ক্রিকেট ম্যাচের সম্ভাব্য ফলাফল অনেক সময়ই অনিশ্চয়তায় পড়ে যায়, আবার কখনও ক্ষেত্র বিশেষে পুরোপুরি উল্টে যায়। ঠিক তেমনই এক পরিস্থিতির মাঝে পড়েছে বাংলাদেশ। ম্যাচ শুরুর আগে টপ ফেভারিট বাংলাদেশ দ্বিতীয় দিন ব্যাট হাতে নিজেদের সঙ্কট নিজেরাই তৈরি করেছে। সেটা থেকে বের হয়ে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ হাতে নেওয়া এখন বিশাল এক চ্যালেঞ্জ।
দুই দলের ব্যাটিংয়ে যে দুটি বড় পার্থক্য আমার নজরে বেশি পড়েছে, সেটা হলো জিম্বাবুয়ের ব্যাটসম্যানরা লম্বা সময় পিচে থাকার চেষ্টা করেছেন। তারা খেলেছে ১১৭.৩ ওভার। অপ্রয়োজনীয় ও ঝুঁকিপূর্ণ কোনও স্ট্রোকস খেলেননি তাদের ব্যাটসম্যানরা। অফ স্টাম্পের বাইরের বল নিখুঁতভাবে ছাড়ায় চমৎকার টেম্পারমেন্ট দেখিয়েছেন। আর আমাদের অতি আত্মবিশ্বাসী ব্যাটসম্যানরা ঠিক বিপরীত কাজ করেছেন। উইকেটে থিঁতু হওয়ার চেয়ে স্ট্রোকস খেলার প্রতি অতি উৎসাহী ছিলেন। লিটন দাস, নাজমুল ইসলাম, ইমরুল কায়েস ও মাহমুদউল্লাহ খুব সহজেই বলগুলো ছেড়ে দিতে পারতেন। কিন্তু তারা তাদের মেধার অপব্যবহার করে ফেলেছেন।
ইমরুল ও মাহমুদউল্লাহর বাইরের বল টেনে স্টাম্পে নিয়ে আসার ব্যাটিং কৌশল শোধরানোর দায়িত্ব দ্রুত ও দক্ষতার সঙ্গে করতে হবে ব্যাটিং কোচ নিল ম্যাকেঞ্জিকে। সেট ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিমকে আউট করে দারুণভাবে দলকে এগিয়ে নেন কাইল জার্ভিস এবং আরিফুল হককে নিয়ে বড় জুটি গড়ার শেষ সম্ভাবনাটুকুর স্বপ্নভঙ্গ হয়।
এই পিচেও নতুন বলের দাবিদার দুই প্রান্ত থেকে দুজন পেস বোলার হতে পারে, সেটা চোখে আঙুল দিয়ে আমাদের থিঙ্ক ট্যাঙ্ককে দেখাল জিম্বাবুয়ে। অথচ দ্বিতীয়বারের মতো বল করতে এসে দিনের শেষ দুই ওভারের একটি আমরা আমাদের পেস বোলারদের বরাদ্দ করার মতো উদারতা দেখাতে পারলাম না।
দ্বিতীয় দিনের প্রথম সেশনেই তাইজুল ইসলামের নেতৃত্বে ৫টি উইকেট তুলে নিয়ে প্রত্যাশিত কাজটি করেছে বোলিং ইউনিট। কোনও ম্যাচে ক্লোজিং ফিল্ডারদের একটি ইনিংসে এত ভালো ক্যাচ ধরতে অনেক দিন দেখিনি। পিচের ফাটল টিভি ক্যামেরায় ধরা পড়লেও আমাদের ব্যাটিং ব্যর্থতার দায় পুরোটাই ব্যাটসম্যানদের এবং ভালো লাইন ও লেন্থে বল করার কৃতিত্বটুকু তেন্দাই চাতারা, জার্ভিস ও সিকান্দার রাজার।
মুমিনুল হক আমাকে বড্ড হতাশ করেছেন। তার এই আউটটি দেখে মনে হয়েছে শ্রীলঙ্কায় শততম টেস্টের আগের টেস্টে দিলরুয়ান পেরেরার বলে আউটের রিপ্লে। তিনি তার ভুল থেকে শিক্ষা নিতে পারছেন না, এটা দেখা বড়ই বেদনাদায়ক। হিসাবের বাইরে থাকা আন্ডাররেটেড ব্যাটসম্যান আরিফুলকে কেউ সঙ্গ দিতে পারলেন না। একপ্রান্ত তিনি আটকালেও অন্য প্রান্ত থেকে উইকেট দ্রুত ঝরে পড়েছে। আর ৫১ ওভারে জিম্বাবুয়ের কাছে অলআউট ছিল দিনের সবচেয়ে বড় ট্র্যাজেডি।
ঢাকায় বসে খেলা দেখে মনে হয়েছে এই পিচে ফাটল থাকলে তার আচরণ চট্টগ্রামের টেস্টের মতোই হবে এবং তৃতীয় দিনেও তা ব্যাটসম্যানদের সহায়তা করবে। জিম্বাবুয়ে দলের উপরের সারির কয়েকজন কৌশলী ব্যাটসম্যান অপ্রত্যাশিত এই বড় লিডকে কাজে লাগানোর সর্বাত্মক চেষ্টা করবেন এবং দিনের প্রথম দুটি সেশনে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে বাংলাদেশকে আরও বড় চাপে ফেলার চেষ্টা করবে।
মাহমুদউল্লাহর লক্ষ্য থাকবে দ্রুত উইকেট তুলে নেওয়া এবং সেই কাজটি তার বোলাররা করতে না পারলে আক্রমণাত্মক ফিল্ডিং ও সিঙ্গেলস আটকানোর কৌশল প্রয়োগে তিনি সফল না হলে বাংলাদেশ শিবিরে হতাশার আতঙ্ক ধীরে ধীরে আবর্তিত হতে পারে।
তৃতীয় দিনের সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতির আলোকে বল হাতে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার রণকৌশলে দল সফল হবে এই প্রত্যাশা রইল।