রবিবার টেস্টের আসল রূপটাই দেখিয়ে দিল চট্টগ্রাম টেস্ট। পরতে পরতে রঙ পাল্টানো প্রথম টেস্টের চতুর্থ দিনে জয়ের প্রদীপ জ্বেলে দিন শেষ করেছে মুশফিক বাহিনী। ২৮৬ রানের লক্ষ্যে খেলতে নামা টাইগাররা দিন শেষ করেছে ৮ উইকেটে ২৫৩ রান নিয়ে। যেখানে এখনও আশার আলো জ্বালিয়ে রেখেছেন সাব্বির। ব্যাট করছেন ৫৯ রানে। তার সঙ্গে রয়েছেন তাইজুল (১১)। শেষ দিনে বাংলাদেশের জয়ের জন্য প্রয়োজন আরও ৩৩ রান।
এর আগে শুরুতে সাবধানেই খেলছিলেন দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও ইমরুল কায়েস। কিন্তু দলীয় স্কোর ৩৫ রান হওয়ার পরই উইকেট হারিয়ে বসে বাংলাদেশ। ৯.৪ ওভারে মঈন আলীর বলে শর্ট লেগে থাকা ব্যালেন্সের হাতে তালুবন্দী হন তামিম ইকবাল। বিদায় নেন ৯ রানে।
তবে এর আগের বলে ৯.৩ ওভারে মঈন আলীর বলে ক্যাচের আবেদন করেছিল ইংল্যান্ড। আম্পায়ার সাড়া না দিলে রিভিউ নেয় সফরকারীরা। কিন্তু রিভিউ শেষে দেখা যায় বল তামিমের ব্যাটেই লাগেনি। ফলে আগের সিদ্ধান্তই বহাল থাকে।
এরপর ক্রিজে নামেন মুমিনুল। তাকে সঙ্গে নিয়ে ভালোই সামাল দিচ্ছিলেন ওপেনার ইমরুল। ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছিলেন হাফসেঞ্চুরির দিকেই। কিন্তু ব্যক্তিগত ৪৩ রানে তাকে রুটের তালুবন্দী করেন আদিল রশিদ। দ্বিতীয় উইকেটে এই জুটিতে আসে ৪৬ রান। বাংলাদেশের সংগ্রহ যখন ২২ ওভারে ২ উইকেটে ৮৬ রান। তখনই মধ্যাহ্নভোজের বিরতিতে যায় দুই দল। প্রথম এই সেশনে উইকেট পড়েছে চারটি।
বিরতি থেকে ফিরে থিতু হওয়ার চেষ্টা করছিল মুমিনুল-মাহমুদউল্লাহ জুটি। কিন্তু গ্যারেথ ব্যাটির আক্রমণে ২৭.৫ ওভারের পরই এলোমেলো হয়ে যায় বাংলাদেশের ব্যাটিং। ওই বলে মুমিনুলের বিপক্ষে রিভিউ চেয়ে বসে ইংল্যান্ড। এলবিডাব্লিউ নাকি ক্যাচ- এ নিয়ে সংশয়ে ছিল তারা। রিভিউ শেষে জানা গেলো এলবিডাব্লিউর শিকার হয়েছেন মুমিনুল (২৭)। ২৯.৬ ওভারে আবারও রিভিউ চেয়ে বসে ইংল্যান্ড। এবার শিকার মাহমুদউল্লাহ। যদিও ইংল্যান্ডের আবেদনে তাকে আউটের সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন আম্পায়ার কুমার ধর্মসেনা। কিন্তু মাহমুদউল্লাহ রিভিউ চাইলে সেখানে লেগ বিফোর হয়েই সাজঘরের পথ ধরেন তিনি। তার স্কোর ছিল ১৭ রান। এরপরেই ক্রিজে নামেন সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিম। অনেকটা প্রত্যাশার চাপ নিয়েই খেলছিলেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। মুশফিককে সঙ্গে নিয়ে সেভাবেই জবাব দিচ্ছিলেন সাকিব। কিন্তু মঈন আলীর ৪১তম ওভারে আর মনোযোগ রাখতে পারেননি। কটবিহাউন্ড হয়ে ২৪ রানেই হার মানেন।
সাকিব প্রত্যাশার চাপ নিতে না পারলেও এরপর আগ্রাসী ব্যাটিং করতে থাকেন সাব্বির রহমান। দ্রুতগতিতে রান তোলার চেষ্টা দেখা যায় তার ব্যাটিংয়ে। সঙ্গে ভূমিকা রাখেন অধিনায়ক মুশফিকও। এই দুজনের ব্যাটেই একসময় আশায় বুক বাঁধতে শুরু করে স্বাগতিকরা। কারণ এই জুটিই পার করে নেয় ২২৭ রান। তবে ৬৮তম ওভারে গ্যারেথ ব্যাটিকে ফের আক্রমণে আনলে ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। ব্যালেন্সের হাতে তালুবন্দী হয়ে ফেরেন ৩৯ রান করা মুশফিক। তবে আরেক প্রান্ত আগলে ধরে খেলতে থাকেন সাব্বির। পেয়েছেন অভিষেক টেস্টে অভিষেক হাফ সেঞ্চুরি। উল্টো দিকে একে একে ফিরে যান মিরাজ, রাব্বি। তবে আশার আলো জ্বালিয়ে রাখতে শেষ দিকে নির্বিঘ্নেই দিন শেষ করেন সাব্বির ও তাইজুল।
সকালে অবশ্য হাতের দুই উইকেট নিয়েই ব্যাট করতে নেমেছিল ইংলিশরা। লক্ষ্য ছিল নিজেদের পুঁজিটাকে আরও বাড়িয়ে নেওয়ার দিকে। যেই লক্ষ্যে সকালে রান নিতে গিয়ে তড়িঘড়ি করে ফেলেছিলেন ব্রড। দিনের দ্বিতীয় ওভারে সাকিবের বলে রান আউট হয়ে ফিরে যান তিনি। তার স্কোর ছিল ১০। এরপর ৮০.১ ওভারে তাইজুলের বলটি গ্যারেথ ব্যাটির প্যাডে বল লাগলে এলবিডব্লিউর আবেদন করে বাংলাদেশ। আম্পায়ার আউট দিলেও ইংলিশরা রিভিউ নেয়। কিন্তু তাতেও শেষ রক্ষা হয়নি। দ্বিতীয় ইনিংসে ২৪০ রানেই অলআউট হয় সফরকারীরা। ফলে বাংলাদেশের লক্ষ্য দাঁড়ায় ২৮৬ রান। ইংল্যান্ডের লিড ছিল ২৮৫ রান।
/এফআইআর/