X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

হাবিবুল বাশারের ‘মুরগি চুরি’ ও ঈদ আনন্দ

রবিউল ইসলাম
২৬ জুন ২০১৭, ১০:২৩আপডেট : ২৬ জুন ২০১৭, ১৮:০০

হাবিবুল বাশারের ‘মুরগি চুরি’ ও ঈদ আনন্দ বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামতেই চেয়ে থাকতেন আকাশের দিকে, কখন দেখা যাবে ঈদের চাঁদ। অপেক্ষার প্রহর শেষে সন্ধ্যার আকাশে চাঁদ দেখলেই বাধভাঙা আনন্দে শুরু হাবিবুল বাশারের ঈদ। খেলোয়াড়ী জীবন শেষে নির্বাচকের গুরু দায়িত্ব পালন করা সাবেক এই অধিনায়ক এখনও হারিয়ে যান সেই দিনগুলোতে। শৈশবের দিনগুলো এসে মনে শীতল বাতাস বইয়ে দেয় সন্তানদের চাঁদরাতের আনন্দ দেখে। সেই সঙ্গে মুরগি কিংবা ডাব চুরির ঘটনাগুলোও স্মৃতির অতল থেকে হয়ে ওঠে টাটকা।

‘চাঁদ ওঠার সঙ্গে সঙ্গে ছোট ছেলে-মেয়েরা বিভিন্ন ধরনের পটকা-ফোটানো শুরু করে। আমি যখন ছোট ছিলাম, তখন এই উপলক্ষের বাইরে ছিলাম না। এখন হয়তো বাচ্চাদের মধ্যে আমাদের সময়ের মতো আবেগ কাজ করে না। তারপরও এখনকার ঈদে মজা হয়। আমি বাচ্চাদের আনন্দ দেখে মজা পাই।’- কথাগুলো বলতে বলতে যেন শৈশবের সেই দিনগুলোতে একবার ঘুরে এলেন হাবিবুল। তারপর আবার বলতে শুরু করলেন, ‘এখন নিজের ঈদ কাটানোর চেয়ে বাচ্চারা ঈদের দিন কী করবে, সেই সব বিষয় নিয়েই আমাদের ঈদটা কাটে। আমরা পরিবারটা যৌথ, সব ভাই-বোন মিলিয়ে আমাদের পরিবারে ১২টা ছোট ছেলে-মেয়ে। তাদের এই হৈচৈ দেখে নিজের খুব ভালো লাগে। ঈদের আগের রাতে বাসার ছাদে জমাট আড্ডা হয়। সেই আড্ডা চলে অনেক রাত পর্যন্ত।’

দেখতে শান্ত হলেও তার শৈশবে কেটেছে তার দুরন্তপনায়। চাঁদরাত মানেই পাশের বাড়ি কিংবা পাশের গ্রামে বন্ধুদের নিয়ে ‘হামলা’ চালানো। কারও বাড়ির মুরগি, কারও বাড়ির ফল কিংবা ডাব চুরি, এসব ঈদের আনন্দকে আরও বাড়িয়ে দিতো হাবিবুলের। হাসাতে হাসতে সেই সব দিনের কথা বর্ণনা করলেন তিনি এভাবে, ‘ফল চুরি আর মুরগি চুরির ঘটনা এই জীবনে বহুবার ঘটেছে। বিশেষ করে চাঁদরাতে পাশের বাড়িতে একবার মুরগি চুরি করে বন্ধুরা মিলে পার্টি দিয়েছিলাম। সবচেয়ে বড় মজাটা ছিল, যেই বাসায় চুরি করেছি, সেই বাসার লোকদেরও চুরির মাংস খাইয়েছি! ওই চাচা এখনও হয়তো জানে না তার মুরগিটা আমিই চুরি করেছিলাম।’

চুরি করতে গিয়ে একবার ধরাও পড়েছিলেন সাবেক এই অধিনায়। সেটাও আড়াল করেননি, ‘একবার গাছ থেকে ফল চুরি করতে দিয়ে ধরাও পড়েছিলাম। এরপর বাসা থেকে প্রচণ্ড বকা খেতে হয়েছিল। এরপর অবশ্য আর চুরি করা হয়নি। এগুলোর মধ্যে অন্যরকম একটা ভালোলাগার বিষয় আছে। আসলে খুব মিস করি ছোটবেলাটা।’

সালামি নিতেও ক্রিকেট মাঠের মতো দুরন্ত ছিলেন হাবিবুল। বড় কাউকে কাছে পেলেই পায়ে সালাম করা মিস করতেন না তিনি। সেটাও উঠে এসেছে তার কথায়, ‘ছোটবেলায় ভালো লাগতো বড়দের পায়ে সালাম করে তাদের কাছ থেকে সালামি পাওয়া। এরপর হিসেব কষতে বসতাম এই টাকা দিয়ে কী করব। অবশ্য বেশিরভাগ সময়ই সালামির টাকা দিয়ে খাওয়া-দাওয়াই করতাম। বন্ধুরা মিলে পরিকল্পনা বসতে হতো কী কী করা যায় এই টাকা নিয়ে।’

এখন সালামি পাওয়ার চেয়ে দেওয়াতেই বেশি আনন্দ পান বাংলাদেশের হয়ে ৫০ টেস্ট খেলা এই ব্যাটসম্যান, ‘এখন পাওয়ার চেয়ে দেওয়ার সংখ্যাই বেশি। তবে সালামি পাওয়াতে বেশ আনন্দ। এই আনন্দ আর কিছুতেই পাওয়া সম্ভব নয়।’

হাবিবুল গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়া। যৌথ পরিবারে ৬ ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তার এক ভাই ও বোন থাকেন দেশের বাইরে। বড় বোনের বিয়ে হয়েছে কুষ্টিয়ায়। অন্য পাঁচ ভাইও থাকেন এই বাড়িতে। সব মিলিয়ে ঈদের দিন আনন্দ-আড্ডায় কাটে তাদের বাড়ি, ‘ঈদের সকালে আমরা প্রায় ১০-১৫ জন একসঙ্গে নামাজ পড়তে যাই। এরপর আমরা এসে সবাই নাস্তা খাই। ঐহিত্য অনুযায়ী সকালের নাস্তায় দুই রকমের খিচুরির পাশাপাশি গরুর মাংস, মুরগির মাংস ও বেগুন ভাজি থাকেই।’

নাস্তা শেষে অবশ্য যে যার মতো করে ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ পায়। শর্ত একটাই রাতে সবাইকে একসঙ্গে খাবার টেবিলে টেবিলে পাওয়া চাই। হাবি্বুলের কথায় যা এমন, ‘আমাদের ঐতিহ্য অনুযায়ী সকালের নাস্তাটা আমরা সবাই নামাজ পড়ে এসে খাই। এরপর যে যার মতো করে বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে দেখা করে। তবে রাতে আবার একসঙ্গে হই খাওয়ার জন্য।’

পরিবারের সঙ্গে হাবিবুল বাশার খেলোয়াড়ি জীবনে দুই-একবার দেশের বাইরে ঈদ করা হয়েছে হাবিবুলের। এর বাইরে কখনোই কুষ্টিয়ার বাইরে ঈদ করেননি তিনি। একদিনের ছুটি পেলেও ছুটে গেছেন কুষ্টিয়াতে। ঈদে বাড়ি যাওয়ার কষ্ট আছে ঠিকই, তবে বিষয়টা খুব উপভোগও করেন তিনি, ‘এই কষ্টটা আমার বেশ ভালোই লাগে। এখন তো আগের চেয়ে ভালো অবস্থা। খেলার জন্য কয়েকটা ঈদ দেশের বাইরে করতে হয়েছে। দেশের বাইরে ঈদ করার অভিজ্ঞতা মোটেও ভালো নয়। একবার তো চট্টগ্রামে ম্যাচের আগে একদিনের জন্য ঈদের ছুটি পেয়েছিলাম। সেটাও কাজে লাগিয়েছিলাম। শুধু আমি নই, এই কুষ্টিয়া আসার বিষয়টি আমার বাচ্চারাও খুব উপভোগ করে, আড্ডা দেওয়া ওরা খুব পছন্দ করে। ওদের দেখে আমারও খুব ভালো লাগে।’

ছোটদের এই আনন্দই এখন হাবিবুলের ঈদের সবচেয়ে বড় আনন্দ। সন্তানদের ঈদের খুশিতে নিজেও যে হারিয়ে যেতে পারেন ফেলে আসা সেই সব রঙিন দিনে।

/কেআর/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ট্রাকের চাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
ট্রাকের চাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
বাংলাদেশের উন্নয়ন দেখলে আমাদের লজ্জা হয়: শাহবাজ
বাংলাদেশের উন্নয়ন দেখলে আমাদের লজ্জা হয়: শাহবাজ
৬ ম্যাচ পর জয় দেখলো বেঙ্গালুরু 
৬ ম্যাচ পর জয় দেখলো বেঙ্গালুরু 
সাদি মহম্মদ স্মরণে ‘রবিরাগ’র বিশেষ আয়োজন
সাদি মহম্মদ স্মরণে ‘রবিরাগ’র বিশেষ আয়োজন
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা