নিউজিল্যান্ড সফর উপলক্ষে প্রস্তুতি নিতে হবে। এরজন্যে বাংলাদেশ দল দু’ভাগে অস্ট্রেলিয়ার সিডনি আসে ডিসেম্বরের ৯ এবং ১২ তারিখে। সেখানে দুটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলে এরপরই বাংলাদেশ আসে নিউজিল্যান্ডে। সেখানে ডিসেম্বরে ক্রাইস্টচার্চের ওয়ানডে দিয়ে শুরু। প্রথম ফলাফল শূন্য। কিন্তু সেই ফলাফল আর শূন্যের বাইরে যায়নি। প্রথম শূন্য প্রাপ্তির ক্রাইস্টচার্চেই শুক্রবার শুরু হচ্ছে দ্বিতীয় এবং শেষ টেস্ট। শেষ টেস্টে বাংলাদেশ দল জিতবে-এটি খুব বেশি মানুষ করেন না! এর চাইতে দলে চোটের মিছিল, শেষ টেস্টে কারা খেলবে, রুবেল খেলবে কিনা-এসব মূল আলোচনার বিষয়। ক্রাইস্টচার্চের উইকেট ওয়েলিংটনের বেসিন রিজার্ভের উইকেটের চেয়ে বিপদজ্জনক হতে পারে। নিউজিল্যান্ডের এসব উইকেট প্রথম দিন পেস আক্রমণের তীর্থ ভূমি হয়। যে দল টস জেতে সে বল হাতে নেয় প্রথমে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ টস হারলে ব্যাটসম্যানদের প্রথম সেশনটা টিকে থাকতে হবে। আর টস জিতলে পরীক্ষা দিতে হবে বোলারদের। কারণ নিউজিল্যান্ডের ব্যাটসম্যানরা এরমাঝে বাংলাদেশের পেস আক্রমণের শক্তি বুঝে ফেলেছেন।
বাংলার ব্যাটসম্যানরা যে লড়বেন তাতে প্রতিষ্ঠিত এবং ফর্মে থাকা তিন ব্যাটসম্যান ক্যাপ্টেন মুশফিকুর রহিম, অন্যতম ওপেনার ইমরুল কায়েস, ওয়ানডাউনের মমিনুল হক তিনজনই যে এখন বাড়ি ফিরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। চোটের কারণে দল থেকে ছিটকে পড়া মুশফিক-ইমরুলের দেশে ফেরার জন্যে টিকিট কাটার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। কিন্তু বৃহস্পতিবার জানা গেলো টিকিট লাগবে তিনটি। মমিনুলও যাবেন। কারণ তার পাঁজরের ব্যথা বেড়েছে। টিকিট মিললে এই তিনজন দেশের উদ্দেশে রওয়ানা হবেন শনিবার। অর্থাৎ টেস্টের প্রথম দিনের শুক্রবারটায় ড্রেসিং রুমে বসে দেখবেন দলের ব্যাটিং অথবা বোলিং-ফিল্ডিং। এদের অনুপস্থিতিতে বাংলাদেশের রান সংগ্রহ কীভাবে মোটাসোটা হবে? কেউ জানে না। তাই ভালোভাবেই এই টেস্টে পরীক্ষা দিতে হবে ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক তামিম ইকবালকে।
রুবেল দলের সঙ্গে থাকতে দু’জন ডেব্যুটেন্ট, এক টেস্টের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন আরেকজনকে নিয়ে পেস স্কোয়াড সাজানোর বিষয়টি নিয়ে সমালোচনার ঝড় চলছে। এটি যে কোচের সিদ্ধান্ত তা জানে দলের সদর-অন্দর। বুধবার মিডিয়া ব্রিফিংয়ে প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরু সিংহের সঙ্গে এক দফা তরজা হয়। বেশ ক্ষোভ ঝেড়ে কোচ বলেছিলেন, রুবেলকে না নেওয়ার কোনও যুক্তি সাংবাদিকদের তিনি দেবেন না। কিছুটা তাচ্ছিল্যও ছিল তার উচ্চারণে! বুধ-বৃহস্পতিবার দু’দিনে কোচের কথাগুলো দেশি মিডিয়ায় ফলাও করে প্রচার হয়েছে। দলের একটা জয়ও না হওয়ায় দেশের মানুষ এমনিতে ক্ষেপে তেতে আছেন। এবং তা খোদ বিসিবির বস নাজমুল হাসান পাপনসহ। সে জন্য দলের এত লম্বা সফর সত্ত্বেও তিনি এখন পর্যন্ত নিউজিল্যান্ড আসেননি। একবার সিঙ্গাপুর পর্যন্ত এসে অসুস্থ হয়ে দেশে ফিরে গেছেন। ওয়েলিংটন টেস্টের প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের রানের পাহাড় দেখে তার আবার আসার কথা হয়েছিল। কিন্তু ওয়েলিংটন টেস্টে হারের পর সেটিও ভেস্তে যায়।
এদিকে বৃহস্পতিবার ক্রাইস্টচার্চে বেসিন রিজার্ভের মাঠে সাংবাদিকদের দেখে কোচ বলেছেন, তার পেস বোলারদের কেউ কেউ প্রথম টেস্টে লম্বা সময় বল করে পরিশ্রান্ত। তাদের কারও জায়গায়তো রুবেলকে খেলানোও হতে পারে। কোচ যুক্ত করেন, এটি যে কোনও দলের পরিকল্পনারই অংশ। একজন খেলবে, আরেকজন বিশ্রামে থাকবে। বিশ্রামের খেলোয়াড়কে নেওয়া হবে পরবর্তী খেলায়।
এখন পর্যন্ত নিউজিল্যান্ড সফরের কিছু মোটাদাগের ভুল নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে। প্রথম ভুলটি হচ্ছে কোটি টাকা ব্যয়ে সিডনিতে কন্ডিশনিং ক্যাম্প হয়েছে কার পরামর্শে? সিডনির সঙ্গে নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশনের মিল কোথায়? নাকি সিদ্ধান্তটি হয়েছে কোচের ঘরসংসার সিডনিতে সে জন্যে? ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টি দল নির্বাচন নিয়ে কোচের সঙ্গে সিনিয়র খেলোয়াড়দের দ্বন্দ্বের খবর সবাই জানে। ওয়েলিংটন টেস্টে সাব্বির যখন রান পাচ্ছিলেন ওই অবস্থায় ডিক্লেয়ার করা হয়েছে কার সিদ্ধান্তে? বাংলাদেশ কি তখন ভেবে বসেছিল তারা ওই টেস্টে জিততে চলেছে? নিউজিল্যান্ডের পরিবেশে নিউজিল্যান্ডের ব্যাটিং-বোলিং শক্তির দলের বিরুদ্ধে প্রথম টার্গেট রাখা উচিত ছিল ম্যাচটা অন্তত ড্র করা। এমন অনেক সিদ্ধান্ত নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা আরও চলবে ক্রাইস্টচার্চ টেস্ট শেষ হওয়ার পর।
হ্যাগলি ওভালের চিফ কিউরেটর রোপার্ড পল যে ধারনা দিয়েছেন, তাতে উইকেটে প্রথম দিন পেস বোলারদের দাপট থাকবে। দ্বিতীয়-তৃতীয়দিন দাপট চলবে ব্যাটসম্যানদের। চতুর্থ-পঞ্চম দিন স্পিন বোলারদের সুযোগ আসতে পারে। তামিমদের এই টেস্টে তাই আগে টার্গেট থাকা উচিত টেস্টটা পাঁচদিন যাতে চলে। কিন্তু এই বিবর্ণ দল নিয়ে কী লড়াই চালাবেন ভারপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন তামিম ইকবাল? তার দক্ষ-অভিজ্ঞ সৈনিক কোথায়? এসবের উত্তর পেতে শুক্রবার সকালের সেশনটা গুরুত্বপূর্ণ।
/এফআইআর/
