X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

ডি ভিলিয়ার্সের কাছে অনেক শেখার আছে

গাজী আশরাফ হোসেন লিপু
১৯ অক্টোবর ২০১৭, ১১:১২আপডেট : ১৯ অক্টোবর ২০১৭, ১১:১৮

ডি ভিলিয়ার্সের কাছে অনেক শেখার আছে ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচই বলে দিয়েছিল, এই ফরম্যাটেও দক্ষিণ আফ্রিকা আমাদের সামর্থ্যের ধারেকাছেও পারফর্ম করতে দেবে না। দল হিসেবে বোলিং বিভাগ ছিল সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত এবং ব্যাট হাতে দুই একজন ব্যাটসম্যানের লড়াই শুধু ৫০ ওভার পর্যন্ত ম্যাচটাকে টেনে নিয়ে গেছে। সামগ্রিকভাবে এই বিভাগেও আমরা ব্যর্থ, হয়তো বোলিং বিভাগ থেকে কিছুটা ভালো করেছি এখানে।

দ্বিতীয় ম্যাচের পিচে প্রথম ২০ ওভার কিছুটা স্লো ছিল এবং সেটা বোলারদের সাহায্য করেছে। পরের ৬০ ওভার ছিল চমৎকার ব্যাটিং সহায়ক এবং শেষ ২০ ওভার পর্যায়ক্রমে স্লো হয়ে গেছে। তবে অপ্রত্যাশিত কোনও বাউন্স লক্ষ্য করিনি। আউটফিল্ডের বেহাল দশা সবাই প্রত্যক্ষ করেছে। তবে ২২ গজের পিচকে ঘিরে অভিযোগ করার কিছু দেখিনি।

ফর্মে থাকা ব্যাটসম্যান আর ফর্মের ঠিকানা খুঁজতে থাকা দলের মাঝে বিশাল পার্থক্য গড়ে উঠে। আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে, কাল বোলিং সহায়ক পিচে দক্ষিণ আফ্রিকার উদ্বোধনী দুই ব্যাটসম্যানের বিপক্ষে প্রথম ২০ ওভারে রানের গতি আমাদের বোলাররা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছেন। তবে পিচের চরিত্র বুঝে কুইন্টন ডি কক ও হাশিম আমলা কোনও ঝুঁকিপূর্ণ বড় শট খেলেননি। সিঙ্গেল নিয়ে রানের গতি সচল রেখেছেন। প্রথম ২০ ওভারে মাত্র তিনটি বাউন্ডারি মেরেছেন তারা।

পিচের চরিত্র বুঝে ব্যাটিংয়ের ধরন বদলে চাহিদা মোতাবেক ব্যাট করার সামর্থ্যই বড় পার্থক্য একটা আন্তর্জাতিক মানের উভয় দলের জন্য। সময় উপযোগী পিচে ব্যাটিং মানদণ্ডের পিচ থেকে সাহায্য পেলে সাকিব বিপজ্জনক, সেটা দু প্লেসির আউট হওয়ার দৃশ্যই বলে দেয়। তবে অন্যদিক থেকে দলের কেউ কোনও উইকেট তুলে নিতে না পারায় দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিংয়ের পরই আমরা মূলত মানসিকভাবে হার স্বীকার করে নিয়েছি। বাকিটা ছিল আনুষ্ঠানিকতা।

তবে উইকেটে আসার পরই এবি ডি ভিলিয়ার্সকে রান আউট করার সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে হয়তো ৩১০ থেকে ৩১৫ রানের মধ্যে তাদের আটকে দেওয়া যেত। ইনিংসের শেষ তিন ওভারে রুবেল ও তাসকিন যে চমৎকার বোলিং করেছেন, সেটা যদি ইতোপূর্বে দুজনে মিলে গোটা ১০ ওভার করতে পারতেন তবে এই ঐতিহাসিক তাণ্ডব হয়তো এবি ডি ভিলিয়ার্স চালাতে পারতেন না।

কিছু ইনিংস মানুষ সবসময় মনে রাখে এবং মন ছুঁয়ে যাওয়া তেমন ইনিংস নিজ চোখে দেখার সুযোগ হয়, তাহলে নিজেকে অনেক ভাগ্যবান মনে হয়। যতটুকু সময় ব্যয় করে দেখেছি, বিনিময়ে মন অস্থির হলেও দুই চোখ হয়েছে সার্থক। দুই চোখ দিয়ে উপভোগ করা ছাড়া আমার করার আর কিছুই নেই। কিন্তু মাঠে আমাদের খেলোয়াড়রা নিশ্চয়ই উপলব্ধি করতে পেরেছেন, ব্যাট হাতে ক্রিকেটকে একজন ব্যাটসম্যান আরও কতটুকু দিতে পারেন এবং তাদের যা আছে সেটা নিয়ে আত্মতুষ্টিতে ভোগার কোনও কারণ নেই।

বর্তমান ক্রিকেট বিশ্বে হাতে গোনা কয়েকজন মাস্টার ব্যাটসম্যান আছেন, যারা পৃথিবীর যে কোনও প্রান্তে সব ধরনের কন্ডিশন ও পিচে সফল। ডি ভিলিয়ার্স তাদের অন্যতম। তার সঙ্গে আলাপ করার সুযোগ যেন আমাদের খেলোয়াড়রা কাজে লাগান। মাঠে ভালো খেলার পেছনে অনুশীলনের মাধ্যমে কীভাবে নিজেকে প্রতিটি সিরিজের আগে প্রস্তুত করেন সেটা জানা জরুরি।

বোলাররাও যে তাদের সামর্থ্যের যথেষ্ট অপচয় করেছেন, দিনের শেষ তিন ওভারের দারুণ বোলিং সেই কথাটি যেন তৃতীয় ম্যাচে তাদের স্মরণ করিয়ে দেয়। তার পাশাপাশি বিচক্ষণতার সঙ্গে সীমিত গতি নিয়েও চমৎকার লাইন ও গতির তারতম্য ঘটিয়ে ফেলুকোয়াইয়ো যে ধারাবাহিক সফলতা অর্জন করেছেন সেটা আমাদের বোলারদের জন্য হতে পারে চমৎকার দৃষ্টান্ত।

ম্যাচে আগে বল করলে পুরো বোলিংয়ের রণকৌশল বোঝা যায়। বিশেষ করে শেষ ১০ ওভার কাদের উপর দায়িত্ব বল করার এবং কেমন করলো। দলের পঞ্চম বোলার হিসেবে ২৩ ওভারে নাসিরের আবির্ভাব অনেক দেরিতে হয়েছে। পিচ যখন একটু সহায়তা করছিল, সেই প্রথম ১৫ ওভারের মাঝেই তাকে আনলে ভালো হতো। একজন বাঁহাতি ব্যাটসম্যানও তিনি পেতেন বল করতে। এই পিচ যেহেতু কিছুটা স্লো ছিল, তাই একাদশে ভবিষ্যতের খেলোয়াড় মিরাজকে খেলানো উচিত ছিল। তিন নম্বরে সাব্বিরকে তার সামর্থ্যের ও দায়িত্বের পরীক্ষাটা নেওয়া উচিত ছিল। এক ম্যাচে ৩ নম্বরে সাকিব, আরেকদিন লিটন ও ৪ জন নিয়মিত বোলার নিয়ে একাদশ গড়া; বাংলাদেশের গেম প্ল্যানে পরিপক্বতার যথেষ্ট অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে।

দক্ষিণ আফ্রিকার এই দ্বিতীয় সারির বোলিংয়ের বিপক্ষেও এই স্লো আউটফিল্ডে ৩৫৪ রান অনেক। তারপরও তামিমের কাছ থেকে একটা উড়ন্ত সূচনা পেলে একটা পর্যায় পর্যন্ত হয়তো লড়াইটা জমতো। ইমরুল রানের কোটা ৩০ ছাড়িয়ে ৬০ এ গেছেন দেখে ভালো লেগেছে। কিন্তু তিনি এখনও ম্যাচজয়ী ব্যাটসম্যানের ভূমিকায় পৌঁছাতে পারেননি।

ব্যাট হাতে আর কারও চাহিদা অনুযায়ী ব্যাটিং সমর্থন না পাওয়া এবং দক্ষিণ আফ্রিকা পেস বোলারদের গতিময় ও গতি কমিয়ে বলের সংমিশ্রণে আমাদের ব্যাটিং যতটুকু বিবর্ণ লেগেছে, তার চেয়ে ব্যাটসম্যানদের প্রয়োগক্ষমতা বা অস্থিরতাই তাদের সাজঘরের পথ দেখিয়েছে। এই মুহূর্তে এতগুলো ম্যাচ খেলার পর কোচদের কৌশলগত দিক থেকে দলের উত্তরণ ঘটানোর মতো আর কিছু আছে বলে মনে হয় না। খেলোয়াড়দেরই উচিত হবে নিজের সঙ্গে নিজের কথা বলা এবং সফরের শেষটা কীভাবে আরও দারুণ করা যায়, সেই চিন্তাটুকু করে প্রথম একাদশে তার সংযোজনের যৌক্তিকতা প্রমাণের শেষ চেষ্টাটুকু করা।

/এফএইচএম/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
আঙুরের গোড়া কালো হয়ে যাচ্ছে? জেনে নিন টিপস
আঙুরের গোড়া কালো হয়ে যাচ্ছে? জেনে নিন টিপস
টেকনাফে ১০ জন কৃষক অপহরণের ঘটনায় ২ জন আটক
টেকনাফে ১০ জন কৃষক অপহরণের ঘটনায় ২ জন আটক
এরদোয়ানের যুক্তরাষ্ট্র সফর, যা জানা গেলো
এরদোয়ানের যুক্তরাষ্ট্র সফর, যা জানা গেলো
যুক্তরাষ্ট্রের টি-টোয়েন্টি দলে নিউজিল্যান্ডের সাবেক অলরাউন্ডার
যুক্তরাষ্ট্রের টি-টোয়েন্টি দলে নিউজিল্যান্ডের সাবেক অলরাউন্ডার
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
শাকিব খান: নির্মাতা-প্রযোজকদের ফাঁকা বুলি, ভক্তরাই রাখলো মান!
শাকিব খান: নির্মাতা-প্রযোজকদের ফাঁকা বুলি, ভক্তরাই রাখলো মান!