X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০
সাক্ষাৎকারে অর্জুনা রানাতুঙ্গা

‘২০২৩ বিশ্বকাপ জয়ের সম্ভাবনা আছে বাংলাদেশের’

রবিউল ইসলাম, শ্রীলঙ্কা (কলম্বো) থেকে
০৬ এপ্রিল ২০১৭, ২৩:৩৭আপডেট : ০৬ এপ্রিল ২০১৭, ২৩:৫৯

অর্জুনা রানাতুঙ্গা শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটের তিনি জীবন্ত কিংবদন্তি। তার নেতৃত্বেই ‘ছোট দলে’র তকমা ঝেড়ে ফেলে ক্রিকেট বিশ্বকে শাসন করেছিল শ্রীলঙ্কা, জিতে নিয়েছিল বিশ্বকাপ। এখন অবশ্য ক্রিকেট থেকে অনেক দূরে অর্জুনা রানাতুঙ্গা। বন্দর ও নৌমন্ত্রীর গুরুদায়িত্ব তার কাঁধে। বৃহস্পতিবার নিজের কার্যালয়ে বসে নিজের ক্যারিয়ার, জীবন, রাজনৈতিক দর্শন সহ নানা বিষয়ে কথা বললেন তিনি। 

বাংলা ট্রিবিউন: ক্রিকেট দিয়েই শুরু করা যাক। 

রানাতুঙ্গা: এখন তো আমি ক্রিকেট দেখি না বললেই চলে। কারণ আমার চেয়ে বেশি জানা লোকেরা এখন ক্রিকেট চালাচ্ছে। তাই দূরে থাকাই ভালো বলে মনে করছি। 

বাংলা ট্রিবিউন: শ্রীলঙ্কার বর্তমান বোর্ডের প্রতি আপনার ক্ষোভটা বোঝা যাচ্ছে। 

রানাতুঙ্গা: আপনারা জানেন বোর্ডের সর্বশেষ নির্বাচনে আমি সহ-সভাপতি পদে দাঁড়িয়েছিলাম। কিন্তু জিততে পারিনি। দু’জন ব্যবসায়ী জিতেছেন। এমনকি বোর্ড সভাপতিও একজন ব্যবসায়ী। আসলে মাফিয়ারাই গত কয়েক বছর ধরে ক্রিকেট চালাচ্ছে। ক্রিকেটারদের বোর্ডে ঢুকতেই দেওয়া হচ্ছে না। তারা ক্লাবে-ক্লাবে নিজেদের লোক রেখে ভোটও নিশ্চিত করে ফেলছে। কাজেই ক্রিকেট রসাতলে গেলে এর দায়-দায়িত্ব ভোটারদেরও নিতে হবে। ক্রিকেট চালানো এই ব্যবসায়ীরা আসলে ক্রিকেটের কিছুই বোঝে না। তবে এটা সত্যি, বিশ্বের সেরা কয়েকজন ক্রিকেটারকে তারা বোর্ডের সঙ্গে যুক্ত করেছিল। কিন্তু ক্রিকেট পরিচালনার কাজটি ওদের হাতে দেয়নি। বলতে পারেন এক দুঃসহ অবস্থা চলছে। এদিকে রাষ্ট্রপতি আবার আমাকে বিরাট একটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিয়েছেন। এই কাজেই এখন মন-প্রাণ উজাড় করে দিচ্ছি। খেলার চেয়ে বন্দর সুরক্ষার কাজেই আমি এখন বেশি মনোযোগী। 

‘২০২৩ বিশ্বকাপ জয়ের সম্ভাবনা আছে বাংলাদেশের’ বাংলা ট্রিবিউন: আমরা জানি যে টি-টোয়েন্টি বা আইপিএল বিরোধী লোক আপনি। তা আপনার এমন অবস্থানের ব্যাখ্যা কী? 

রানাতুঙ্গা: ক্রিকেট দেখলে এখন দুঃখই হয়। অথচ অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড এমনকি দক্ষিণ আফ্রিকার দিকেও যদি তাকান, দেখবেন ওরা এখনও ওয়ানডে বা টি-টোয়েন্টির চেয়ে টেস্ট ক্রিকেটকেই বেশি মর্যাদা দেয়। আইপিএল শুরু হলেই টেকনিকের জায়গা নিয়ে নেয় ‘পাওয়ার’ আর মস্তিষ্কের বিপক্ষে দাঁড়িয়ে যায় মস্তিষ্কহীনতা। পুরোটাই বিনোদনের ব্যাপার হয়ে যায়। আমি তাই টেন্ডুলকার, গাভাস্কার বা অরবিন্দ ডি সিলভার মতো ব্যাটসম্যান আর দেখি না। পাওয়ার হিটিং ব্যাটসম্যানদেরই এখন যত কদর! তবে আমি এখনও অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ড কিংবা অস্ট্রেলিয়া-দক্ষিণ আফ্রিকার টেস্ট দেখে রোমাঞ্চিত হই। ওই দেশের লোকেরা এখনও টেস্ট ম্যাচ দেখতে মাঠে আসে। আমাদের কাছে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট ‘জাঙ্ক ফুড’ ছাড়া আর কিছু নয়। টেস্ট ক্রিকেট হলো বাসায় মায়ের হাতে রান্না করা সুষম খাবার। আর টি-টোয়েন্টিকে বলব রাস্তার ধার থেকে কিনে খাওয়া নুডলস।

বাংলা ট্রিবিউন:  কিন্তু অনেক ক্রিকেটার তো টি-টোয়েন্টি খেলার জন্য টেস্ট বা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে আগেভাগে অবসর নিয়ে ফেলছেন। বিষয়টিকে আপনি কিভাবে দেখছেন?

রানাতুঙ্গা: আমি নিজে দেশের হয়ে খেলা এবং জেতাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। তবে এখন বেশিরভাগ ক্রিকেটার টাকার পেছনে ছুটছে। আমার মনে হয়, এখন বেশির ভাগের লক্ষ্য আইপিএল, বিগব্যাশ বা সিপিএলে যাওয়া এবং কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা কামানো। এজন্যই ১৯৯৬ বিশ্বকাপজয়ী দলের ক্রিকেটারদের কথা আমি সবসময় বলি। ওরা কখনোই টাকা নিয়ে চিন্তিত ছিল না। ওরা দেশের হয়ে জেতার গৌরবকেই গুরুত্ব দিয়েছে বেশি। ওদের জন্য আমি সত্যিই গর্বিত।

বাংলা ট্রিবিউন:  শ্রীলঙ্কার সঙ্গে তুলনায় বাংলাদেশের ক্রিকেটকে এখন কোন জায়গায় দেখছেন?

রানাতুঙ্গা: বাংলাদেশ সত্যিই অনেক উন্নতি করেছে। তিন বছর আগে আমি বলেছিলাম যে বাংলাদেশের ক্রিকেট যেভাবে এগোচ্ছে, তাতে খুব দ্রুতই আমরা তাদের কাছে হারব। এই সিরিজেই তা হয়েছে। বিশেষ করে টেস্ট সিরিজ দেখে মনে হল বড় দৈর্ঘ্যের ক্রিকেটে বাংলাদেশ বেশ উন্নতি করেছে। ওদের কমিটমেন্ট দেখে আমি মুগ্ধ। ভাবতে ভালো লাগে যে বাংলাদেশের ক্রিকেট উন্নয়নে শ্রীলঙ্কানদেরও অবদান আছে।
বাংলা ট্রিবিউন:  ঢাকা লিগে খেলেছেন, সেই অভিজ্ঞতার কথা শুনতে চাই।

রানাতুঙ্গা: ১৯৮৮ সালে মোহামেডানের হয়ে খেলেছিলাম। আমি মোহামেডানের হয়ে একটি পুরো মৌসুম এবং অন্য দুই মৌসুমে হয়তো পাঁচটি করে ম্যাচ খেলেছিলাম। সেখানে আমার দারুণ কিছু স্মৃতি আছে। একবার মাঠে এক উইকেটরক্ষকের সঙ্গে বচসাও হয়েছিল (হাসি)। তবে ঘটনাটা ছিল মজার। ঢাকায় খেলার সময় দেখতাম গ্যালারি ছিল পরিপূর্ণ। ঘরোয়া ক্রিকেটে কখনও এত দর্শক দেখিনি। বাংলাদেশে আমার দুই ভাইও খেলেছে, নিশান্থ আর সঞ্জিব। আমি নান্নুর সঙ্গে অনেক ম্যাচ খেলেছি। আতহার আলীসহ বেশ কয়েকজন সাবেক ক্রিকেটারের সঙ্গে অনেক স্মৃতি আছে।

বাংলা ট্রিবিউন: আর কোনও স্মৃতি?

রানাতুঙ্গা: আমার মনে আছে, ঢাকায় খেলতে গিয়ে আমি সেখানকার কর্মকর্তাদের বলতাম, উন্নতি করতে হলে স্কুল ক্রিকেটটা শুরু করুন। জুনিয়র পর্যায়ে বেশি মনোযোগ দিন। নইলে আপনাদের ক্রিকেট দাঁড়াবে না। বলতাম দাঁড়াতে হলে স্কুল ক্রিকেট শক্তিশালী করার কোনও বিকল্প নেই। আমার ধারণা তারা ইতোমধ্যে সেই কাজটি করেছেন। তাছাড়া কোচরাও দুর্দান্ত কাজ করেছেন। আমাদের শ্রীলঙ্কা থেকে অতীতে অনেক কোচ গিয়ে আপনাদের ক্রিকেট উন্নয়নে ভূমিকা রেখে এসেছেন। আর এখন তো হাথুরুসিংহে আর সামারাবীরা দারুণ কাজ করছে বাংলাদেশ দলের জন্য। আমার তো মনে হয় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড এখন শ্রীলঙ্কার চেয়ে বেশি ফোকাসড।  শ্রীলঙ্কার ক্রিকেট প্রশাসকরা তো ক্রিকেটের কিছুই বোঝে না।

‘২০২৩ বিশ্বকাপ জয়ের সম্ভাবনা আছে বাংলাদেশের’ বাংলা ট্রিবিউন: বাংলাদেশের বিশ্বকাপ জেতা কতটা সম্ভব বলে মনে করেন?

রানাতুঙ্গা: ইংল্যান্ডে জুন-জুলাইয়ে বিশ্বকাপ হবে, তাই না? বাংলাদেশের কয়েক জন খুব ভালো মানের পেসার রয়েছে। খুব ভালো একজন বাঁহাতি পেসার (মুস্তাফিজ) আছে। ওকে খুব প্রতিশ্রুতিশীল মনে হয়েছে। ওদের পরবর্তী বিশ্বকাপ পর্যন্ত সুরক্ষা দিতে হবে। ২০২৩ বিশ্বকাপে যেন আরও প্রস্তুত থাকতে পারে, সেই চেষ্টা করতে হবে।

বাংলা ট্রিবিউন:  ২০২৩ বিশ্বকাপ উপমহাদেশে হবে বলে বাংলাদেশের সম্ভাবনা কতটা দেখছেন?
রানাতুঙ্গা: বাংলাদেশ যেভাবে খেলছে, তাতে ভালো সম্ভাবনা রয়েছে। ওদের কিছু তরুণ ক্রিকেটার দরকার। ‘এ’ দলের প্রচুর খেলা থাকতে হবে। ওরা ঠিক পথেই আছে। ২০২৩ বিশ্বকাপের এখনও ৬ বছর  বাকি। তাই অনূর্ধ্ব-১৯ বা অনূর্ধ্ব-২৩ দলের সেরা ক্রিকেটারদের জাতীয় দলের সঙ্গে না মিশিয়ে আলাদাভাবে তৈরি করা উচিত। ওদের নিয়ে ঠিকঠাক পরিকল্পনা করা হলে উপমহাদেশে বিশ্বকাপ জেতা খুব কঠিন হওয়ার কথা না। আমি নিশ্চিত, সে সময়ে বাংলাদেশের বেশ কয়েকজন সিনিয়র খেলোয়াড় দরকার হবে। তরুণ খেলোয়াড়দের পাশে থাকার জন্য ওদের সে সময়ে থাকতে হবে। সাকিব আল হাসানের মতো কয়েক জন প্রতিভাবান ক্রিকেটারের নতুন প্রজন্মের জন্য মাঠে থাকতে হবে।

বাংলা ট্রিবিউন: চলমান সিরিজ নিশ্চয়ই দেখছেন। কেমন লাগছে?

রানাতুঙ্গা: আমার মনে হয় বাংলাদেশ প্রথম টেস্টে খুবই খারাপ খেলেছে। তবে দ্বিতীয় ম্যাচে খুব ভালোভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এটা আসলে খেলোয়াড়দের দায়িত্ব নেওয়ার ব্যাপার। আমি মনে করি, দুই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান যেভাবে ব্যাট করেছে, এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল বাংলাদেশের জন্য।
বাংলা ট্রিবিউন: বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের টেকনিক কেমন মনে হয়েছে?
রানাতুঙ্গা: আমি মনে করি, টেকনিকের দিক থেকে ওদের কোনও সমস্যা নেই। ব্যাটসম্যানদের হাতে যথেষ্ট শট আছে, ওরা খুব প্রতিভাবান। শুধু ওরা কিছুটা মানসিকভাবে ‍দুর্বল। এটা দ্রুত কাটিয়ে উঠতে হবে।
বাংলা ট্রিবিউন:  তরুণ ক্রিকেটারদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?
রানাতুঙ্গা: দেশের হয়ে খেলার চেয়ে বড় কিছু নেই। দেশের ব্লেজার, টাই, টুপি এগুলো আমি কখনও অর্থের সঙ্গে তুলনা করি না। আপনি দেশের হয়ে খেললে টাকা পাবেন। আমি সবসময় বলি, দেশের জন্য খেলো, স্কুলের জন্য খেলো, ক্লাবের জন্য খেলো। টাকার দিকে তাকিয়ে ক্রিকেট খেলো না। কিন্তু বেশিরভাগ ক্রিকেটারই এটা করে। তারা বড় ভুল করে। আমি আশা করবো, বাংলাদেশের ক্রিকেটে এটা ঘটবে না। মাতৃভূমির প্রতিনিধিত্ব করার চেয়ে বড় আর কিছু হতে পারে না।

/এএআর/

 

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
একসঙ্গে ইফতার করলেন ছাত্রলীগ-ছাত্রদলসহ সব ছাত্রসংগঠনের নেতারা
একসঙ্গে ইফতার করলেন ছাত্রলীগ-ছাত্রদলসহ সব ছাত্রসংগঠনের নেতারা
শনিবার সকালে আবার অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা বুয়েট শিক্ষার্থীদের
শনিবার সকালে আবার অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা বুয়েট শিক্ষার্থীদের
ইসরায়েল যা যা অস্ত্র চেয়েছিল সব পায়নি: মার্কিন সেনাপ্রধান
ইসরায়েল যা যা অস্ত্র চেয়েছিল সব পায়নি: মার্কিন সেনাপ্রধান
ছুটির দিনে নিউ মার্কেটে জনসমুদ্র
ছুটির দিনে নিউ মার্কেটে জনসমুদ্র
সর্বাধিক পঠিত
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
বাড়লো ব্রয়লার মুরগির দাম, কারণ জানেন না কেউ
বাড়লো ব্রয়লার মুরগির দাম, কারণ জানেন না কেউ
‘ভারতের কঠোর অবস্থানের কারণেই পিটার হাস গা ঢাকা দিয়েছেন’
‘ভারতের কঠোর অবস্থানের কারণেই পিটার হাস গা ঢাকা দিয়েছেন’
২৪ ঘণ্টার মধ্যে মেট্রোরেল লাইনের ওপর থেকে ক্যাবল সরানোর অনুরোধ
২৪ ঘণ্টার মধ্যে মেট্রোরেল লাইনের ওপর থেকে ক্যাবল সরানোর অনুরোধ