X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

জাতীয় হকি দল যেন বিকেএসপির প্রতিচ্ছবি!

তানজীম আহমেদ
১৫ অক্টোবর ২০১৭, ২২:৩০আপডেট : ১৬ অক্টোবর ২০১৭, ১৭:৩৫

 

জাতীয় দলের ম্যাচে এমন দৃশ্য কমই দেখা যায় এখন। ছবি-ফেসবুক এশিয়া কাপ হকি চলছে। দীর্ঘ ৩২ বছর পর ঢাকার মাঠে হকির এমন বিশাল আয়োজন। সেবার মালেক চুন্নু-কিসমতরা আলোড়ন তুললেও চলমান আসরে জিমি-চয়নরা চমক দেখাতে পারছেন না। সময়ের পরিক্রমায় হকির অবস্থা যে ক্রমেই তলানির দিকে। এক সময় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হকি খেলোয়াড় উঠে আসতো, তাদের নিয়েই জাতীয় দল তৈরি হতো। কিন্তু গত কয়েক বছরের চিত্র ভিন্ন। বিকেএসপি থেকেই বেশিরভাগ খেলোয়াড় আসে। আর এবার শুধু চূড়ান্ত দল নয়, স্ট্যান্ডবাই চারজনের ভিতও গড়ে উঠেছে বিকেএসপিতে!

বলতে গেলে বিকেএসপিই বাঁচিয়ে রেখেছে বাংলাদেশের হকিকে। শুধু জাতীয় দল নয়, বড় বড় ক্লাবগুলো বসে থাকে বিকেএসপির আশায়। মূলত হকি ফেডারেশনের অদূরদর্শিতার কারণে এমন দুরবস্থা। তৃণমূলে হকির চর্চা নেই, জেলাগুলোতে ঠিকমতো লিগ হয় না। স্কুল কিংবা জাতীয় আসরগুলোও অনিয়মিত। টার্ফের যুগে প্রবেশের পর তো খেলাটি আরো পিছিয়ে গেছে। সারা দেশে মাত্র দুটি টার্ফ, মওলানা ভাসানী হকি স্টেডিয়াম এবং বিকেএসপিতে। এমন অবস্থায় হকিকে ঘিরে বড় কিছু প্রত্যাশা করাই যায় না।

সংশ্লিষ্টদের অভিযোগের তীর ফেডারেশনের দিকে। চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থায় দীর্ঘদিন ধরে হকি নিয়ে কাজ করা মোহাম্মদ ইউসুফ আক্ষেপের সুরে বাংলা ট্রিবিউনকে বললেন, ‘আমরা অন্যদের মতো নই, নিয়মিত লিগ করে থাকি। কিন্তু সেভাবে ফেডারেশনের সহযোগিতা পাই না। আমরা যেসব খেলোয়াড় তুলে আনি, পরবর্তীতে তাদের আর পরিচর্যা করা হয় না। সবাই এখন নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে বিকেএসপির ওপরে। আমি ফেডারেশনের সদস্য হয়েও কিছুই করতে পারছি না।’

সাবেক তারকা খেলোয়াড় আশিকুজ্জামান হকির বর্তমান অবস্থা দেখে বেশ হতাশ। তার কথা, ‘হাবুল, ঈসা মিয়া, মুসা মিয়া, রাজন কিংবা কৃষ্ণদের মতো প্রতিভাবান খেলোয়াড়দের আর হকিতে দেখা যাচ্ছে না। আমার ক্যারিয়ারের শুরুতে শুধু আমার জেলা যশোরেই ৬০ থেকে ৭০ জন খেলোয়াড় ছিল। এখন জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ মাঝে-মধ্যে হলেও খেলোয়াড়দের মান নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। গত আসরে একটি জেলা ৪০ গোলও হজম করেছে। এখন তো বিকেএসপি থেকে সরাসরি ঢাকা লিগ কিংবা জাতীয় দলে খেলে ছেলেরা। এই কারণে ম্যাচ টেম্পারমেন্ট কমে যায়। সাধারণত ন্যাচারাল ট্যালেন্ট যারা, তাদের ক্ষমতা বেশি।’

বিকেএসপিতে প্রধান কোচ হিসেবে ৩০ বছর ধরে আছেন কাওসার আলী। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে তিনি বললেন, ‘এই প্রথম জাতীয় দলের সব খেলোয়াড় এসেছে বিকেএসপি থেকে। এ পর্যন্ত বিকেএসপি থেকে ১২০ থেকে ১২৫ জন খেলোয়াড় জাতীয় দলে খেলেছে। তবে আগের মতো কোয়ালিটি খেলোয়াড়ের সংখ্যা কম। পুরোপুরি পরিচর্যার মধ্যে থাকতে পারে না বলে অনেকেই নিজেদের মেলে ধরতে পারছে না।’

হকির বর্তমান অবস্থা নিয়ে এই বর্ষীয়ান কোচের আক্ষেপ, ‘টার্ফ না থাকলেও ঘাসের মাঠে বাচ্চারা খেলবে। টার্ফ তো শেষ ধাপ। কিন্তু স্কুল কিংবা কলেজ পর্যায়ে খেলা কই? হকি যে হয়, সেটাই তো অনেকে জানে না। ফেডারেশন, শিক্ষা বোর্ড, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ কিছুই করতে পারছে না। বিকেএসপির পাইপলাইন বন্ধ হয়ে গেলে যে কী হবে, চিন্তা করাই কঠিন!’

জাতীয় দলের কোচ মাহবুব হারুনও আশাবাদী হতে পারছেন না। তার মন্তব্য, ‘এই প্রথম জাতীয় দলের সব খেলোয়াড় বিকেএসপির। স্থানীয় পর্যায়ে খেলা নেই, সারাদেশে সেভাবে চর্চা নেই। আমার জেলা ফরিদপুরে তিন বছর ধরে লিগ হয় না। তৃণমূল থেকে খেলোয়াড় না আসলে হকিতে জাগরণ হবে কিনা সন্দেহ।’

হকি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সাদেকের অভিমত, ‘আগে ঘাসের মাঠে খেলা হতো, খেলোয়াড়ও উঠে আসতো। এখন রাজশাহী, ফরিদপুর, দিনাজপুরে খেলা হয়। যেখানেই খেলা হোক, টার্ফ বসাতে পারলে ভালো হতো। হকিতে ক্যারিয়ার ভালোভাবে গড়তে পারলে খেলাটির প্রতি আকর্ষণ বেড়ে যেতো ছেলেদের।’ 

/টিএ/এএআর/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
টাঙ্গাইল শাড়িসহ ১৪ পণ্যকে জিআই স্বীকৃতি
টাঙ্গাইল শাড়িসহ ১৪ পণ্যকে জিআই স্বীকৃতি
১৮ বছরের ক্যারিয়ারের ইতি টানলেন বিসমাহ মারুফ 
১৮ বছরের ক্যারিয়ারের ইতি টানলেন বিসমাহ মারুফ 
মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগে পিতার মৃত্যুদণ্ড
মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগে পিতার মৃত্যুদণ্ড
উপজেলা নির্বাচনে সহিংসতার শঙ্কা সিইসির
উপজেলা নির্বাচনে সহিংসতার শঙ্কা সিইসির
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা
২৪ ঘণ্টা পর আবার কমলো সোনার দাম
২৪ ঘণ্টা পর আবার কমলো সোনার দাম
ভুল সময়ে ‘ঠিক কাজটি’ করবেন না
ভুল সময়ে ‘ঠিক কাজটি’ করবেন না