X
বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০
বাংলা ট্রিবিউনকে মাশরাফি

‘এই ম্যাচ আজীবন মনে থাকবে’

রবিউল ইসলাম, শ্রীলঙ্কা (কলম্বো) থেকে
০৭ এপ্রিল ২০১৭, ০৪:৪০আপডেট : ০৭ এপ্রিল ২০১৭, ০৪:৪০

মাশরাফি বিন মুর্তজা জীবনের প্রথম টি-টোয়েন্টির মতো শেষ ম্যাচও জয় দিয়ে স্মরণীয় করে রাখলেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। প্রথম টি-টোয়েন্টি শুরু হওয়ার ঠিক আগে ঘোষণা দিয়েছিলেন, এই সিরিজ খেলে বিদায় জানাবেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত সংস্করণকে। বিদায়ী ম্যাচে প্রিয় অধিনায়ককে জয় উপহার দিতে উন্মুখ ছিল পুরো দল। সবার চেষ্টা আর প্রতিজ্ঞার ফল, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দ্বিতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের ৪৫ রানের অসাধারণ জয়। এর চেয়ে ভালো বিদায়ী উপহার আর কী হতে পারে! ১০ বছরের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের সমাপ্তি টানার পর বাংলা ট্রিবিউনকে মাশরাফি জানালেন, শেষ ম্যাচটির কথা আজীবন মনে রাখবেন তিনি। খেলা শেষে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল অধিনায়কের কথোপকথন তুলে ধরা হলো এখানে।

বাংলা ট্রিবিউন: টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ খেলে ফেললেন। এই মুহূর্তে আপনার মনের অবস্থা কেমন?

মাশরাফি: অবশ্যই ভালো, অবশ্যই গর্বিত। বাংলাদেশের হয়ে প্রায় ১০ বছর টি-টোয়েন্টি খেলেছি। শেষ ম্যাচটা জিতে আরও বেশি ভালো লাগছে। হারলে মনে হতো বাংলাদেশ আরও একটা ম্যাচ হেরেছে। আজ মাঠে একটু অস্থির লাগছিল। টি-টোয়েন্টিতে নিজের শেষ ম্যাচ খেলতে নেমেছিলাম, তাই হয়তো এমন লাগছিল।

বাংলা ট্রিবিউন: ফিল্ডিংয়ের সময় অস্থিরতার মধ্যে ছিলেন। এটা কি শেষ ম্যাচ বলে?

মাশরাফি: টস করার সময় স্বাভাবিক লাগছিল। মাঠে যখন ব্যাটিংয়ে নামি, তখন থেকেই অস্থিরতা কাজ করছিল। শেষ ম্যাচের জন্যই হয়তো। একটু অস্বস্তি অবশ্যই লেগেছিল। নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেছি।

বাংলা ট্রিবিউন: ড্রেসিংরুমে নিশ্চয়ই অনেকে আবেগ প্রবণ হয়ে পড়েছিল।

মাশরাফি: এখনই তো যাচ্ছি না, ওয়ানডে খেলব। কিছুটা ইমোশন তো থাকে। বাংলাদেশের জার্সি পড়ে ১০ বছর টি-টোয়েন্টি খেলেছি। বেশিরভাগ খেলোয়াড়ের সঙ্গে খেলেছি। অনেক স্মৃতিও জড়িয়ে আছে তাদের সঙ্গে। অনেকের সঙ্গেই ব্যক্তিগত কিছু স্মৃতি আছে। শেষটা খুব ভালো হয়েছে, সেটাই খুব ভালো লাগছে আমার।

বাংলা ট্রিবিউন: শেষ ম্যাচটায় জয়, এটা নিশ্চয়ই আপনাকে স্বস্তি দিচ্ছে?

মাশরাফি: এটা অবশ্যই গর্ব করার মতো ব্যাপার আমার জন্য। ভালো লাগছে এই জন্য যে, বাংলাদেশ জিতেছে। একই সঙ্গে বলব, এই ম্যাচটা আমি যত দিন বেঁচে থাকব, মনে রাখব। মনে থাকবে আমার শেষ টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ জিতেছিল, আর আমি সেই ম্যাচে অধিনায়ক ছিলাম।

বাংলা ট্রিবিউন: অনেকেই আপনাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদেছে। কিভাবে সামলালেন এমন পরিস্থিতি?

মাশরাফি: কেউ কেউ কেঁদেছে। নিজের আবেগ প্রকাশ না করে ওদেরই ঠেকাতে হয়েছে অনেক সময়। ওদেরকে বোঝাতে হয়েছে। সবারই কিছু না কিছু ইমোশন থাকে। হয়তো সামনে এক সঙ্গে থাকব, আরও  খেলব। তারপরও একটা পর্যায় থেকে সরে আসার জন্য হয়তো কারো খারাপ লেগেছে। সবার প্রতি সম্মান রেখেই বলছি, কারোর চোখের পানি ফেলা আমার জন্য বিরাট প্রাপ্তি।

খেলা শেষে আকাশে তাকিয়ে মাশরাফির উদযাপন বাংলা ট্রিবিউন: অধিনায়ক হিসেবে সাফল্যের বিশেষ কোনও ফর্মুলা আছে কি?

মাশরাফি: আমাদের ব্যাকআপ লাইনে যারা আছে, তামিম, সাকিব, মুশফিক, রিয়াদ- আমার মনে হয় না এই সিনিয়রদের নতুন করে শেখার কিছু আছে। তাদের সঙ্গে কিছু জুনিয়র ক্রিকেটার আছে। আমার কাছে মনে হয় না কাজটা এত কঠিন হবে। আমিও এক সময় নতুন ছিলাম। দুর্জয় ভাই ছিলেন আমার প্রথম অধিনায়ক, সেখান থেকে আস্তে আস্তে এখানে এসেছি। বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক হয়েছি। আমি কখনও কাউকে বলব না ওই রকম লক্ষ্য রাখতে যে, আমি বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক হবো। সেটা স্বার্থপর ভাবনা হবে। আমাদের সবার উদ্দেশ্য থাকবে, আমরা কিভাবে দলকে জেতাব। এক সময়ে যদি তার সেই যোগ্যতা থাকে, সে নেতৃত্ব পেয়ে যাবে। আমি ব্যক্তিগতভাবে কাউকে বলব না, এমন লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যেতে।

বাংলা ট্রিবিউন: শ্রীলঙ্কার শেষ উইকেট পতনের পর আপনি হাত তুলে নিশ্চয়ই সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করছিলেন?

মাশরাফি: আমি সব সময় ভাগ্যে বিশ্বাস করি। আমরা যা করি, সৃষ্টিকর্তা ছাড়া তা সম্ভব না। আজকের ম্যাচটা জিততে চেয়েছিলাম, সেটা হওয়ায় আমি সর্বশক্তিমানকে ধন্যবাদ দিচ্ছিলাম। ওই মুহূর্তে কী করছিলাম আমার খুব একটা মনেও নাই।

বাংলা ট্রিবিউন: সাকিবকে আজ মাঠে বেশ সক্রিয় মনে হয়েছে। এটা কি পরিকল্পনায় ছিল?

মাশরাফি: সাকিব যখন সক্রিয় থাকে, কাজটা অনেক সহজ হয়ে যায়। এমনটা আপনি আগেও দেখেছেন। ভারতের বিপক্ষে বিশ্বকাপের ম্যাচটাতে যেমন ছিল। সাকিব অ্যাক্টিভ থাকায় আমি যখন ফাইন লেগে দাঁড়িয়ে ছিলাম, ও বোলারের সঙ্গে কথা বলে ফিল্ডিং সাজাচ্ছিল। ওর কাছে আমাকে দৌড়ে যেতে হয়নি। যেটা বললাম, নিজেকে অনেক সময় নিয়ন্ত্রণ করতে পারছিলাম না। সাকিব এগিয়ে আসায় আমার জন্য ভালো হয়েছে।

বাংলা ট্রিবিউন: টি-টোয়েন্টির নতুন অধিনায়ক হিসেবে সাকিবের নামই শোনা যাচ্ছে। আপনার কী মনে হচ্ছে?

মাশরাফি: আমি এবং আমার পরিবারের পক্ষ থেকে তার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা। তার জন্য না, পুরো বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি দলের জন্য। যে-ই অধিনায়ক হোক, আমার বিশ্বাস সে বাংলাদেশ দলকে অনেক এগিয়ে নেবে এখান থেকে।

বাংলা ট্রিবিউন: যে দলটা রেখে যাচ্ছেন, ভবিষ্যতে সেই দলের কাছ থেকে কী আশা করেন?

মাশরাফি: বাংলাদেশ অবশ্যই সামনে এগিয়ে যাবে। ফর্ম ধরে রাখা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সিনিয়ররা আছে, রোমাঞ্চকর কিছু টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটার আছে। শুধু টি-টোয়েন্টি না, ওরা টেস্টেও ভালো খেলছে, ওয়ানডেতেও পারফর্ম করছে। আশা করি ভবিষ্যতে আমরা আরও ভালো করব।

/আরআই/এএআর/  

 

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ইসরায়েলে প্রতিশোধমূলক রকেট হামলা হিজবুল্লাহর
ইসরায়েলে প্রতিশোধমূলক রকেট হামলা হিজবুল্লাহর
হুন্ডির মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকা পাচার, গ্রেফতার ৫
হুন্ডির মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকা পাচার, গ্রেফতার ৫
ন্যাটোর কোনও দেশ আক্রমণের পরিকল্পনা নেই রাশিয়ার: পুতিন
ন্যাটোর কোনও দেশ আক্রমণের পরিকল্পনা নেই রাশিয়ার: পুতিন
বাস-সিএনজির সংঘর্ষে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীসহ ৩ জন নিহত
বাস-সিএনজির সংঘর্ষে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীসহ ৩ জন নিহত
সর্বাধিক পঠিত
যেভাবে মুদ্রা পাচারে জড়িত ব্যাংকাররা
যেভাবে মুদ্রা পাচারে জড়িত ব্যাংকাররা
এবার চীনে আগ্রহ বিএনপির
এবার চীনে আগ্রহ বিএনপির
কারাগারে যেভাবে সেহরি-ইফতার করেন কয়েদিরা
কারাগারে যেভাবে সেহরি-ইফতার করেন কয়েদিরা
আয়বহির্ভূত সম্পদ: সাবেক এমপির পিএস ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
আয়বহির্ভূত সম্পদ: সাবেক এমপির পিএস ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
‘বউদের ভারতীয় শাড়ি পোড়ালে বর্জনের কথা বিশ্বাস করবো’
বিএনপির নেতাদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী‘বউদের ভারতীয় শাড়ি পোড়ালে বর্জনের কথা বিশ্বাস করবো’