শুরুটা ১৯৯৮ সালে। আইসিসি নকআউট ট্রফি নামে শুরু করা এই প্রতিযোগিতাটিই পরবর্তী সময়ে আরও রঙ-রূপ যোগ করে এখনকার চ্যাম্পিয়নস ট্রফি। জুনে উঠবে অষ্টম আসরের পর্দা। আগের সাত আসর কেমন ছিল, কার ঘরে উঠেছিল ‘মিনি বিশ্বকাপ’ খ্যাত এ প্রতিযোগিতার শ্রেষ্ঠত্ব- ইংল্যান্ডের আসর শুরুর আগে ফিরে দেখা যাক না একবার। ‘বাংলা ট্রিবিউন’-এর এই বিশেষ আয়োজনের শুরুটা ১৯৯৮ সালের উদ্বোধনী আসর দিয়ে-
চ্যাম্পিয়নস ট্রফির বর্তমান ফরম্যাট কিন্তু শুরুতে ছিল না। একেবারে ভিন্নভাবে হয়েছিল প্রথম আসরটি। বিশ্বকাপের মর্যাদা অক্ষুণ্ন রাখতে ওইবার হয় নকআউট ভিত্তিতে, তাই নামও হয়েছিল আইসিসি নকআউট ট্রফি। মূলত টেস্ট স্ট্যাটাস না পাওয়া দেশগুলোর ক্রিকেট উন্নয়নে তহবিল সংগ্রহের জন্য এই ধরনের টুর্নামেন্ট আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেন আইসিসির তখনকার সভাপতি জগমোহন ডালমিয়া।
ফরম্যাট: খেলার ফরম্যাট ছিল কোয়ার্টার ফাইনাল ভিত্তিতে। কিন্তু সমস্যা ছিল শুরুতেই। টেস্ট খেলুড়ে দেশ যেখানে ৯টি, সেখানে কীভাবে ৮ দল নিয়ে খেলা শুরু করা যায়। সমাধানও হলো সহজে। প্রি-কোয়ার্টার ফাইনাল আয়োজন করা হলো র্যাংকিংয়ের শেষ দুটি দল নিয়ে। জিম্বাবুয়ে ও নিউজিল্যান্ড মুখোমুখি হয়েছিল ওই ম্যাচে। আফ্রিকান দলটিকে ৫ উইকেটে হারিয়ে মূল পর্বে উঠেছিল ব্ল্যাক ক্যাপরা।
না খেললেও ছিল বাংলাদেশ: এ টুর্নামেন্টে কিন্তু বাংলাদেশ ছিল না। কারণ তখনও টেস্ট স্ট্যাটাস পায়নি তারা। ১৯৯৭ সালের আইসিসি ট্রফি ও ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপ নিশ্চিত করলেও বাংলাদেশ অংশ নিতে পারেনি এ প্রতিযোগিতায়। কিন্তু না খেলেও এ প্রতিযোগিতার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে শুরু থেকে শেষ পর্ন্ত ছিল তারা। ৮ দলের এ প্রতিযোগিতার আয়োজক হওয়ার মর্যাদা পেয়েছিল বাংলাদেশ। তবে আয়োজক হওয়ার জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়েছিল তাদের। কারণ বাংলাদেশ তখন ভয়াবহ বন্যা কবলিত। বেশ কয়েকটি দল দেশে আসতে অপারগতা জানায়। তবে সবাই এসেছিল শেষ পর্ন্ত। কিন্তু ইংল্যান্ড পাঠিয়েছিল কম শক্তির দল। যদিও সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে সফলভাবে প্রথম নকআউট ট্রফি আয়োজন করেছিল বাংলাদেশ। সরকারের সার্বিক সহযোগিতায় সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন হয় টুর্নামেন্ট। এমনকি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের মাধ্যমে এ টুর্নামেন্ট থেকে উপার্জিত অর্থের ১০ শতাংশ প্রধানমন্ত্রীর বন্যা ত্রাণ তহবিলে দেওয়া হয়েছিল। ভেন্যু ছিল প্রধান ও জাতীয় স্টেডিয়াম হিসেবে পরিচিত বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম। সবগুলো ম্যাচই হয়েছিল সেখানে।
ফাইনাল: ২৪ অক্টোবর থেকে ১ নভেম্বর পর্যন্ত হয় ৯ দলের এ লড়াই। মোট ম্যাচ হয়েছিল ৮টি। আর প্রথম আসরে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ‘চোকার’ খ্যাত দক্ষিণ আফ্রিকা। ১৮ বল হাতে রেখে ফাইনালে তারা ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারায় ৪ উইকেটে। ফিলো ওয়ালেসের (১০৩) সেঞ্চুরিতে ৪৯.৩ ওভারে ক্যারিবিয়ানরা ২৪৫ রান করেছিল সব উইকেট হারিয়ে। জবাবে হ্যান্সি ক্রনিয়ের অপরাজিত ৬১ রান জয় এনে দেয় দক্ষিণ আফ্রিকাকে। এর আগে কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডকে ৬ উইকেটে হারায় প্রোটিয়ারা। আর সেমিফাইনালে তাদের জয় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৯২ রানে।
পরিসংখ্যান: নকআউট ট্রফির ওই আসরে সর্বোচ্চ দলীয় রান ছিল ভারতের। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৮ উইকেটে ৩০৭ রান করেছিল তারা। ভারতের ৪৪ রানের জয়ে আসরের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রান আসে শচীন টেন্ডুলকারের ব্যাটে। ১২৮ বলে ১৪১ রান করেছিলেন ভারতীয় গ্রেট। ফাইনালের সেঞ্চুরি বৃথা গেলেও পুরো আসরে শীর্ষ ব্যাটসম্যান হয়েছিলেন ওয়ালেস। ওয়েস্ট ইন্ডিজের এ ওপেনার একটি করে সেঞ্চুরি ও হাফসেঞ্চুরি হাঁকান, সব মিলিয়ে ৩ ম্যাচে তার রান ২২১। শীর্ষ উইকেট শিকারি হন চ্যাম্পিয়ন দলের জ্যাক ক্যালিস। ৮ উইকেট নেন তিনি, সিরিজ সেরার পুরস্কারও জেতেন দক্ষিণ আফ্রিকার এ অলরাউন্ডার।
/কেআর/