উন্নতির রেখা নাকি কখনও সরল হয় না! কথাটা বাংলাদেশ ক্রিকেটের ক্ষেত্রে শতভাগ সত্যি। অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে আজকের শক্ত অবস্থানে টাইগাররা। এক সময় বিশ্বকাপ ছিল স্বপ্নের মতো। ২০ বছর আগে সেই স্বপ্ন পূরণের পর বহু বাধা পেছনে ফেলে বাংলাদেশ আজ ক্রিকেটের সম্মানজনক শক্তি।
এবারের মতো ১৯৯৯ বিশ্বকাপের আয়োজনও ছিল ক্রিকেটের জন্মভূমিতে। ক্রিকেটের সেরা মঞ্চে প্রথম অংশগ্রহণের সময় বাংলাদেশকে নিয়ে তেমন প্রত্যাশা হয়তো ছিল না। তাই সেবারের পরাক্রমশালী পাকিস্তান-বধ সাড়া ফেলে দিয়েছিল ক্রিকেট দুনিয়ায়। টেস্ট ক্রিকেটে প্রবেশের অপেক্ষায় থাকা একটা দলের এর চেয়ে বড় প্রাপ্তি আর কী হতে পারে!
পরের বছর বহু প্রতীক্ষার টেস্ট মর্যাদা প্রাপ্তি। দেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের চোখে তখন দ্রুত এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন। কিন্তু বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের পথ পরিক্রমা মসৃণ হয়নি। ব্যর্থতা এসেছে বহু। ২০০৩ বিশ্বকাপে কেনিয়া-কানাডার কাছে হারের লজ্জা যার মধ্যে অন্যতম। তবে চার বছর পরের বিশ্বকাপে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স সেই দুঃখ ভুলিয়ে দিয়েছিল অনেকটাই। ভারতকে বিদায় করে সুপার এইটে প্রবেশ আর সেরা আটের লড়াইয়ে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারানোর উল্লাসে মেতে উঠেছিল বাংলাদেশ।
২০১১ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ ছিল অন্যতম আয়োজক। ঘরের মাঠে ক্রিকেটের শ্রেষ্ঠ আয়োজন, তাই প্রিয় দলকে নিয়ে অনেক প্রত্যাশা ছিল ভক্তদের। কিন্তু প্রত্যাশা পূরণ হয়নি সেভাবে। ইংল্যান্ডকে হারানোর উচ্ছ্বাস থাকলেও ওয়েস্ট ইন্ডিজ-দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে অল্প রানে গুটিয়ে যাওয়ার লজ্জা কম পোড়ায়নি দেশের মানুষকে।
ওই বিশ্বকাপের পরের কয়েকটি বছরে ব্যর্থতার পাল্লাই ভারি। নিউজিল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করার তৃপ্তি লাভ করলেও বেশ কিছু লজ্জাজনক হারের সাক্ষী হয়েছিল বাংলাদেশের ক্রিকেট। ২০১৪ সালের এশিয়া কাপে আফগানিস্তান বা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে হংকংয়ের কাছে পরাজয় যার মধ্যে অন্যতম।
সে বছরের শেষ দিকে অধিনায়কের দায়িত্ব পান মাশরাফি মুর্তজা। ‘নড়াইল এক্সপ্রেস’-এর নেতৃত্বে যেন ভোজবাজির মতো পাল্টে যায় দৃশ্যপট। জিম্বাবুয়েকে হোয়াইটওয়াশ করে সাফল্যের পথে যাত্রা শুরু। পরের বছর অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড বিশ্বকাপে দেখা মেলে আসল টাইগারদের। আফগানদের হারিয়ে শুভসূচনা করা মাশরাফির দল ইংল্যান্ডকে বিদায় করে চলে যায় কোয়ার্টার ফাইনালে। মেলবোর্নে শেষ আটের লড়াইয়ে বিতর্কিত আম্পায়ারিংয়ের শিকার না হলে কে জানে, বাংলাদেশ হয়তো হারিয়েই দিতো ভারতকে!
অস্ট্রেলিয়া থেকে ফেরার পর সাফল্যের সোনালী অধ্যায়ের সূচনা। মাশরাফির যোগ্য নেতৃত্বে পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করেছে বাংলাদেশ, ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে জিতেছে সিরিজ। সাফল্য আসছিল নিয়মিত, কিন্তু আসছিল না ট্রফি। ফাইনালের গেরো কিছুতেই খুলছিল না। নিদাহাস ট্রফিতে নিশ্চিত জয়ের সামনে দাঁড়িয়ে শেষ বলে দিনেশ কার্তিকের ছক্কায় কিংবা এশিয়া কাপে সেই ভারতের সঙ্গেই শেষ বল পর্যন্ত দারুণ লড়াই করেও হারের দুঃখ কিছুতেই ভোলা যাবে না।
অবশেষে শিরোপার উল্লাসে মেতে ওঠা আয়ারল্যান্ডের ত্রিদেশীয় সিরিজে। ডাবলিনের ফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে দূর হয়েছে ট্রফি না জেতার আক্ষেপ। সেই সাফল্যের সৌরভ নিয়ে বাংলাদেশ এখন বিশ্বকাপের লড়াইয়ে। ইংল্যান্ড-ওয়েলসে ক্রিকেটের শ্রেষ্ঠ লড়াইয়ে মাশরাফি-সাকিবদের নিয়ে দারুণ আশাবাদী টাইগার ভক্তরা। দেশের মানুষের আশা, লাল-সবুজ দল অন্তত সেমিফাইনালে খেলবে। অভিজ্ঞতায় এগিয়ে থাকা বাংলাদেশ দলকে অনেক ক্রিকেট বোদ্ধাও দেখছেন শেষ চারে। প্রত্যাশা পূরণ করে বিশ্বকাপে আবার জ্বলে উঠুক টাইগাররা এটাই সবার কামনা।