দরজায় কড়া নাড়ছে ২০১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপ। ২২ গজের লড়াই শুরুর আগে উত্তেজনায় কাঁপছে ক্রিকেট বিশ্ব। কোন দলের কতদূর যাওয়ার সম্ভাবনা, সেই আলোচনাও শুরু হয়ে গেছে। ক্রিকেটের এই উৎসবে যোগ দিচ্ছে বাংলা ট্রিবিউনও। ইংল্যান্ডের আসরে অংশ নিতে যাওয়া ১০ দলের শক্তি-দুর্বলতা, সম্ভাবনা নিয়ে সাজানো আমাদের এই আয়োজন। আজ থাকছে নিউজিল্যান্ডকে নিয়ে—
ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াইয়ে হার মেনে পৃথিবী ছেড়ে গেছেন মার্টিন ক্রো। অনেকের বিবেচনায় নিউজিল্যান্ডের সর্বকালের সেরা এই ক্রিকেটার মৃত্যুর আগে দেখে যেতে চেয়েছিলেন তার দেশের বিশ্বকাপ জয়। ২০১৫ সালে আশার আলো জ্বেলেও ফাইনালে হারতে হয় কিউইদের। মেলবোর্নের ফাইনাল হারের পর ক্রো বলেছিলেন, ‘এবার হয়নি তাতে কী, সামনে হবে।’
‘সামনের’ সেই মিশনটা শুরু হচ্ছে নিউজিল্যান্ডের ১ জুন। কার্ডিফে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে ২০১৯ বিশ্বকাপ শুরু করবে কিউইরা। আগের আসর ঘরের মাঠে হওয়ায় এবং দুর্দান্ত দল থাকায় ‘হট ফেভারিট’ ধরা হয়েছিল তাদের। চমৎকার পারফরম্যান্সে ফাইনালে পৌঁছে সেটার প্রমাণও দিয়েছিল ব্রেন্ডন ম্যাককালামের দল।
এবারের দলের দায়িত্ব কেন উইলিয়ামসনের। আগের বিশ্বকাপের বেশ কয়েকজন খেলোয়াড়কে পাচ্ছেন তিনি, যারা এখন আরও অভিজ্ঞ, আরও পরিণত। রস টেলর, মার্টিন গাপটিল, টিম সাউদি, ট্রেন্ট বোল্টদের সঙ্গে দলে আছেন ফর্মে থাকা হেনরি নিকোলস ও টম ল্যাথাম। সবকিছু মিলিয়ে দারুণ ভারসাম্য দল নিয়ে ইংল্যান্ড ও ওয়েলসের আসর শুরু করতে যাচ্ছে নিউজিল্যান্ড।
তবে প্রস্তুতিতে ঘাটতি থেকেই যাচ্ছে তাদের। ফেব্রুয়ারির পর থেকে নিউজিল্যান্ড খেলেনি কোনও ওয়ানডে। লম্বা সময় ৫০ ওভারের ক্রিকেট থেকে বাইরে থাকায় বিশ্বকাপে ভুগতে হতে পারে। তাছাড়া বড় কোনও প্রতিযোগিতায় সাম্প্রতিক সময়ে কোনও সাফল্যও নেই তাদের। যদিও তাদের বড় অনু্প্রেরণার জায়গা হয়ে আছে ২০১৫ বিশ্বকাপের ফাইনাল।
সেবার জেতা হয়নি, এবার তাই ট্রফি জিতে আক্ষেপ জুড়াতে চায় নিউজিল্যান্ড। অভিজ্ঞ ও তারুণ্যের মিশলে ভারসাম্যপূর্ণ দল স্বপ্ন দেখাচ্ছে কিউইদের।
একনজরে:
অধিনায়ক: কেন উইলিয়ামসন।
কোচ: গ্যারি স্টিড।
ডাকনাম: ব্ল্যাক ক্যাপস, কিউই।
র্যাংকিং: ৪।
বিশ্বকাপে অংশ নিয়েছে: ১১ বার (১৯৭৫, ১৯৭৯, ১৯৮৩, ১৯৮৭, ১৯৯২, ১৯৯৬, ১৯৯৯, ২০০৩, ২০০৭, ২০১১, ২০১৫)।
বিশ্বকাপে সেরা সাফল্য: রানার্স-আপ ২০১৫।
আগের বিশ্বকাপের পারফরম্যান্স:
২০১৫ সালে তারা অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ছিল যৌথ আয়োজক। বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত তাদের সর্বোচ্চ পাওয়া এই আসর থেকে। ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হেরে হয়েছিল রানার্স-আপ। ‘এ’ গ্রুপ থেকে সব ম্যাচ জিতে কোয়ার্টার ফাইনালে নাম তোলে কিউইরা। শেষ আটে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে উড়িয়ে সেমিফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে কিউইরা প্রথমবার ওঠে বিশ্বকাপের ফাইনালে। তবে শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে তারা হেরে যায় অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে।
কিভাবে বিশ্বকাপে: র্যাংকিংয়ের সেরা আটে থেকে সরাসরি সুযোগ পেয়েছে।
নিউজিল্যান্ডের বিশ্বকাপ সূচি:
১ জুন বিশ্বকাপ শুরু করবে নিউজিল্যান্ড। কার্ডিফে নিজেদের উদ্বোধনী ম্যাচে তাদের প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কা। এবারের বিশ্বকাপ যেহেতু রাউন্ড-রবিন পদ্ধতিতে, তাই ৯ দলের সবার বিপক্ষে মাঠে নামবে কিউইরা। বাংলাদেশের বিপক্ষে তারা খেলবে ৫ জুন।
১ জুন: শ্রীলঙ্কা
৫ জুন: বাংলাদেশ
৮ জুন: আফগানিস্তান
১৩ জুন: ভারত
১৯ জুন: দক্ষিণ আফ্রিকা
২২ জুন: ওয়েস্ট ইন্ডিজ
২৬ জুন: পাকিস্তান
২৯ জুন: অস্ট্রেলিয়া
৩ জুলাই: ইংল্যান্ড
নজরে থাকবেন:
কেন উইলিয়ামসন: ওয়ানডে ক্রিকেট থেকে অনেকদিন বাইরে থাকায় আইপিএল ছিল তার বিশ্বকাপ প্রস্তুতির জায়গা। যদিও কুড়ি ওভারের এবারের প্রতিযোগিতায় সময়টা খুব একটা ভালো কাটেনি কেন উইলিয়ামসনের। তাতে মোটেও চিন্তিত নন তিনি। নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেট ভক্তরাও হয়তো নন। কারণ জাতীয় দলের জার্সিতে বরবারই আলো ছড়ান এই ব্যাটসম্যান। ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপে অধিনায়ক হিসেবে নামতে যাচ্ছেন বলে প্রত্যাশা আরও বেশি থাকবে।
রস টেলর: নিউজিল্যান্ড দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ খেলোয়াড় তিনি। মিডল অর্ডারে নির্ভরতার প্রতীক। স্বাভাবিকভাবেই এবারের বিশ্বকাপেও রস টেলরের ওপর বাড়তি প্রত্যাশা থাকবে কিউইদের। ঘরোয়া ওয়ানডে প্রতিযোগিতা দিয়ে বিশ্বকাপের প্রস্তুতি সেরে নিয়েছেন এই ব্যাটসম্যান।
ক্রিকেট যুদ্ধে থাকছেন না:
২০১৫ বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ড একাদশের নিয়মিত মুখ ছিলেন কোরি অ্যান্ডারসন। তবে গত বিশ্বকাপের পর থেকে অনিয়মিত ছিলেন একাদশে। ফর্মহীনতা ও চোটের কারণে স্কোয়াডেও সুযোগ পাননি এই অলরাউন্ডার। ইংল্যান্ড ও ওয়েলসের বিশ্বকাপ দলেও তাই নেই তিনি। অবসরে যাওয়া অভিজ্ঞ ব্রেন্ডন ম্যাককালাম ও ড্যানিয়েল ভেট্টনি নেই স্বাভাবিকভাবেই।
শক্তি:
* রস টেলর ও কেন উইলিয়ামসনের ফর্ম ও অভিজ্ঞতা।
* দুর্দান্ত পেস আক্রমণ। গত বিশ্বকাপে নতুন বলের জুটি টিম সাউদি ও ট্রেন্ট বোল্টের সঙ্গে আছেন লকি ফার্গুসন ও ম্যাট হেনরি।
* ৫০ ওভারের ক্রিকেটে দুর্দান্ত ফর্মে আছেন টম ল্যাথাম, হেনরি নিকোলস ও মার্টিন গাপটিল।
* ২০১৫ বিশ্বকাপে খেলা বেশ কয়েকজন খেলোয়াড় আছেন এবারের আসরে। বিশ্বকাপে খেলার উত্তাপ তাদের জানা।
দুর্বলতা:
* গত ফেব্রুয়ারিতে সবশেষ ওয়ানডে খেলেছে নিউজিল্যান্ড। বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজের পর লম্বা সময় ৫০ ওভারের ম্যাচের বাইরে থেকে বিশ্বকাপে নামতে যাচ্ছে কিউইরা।
* একাই ম্যাচের গতিপথ পাল্টে দিতে পারে— এমন খেলোয়াড়ের অভাব রয়েছে।
* বড় ম্যাচে ব্যর্থতার অনেক উদাহরণ আছে তাদের।
* উইলিয়ামসনের অধিনায়কত্বও একটা বিষয়। দারুণ ব্যাটসম্যান হলে তার নেতৃত্বে জয়ের ধারাবাহিকতা নেই নিউজিল্যান্ডের।
ভবিষ্যদ্বাণী: সেমিফাইনাল।
নিউজিল্যান্ডের স্কোয়াড:
কেন উইলিয়ামসন (অধিনায়ক), রস টেলর, টম ল্যাথাম (উইকেটরক্ষক), টম ব্লান্ডেল (উইকেটরক্ষক), মিচেল স্যান্টনার, কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম, লকি ফার্গুসন, টিম সাউদি, ট্রেন্ট বোল্ট, কলিন মুনরো, ইশ সোধি, হেনরি নিকোলস, মার্টিন গাপটিল, ম্যাট হেনরি, জিমি নিশাম।