ব্রিটিশরা উপমহাদেশ শাসন করে গেছে প্রায় ২০০ বছর। বাংলাদেশ জুড়েও ছিল তাদের রাজত্বের পরিধি। কত-শত আন্দোলন, রক্ত-গঙ্গা বইয়ে অবশেষে মুক্তি মিলেছিল তাদের শাসন-শোষণ থেকে। এই ব্রিটিশরাই আবার উপমহাদেশে বুনে দিয়ে গিয়েছিল ক্রিকেটের বীজ। সমেয়ের পালা বদলে যা এখন হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের গর্বের প্রতীক।
ক্রিকেটের উদ্ভাবক কিন্তু ব্রিটিশরাই। ২২ গজে এক টুকরো কাঠের সঙ্গে ছোট্ট গোলক বলের লড়াই। যুগে যুগে, কালের বিবর্তনে বিশ্ব জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে খেলাটি, বিশেষকরে ব্রিটিশ রাজত্ব যত দূর ছিল, তত দূরই ছড়িয়ে গেছে এই খেলা। বাংলাদেশেও লাগে এর ছোঁয়া। শুরুতে হোঁচট খেলেও এখন ক্রিকেট বিশ্বে ভয় ছড়ানো এক দল বাংলাদেশ। সেটা অবশ্য শুধু ওয়ানডেতে, ব্রিটিশরা যে খেলা দিয়ে বুনেছিল বীজ, সেই টেস্ট ক্রিকেটে এখনও আঁতুরঘরে টাইগাররা!
ক্রিকেটের জন্মস্থান ইংল্যান্ড। ‘ফাদার অব ক্রিকেট’কে হারানোটা সব সময়ই অন্যরকম অনুভূতির। তা বাংলাদেশ সেই অনুভূতি অনুভব করেছে অনেকবারই। যদিও সেটা শুধুই সীমিত ওভার ক্রিকেটে। টেস্ট ক্রিকেটে যা শুধু হাহাকার আর হতাশার। পাঁচ দিনের ক্রিকেটে ইংল্যান্ড যেন বাংলাদেশের কাছে ভয়ের অন্য নাম।
কাল (বৃহস্পতিবার) থেকে শুরু হচ্ছে চট্টগ্রাম টেস্ট। তার আগে অতীতে চোখ রাখলে হতাশা ছাড়া দেখা যায় না আর কিছুই। মুখোমুখি হওয়া ৮ টেস্টে জয় তো দূরে থাক, একটা ড্র পর্যন্ত করতে পারেনি বাংলাদেশ! কিন্তু কেন-ইংল্যান্ড টেস্টের অনেক ভালো দল বলে নাকি বাংলাদেশ এখনো টেস্ট খেলতে শেখেনি বলে? বড় ব্যবধানে হারের পর অনেকবারই শোনা গেছে পরের কথাটি-‘টেস্ট খেলতে শেখেনি বাংলাদেশ।’ ভুলে গেলে চলবে না টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার পর কিন্তু চলছে ১৬ বছর!
সে যাইহোক, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ব্যর্থতার ইতিহাস অনেক পুরনো। পুরনো এই অর্থে কারণ শেষবার ইংলিশদের বিপক্ষে বাংলাদেশ খেলেছে সেই ২০১০ সালে। মাঝের পাঁচ বছরে অবশ্য বাংলাদেশের ক্রিকেট এগিয়ে গেছে অনেক দূর। একই সঙ্গে আবার আগের পারফরম্যান্সগুলোও তো অস্বীকার করার উপায় নেই। পরিসংখ্যান বলছে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সর্বনিম্ন হারটা বাংলাদেশের (রানের হিসাবে) মাত্র ১৮১ রানে। উইকেটের হিসাবে সবচেয়ে কম ব্যবধানে হারটা ৭ উইকেটের।
ইংলিশদের বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট ২০০৩ সালে ঢাকায়। ওই ম্যাচে টাইগারদের পারফরম্যান্স খারাপ ছিল না একেবারে। প্রথম ইনিংসে ২০৩ রানে অলআউট হলেও মাশরাফি-রফিকের বোলিং তাণ্ডবে ইংল্যান্ড অলআউট হয়ে যায় ২৯৫ রানে। দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশ ২৫৫ রান করলে সফরকারীদের লক্ষ্য দাঁড়ায় ১৬৪ রান। যেটা ৩ উইকেট হারিয়ে টপকে যায় ইংল্যান্ড। সেই শুরু, এর পর চট্টগ্রাম, লর্ডস, চেস্টার লি স্ট্রিট, ম্যানচেস্টার-সব জায়গায় ইংলিশদের জয় জয়কার। সবশেষ জয়টা তাদের ম্যানচেস্টারে। ২০১০ সালের ওই ম্যাচে তামিম ইকবালের (১০৮) সেঞ্চুরির পরও বাংলাদেশ হেরেছিল ইনিংস ও ৮০ রানে।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের সবচেয়ে ভালো পারফরম বললে মুখোমুখি হওয়া প্রথম টেস্টটি। ২০১০ সালের মিরপুর টেস্টটাকেও রাখা যেতে পারে শীর্ষে। ৯ উইকেটে হারালেও দুর্দান্ত পারফরম করেছিল বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসে ৪১৯ রান করা বাংলাদেশের বিপক্ষে ইংল্যান্ডের ইনিংস শেষ হয় ৪৯৬ রানে। দ্বিতীয় ইনিংসে স্বাগতিকরা ২৮৫ রান করলে সফরকারীদের লক্ষ্য দাঁড়ায় ২০৯ রান। যদিও অ্যালিস্টার কুকের সেঞ্চুরিতে লক্ষ্যটা সহজ হয়ে যায় ইংল্যান্ডের। ইংলিশদের বিপক্ষে বাংলাদেশের হারগুলো এমন-৭ উইকেট, ৩২৯ রান, ইনিংস ও ২৬১ রান, ইনিংস ও ২৭ রান, ১৮১ রান, ৯ উইকেট, ৮ উইকেট এবং ইনিংস ও ৮০ রান।
সবশেষ হারটা বাংলাদেশের ইনিংস ব্যবধানে। শুধু ইংল্যান্ডের বিপক্ষে নয়, আরও অনেক দলের বিপক্ষে এমন হারের নজির আছে বাংলাদেশের। তবে সবচেয়ে বেশি ভুগতে হয়েছে এই ইংলিশদের বিপক্ষেই। ৮ ম্যাচের সবকটিতেই যে হেরেছে বাংলাদেশ। হ্যা অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেও হেরেছে সব ম্যাচ, তবে সেটা ৪ ম্যাচে। সবচেয়ে বেশি টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে, যদিও লঙ্কানদের বিপক্ষে ১৬ টেস্টে জয় না পেলেও অন্তত ড্র করেছে দুটিতে। ভারতের বিপক্ষেও আছে ড্র; পাকিস্তান, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষেও অন্তত একটি হলেও ড্র করেছে বাংলাদেশ।
হাহাকারের নাম শুধু ইংল্যান্ড। সেই দলটার বিপক্ষেই আবার মুখোমুখি মুশফিকুর রহিমরা। ভয় সরিয়ে হাহাকারের দেয়াল ভাঙার চ্যালেঞ্জটা জিতবেন না এবার!