এবারের জাতীয় ক্রিকেট লিগের প্রথম রাউন্ডেই এনামুল হক বিজয়ের চমক! শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে স্বাগতিক খুলনার হয়ে এই ওপেনার খেলেছেন ২১৬ রানের দুর্দান্ত ইনিংস। ৫১২ মিনিট স্থায়ী ৩৫৬ বলে খেলা ইনিংসটা ১৮টি চার ও দুটি বিশাল ছ্ক্কায় নির্মিত। খুলনা-রংপুরের ম্যাচটি অবশ্য শুরু হওয়ার আগে অন্য কারণে মনোযোগ কেড়েছিল ক্রিকেটপ্রেমীদের। সাড়ে তিন বছর পর এই ম্যাচ দিয়েই সাদা পোশাকের ক্রিকেটে ফিরলেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। সোমবার সন্ধ্যায় বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে আলাপচারিতায় এনামুল তুলে ধরলেন জীবনের নানা গল্প। ক্যারিয়ারের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি, জাতীয় লিগে লক্ষ্য, ‘বড় ভাই’ মাশরাফির অনুপ্রেরণা বিভিন্ন প্রসঙ্গ উঠে এলো কথোপকথনে।
বাংলা ট্রিবিউন: ২০১২ সালে একটুর জন্য ডাবল সেঞ্চুরির দেখা পাননি। পাঁচ বছর অপেক্ষার পর ডাবল সেঞ্চুরি করলেন। অনুভূতিটা কেমন?
এনামুল: প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি বলে একটু বেশিই ভালো লাগছে। ২০০ রান সবসময়ই স্পেশাল। ১৭২ রানে অপরাজিত থাকায় কাল রাত থেকেই রোমাঞ্চিত ছিলাম। সেই রোমাঞ্চের রেশ এখনও রয়ে গেছে।
প্রশ্ন: পাঁচ বছর আগে ঢাকা মেট্রোর বিপক্ষে ১৯৩ রান করে আউট হয়েছিলেন। এবার ওই অঙ্ক ছোঁয়ার পর কী ভাবছিলেন?
এনামুল: ১৯৩ রান করার পর সবার আগে ভেবেছি এটাকে টপকাতে হবে। এক রান নিয়ে নিজের সর্বোচ্চ ইনিংসকে পেছনে ফেলেছি। ডাবল সেঞ্চুরির আগে ১৯৪ রান দারুণ তৃপ্তি দিয়েছে আমাকে।
প্রশ্ন: রবিবার ১৭২ রান নিয়ে ফেরার পর কী ভাবনা কাজ করছিল আপনার মনে?
এনামুল: ইনিংসটা বড় করার লক্ষ্য নিয়ে মাঠ ছেড়েছিলাম কাল। রাতেই অবশ্য অনেকের কাছ থেকে শুভেচ্ছা পেয়েছি। সবাই বলছিল, ডাবল সেঞ্চুরি করতে পারলে ভালো হয়। সবার প্রত্যাশা পূরণ করে খুব ভালো লাগছে।
প্রশ্ন: দীর্ঘ ৫১২ মিনিট ক্রিজে ছিলেন। নিজের মধ্যে কোনও পরিবর্তন টের পাচ্ছেন?
এনামুল: আমার ব্যাটিংয়ের প্রসেসটা খুব ভালো ছিল। ইনিংসের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করেছি প্রসেসটা ঠিক রাখার। নিজের মধ্যে অন্যরকম আত্মবিশ্বাস টের পাচ্ছি।
প্রশ্ন: এতক্ষণ মনোযোগ ধরে রাখা কতটা কঠিন?
এনামুল: প্রথম দিনের পুরোটাই ফিল্ডিং করেছি। দ্বিতীয় দিনও কিছুক্ষণ ফিল্ডিং করে ব্যাটিংয়ে নামা খুব কষ্টকর ছিল। বৃষ্টির বাধায় মনোযোগ ধরে রাখা তো কঠিন ছিল অবশ্যই। আমি মনে করি, এটা একটা ভালো অর্জন আমার জন্য। এই ম্যাচ থেকে অনেক কিছু শিখতে পেরেছি।
প্রশ্ন: এই টেম্পারামেন্টের রহস্য কী?
এনামুল: রহস্য কিছু না, হাই পারফরম্যান্স দলে থাকা অবস্থায় আমাদের কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছে। রোদের মধ্যে টানা রানিং করতে হয়েছে। জিম সেশন থেকে শুরু করে মাঠের ওয়ার্মআপগুলো বেশ কষ্টকর ছিল। এইচপি দলের অনুশীলনই আমার টেম্পারামেন্ট ও ধৈর্য বাড়িয়েছে।
প্রশ্ন: বর্তমান এনামুল কি অনেক পরিণত?
এনামুল: পরিণত কিনা জানি না, তবে আমার মানসিক শক্তি আগের চেয়ে অনেক বেশি। খেলাটা আগের চেয়ে ভালো বুঝতে পারি। গেমপ্ল্যান আগের চেয়ে ভালোভাবে প্রয়োগ করতে পারছি মাঠে। প্রতিদিনই নতুন কিছু শিখছি।
প্রশ্ন: বড় দৈর্ঘ্যের ক্রিকেট মাশরাফির সঙ্গে খেললেন। কেমন হলো এই অভিজ্ঞতা?
এনামুল: দলে মাশরাফি ভাই থাকা মানেই অন্যরকম ব্যাপার। আমার তো মনে হয় প্রত্যেকেই উনার সঙ্গে খেলতে চায়। মাথায় ছিল, ভালো খেলতে পারলে শুভেচ্ছা পাওয়া যাবে। তরুণদের জন্য উনি বিশাল অনুপ্রেরণা।
প্রশ্ন: ম্যাচের আগে কিংবা পরে মাশরাফি কিছু বলেননি?
এনামুল: প্রথমদিন মাশরাফি ভাই ভালো করে, মন দিয়ে খেলতে বলেছিলেন। প্রথম ইনিংসে রংপুর ৪৭১ রান করার পর বলেছিলেন, বিজয় তোর তো ১০০ করা উচিৎ এমন উইকেটে। সবাই যেহেতু করছে, তোরও করা উচিৎ। তার ওই কথায় অনুপ্রেরণা পেয়েছি। শুধু সেঞ্চুরি না, ডাবল সেঞ্চুরি পেলাম। ইনিংস শেষে ফেরার সময় উনি শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
প্রশ্ন: এবারের জাতীয় লিগে আপনার ব্যক্তিগত লক্ষ্য কী?
এনামুল: আমার একমাত্র লক্ষ্য দলকে চ্যাম্পিয়ন করা। এটা আমার জন্য অনেক বড় চ্যালেঞ্জও। জানি না কয়টা সেঞ্চুরি বা কত রান করবো। শুধু চাই নিজের সেরাটা দিয়ে দলকে সাফল্য এনে দিতে।
প্রশ্ন: প্রায় দু বছর আপনি জাতীয় দলের বাইরে। জাতীয় দলে ফেরা নিয়ে কী ভাবছেন?
এনামুল: প্রত্যেকেই জাতীয় দলে খেলার চেষ্টা করে। আমি চেষ্টা করছি নিজের সমস্যাগুলোর সমাধান করে আরও উন্নতি করার। আপাতত আমার প্রচেষ্টা আরও ভালো খেলা, আরও রান করা।