X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

ইনিংসের শুরু ও শেষ এমনভাবে হবে প্রত্যাশা করিনি

গাজী আশরাফ হোসেন লিপু
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৯:৫৮আপডেট : ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ২৩:৪৪

ইনিংসের শুরু ও শেষ এমনভাবে হবে প্রত্যাশা করিনি হ্যামিল্টনের পিচ বরাবরই পেস বোলারদের বিশেষ সুবিধা দেয়। তাছাড়া টেস্ট ম্যাচের প্রথম দিনের প্রথম সেশনে এমনিতেই থাকে ব্যাটসম্যানদের চরম পরীক্ষা। সুইং ও বাড়তি বাউন্সের ঝুঁকি এড়ানোর জন্য ব্যাটসম্যানরা নতুন বল না খেলে ছেড়ে দেওয়ার ব্যাপারে অনেক মনোযোগী থাকে। কিন্তু আজকের (বৃহস্পতিবার) প্রথম সেশনে নতুন লাল বলে কিছুটা সুইং থাকলেও বাউন্স যেন এশিয়ার পিচের মতো। এমন অনায়াসে অন দ্য রাইজ ড্রাইভ খেলেছেন আমাদের ব্যাটসম্যানরা, যাতে নতুন বলে রান তোলার গতি উল্টো ভীতি হয়ে দাঁড়ায় নিউজিল্যান্ডের দুই উদ্বোধনী বোলারের জন্য।

নিউজিল্যান্ডে প্রথমবারের মতো সাদমান ইসলাম কেমন মানিয়ে নিতে পারেন, তা দেখার অপেক্ষায় ছিলাম। স্বচ্ছন্দের সঙ্গেই টেস্ট মেজাজে ব্যাট করেছেন তিনি। পিচ বন্ধুসুলভ হওয়ায় তার স্কিলের তেমন পরীক্ষা দিতে হয়নি। তবে তার আউট হওয়ার রিপ্লে বা পরবর্তী পর্যায়ে প্যাভিলিয়নে বসে ধারাভাষ্যকারের এঁকে দেখানো ব্যাখ্যার দিকে নজর দিলে, তিনি নিজেই বুঝতে পেরেছেন এমন পিচে দীর্ঘক্ষণ ব্যাট করার আনন্দ উপভোগ করতে পারবেন ভবিষ্যতে। তামিম ছিলেন অসাধারণ। ব্যাট করলেন একদিনের ক্রিকেটের মেজাজে। খেললেন এমন চমৎকার সব শট, যাতে ট্রেন্ট বোল্ট ও টিম সাউদি রীতিমত বিব্রত হয়েছেন। অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসনকে রীতিমত আফসোস করতে দেখা গেছে যে, টস জিতে বোলিংয়ের সিদ্ধান্তটি তার সম্ভবত সঠিক হয়নি।

প্রথম সেশনে এমন উড়ন্ত সূচনার পর বস্তুত ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের ফিরে আসার ব্যাপারে তাদের সেরা পারফরমার নেইল ওয়াগনারকে আমি যতটুকু কৃতিত্ব দেবো, তার চেয়ে আমাদের এক ঝাঁক ব্যাটসম্যানের শর্ট পিচ বল যথার্থভাবে মোকাবিলার কৌশলের মুন্সিয়ানা দেখানোর ব্যর্থতাকে দায়ী করব মূলত। একই সঙ্গে অভিনন্দনের পাশাপাশি অসাধারণ ব্যাট করা তামিমের সেঞ্চুরির আনন্দ উদযাপনের পর বাকি দিনটি কিভাবে উইকেটের একপ্রান্তে থাকা যায়, তার দিকে মনোযোগী হলে তিনি ডাবল সেঞ্চুরির কাছাকাছি থাকতেন। এবং নিউজিল্যান্ডের সব বোলারকে দাপটের সঙ্গে খেলা এই ব্যাটসম্যানকে বোলাররা যখনই বল করতেন, তারা এতটা আগ্রাসী রূপে ও স্বচ্ছন্দে বল করতে পারতেন না। একাধিক জুটি তিনি করতে পারতেন। যে একাধিক সুযোগ তিনি পেয়েছিলেন, তার পূর্ণতা পেল না। তবে তার আত্মবিশ্বাসটা ফিরে পাওয়া খুবই দরকার ছিল। পরবর্তী ইনিংসগুলিতে তাকে টেস্ট মেজাজে ব্যাট করতে দেখলে আরও আনন্দ পাবো।

লাঞ্চের পর পুরোনো বল থেকে প্রথম সেশনের চেয়ে বাড়তি বাউন্স পেতে দেখে একটু অবাক হয়েছি। এই মন্থর পিচে ওয়াগনার তার সার্বিক পরিশ্রম, মেধা ও শর্ট পিচ বলের ধাঁধায় ফেলে আমাদের মিডল অর্ডারকে বোকা বানিয়েছেন। ফর্মে থাকা মোহাম্মদ মিঠুনের মনে রাখা উচিত ছিল এটা টেস্ট ম্যাচ, অসংখ্য বল তিনি ছেড়ে দিতে পারেন। মাহমুদউল্লাহর চা বিরতির আগে এমন ঝুঁকিপূর্ণ শট খেলা মোটেও সমীচীন হয়নি। বলের লেন্থ চোখ ও মস্তিষ্ক দিয়ে পরখ করে সেই বলটি ছাড়ার জন্য ব্যাট ধরা হাতটি নিয়ন্ত্রণ করতে ভীষণভাবে ব্যর্থ হয়েছেন মুমিনুল হক ও সৌম্য সরকার। তারা দুজনই মন্ত্রমুগ্ধের মতো বলকে অনুসরণ করেছেন। ব্রেইনের নির্দেশের সঙ্গে হাতের কো-অর্ডিনেশন ঘাটতি বললেই চলে।

দিনের চমৎকার শুরুর পর ৩৫০ থেকে ৪০০ রান তোলার স্বপ্ন এমনভাবে মুখ থুবড়ে পড়বে, ভাবিনি। আজ অন্যদের সুযোগ ছিল মুশিফক ও সাকিবের অনুপস্থিতিতে এমন দারুণ ব্যাটিং পিচে বাড়তি দায়িত্বটা নেওয়ার। কিন্তু সুযোগের বড় বেশি অপচয় হয়ে গেল।

নিউজিল্যান্ডে টেস্ট ফরম্যাটে ভালো করা কঠিন। তবে কেউ তার জন্য যদি ব্যক্তিগতভাবে নিজেকে প্রস্তুত করে, তাহলে এই পিচে সম্ভব। আগের সফরে ওয়েলিংটনে আমরা প্রায় ৬০০ রানের কাছাকাছি গিয়ে ইনিংস ঘোষণা করেছিলাম। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ভালো করতে হলে পেস বোলিংয়ের বিপক্ষে সবচেয়ে বেশি বল খেলতে হয়, তাই প্রয়োজন নিজের স্কিলের ধার বাড়ানো, টেম্পারমেন্টের উন্নতি ঘটানো। কিন্তু আমাদের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে বড় রান যারা করেন, তারা বেশির ভাগ বল মোকাবিলা করেন স্পিনারদের এবং পেস বোলাররা তেমন কোনও সুবিধাই পান না পিচ থেকে। তাই ব্যবহৃত হন তুলনামূলকভাবে কম। বিচ্ছিন্ন কিছু পিচে সৌম্য কিংবা আরিফুলকেও আবার ৫ উইকেট নিতে দেখা যায়।

সে কারণেই নিউজিল্যান্ডে আমাদের একদমই নতুন পেস বোলিং ইউনিট পিচ থেকে বিশেষ বাড়তি কিছু আদায় করতে পারবে বলে মনে হয় না। তাদের সময় দিতে হবে এবং নিউজিল্যান্ডের ব্যাটসম্যানরা অতি সহজে নিজের উইকেট বিলিয়ে তাদের সফল হতে বাড়তি তৎপরতা দেখাবে না বলে আমার ধারণা। নিউজিল্যান্ড দলের একাদশের দিকে তাকালেই বোঝা যায়, প্রতিটি জায়গায় কেমন কোয়ালিটি খেলোয়াড়ের প্রতিদ্বন্দ্বিতা। লাঞ্চের পরে একটি সেশনে আমরা যতটা সহজে ধরাশয়ী হয়েছি, নিউজিল্যান্ড তত সহজে হবে না। কাল (শুক্রবার) সকালের সেশনটিতে ভালো করতে না পারলে দ্বিতীয় সেশনটি হবে আরও কঠিন।

আজ ফিল্ডিংয়ে কেন জানি দলকে অনেক ক্লান্ত মনে হয়েছে। ইনিংসের শুরুতে ক্যাচ ফেলা সহ গ্রাউন্ড ফিল্ডিং আপ টু দ্য মার্ক ছিল না। আশা করি দ্বিতীয় দিনে সবাই জ্বলে উঠবে পূর্ণ শক্তিতে ও দল হিসেবে তাদের সেরাটা দিয়ে।

/কেআর/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
কুষ্টিয়ায় ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত
কুষ্টিয়ায় ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা