দেশের মাটিতে টার্নিং উইকেটের সুবিধা নিতে গত তিন টেস্টে স্পিনার নির্ভর দল তৈরি করেছিল বাংলাদেশ। তারপরও অন্তত একজন প্রতিষ্ঠিত পেসার ছিলেন একাদশে। কিন্তু ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ঢাকা টেস্টে নেই একজনও! দল ঘোষণার পর তাই অবাকই হতে হলো। পাঁচ দিনের ক্রিকেটে যে এমনটা দেখা যায় না সচরাচর। আর বাংলাদেশ এবারই প্রথম পেসার ছাড়াই টেস্ট খেলতে নেমেছে।
টেস্টের পরাশক্তি ভারত। দেশের স্পিনিং উইকেটের সুবিধা নিয়ে তারাও স্পিনারদের প্রাধান্য দেয়। তারপরও অন্তত একজন পেসার রাখে। সেই দিক দিয়ে বাংলাদেশ বেশ সাহসই দেখাল বলা চলে।
ম্যাচের আগেই শোনা যাচ্ছিল, ব্যাটিং শক্তি বাড়াতে চায় বাংলাদেশ। তাই মোস্তাফিজুর রহমানকে ছাঁটাইয়ের গুঞ্জন উঠেছিল। হয়েছেও তাই। ক্যারিবিয়ান পেস আক্রমণ ঠেকানোর পাশাপাশি তাদের ব্যাটসম্যানদের মনে আতঙ্ক ছড়াতে বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্টের এই সিদ্ধান্ত।
মিরপুরের ২২ গজে যেন ফাঁদ পেতে রাখা হয়েছে। একজন ব্যাটসম্যানও যেন বড় জুটি বাঁধার সুযোগ না পান- লক্ষ্য এমনই বাংলাদেশ শিবিরে। নিয়মিত চার স্পিনারের সঙ্গে খণ্ডকালীন স্পিনার আছেন মাহমুদউল্লাহ-মুমিনুল।
স্পিনারদের ভিড়ে গতি তুলতে আছেন সৌম্য সরকার। এই মিডিয়াম পেসারই খণ্ডকালীন দায়িত্ব নেবেন পেস বিভাগের।
বাংলাদেশ এর আগেও অনেকবার স্পিন আক্রমণে প্রতিপক্ষকে কোণঠাসা করেছে। তবে এবার খানিকটা ভিন্নপথে। এর আগে এক পেসার ও তিন স্পিনার নিয়ে খেললেও ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজেই চার স্পিনার নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছে স্বাগতিকরা। ৬ মাস আগে ক্যারিবিয়ান কন্ডিশনে পেস আক্রমণের তোপে পড়েই হয়তো এই পথটা শিখেছে বাংলাদেশ। স্পিন ভেল্কিতে এবার ওই হারের প্রতিশোধের অপেক্ষায় সাকিবরা।
চার স্পিনার খেলানোর ফলটা চট্টগ্রামে পেয়েছে স্বাগতিকরা। ঢাকাতেও একই সাফল্য চায় তারা। চট্টগ্রামে মোস্তাফিজ থাকলেও উইকেটে তার জন্য কিছুই ছিল না। যে কারণে দুই ইনিংসে মাত্র ৪ ওভার বোলিং করেন। তাতে প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানদের মনে বিন্দুমাত্র ত্রাস ছড়াতে পারেননি এই পেসার।
মিরপুরের উইকেটে পেসারদের জন্য কিছুই নেই, ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রথম স্পেল থেকেই বোঝা যাচ্ছিল সেটা। দুই পেসার নিয়ে মাঠে নামা ক্যারিবিয়ানরা নিজেদের চতুর্থ ওভারেই স্পিনারকে আক্রমণে আনতে বাধ্য হন। শুরু থেকেই বোঝা যাচ্ছে মিরপুরের উইকেটের অবস্থা স্পিনারদের জন্য কতটা স্বর্গ হয়ে উঠছে। সময় যত গড়াবে, এই উইকেট থেকে ততটাই সুবিধা আদায় করে নেবে স্বাগতিকরা।
ক্রিকেট বিশ্বে বিশেষজ্ঞ চার স্পিনার খেলানোর ইতিহাসও খুব বেশি নেই। ১৯৬৭ সালে প্রথম বার্মিংহামে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ভারতের সেই বিখ্যাত চার স্পিনার হচ্ছেন ভগবত চন্দ্রশেখর, বিষাণ সিং বেদি, এরাপাল্লি প্রসন্ন ও শ্রীনিবাস ভেঙ্কটরাঘবন। তারা মাত্র একটি ম্যাচেই একসঙ্গে নেমেছিলেন। ওই ম্যাচে দুইজন পেসার থাকলেও তারা কেউই দলের নিয়মিত পেসার ছিলেন না। চার স্পিনার খেলানোর প্রথম ইতিহাস এটা হলেও চট্টগ্রাম ও ঢাকা টেস্ট দিয়ে এবার তার অংশ হলো বাংলাদেশ।
একটা সময় পেস দিয়ে প্রতিপক্ষকে ভয় দেখিয়েছে ক্যারিবিয়ানরা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্বর্ণযুগে ওয়ালশ-অ্যামব্রসরা ব্যাটসম্যানদের বুকে রীতিমতো কাঁপন ধরাতেন। ক্যারিবিয়ানদের সেইসব দিন আর নেই। স্বর্ণযুগের এতজনের বসবাস বাংলাদেশের ড্রেসিং রুমে। তার নেতৃত্বেই শাণিত হচ্ছে বাংলাদেশের পেস বোলিং। নিজে পেসার হয়ে ড্রেসিংরুমে বসে পেসারহীন বাংলাদেশ দল দেখতে কেমন লাগছে ওয়ালশের?