশ পেলো! বলা হচ্ছে মিগেল ফেরেইরা ও রবিনিয়োর কথা। প্রিমিয়ার লিগে আবাহনী লিমিটেডের বিপক্ষে মনোমালিন্য থেকে অদ্ভুত দৃশ্যের অবতারণা করেছেন বসুন্ধরা কিংসের এই দুই ফুটবলার।
ম্যাচের স্কোরলাইন তখন ২-১। আবাহনী দ্বিতীয় গোল করে সমতায় ফেরার সুযোগ খুঁজছে। কর্নেলিয়াস-ওয়াশিংটনরা বার বারই প্রতিপক্ষের রক্ষণব্যুহ ভেঙে এগিয়ে যাচ্ছিলেন। এই বুঝি গোল হয়েই যাচ্ছিল! ঠিক সেই সময় ৭৯ মিনিটে ঘটলো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। অজানা কারণে পারলে মাঠ ছেড়ে চলে যান কিংসের দুই ব্রাজিলিয়ান রবিনিয়ো ও মিগেল। সতীর্থরা দুই ভাগ হয়ে তাদের আটকানোর চেষ্টাও করেছেন। কিন্তু রবিনিয়োকে আটকে রাখা যাচ্ছিল না কিছুতেই। তেড়েঁফুড়ে যাওয়ার উপক্রম। এছাড়া অধিনায়কের আর্মব্যান্ড ছুড়ে কী কী যেন বলতেও থাকেন দেশের ফুটবলে সবচেয়ে দামি এই বিদেশি তারকা।
তাদের এই কদর্য রূপের কারণে ম্যাচ এক মিনিটের মতো বন্ধ ছিল। পরবর্তীতে অবশ্য নির্বিঘ্নে ম্যাচ শেষ হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে তাদের এমন আচরণে। সাধারণত প্রতিপক্ষের কারও সঙ্গে সমস্যা হলে দুই পক্ষ বাদানুবাদ বা বিতর্কে জড়ায়। কিন্তু নিজেদের মধ্যে দুই বিদেশির এমন নেতিবাচক আচরণ সবাইকে অবাক করে দিয়েছে। এমনটি দেশের ফুটবলে কবে কে কখন দেখেছে তা স্মৃতি হাতড়ে বলা কঠিন।
দলের কোচ অস্কার ব্রুজন শুরু থেকে দলটির সঙ্গে আছেন। দুই ব্রাজিলিয়ানের এমন আচরণ বুঝিয়ে দিচ্ছে তাদের ওপর কোচের নিয়ন্ত্রণ নেই! ডাগ আউটে কোচের থাকা সত্ত্বেও এমন নেতিবাচক ঘটনার অবতারণা হলো। যা বাংলাদেশের ঘরোয়া ফুটবলে নজিরবিহীন।
শুধু কি তাই? এর আগে মিগেল রহমতগঞ্জের বিপক্ষে এক ফুটবলারের গলাও চেপে ধরেন। বিধিবহির্ভুত আচরণ এর আগেও করেছেন এই ব্রাজিলিয়ান। তাতে প্রশ্ন উঠেছে কোচ তাহলে শুধুই কি অনুশীলন আর ট্যাকটিস শেখাচ্ছেন? কার কেমন ভূমিকা থাকবে সে বিষয়ে কোচের কোনও নির্দেশনা নেই? থাকলে রবিনিয়ো-মিগেলের মতো উঁচুমানের ব্রাজিলিয়ানরা মাঠে এমন আচরণ করবেন কেন। স্থানীয় সতীর্থরাও বা কী শিখবেন? হয়তো এ কারণে স্থানীয় অনেকেই খেলার মধ্যে ‘অভব্য’ অচরণ করতে উৎসাহিত হচ্ছেন। যার রেশ জাতীয় দলে গিয়েও পড়ছে।
কিংসের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছেন, ‘আসলে দুই ব্রাজিলিয়ান তো বন্ধু। ওদের মধ্যে ভালো সম্পর্ক। তবে মাঠে কি থেকে কী হয়ে গেলো বুঝতে পারছি না। মনে হচ্ছে বল পাস না দেওয়া নিয়ে সমস্যা হতে পারে। তবে যাই হয়েছে তা ভালো হয়নি। ফুটবলের জন্য ইতিবাচক দিক নয়।’
ঘরোয়া ফুটবলে রেফারিরাও অনেক সময় দেখেও না দেখার ভাণ করে থাকেন। আবাহনীর বিপক্ষে কাল দুই ব্রাজিলিয়ান যা করেছেন, তা রেফারির চোখ এড়িয়ে গেছে। নাসির উদ্দিন কিছুই করেননি। তাছাড়া রহমগতগঞ্জের বিপক্ষে গলা চেপে ধরার কারণে মিগেলকে তো লাল কার্ডই দেখানো হয়নি! অথচ গতকাল আবাহনী-কিংসের ম্যাচটির ঘটনা ২০০৪-০৫ মৌসুমে ইংলিশ লিগে নিউ ক্যাসল ও অ্যাস্টন ভিলা ম্যাচকে স্মরণ করে দিয়েছে। সেই ম্যাচে নিউ ক্যাসলের দু’জন খেলোয়াড় নিজেদের মধ্যে বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েছিলেন। তাদের থামাতে সতীর্থরা কোনওমতো আটকে রেখেছিলেন। তবে তাদের রেফারি বাংলাদেশের মতো নিশ্চুপ থাকেনি। নিউক্যাসলের দুই ফুটবলারকে লাল কার্ড দিয়ে মাঠে বাইরে পাঠিয়ে দিয়েছে।
আর বাংলাদেশের ঘরোয়া ফুটবলে দেখেও না দেখার ভাণ! যারা আবার একটু ভালো রেফারিং করতে চাইবেন তাদের নিয়েও থাকে আপত্তি থাকে। সব মিলিয়ে ফুটবলার ও রেফারিদের এমন আচরণ দেশের ফুটবলে উন্নতির জন্য মোটেও ইতিবাচক নয়।