আগের ম্যাচেই ইতিহাস গড়ে জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয়টা এসেছিল মুশফিকুর রহিমের অসাধারণ ব্যাটিংয়ে। ভারতের বিপক্ষেও দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন এই ব্যাটসম্যান। তবে এবার আর জয়ের নোঙর ফেলতে পারলেন না তীরে। বৃথা গেছে মুশফিকের হার না মানা ৭২ রানের ইনিংসটা। তার সঙ্গে বাংলাদেশকে হতাশ করে টানা তৃতীয় জয় তুলে নিয়েছে ভারত। ১৭ রানের জয়ে নিদাহাস ট্রফির ফাইনালও নিশ্চিত করেছে রোহিত শর্মারা।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে রোহিতের ৬১ বলে ৮৯ ও সুরেশ রায়নার ৩০ বলে ৪৭ রানের ঝড়ো ইনিংসে ভারত নির্ধারিত ২০ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে করে ১৭৬ রান। কঠিন এই লক্ষ্যে খেলতে নেমে বাংলাদেশের ইনিংস শেষ হয় ৬ উইকেটে ১৫৯ রানে।
ভারতের ফাইনালে ওঠার পথে বল হাতে আলো ছড়িয়েছেন ওয়াশিংটন সুন্দর। ৪ ওভারে ২২ রান খরচায় এই স্পিনার তুলে নেন বাংলাদেশের টপ অর্ডারের তিন ব্যাটসম্যান- লিটন দাস, সৌম্য সরকার ও তামিম ইকবালকে। এরপর মাহমুদউল্লাহও তাদের পথ ধরলে ৬১ রানে টাইগাররা হারায় ৪ উইকেট। লাইনচ্যুত বাংলাদেশকে ওই অবস্থায় পথে ফিরিয়েছিলেন মুশফিকুর রহিম। তার ব্যাটে ভর দিয়ে জয়ের স্বপ্নও দেখতে থাকে বাংলাদেশ। তবে এবার আর পারেননি তিনি। দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে অপরাজিত থাকলেও জেতাতে পারেননি দলকে।
টপ অর্ডারের ব্যর্থতার দিনে একপ্রান্ত আগলে রেখে নিজের সঙ্গে দলের রান বাড়িয়ে নিয়েছেন এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান। তিনি উইকেটে থাকায় জয়ের স্বপ্নটাও বেঁচে ছিল বাংলাদেশের। শেষ পর্যন্ত মাঠে টিকে থাকলেও জেতাতে পারেননি দলকে। ৫৫ বলে হার না মানা ৭২ রানের ইনিংস খেলার পরও তাই তার হতাশা। ৮ চার ও ১ ছক্কায় সাজানো ইনিংস খেলে মাঠ ছেড়েছেন মাথা নিচু করে।
মুশফিক দাঁড়িয়ে গেলেও পারেননি মাহমুদউল্লাহ। জুজবেন্দ্র চাহালের বলে আউট হন বাংলাদেশের অধিনায়ক। দ্রুত ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলায় অধিনায়ক হিসেবে বাড়তি দায়িত্ব চাপে মাহমুদউল্লাহর কাঁধে। চাপটা আর নিতে পারলেন না এই ব্যাটসম্যান। ৮ বলে ১১ রান করে আউট হয়ে উল্টো আরও চাপে ফেলে যান দলকে। চাহালের খাটো লেন্থের বলে ডিপ মিডউইকেটে ধরা পড়েন তিনি লোকেশ রাহুলের হাতে।
এর আগে আর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে চলেছে ওয়াশিংটন সুন্দরের জাদু। ডানহাতি এই স্পিনারের তৃতীয় শিকার হন তামিম ইকবাল। শুরুটা দারুণ হয়েছিল বাংলাদেশি ওপেনারের। আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে ছিলেন চেনা ছন্দে। ভারতীয় বোলারদের ওপর চড়াও হয়ে লক্ষ্যের দিকে হাঁটছিলেন খুব ভালোভাবে। তবে সুন্দর আবারও ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠায় শেষ হয় তামিমের ইনিংস। লেগ স্টাম্প ছেড়ে ‘বিগ’ শট খেলতে গেলে ব্যাটে বল লাগেনি, ফল বল সরাসারি আঘাত করে স্টাম্পে। যাতে শেষ হয় তামিমের ১৯ বলে ৪ বাউন্ডারি ও ১ ছক্কায় খেলা ২৭ রানের ইনিংস।
সৌম্য সরকারও ব্যর্থ। ওয়াশিংটন সুন্দরের বলে বোল্ড হয়ে ফিরে যান এই ব্যাটসম্যান। বল হাতে শুরু থেকেই আলো ছড়িয়েছেন এই স্পিনার। তার বলেই ভারত পায় প্রথম উইকেট। লিটন দাসকে আউট করার পর আবারও ভারতকে উৎসবে মাতান তিনি সৌম্যকে বোল্ড করে। মিডল স্টাম্পের ডেলিভারি ভেতরে ঢুকে সরাসরি আঘাত করে সৌম্যের লেগ স্টাম্পে। বোল্ড হওয়ার আগে বাঁহাতি ব্যাটসম্যান করেছেন মাত্র ১ রান।
আগের ম্যাচে অসাধারণ এক ইনিংস খেলে দলের জয়ের ভিত গড়ে দিয়েছিলেন লিটন দাস। ভারতের বিপক্ষেও তার দিকে তাকিয়ে ছিল বাংলাদেশি সমর্থকরা। তবে এবার আর পারলেন না লিটন, শুরুতেই আউট হয়ে গেছেন তিনি ৭ রান করে।
লিটনের ব্যর্থতার দিনে আবারও আলো ছড়ালেন মুশফিক। তবে সেই আলোতে আলোকিত হলো না বাংলাদেশ। নিদাহাস ট্রফিতে ভারতের বিপক্ষে টানা দ্বিতীয় হারে ফাইনালের পথটা কঠিন হয়ে গেল। ফাইনালের আগে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কার ম্যাচটি রূপ নিয়েছে এখন ‘সেমিফাইনালে’।