X
মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪
১৬ বৈশাখ ১৪৩১

‘মাঠে আমার শরীর কেউ স্পর্শ করতে পারেনি’

তানজীম আহমেদ
১৬ এপ্রিল ২০২৪, ১০:৪৬আপডেট : ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ১১:০৮

একসময় হকি মাঠে বেশ পরিচিত মুখ ছিলেন আসলাম ওমর বেলিম। গুরুত্বপূর্ণ কিংবা কঠিন ম্যাচ পরিচালনা হলেই পুরান ঢাকার হোসেনি দালান থেকে উঠে আসা এই সাবেক খেলোয়াড়ের ডাক পড়তো। মাঠে নিজের মেধা, ব্যক্তিত্ব ও একাগ্রতা দিয়ে বাঁশি বাজিয়ে দুই পক্ষেরই মন জয় করার অসধারণ ক্ষমতা ছিল তার। আম্পায়ারিং করেও যে তারকার আসনে বসা যায় সেটার উদাহরণ তিনি নিজেই। চাকরির কারণে আম্পায়ারিং ছেড়েছেন প্রায় ১০ বছর। তবে কুয়েত থেকে ছুটি মিলতেই এবার হাজির মওলানা ভাসানী হকি স্টেডিয়ামে। দিনকয়েক থেকে কুয়েতে ফিরে যাওয়ার আগে বাংলা ট্রিবিউনের কাছে অনেক সুখস্মৃতির পাশাপাশি দুঃখের কথাও ভাগাভাগি করেছেন।

বাংলা ট্রিবিউন: অনেক দিন পর হকির মাঠে আসলেন। প্রিমিয়ার লিগের খেলা কেমন দেখলেন?

আসলাম: খেলা ভালোই লেগেছে। তবে বার বারই বলতে গেলে তুচ্ছ কারণে খেলা বন্ধ হয়ে যাওয়াটা দৃষ্টিকটূ লেগেছে। আম্পায়ারদের শক্ত হাতে পুরো সময়জুড়ে ম্যাচ পরিচালনা করতে বেশ বেগ হতে হয়েছে। তাছাড়া দেশের সেরা আম্পয়াদের সিদ্ধান্ত ভিডিও রেফারেলে গিয়ে বদলে যাচ্ছে। আমার মনে হয় আরও সুক্ষ দৃষ্টিতে তাদের বাঁশি বাজানো উচিত।

বাংলা ট্রিবিউন: কেন এমন মনে হবে, আম্পায়ারদের দায়িত্ব তো সঠিকভাবে ম্যাচ পরিচালনা করা?

আসলাম:  দেখুন আম্পায়ারদের দায়িত্ব সঠিকভাবে ম্যাচ পরিচালনা করা। সবসময় তারা চেষ্টাও করে থাকে। কিন্তু অনেক সময় এদিক-সেদিক হয়ে যায়। সেটা চাপে কিংবা অন্য কারণে হোক না কেন। আম্পায়ার তো  মানুষ। তবে আমার কাছে অবাক লেগেছে রিভিউ দেওয়ার পর অনেকেই যা সিদ্ধান্ত আসে তা মানতে চান না। সবাই শুধু নিজের পক্ষে যা ভালো হয় তেমন সিদ্ধান্ত পেলে খুশি হন।

বাংলা ট্রিবিউন: তাহলে এখানে আম্পায়ারের কোনও দায় দেখছেন না?

আসলাম:  তা থাকবে না কেন। আম্পায়ারদের সঠিক সিদ্ধান্ত তো দিতেই হবে। সেই সঙ্গে ব্যক্তিত্ব আরও দৃঢ় হতে হবে। আম্পায়ারদের যে কোনো সিদ্ধান্তে খেলোয়াড়রা সবাই মিলে জড়ো হচ্ছে, অনেক সময় ঘিরে ধরছে; আবার কর্মকর্তারাও যখন-তখন মাঠে ঢুকছে এটা খুবই দৃষ্টিকটূ, মেনে নেওয়া কঠিন। প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচে এমন হবে কেন? সর্বোচ্চ কিংবা নিচের সারির লিগে তো সবকিছু সুষ্ঠু হওয়া উচিত। ফেডারেশনের উচিত এই বিষয়গুলো আরও কঠোরভাবে মনিটরিং করা।

কিংবদন্তি শাহবাজের সঙ্গে আসলাম বাংলা ট্রিবিউন: ফেডারেশন ওমান, শ্রীলঙ্কা ও মালয়েশিয়া থেকে আম্পায়ার এনেছে। তারপরও এমন হচ্ছে…

আসলাম: বিদেশি আম্পায়ার আনতে হলে ভালোমানের আনতে হবে। এই যেমন যারা বড় বড় আসরে বাঁশি বাজিয়েছে, আন্তর্জাতিক ম্যাচ পরিচালনার অভিজ্ঞতা আছে। আমি যেমন ঘরোয়া ছাড়াও এশিয়ান গেমস ও এশিয়া কাপ সহ অন্য আসরে বাঁশি বাজিয়ে ঋদ্ধ হয়েছিলাম। এখন মানসম্মত আম্পায়ার না আনলে সমস্যা তো হতেই পারে।

বাংলা ট্রিবিউন: দেশে তো সেলিম লাকী ও শাহবাজ আলী আছেন। যারা দেশের বাইরে আম্পায়ারিং করে খ্যাতি পাচ্ছেন।

আসলাম: ওরা দুজনই ভালো আম্পায়ারিং করছে। পিয়াল থেকে শুরু করে অন্যরা খারাপ নয়। তবে আমি সবাইকে বলবো খেলার আগে ও পরে সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকবে। কিন্তু মাঠে কাউকে চিনবো না। সঠিকভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সাহস ও ব্যক্তিত্ব থাকতে হবে। আর আম্পায়ারিং করার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নামতে হবে। একটা বিষয় বিদেশি আম্পায়ারদের সুবিধার পাশাপাশি দেশিদেরও সেভাবে মূল্যায়ন করতে হবে। আসলে লিগ প্রতিবছর হলে তখন খেলোয়াড়দের পাশাপাশি আম্পায়ারদের মানও বৃদ্ধি পাবে।

বাংলা ট্রিবিউন: আপনি যখন আম্পায়ারিং করতেন সেসময় কি এমন পরিস্থিতি ছিল?

আসলাম: আমার সময়ে কম-বেশি ছিল। আমার সময় অনেক আম্পায়ার ধাক্কা খেয়েছে, ঘিরে ধরে অনেকেই যা তা বলেছিল। কিন্তু আল্লাহর রহমতে আমার শরীরে কেউ স্পর্শ করতে পারেনি। সেরকম ব্যক্তিত্ব নিয়ে খেলা চালিয়েছি। শুধু তাই নয় খেলার আগে কিংবা পরে খেলোয়াড়দের সঙ্গে আমার চমৎকার সম্পর্ক ছিল। এখনও সবাই আমাকে সেভাবে শ্রদ্ধার চোখে দেখে।

বাংলা ট্রিবিউন: শুনেছি ঢাকায় মোহামেডান-আবাহনী ম্যাচে পাকিস্তানের লিজেন্ড তাহির জামানকে হলুদ কার্ড দেখিয়ে মাঠ থেকে বের করে দেওয়ার সময় উত্তেজনা হয়েছিল?

আসলাম: হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছেন। ৯০ দশকের শেষে প্রিমিয়ার লিগে মোহামেডান-আবাহনীর গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে আমি পাকিস্তানের সেসময়ের তারকা তাহির জামানকে হলুদ কার্ড দেখাই। দর্শকরা সেসময় হতবাক, আমি কেন কার্ড দেখালাম। আসলে তাহির আমাকে পশ্চাৎদেশ দেখিয়েছিল। যা দর্শকরা অন্য প্রান্ত থেকে বুঝতে পারেনি। তাহিরকে হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছাড়া করাই। তার পাশেই ছিল আরেক গ্রেট শাহবাজ। ও কিছু বলেনি। তবে ম্যাচ শেষে তাদের প্রশংসা পেয়েছি। এবার ঢাকায় ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে শাহবাজের সঙ্গে কথা বলে সেই দিনের কথা মনে করাতে সে আকুণ্ঠ প্রশংসা করেছে। আবারও বলেছে ওইসময় আমার নেওয়া সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল।

বাংলা ট্রিবিউন: একটু পিছনে ফিরে যাই। আপনার হকি খেলোয়াড়ের ক্যারিয়ার তো বেশিদিনের ছিল না..

আসলাম: প্রথম বিভাগে আজাদ ও ওয়ান্ডারার্সে খেলেছি, বড় খেলোয়াড় ছিলাম না। রক্ষণভাবে খেলতাম। ফেডারেশনের কর্মকর্তা প্রয়াত নুরুল আমিন ভাই আমাকে একদিন হঠাৎ আম্পায়ারিং কোর্স করিয়ে দেন। এরপর থেকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।

বাংলা ট্রিবিউন: দেশের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক ম্যাচও তো পরিচালনা করেছেন…

আসলাম: ২৫ থেকে ২০টি ম্যাচ পরিচালনা করেছি। এরমধ্যে এশিয়ান গেমস ও এশিয়ান কাপের ম্যাচ ছিল বেশি। আমাদের সময় আন্তর্জাতিক হকি ফেডারেশনের সঙ্গে সেভাবে যোগাযোগ কম করা হতো। তাই বেশি ম্যাচ পরিচালনা করা হয়নি।

বাংলা ট্রিবিউন: আপনার বয়স এখন ৫৩। খ্যাতি অর্জনের পরও আপনি ওই সময় এতো দ্রুত আম্পায়ারিং ছাড়লেন কেন?

আসলাম: আসলে ছাড়তে চাইনি। আমি কুয়েত এয়ারওয়েজে চাকরি করি। আগে ঢাকায় বেজ করে কাজ করতে হতো। এরপর চলে গেলাম তা কুয়েতে। তাই বছরের অধিকাংশ সময়ে সেখানেই থাকতে হচ্ছে। এছাড়া ১০ বছর আগে হকির পরিবেশটা সেভাবে ভালো লাগছিল না। তাই ছেড়ে দিতে হয়েছে। এটাও একটা কারণ।

 ঢাকায় হকির ম্যাচ দেখতে গ্যালারিতে আসলাম। বাংলা ট্রিবিউন: পরিবেশ আগের চেয়ে উন্নত হয়েছি কিনা। এবার এসে কী দেখলেন?

আসলাম: এবার তো অনেক দিন পর লিগ হলো। আগের মতো মাঠে সেভাবে দর্শক নেই। আগের চেয়ে মাঠে বেশ ঝামেলা হচ্ছে। তুচ্ছ কারণে খেলা বার বারই বন্ধ হচ্ছে। একটা ম্যাচ শেষ হতে অনেক সময় লাগছে। শুনেছি নির্ধারিত সময়ের আগে কোনও একটি ম্যাচ দুই পক্ষের আপোসে শেষ হয়েছে। কোনও কোনও ক্লাব ড্রেসিংরুমে থেকে লিগ খেলেছে। এটা তো অবাক করার বিষয়। সবমিলিয়ে পরিস্থিতির খুব একটা উন্নতি দেখছি না। তবে লিগ টার্ফে গড়িয়েছে এটা ভালো দিক।

বাংলা ট্রিবিউন: মাঠের টানটা এখনও সেভাবে অনুভব করেন কিনা?

আসলাম: তা তো করে থাকি। সুযোগ পেলেই মাঠে আসি। সেই যে ৮৬-৮৭ সালে আম্পায়ারিং শুরু করেছিলাম। টানা করেছি দুই যুগের বেশি। এতদিনের সম্পর্ক কি ভোলা যায়। তাই দেশে ফিরলেই হকির মাঠে চলে যাই। তবে এখন তো লিগ অনেক দিন পর পর হয়। অনেকটা অলিম্পিক গেমসের মতোই! তাই খারাপটা বেশি লাগে। আমাদের হকির সম্ভাবনা থাকলেও তা কাজে লাগাতে পারছি না। এটা দুঃখজনক।

বাংলা ট্রিবিউন:  আপনার পরিববারে সাত ভাই। চারজন পেশাদার খেলোয়াড় ছিলেন। বাকিরাও শখে খেলেছেন।

আসলাম: হ্যাঁ, ঠিকই বলেছেন। বড় ভাই আনোয়ার বেলিম ও আমি হকি খেলোয়াড় ছিলাম। দুজনই প্রথম বিভাগে খেলেছি। জাভেদ ওমরকে আপনারা আরও ভালো চেনেন। আর আসিফ ওমর অল্প বয়সে হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন। ও সূর্যতরুণে অফ স্পিনার ছিল। বেঁচে থাকলে ও জাভেদের চেয়ে বড় ক্রিকেটার হতে পারতো। এছাড়া বাবা সহ অন্য ভাইরাও খেলা পাগল ছিল। বলতে পারেন আমরা স্পোর্টিং পরিবারের সদস্য।

/এফআইআর/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
মাটি কাটার সময় ‘গরমে অসুস্থ হয়ে’ নারী শ্রমিকের মৃত্যু
মাটি কাটার সময় ‘গরমে অসুস্থ হয়ে’ নারী শ্রমিকের মৃত্যু
সাকিবের সঙ্গে উপজেলা নির্বাচনের দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সাক্ষাৎ
সাকিবের সঙ্গে উপজেলা নির্বাচনের দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সাক্ষাৎ
স্বর্ণপামে ৯ বিচারক: সর্বকনিষ্ঠ আদিবাসী লিলি, আছেন বন্ডকন্যাও
কান উৎসব ২০২৪স্বর্ণপামে ৯ বিচারক: সর্বকনিষ্ঠ আদিবাসী লিলি, আছেন বন্ডকন্যাও
‘“সুলতান পদক” পেয়ে আমি গর্বিত ও ধন্য’
‘“সুলতান পদক” পেয়ে আমি গর্বিত ও ধন্য’
সর্বাধিক পঠিত
‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ
‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ
আজ কি বৃষ্টি হবে?
আজ কি বৃষ্টি হবে?
জালিয়াতির মামলায় সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তার ২৬ বছরের কারাদণ্ড
জালিয়াতির মামলায় সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তার ২৬ বছরের কারাদণ্ড
মঙ্গলবার দুই বিভাগের সব, তিন বিভাগের আংশিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে
মঙ্গলবার দুই বিভাগের সব, তিন বিভাগের আংশিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে
খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি বন্ধের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসছে সরকার
খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি বন্ধের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসছে সরকার