X
মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪
১০ বৈশাখ ১৪৩১

আক্ষেপ থাকলেও ছেলেকে ঘিরে স্বপ্ন দেখেন জিয়া

তানজীম আহমেদ
০৪ ডিসেম্বর ২০১৮, ২১:৫৫আপডেট : ০৪ ডিসেম্বর ২০১৮, ২২:০৪

দাবার বোর্ডে মুখোমুখি বাবা-ছেলে বাবা পয়গাম উদ্দিন আহমেদ ছিলেন জাতীয় দাবাড়ু। তার হাত ধরেই মাত্র ১০ বছর বয়সে দাবায় হাতেখড়ি দেশের দ্বিতীয় গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়াউর রহমানের। তারপর থেকে সেই যে দাবার বোর্ডে মন বসেছে, ৪৪ বছর বয়সে এসেও একাগ্র চিত্তে খেলে যাচ্ছেন তিনি। গত সোমবার জাতীয় দাবায় রেকর্ড ১৪তম শিরোপা জিতেছেন। কিন্তু গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়ার আক্ষেপ রয়ে গেছে সুপার গ্র্যান্ডমাস্টার হতে না পারার। নিজের আশা-আকাঙ্ক্ষা আর দাবার ভবিষ্যৎ নিয়ে তিনি সাক্ষাৎকার দিলেন বাংলা ট্রিবিউনকে-

বাংলা ট্রিবিউন: জাতীয় দাবায় ২৫ বার অংশ নিয়ে ১৪টিতে শিরোপা জিতেছেন। রহস্যটা কী?

জিয়া: আমি অনেক সময় ধরে ভালো খেলে আসছি। পেশাগতভাবেও নিয়মিত খেলছি। আমার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল একসময়ের গ্র্যান্ডমাস্টার রিফাত বিন সাত্তার। সে তো মাঝে খেলা ছেড়ে দিল। তারপর অন্য দুই গ্র্যান্ডমাস্টার এনামুল হোসেন রাজীব ও আব্দুল্লাহ আল রাকিব। তারা আবার মাঝে মধ্যে ড্রপ দেয়। আমার সেভাবে কোনও বিরতি নেই। আমি নিয়মিত খেলে থাকি। বলতে পারেন এই জন্য সবার চেয়ে এগিয়ে গেছি।

বাংলা ট্রিবিউন: ১৯৮৮ সালে প্রথম শিরোপা জিতেছিলেন। ওই শিরোপা আর এটার মধ্যে কোনটিকে এগিয়ে রাখবেন?

জিয়া: প্রথম শিরোপা জয়ের আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। অনেক ভালো লেগেছিল। এবার আনন্দটা অন্যরকম। রেটিং বেড়েছে। নতুন করে আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়েছি। বলতে পারেন এবারের ভালো লাগার অনুভূতিও কম নয়।

বাংলা ট্রিবিউন: গত তিনবার তো শিরোপা জিততে পারেননি। এবার কী তিন গ্র্যান্ডমাস্টার না থাকায় শিরোপা জিততে সুবিধা হয়েছে?

জিয়া: হ্যাঁ, সেটা বলতে পারেন। অস্বীকার করার কোনও সুযোগ নেই। অন্য গ্র্যান্ডমাস্টাররা না থাকায় শিরোপা জিততে কিছুটা সুবিধা হয়েছে।

বাংলা ট্রিবিউন: আপনার বর্তমান রেটিং ২৪৬৮। একসময় ২৫৭০ ছিল। আরও একটু রেটিং বাড়ালেই তো সুপার গ্র্যান্ডমাস্টার হয়ে যেতেন।

জিয়া: হ্যাঁ, ২০০৫ সালের ঘটনা। ওইবার আর ৩০ রেটিং বাড়লেই সুপার গ্র্যান্ডমাস্টার হতে পারতাম। আমার ক্যারিয়ারে বড় স্বপ্ন ছিল এটা। কিন্তু হয়নি। এছাড়া বিশ্বে ৩০ থেকে ৪০ জন দাবাড়ুর মধ্যে থাকার ইচ্ছা ছিল। তাও হয়নি। তবে বলতে পারেন সুপার গ্র্যান্ডমাস্টার না হওয়ার আক্ষেপ থেকেই গেল।

বাংলা ট্রিবিউন: ছেলে তাজওয়ার জিয়ার কথা বলছিলেন। তাকে কেন দাবায় নিয়ে এলেন?

জিয়া: আমার ছেলে জাতীয় আসরে খেলে সপ্তম হয়েছে। দাবায় তার আসার ব্যাপারে আমার যেমন মত ছিল, আবার ওরও ইচ্ছা ছিল। আমি চাই আমার ছেলে খেলার মধ্যে থাকুক। আমার বাবাও দাবা খেলেছেন। আমিও আছি। এবার আমার ছেলেও এলো।

বাংলা ট্রিবিউন: ছেলেকে কোন পর্যায়ে দেখতে চান?

জিয়া: আমি সুপার গ্র্যান্ডমাস্টার হতে পারিনি। পারব কিনা জানি না। তবে তাজওয়ারকে সেই পর্যায়ে দেখতে চাই। আমার চেয়ে বড় দাবাড়ু হলে অনেক খুশি হব।

বাংলা ট্রিবিউন: দাবা খেলে তো জীবন চালানো কঠিন।

জিয়া: ক্রিকেট ও ফুটবলে অনেক কিছু পাওয়া যায়, কিন্তু দাবায় তেমনটা নেই। প্রাইজমানি ঠিক মতো পাওয়া যায় না। দেশের বাইরে কোচিং করিয়ে ও খেলে টিকে আছি। অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ জেনেও দাবায় থেকে গেছি। এই চ্যালেঞ্জটা আমার কাছে ভালো লাগে। এতটা নিয়মমাফিক জীবন ভালো লাগে না। সৃষ্টিশীল কিছু করব সেটাই ভালো লাগে। তবে ছেলে তাজওয়ার পড়াশোনার পাশাপাশি খেলছে, যেন ভবিষ্যতে কোনও সমস্যা না হয়।

বাংলা ট্রিবিউন: প্রায় ১০ বছর কোনও গ্র্যান্ডমাস্টার পায়নি বাংলাদেশ। এর কারণ কী মনে হয় আপনার কাছে?

জিয়া: আমাদের নিজেদের সামর্থ্যের কিছুটা অভাব। ভালো খেলতে হবে। এছাড়া ভালো সহযোগিতা লাগবে। পরিবারের সহযোগিতা প্রয়োজন। তাছাড়া সরকারি কিংবা বেসরকারি সহযোগিতা লাগবে। বর্তমানে তাদের সহায়তা খুব নগণ্য। এভাবে চললে তো গ্র্যান্ডমাস্টার পাওয়া সহজ হবে না।

বাংলা ট্রিবিউন: নতুনদের উদ্দেশ্যে কিছু বলবেন?

জিয়া: এটা কঠিন জায়গা, সমর্থন-সহায়তা কম। এটা মেনে নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। লেখাপড়া চালিয়ে যেতে হবে। স্কুল ও বাসা থেকে যেন সহায়তা করে সবাই। আর অনেকে বোঝে না কোন কোন আসর খেলতে হবে। সবকিছু বুঝে শুনে এগিয়ে যেতে হবে। ধৈর্য ধরে এর সঙ্গে লেগে থাকতে হবে। তাহলে একসময় সাফল্য আসবেই।

/টিএ/এফএইচএম/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
‘রানা প্লাজার দুর্ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে কর্মক্ষেত্রকে নিরাপদ করতে হবে’
‘রানা প্লাজার দুর্ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে কর্মক্ষেত্রকে নিরাপদ করতে হবে’
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বাকি দুই টি-টোয়েন্টিতে অনিশ্চিত রিজওয়ান
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বাকি দুই টি-টোয়েন্টিতে অনিশ্চিত রিজওয়ান
প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে বিএনপি নেতা বললেন ‘রিজভী ভাই আমাকে ফোন করেছিলেন’
প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে বিএনপি নেতা বললেন ‘রিজভী ভাই আমাকে ফোন করেছিলেন’
‘যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করছে সামাজিক কুসংস্কার’
‘যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করছে সামাজিক কুসংস্কার’
সর্বাধিক পঠিত
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
মাতারবাড়ি ঘিরে নতুন স্বপ্ন বুনছে বাংলাদেশ
মাতারবাড়ি ঘিরে নতুন স্বপ্ন বুনছে বাংলাদেশ
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
অতিরিক্ত সচিব হলেন ১২৭ কর্মকর্তা
অতিরিক্ত সচিব হলেন ১২৭ কর্মকর্তা
উৎপাদন খরচ হিসাব করেই ধানের দাম নির্ধারণ হয়েছে: কৃষিমন্ত্রী 
উৎপাদন খরচ হিসাব করেই ধানের দাম নির্ধারণ হয়েছে: কৃষিমন্ত্রী