ওয়ানডেতে বাংলাদেশ ও ভারতের মুখোমুখি লড়াই হয়েছে ৩২ বার। যোজন যোজন ব্যবধানে যেখানে এগিয়ে ভারত। ২৬ ম্যাচ তারা জিতেছে, একটি ছিল ফলাফলহীন। আর বাংলাদেশের জয়ের উৎসব করেছে মাত্র ৫ বার। এসবের মধ্যে শক্তিশালী ভারতীয় ক্রিকেট দলের বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয় ছিল ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে। ওইবার ভারতকে ছিটকে দিয়েছিল হাবিবুল বাশারের বাংলাদেশ। ওই জয়সহ আরও কয়েকবার উদযাপনের উপলক্ষ পেয়েছিল বাংলাদেশ, যেটা হতে পারে আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেমিফাইনালে তাদের অনুপ্রেরণা। ওই জয়গুলোকে আরেকবার মনে করিয়ে দেওয়া হলো বাংলা ট্রিবিউন পাঠকদের-
ম্যাচসেরা মাশরাফিতে প্রথম জয়
ভারতের বিপক্ষে আগে ১২ ম্যাচ খেলে সবকটিতে বিশাল ব্যবধানে হেরেছিল বাংলাদেশ। চট্টগ্রামে সর্বশেষ ১১ রানে হেরে তিন ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয়টিতে ভারতকে ঢাকায় স্বাগত জানায় বাংলাদেশ। ২০০৪ সালের ২৬ ডিসেম্বরের ওইদিনেই এলো ভারতের বিপক্ষে প্রথম জয়। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে বেশি সুবিধা করতে পারেনি তারা। ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতার দিনে ৬৭ রান করেন। শেষদিকে ৩৯ বলে ৩১ রানে অপরাজিত ছিলেন মাশরাফি মুর্তজা। ৯ উইকেটে ২২৯ রান করে বাংলাদেশ।
স্কোরবোর্ডে অল্প পুঁজি সত্ত্বেও ওই ম্যাচটি ১৫ রানে জিতে যায় বাংলাদেশ। ভারতের পক্ষে শ্রীধরন শ্রীরাম ৫৭ রান করেন। ৪৯ রান আসে মোহাম্মদ কাইফের ব্যাটে। ৪৭.৫ ওভারে তাদের ২১৪ রানে গুটিয়ে দেয় বাংলাদেশ। মাশরাফি ৯ ওভারে ২টি মেডেনসহ ৩৬ রান দিয়ে ২ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা হন। এছাড়া সমান উইকেট পান তাপস বৈশ্য, খালেদ মাহমুদ ও মোহাম্মদ রফিক।
ভারতের বিদায়ঘণ্টা বাজাল বাংলাদেশ
২০০৩ সালের বিশ্বকাপ ফাইনালিস্ট ভারত ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে শুরুতেই অঘটনের শিকার। বাংলাদেশ দ্বিতীয়বার বধ করল সৌরভ গাঙ্গুলী, শচীন টেন্ডুলকার ও রাহুল দ্রাবিড়কে নিয়ে গড়া শক্তিশালী প্রতিপক্ষকে। মাশরাফি মুর্তজার পেসের সঙ্গে আবদুর রাজ্জাক ও মোহাম্মদ রফিকের স্পিনে মাত্র ১৯১ রানে অলআউট ভারত। মাশরাফি নেন ৪ উইকেট, আর ৩টি করে পান রাজ্জাক ও রফিক।
জবাব দিতে নেমে একটু বিরতি দিয়ে উইকেট হারালেও তামিম ইকবাল (৫১), মুশফিকুর রহিম (৫৬*) ও সাকিব আল হাসানের (৫৩) ফিফটিতে ৯ বল বাকি থাকতে ৫ উইকেটে জেতে বাংলাদেশ। ওই আসরে সুপার এইট খেলেছিল তারা। ২০০৭ সালের ১৭ মার্চ পোর্ট অব স্পেনের ওই হারে ভারতের পথচলা থেমেছিল গ্রুপেই।
শচীনের নিষ্ফল শততম সেঞ্চুরি
ভারতের ব্যাটিং গ্রেট শচীন টেন্ডুলকারের শততম আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরির দেখা পেতে কত অপেক্ষা! মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে ২০১২ সালের ১৬ মার্চ বাংলাদেশের বিপক্ষে সেই আক্ষেপ কাটালেন শচীন। ১৪৭ বলে ১১৪ রানের ইনিংস খেললেন। তার সঙ্গে বিরাট কোহলি (৬৬) ও সুরেশ রায়নার (৫১) ব্যাটে ৫ উইকেটে ২৮৯ রান করেছিল ভারত। মাশরাফি নেন ২ উইকেট।
তামিম ইকবালের (৭০) দুর্দান্ত ব্যাটিং সেদিন পথ দেখিয়েছিল বাংলাদেশকে। জহুরুল ইসলাম (৫৩) ও নাসির হোসেনের (৫৪) ফিফটি সেই পথকে করে আরও মসৃণ। সাকিব আল হাসান ৪৯ রানে আউট হওয়ার পর মুশফিকুর রহিমের অপরাজিত ৪৬ রানের সুবাদে ৪ বল বাকি থাকতে ৫ উইকেটের জয় পায় বাংলাদেশ। ৩১ বলে ঝড়ো ইনিংস খেলে ম্যাচসেরা হন সাকিব।
মোস্তাফিজের দুর্দান্ত অভিষেক
২০১৫ সালের জুন, ভারতের বিপক্ষে দ্বিপাক্ষিক সিরিজ। আর ওই সিরিজেই বাংলাদেশের ক্রিকেট জগতে এক উজ্জ্বল নক্ষত্রের আবির্ভাব- মোস্তাফিজুর রহমান। মিরপুরে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে অভিষেক ম্যাচেই ৫ উইকেট পান এ পেসার। তার কাটারে বিপর্যস্ত ভারত গুটিয়ে যায় ২২৮ রানে। আগে ব্যাট করে ৩০৭ রান তোলা বাংলাদেশ ম্যাচটা জেতে ৭৯ রানের বড় ব্যবধানে। তামিম ইকবাল (৬০), সৌম্য সরকার (৫৪) ও সাকিব আল হাসান (৫২) ছিলেন ব্যাট হাতে ঝলমলে।
ঐতিহাসিক সিরিজ জয়
মোস্তাফিজের ঝলক এক ম্যাচেই শেষ হয়নি। টানা দ্বিতীয় ম্যাচ অসাধারণ এ পেসার। ১০ ওভারে ৪৩ রান দিয়ে নেন ৬ উইকেট। ভারত ৪৫ ওভারে অলআউট ২০০ রানে। ডাকওয়ার্থ লুইস পদ্ধতিতে ৪৭ ওভারে ২০০ রানের টার্গেট হলে সেটা বাংলাদেশ পূরণ করে ৩৮ ওভারেই। ৪ উইকেট হারায় তারা। বাংলাদেশের পক্ষে সাকিব আল হাসান ৫১ রানে অপরাজিত ছিলেন।
/এফএইচএম/