মেয়েদের ফুটবলে এখন স্বর্ণালী সময়। মারিয়া-তহুরা-আঁখিদের সৌজন্যে একের পর এক সাফল্য ধরা দিচ্ছে। দক্ষিণ এশিয়ায় শিরোপার সৌরভ নিয়ে বাংলাদেশ অংশ নিচ্ছে এশিয়া শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে। মেয়েদের ফুটবলের পথ পরিক্রমা নিয়ে বাংলা ট্রিবিউনের বিশেষ আয়োজনের আজ পঞ্চম ও শেষ পর্ব।
প্রায় ১০ বছর ধরে ফুটবলের সঙ্গে জড়িয়ে সাবিনা খাতুন। বাংলাদেশের নারী ফুটবলের তিনি সবচেয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্র। সাবিনার সমসাময়িক আনুচিং মারমা, সুইনুপ্রু মারমা, গোলকিপার সাবিনা আক্তার সহ অনেকে ফুটবলকে বিদায় জানালেও তিনি খেলে চলেছেন আজও। ২৫ বছর বয়সী এই ফরোয়ার্ড ভারত আর মালদ্বীপের ঘরোয়া ফুটবলে খেলেও সাফল্য পেয়েছেন।
এসএ গেমস, সাফ ফুটবল, এএফসি টুর্নামেন্ট মিলে ৫০টির বেশি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ সাবিনার ক্যারিয়ার। প্রায় চার বছর ধরে তিনি জাতীয় দলের অধিনায়ক, দেশসেরা স্ট্রাইকার।
‘বাংলাদেশের মেয়েদের ফুটবলে আইকন কে?’ ফুটবলাঙ্গনে এমন প্রশ্ন উঠলে প্রায় সবাই বলবেন সাবিনার নাম। তার সতীর্থরা অনেক আগে ফুটবল ছেড়ে দিলেও তিনি এখনও মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। এর রহস্য কী? সাবিনার উত্তর, ‘মেয়েরা আমাকে আইকন মনে করলে খুব ভালো লাগে, এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা পাই। আমার ইচ্ছে সব সময় ফুটবলের সঙ্গে থাকবো, খেলে যাবো। তাই পরিশ্রম করে টিকে আছি। আমার সমসাময়িক কারও হয়তো এমন লক্ষ্য ছিল না। যে কারণে তারা আর ফুটবলে নেই।’
ছোটবেলা থেকে ডানপিটে ছিলেন সাবিনা, খেলতেন ছেলেদের সঙ্গে। নিজ জেলা সাতক্ষীরার ফুটবল দলের কোচ আকবরের চোখে পড়ে যান স্কুলে পড়ার সময়। সাবিনার বাবা-মাকে বুঝিয়ে ঢাকায় খেলার সুযোগ করে দেন তিনি। যদিও ঢাকায় শুরুটা হয়েছিল জেলা ভলিবল দলে খেলে। ২০০৯ সালে জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে খেলে ফুটবলের সঙ্গে পরিচয় সাবিনার। পরের বছর ঢাকায় অনুষ্ঠিত এসএ গেমসে জাতীয় দলের জার্সিতে অভিষেক।
তারপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি, তরতর করে এগিয়ে গেছেন। ২০১৫ সালে খেলেছেন মালদ্বীপে, আর গত বছর ভারতের লিগে। বাংলাদেশের প্রথম নারী ফুটবলার হিসেবে বিদেশের লিগে খেলে সাবিনা গর্বিত, ‘দেশের বাইরে খেলার আনন্দই অন্যরকম। মালদ্বীপে দুবার খেলেছি, অনেক গোল করে সবার ভালোবাসা পেয়েছি। ভারতীয় লিগে ৬ গোল করেও নজর কেড়েছি। আসলে বিদেশের মাটিতে দেশের প্রতিনিধিত্ব করার অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন।’
খেলোয়াড়ি জীবন শেষে ফুটবলের সঙ্গে থাকতে চান সাবিনা, হতে চান জাতীয় দলের কোচ। সেজন্য এখনই জাতীয় বয়সভিত্তিক দলের সহকারী কোচ হিসেবে কাজ করছেন। তার লক্ষ্য, “যতদিন পারবো জাতীয় দলে খেলে যাবো। খেলোয়াড়ি জীবন শেষে কোচ হিসেবে কাজ করার ইচ্ছে আছে। ‘বি’ লাইসেন্স করেছি। ভবিষ্যতে জাতীয় দলের কোচ হতে চাই।”
মেয়েদের ফুটবল নিয়ে দারুণ আশাবাদী সাবিনা, ‘মেয়েরা একের পর এক সাফল্য পাচ্ছে। যেভাবে তাদের পরিচর্যা করা হচ্ছে, তাতে একসময় আমরা বিশ্ব ফুটবলে দারুণ সুনাম অর্জন করতে পারবো। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, সব কিছু ঠিকঠাক চললে ছেলেদের আগে মেয়েদের হাত ধরে লাল-সবুজ পতাকা উড়বে বিশ্বকাপে।’