X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

সানিয়া-নেওয়ালের শহরে সিন্ধুর রাজত্ব

রবিউল ইসলাম, হায়দরাবাদ থেকে
১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৭:০২আপডেট : ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৭:৩২

সানিয়া-নেওয়ালের শহরে সিন্ধুর রাজত্ব হায়দরাবাদে সানিয়া মির্জা বলতেই পাগল সবাই। ভারতের এই টেনিস কন্যার জনপ্রিয়তা কখনও কখনও বিরাট কোহলি-মহেন্দ্র সিং ধোনিদেরও হার মানায়! সেই সানিয়ার শহরে নতুন তারকার নাম ভেস্কট সিন্ধু। একই শহরে জন্ম এই দুই তারকার। যদিও এই শহরের আরও এক শাটলার বেশ কয়েক বছর ধরেই আলো ছড়াচ্ছিলেন। তিনি সাইনা নেওয়াল। যিনি ২০১২ সালের লন্ডন অলিম্পিকে ব্রোঞ্জ জিতে তারকা খ্যাতি পেয়েছিলেন।

এখন হায়দরাবাদে সানিয়া-নেওয়ালকে পেছনে ফেলে তড়তড় করে এগিয়ে যাচ্ছেন আরেক তারকা পুসারলা ভেস্কট সিন্ধু। বলতে গেলে তারকা খ্যাতিতে সানিয়া-নেওয়ালের শহরে নতুন এক তরুণীর রাজত্ব চলছে। যিনি কিনা এই হায়দরাবাদেরই মেয়ে।

বিশেষ করে রিও অলিম্পিকে সাইনা নেওয়াল দ্বিতীয় রাউন্ডে ছিটকে যাওয়ার পর ভারতের পদক জয়র আশা প্রায় ছেড়েই দিয়েছিল সবাই। ঠিক তখনই ব্যাডমিন্টনে দেশকে পদক এনে দেওয়ার দায়িত্ব নিজ কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন হায়দরাবাদের ২১ বছর বয়সী তরুণী সিন্ধু।

কোয়ার্টার ফাইনালে সিন্ধু কঠিন লড়াই করে জয় ছিনিয়ে নিয়েছিলেন বিশ্ব র‌্যাংকিংয়ের দ্বিতীয় স্থানে থাকা চিনের ওয়াঙ্গ ইয়াংয়ের কাছ থেকে। তখন থেকেই পদকের আশায় বুক বেঁধেছিল গোটা ভারত। শেষ পর্যন্ত ফাইনালে স্পেনের কারোলিনা মারিনকে হারিয়ে রৌপ্য পদক নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে ভারতীয় এই শাটলারকে। ভারতবাসীর কাছে তাই এটা সোনার চেয়েও দামী।

সিন্ধু মূলত ২০০১ সালে অল ইংল্যান্ড ওপেন ব্যাডমিন্টন চ্যাম্পিয়ন পুল্লেলা গোপীচাঁদের সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে ভলিবলের বদলে ব্যাডমিন্টন বেছে নেন। মাত্র আট বছর বয়স থেকে ব্যাডমিন্টন খেলতে শুরু করেন ভারতীয় এই শাটলার।

সিন্ধু প্রথমে সেকান্দারাবাদ ইন্ডিয়ান রেলওয়ে সংকেত প্রকৌশল ও টেলিযোগাযোগ ইনস্টিটিউট এর ব্যাডমিন্টন কোর্টে মেহবুব আলীর কাছে প্রাথমিক শিক্ষ নেন। পরবর্তীতে পুল্লেলা গোপীচাঁদের ব্যাডমিন্টন একাডেমিতে ভর্তি হয়ে নিজেকে পরিপূর্ণ শাটলার হিসেবে তৈরি করেন।

সিন্ধুকে নিয়ে একটি ফিচার করতে গিয়ে ‘দ্য হিন্দু’র এক সাংবাদিক লিখেছিলেন, ‘তার বাসভবন ৫৬ কি.মি দূরে হলেও প্রতিদিন তিনি সঠিক সময়ে ক্যাম্পে উপস্থিত থাকতেন। ভালো ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় হওয়ার জন্য এটাই প্রথম পূর্বশর্ত।’

হায়দরাবাদে সানিয়া-নেওয়ালকে পেছনে ফেলে তড়তড় করে এগিয়ে যাচ্ছেন আরেক তারকা পুসারলা ভেস্কট সিন্ধু। গত বছরের আগস্টে রিও অলিম্পকে রৌপ্য জয় করে দেশে আসার পর বিরল সংবর্ধনা পেয়েছিলেন সিন্ধু। হায়দরাবাদে গাছিবাওলি স্টেডিয়ামের ব্যাডমিন্টন ফেডারেশন এই সংবর্ধনার আয়োজন করে।

সেই তারকার খোঁজ করতেই গত রবিবার পুল্লেলা গোপীচাঁদের ব্যাডমিন্টন একাডেমি ঘুড়ে দেখা গেল। যেখানে একাডেমির বাইরে সিন্ধুর বড় একটি ছবি টাঙানো রয়েছে। অবশ্য অনেক ঘুড়াঘুড়ি করার পর সিন্ধুর ম্যানেজারের সঙ্গে কথা বলেই সিন্ধুর কাছে যাওয়ার অনুমতি পাওয়া গেল। সিন্ধুকে দেখেই বোঝা যাচ্ছিল সাপ্তাহিক ছুটির মেজাজে রয়েছেন তিনি। কেমন আছেন জানতে চাইলে গম্ভীরভাবে হেসে উত্তর দিয়ে বলেন, ‘হুম ভালো’। প্রতিউত্তরে বললেন, ‘আপনি কেমন আছেন?’

একটু কথা বলা যাবে- এমন প্রশ্নে মুচকি হেসে তিনি বললেন, ‘কেন? আজ ব্যস্ত, ছুটির দিন, অন্য আর একদিন কথা হবে। কিছুক্ষণের মধ্যে আমি বাইরে যাবো। কিছু কাজ আছে। আপনি পরে আসবেন!’

অনেক জোর করার পর জানালেন, ‘আগের চেয়ে অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী আমি। সামনের অলিম্পিক খেলার ইচ্ছা আছে। আর এবার অবশ্যই স্বর্ণ জেতার জন্যই মাঠে নামব।’

ভ্যালেন্টাইন্স ডে তে প্রোগ্রাম আছে নিশ্চয়ই- পাল্টা প্রশ্ন করতেই লাজুক হাসি দিয়ে তিনি চলে গেলেন। শুধু বলে গেলেন পরে, ‘কথা হবে।’ যদিও যাওয়ার আগে বলে গেলেন, ‘এখন তো ইন্টারভিউ দেওয়ার সময় নয়। আগে থেকে কথা বলে আসতে হতো আপনাকে।’

সানিয়া-নেওয়ালের শহরে সিন্ধুর রাজত্ব তার সঙ্গে কথা বলেই দেখা হয়ে গেলো সিন্ধুর গোপীচাঁদ ব্যাডমিন্টন একাডেমি। জুবিলি হিলসে অবস্থতি সেই একাডেমি মূলত পাহাড়ি অঞ্চলে অবস্থিত, পাথুরে পাহাড়। এই পাহাড়ের মাঝেই শহর। বোটানিক্যাল গার্ডেন, চিড়িয়াখানা ও পার্ক পেরিয়েই গোপীচাঁদ একাডেমি। বেশ আধুনিক একাডেমি। অনেকটাই সাজানো গোছানো। প্রবেশ পথেই দেখা গেল বিশাল বড় গ্রাউন্ডে পানি দেওয়ার কাজ চলছে।

প্রশাসনিক অফিসে গিয়ে এক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘আজ ছুটির দিন হলেও শাটলাররা অনুশীলন করছে। ৫০-৬০ জনের একটি দল অনুশীলন করছে। আধুনিক সকল সুযোগ-সুবিধা রয়েছে এই একাডেমিতে। চাইলে ঘুরে দেখতে পারেন।’

গোপীচাঁদ একাডেমির এক প্রতিনিধি বাংলা ট্রিবিউনকে পিভি সিন্ধুর সম্পর্কে বলেছেন, ‘সিন্ধুর খেলার সবচেয়ে আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্য তার মনোভাব। সে কখনও হার মানতে চায় না। সব সময় জিততে চায়। এটাই তাকে এগিয়ে রাখছে।’

এক নজরে সিন্ধু-

হায়দরাবাদে জন্ম সিন্ধুর : পুসারলা ভেঙ্কট সিন্ধুর জন্ম ১৯৯৫ সালের ৫ জুলাই হায়দরাবাদে (বর্তমানে তেলঙ্গানা)।

বাবা-মা ভলিবল খেলোয়াড়  : সিন্ধুর বাবার নাম পিভি রামান্না ও মায়ের নাম পি বিজয়া। এরা দুজনেই ভলিবল খেলোয়াড় ছিলেন। রামান্না ২০০০ সালে অর্জুন পুরস্কারও পেয়েছেন।

অনুপ্রেরণা পুল্লেলা গোপীচাঁদ : অনুপ্রেরণা পুল্লেলা গোপীচাঁদ। তবে বাবা মায়ের মতো ভলিবল না খেলে ব্যাডমিন্টনের ব্যাট হাতে তুলে নিয়েছিলেন সিন্ধু। কারণ তার অনুপ্রেরণা ছিলেন ভারতের আর এক ব্যাডমিন্টন তারকা পুল্লেলা গোপীচাঁদ, যিনি বর্তমানে সিন্ধুর কোচও বটে।

গোপীচাঁদের ব্যাডমিন্টন অ্যাকাডেমিতে ভর্তি : গোপীচাঁদের ব্যাডমিন্টন একাডেমিতে ভর্তি হয়ে মাত্র ৮ বছর বয়স থেকে সিন্ধু ব্যাডমিন্টন খেলতে শুরু করেন। প্রথমে তার কোচ ছিলেন মেহবুব আলী। পরে তিনি পুল্লেলা গোপীচাঁদের ব্যাডমিন্টন একাডেমিতে ভর্তি হন।

সিন্ধুকে পদ্মশ্রী : ব্যাডমিন্টনে তার অবদানের জন্য ২০১৫ সালে ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান পদ্মশ্রীতে ভূষিত হয়েছেন পিভি সিন্ধু।

সিন্ধুর বাবার নাম পিভি রামান্না ও মায়ের নাম পি বিজয়া। এরা দুজনেই ভলিবল খেলোয়াড় ছিলেন। একনজরে সিন্ধু আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার

রিও অলিম্পিক : রিও অলিম্পিকের ব্যাডমিন্টনে রৌপ্য পদক জিতেন তিনি।

বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ : গুয়াংঝাওয়ে ২০১৩ সালে মহিলাদের সিঙ্গলসে ব্রোঞ্জ, কোপেনহেগেনে ২০১৪ সালে মহিলাদের সিঙ্গলসে ব্রোঞ্জ জেতেন।

এশিয়ান গেমস : ইঞ্চনে ২০১৪ সালে ব্রোঞ্জ পদক জয় ।

কমনওয়েলথ গেমস : ২০১৪ সালে গ্লাসগোয় মহিলাদের সিঙ্গলসে ব্রোঞ্জ জয়।

এশিয়া চ্যাম্পিয়নশিপ: ২০১৪ সালে গিমচেয়নে মহিলাদের সিঙ্গলসে ব্রোঞ্জ পদক।

সাউথ এশিয়ান গেমস:  গুয়াহাটিতে মহিলাদের সিঙ্গলসে ২০১৬ সালে রুপার পদক জয়। এই গুয়াহাটিতেই মহিলাদের দলগত বিভাগে সোনা জয়।

এছাড়াও ২০১১ সালে ডগলাসে অনুষ্ঠিত যুব কমনওয়েলথ গেমসে সোনা পান সিন্ধু। এর পাশাপাশি এশিয়ান জুনিয়র চ্যাম্পিয়নশিপে ২০১১ সালে মহিলাদের সিঙ্গলসে ব্রোঞ্জ, মিক্সড দলে ব্রোঞ্জ পান। ২০১২ সালে এই এশিয়ান জুনিয়র চ্যাম্পিয়নশিপেই মহিলাদের সিঙ্গলসে সোনা জেতেন পিভি সিন্ধু।

 

/আরআই/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
বেচাকেনা জমজমাট, কম দামে ভালো পাঞ্জাবিতে আগ্রহ ক্রেতাদের
বেচাকেনা জমজমাট, কম দামে ভালো পাঞ্জাবিতে আগ্রহ ক্রেতাদের
‘মাঝেমধ্যে ভাবি, আইপিএল কি আদৌ ক্রিকেট’
‘মাঝেমধ্যে ভাবি, আইপিএল কি আদৌ ক্রিকেট’
ঈদে আরিয়ানের একমাত্র নির্মাণ ‘তখন যখন’
ঈদে আরিয়ানের একমাত্র নির্মাণ ‘তখন যখন’
করোনার পর মাধ্যমিকে ১০ লাখের বেশি শিক্ষার্থী কমেছে
করোনার পর মাধ্যমিকে ১০ লাখের বেশি শিক্ষার্থী কমেছে
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়