ব্রিটেনে বসবাসকারী অসংখ্য বাংলাদেশির অপেক্ষা ফুরাতে যাচ্ছে আর কিছুক্ষণ পর। বিশ্বকাপ শুরু হয়ে গেলেও অবশেষে বাংলাদেশ দলকে সমর্থনের উপলক্ষ পেয়ে যাচ্ছেন তারা।
রবিবার স্থানীয় সময় সাড়ে দশটায় ঐতিহ্যবাসী ক্লাব ওভালের ২২ গজে বাংলাদেশ তাদের প্রথম ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার মুখোমুখি হবে। এই ম্যাচটি ঘিরে লন্ডনে অবস্থিত বাংলাদেশিদের মাঝে উৎসাহ-উন্মাদনাও বিরাজ করছে প্রবলভাবে। তাই এই ম্যাচের উপলক্ষ উদযাপনে আছে নানান পরিকল্পনা।
এমনিতে রবিবার ছুটির দিন। তাই ধারণা করা হচ্ছে ওভালে টাইগার সমর্থকদের সমাগম হবে বেশ। ব্রিটেনে বসবাস করা অসংখ্য প্রবাসী বাংলাদেশ দলের অন্তত একটা খেলা দেখতে শতাধিক পাউন্ড খরচ করতেও দ্বিধা করছে না। ওভালে ২ জুন বাংলাদেশ-দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ৫ জুন বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ডের ম্যাচের বেশিরভাগ টিকিটই বাংলাদেশিদের দখলে।
বাংলাদেশের মানুষের ক্রিকেটীয় আবেগ বিশ্বময় চর্চিত, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে মাশরাফিরা যেখানে যান প্রবাসী বাংলাদেশিরা তাদের সমর্থন জানাতে সেখানেই ছুটে আসেন। এবারো ইংল্যান্ডের এই বিশ্বকাপকে ঘিরে বেশ ভালোভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছেন স্থানীয় প্রবাসীরা।
ইস্ট লন্ডনের ব্যবসায়ী ফজলুল হক পুরো পরিবার নিয়ে ওভালে খেলা দেখবেন। দেশ থেকে জার্সিও আনিয়েছেন। বাংলা ট্রিবিউনকে জানালেন খেল দেখতে তার অধীর আগ্রহের কথা, ‘বিশ্বকাপের মতো একটি আসরে বাংলাদেশ খেলছে। অথচ আমি মাঠে যাবো না, সেটা কি হয়। পুরো পরিবার নিয়ে মাঠে খেলা দেখতে যাবো। বাংলাদেশ দলের জন্য গলা ফাটাবো। আমাদের পুরো পরিবার আনন্দে আছি।’
গত কয়েক বছর ধরে পৃথিবীর যে প্রান্তেই বাংলাদেশের খেলা হচ্ছে। লাল-সবুজের উপস্থিতি থাকছে চোখে পড়ার মতো। প্রবাসীরা নিজের পকেটের পয়সা খরচ করে নিজের দলকে সমর্থন জুগিয়ে যেতে কার্পণ্য করেন না। মাঠে শুধু নিজেরাই যান না, বিশাল আকারের বাঘের প্রতিকৃতি, লালসবুজের পতাকা গায়ে দিয়ে বাঙালিরা জানান দেন তাদের প্রাণবন্ত উপস্থিতির।
হোয়াইট চ্যাপেলে বসবাসকারী বাংলাদেশী আরেক ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলামও তেমন এক বাংলাদেশি সমর্থক। জার্সি গায়ে চাপিয়ে বাংলাদেশের খেলা দেখার আশায় তিনি। এমনি টাইগারদের জার্সি গায়ে দিলে অন্য রকম অনুভূতি হয় বলে মনে হয় তার, ‘বাংলাদেশের জার্সি গায়ে জড়ালে মনের মধ্যে অন্য রকম অনুভূতি হয়। লন্ডন থেকে বেশ দাম দিয়ে জার্সি কিনেছি। এই জার্সি পড়েই দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ দলকে সমর্থন জানাবো।’
ম্যানচেস্টার সিটিতে বসবাস করেন আরিফুল ইসলাম, পেশায় চাকরীজীবি। ওভালে অনুষ্ঠিত ২ ও ৫ জুনের টিকিট কেটেছেন তিনি। রবিবারের ম্যাচ দেখতে শনিবার রাতে লন্ডনের একটি হোটেলে উঠেছেন বাংলাদেশি এই প্রবাসী। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বললেন, ‘১০ বছর ধরে ইংল্যান্ডে থাকছি। সব সময়ই দেশের কথা মনে পরে। বাংলাদেশের খেলা দেখব বলে অফিস থেকে ছুটি নিয়েছি। ক্রিকেটারদের সাপোর্ট দিতে হবে, এটা আমাদের কর্তব্য। আশা করি হাসিমুখ নিয়ে স্টেডিয়াম থেকে বের হতে পারবো।’
স্কটল্যান্ড থেকেও খেলা দেখতে আসছেন অনেকে। এর মধ্যে আইয়্যুব কবির ঝক্কি ঝামেলা থাকার পরেও বাংলাদেশের খেলা দেখতে আসতে পেরে দারুণ আনন্দিত দেখা গেলো তাকে, ‘বাংলাদেশের খেলা যেখানেই হোক অন্যরকম অনুভূতি কাজ করে। ইংল্যান্ডের আশে পাশে যে যেভাবেই থাকে তারা আসে। আমি স্কটল্যান্ড থেকে কষ্ট হলেও খেলা দেখতে এসেছি। এখন ভালো কিছু নিয়ে যেতে পারলে ভালো লাগবে।’
অবশ্য এমনও অনেক প্রবাসী আছেন, যারা স্টেডিয়ামে যেতে পারছেন না টিকিটের কারণে। তারা নিজেদের বাসায় খেলা দেখার ব্যবস্থা করেছেন। বড় স্ক্রিনে বন্ধুরা মিলে হৈ-হুল্লোড় করে খেলা দেখতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন।