X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

শিশু খেলবে কোথায়? মাঠ নেই, ক্লাবের উদ্যোগ দায়সারা

তানজীম আহমেদ
০৬ জুন ২০১৯, ১৯:০০আপডেট : ০৬ জুন ২০১৯, ১৯:০৬

শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের এই মাঠে শিশু-কিশোরদের জন্য ফুটবল-ক্রিকেট কোচিংয়ের ব্যবস্থা করা হয় আহনাফ তাজওয়ার, বয়স ১০ বছর। খিলগাঁও জোড়পুকুর মাঠে সকালে খেলতে যেত। কিন্তু সেখানে মাঠের উন্নয়ন কাজ চলায় দীর্ঘদিন ধরে খেলাধুলা বন্ধ। তাই মোবাইল ফোন, কম্পিউটার কিংবা ট্যাবে গেমস খেলে সময় কাটাতে হচ্ছে আহনাফকে। আহনাফের মতো ঢাকার অন্য শিশুদেরও একই অবস্থা।

এমনিতেই ঢাকায় মাঠ সংকট। তার ওপর ঢাকার ক্লাবগুলোর শিশুদের নিয়ে তেমন কোনও উদ্যোগ নেই। তরুণদের ঘিরেই তাদের কার্যক্রম বেশি। ক্লাবের হয়ে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় তরুণরা। তাই শিশু-কিশোরদের ক্লাবের হয়ে খেলার সুযোগ সীমিত। যে সব এলাকায় মাঠ আছে, সেখানেও অন্যদের সঙ্গে খেলতে হয়। মাঠ সংকটের কারণে অনেক জায়গায় খেলাই প্রায় অসম্ভব।

ঢাকার বিভিন্ন স্তরের ক্লাবগুলো ফুটবল ফেডারেশন কিংবা ক্রিকেট বোর্ড আয়োজিত প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে থাকে। দু-একটি ক্লাব বাদে কারোরই একাডেমি নেই, যেখানে শিশু-কিশোররা নিয়মিত খেলাধুলার চর্চা করতে পারে।

আয়োজন আছে, অর্থের বিনিময়ে

তবে এত হতাশার মাঝেও আশার কথা, ঢাকা শহরে ব্যক্তিগত উদ্যোগে একাধিক ক্রিকেট ও ফুটবল কোচিং সেন্টার শত শত শিশু-কিশোরদের খেলার মাঝে রেখেছে।

বিশেষ করে ক্রিকেট কোচিং সেন্টার আছে অনেক। শুধু আবাহনী মাঠেই তিনটি বড় ট্রেনিং সেন্টার আছে, যেখানে কয়েক শ’ ছেলে ক্রিকেট অনুশীলন করতে পারে। এছাড়া গুলশান ইয়ুথ মাঠ সহ অন্যান্য মাঠে ছোট-বড় ট্রেনিং সেন্টার আছে। তুলনামূলক কম হলেও ফুটবল কোচিং সেন্টারও আছে বেশ কয়েকটি। যদিও এসব জায়গায় অনুশীলন করতে হয় অর্থের বিনিময়ে।

বেশ কয়েকটি ক্লাব বয়সভিত্তিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিলেও সারা বছর তাদের তেমন আয়োজন থাকে না। স্কুল ফুটবল, ক্রিকেট কিংবা বিভিন্ন বয়সভিত্তিক প্রতিযোগিতার জন্য অপেক্ষায় থাকতে হয় শিশু-কিশোরদের।

জাতীয় দলের সাবেক ফুটবলার ও বর্তমানে ক্রিকেট কোচ কাজী আনোয়ার নিজের উদ্যোগে শিশু-কিশোরদের জন্য খেলাধুলার ব্যবস্থা করেছেন। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছেন, ‘আবাহনী মাঠে বড়-ছোট মিলিয়ে অনেক কোচিং সেন্টার আছে। যেখানে ক্রিকেট ও ফুটবল প্রশিক্ষণ নেয় ছেলেরা। এটাই আমাদের পেশা। এর মাধ্যমে ভবিষ্যতের কাণ্ডারিরা খেলাধুলার মধ্যে থাকতে পারছে। আমরা ক্রিকেটার-ফুটবলার তৈরি করতে পারছি। এমন সুবিধা ঢাকার একাধিক মাঠে আছে। তবে ক্লাবগুলো আরও সক্রিয় হলে ভালো হতো।’

সংশ্লিষ্টরা যা বলছেন

ঢাকার ক্লাবগুলোতে কেন শিশু-কিশোরদের খেলাধুলার তেমন চর্চা নেই? আবাহনীর ম্যানেজার সত্যজিত দাশ রুপুর উত্তর, ‘বয়সভিত্তিক পর্যায়ে যারা ভালো করে, তাদের আমরা দলে সুযোগ দিই। আমাদের ক্রীড়া কমপ্লেক্স হচ্ছে। নির্মাণকাজ শেষ হলে কর্তৃপক্ষ বড় ধরনের উদ্যোগ নেবে, সেখানে শিশু-কিশোরদের খেলার সুযোগ থাকবে। আমরা একাডেমিও করবো, যেন সারা বছর বাচ্চারা খেলার মধ্যে থাকতে পারে। আমাদের মাঠে অবশ্য শিশু-কিশোররা খেলাধুলার চর্চা করে নিয়মিত।’

তবে শিশু-কিশোরদের সারা বছর পরিচর্যা করা কঠিন বলে জানিয়েছে শেখ জামাল ক্লাব কর্তৃপক্ষ শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব মাঠেও শিশু-কিশোরদের খেলার সুযোগ আছে। কিন্তু ক্লাব কর্তৃপক্ষ শুধু নির্দিষ্ট প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েই যেন দায় সারছে। দলটির ম্যানেজার আনোয়ারুল করিম হেলালের কথা, ‘আমাদের এখানে নিয়মিত ক্রিকেট কোচিং হয়ে থাকে। ফুটবল কোচিংয়ের ব্যবস্থাও আছে। তবে শিশু-কিশোরদের সারা বছর পরিচর্যা করা কঠিন।’

কয়েক বছর আগে মোহামেডান ক্লাব কিশোরদের জন্য দীর্ঘমেয়াদি ফুটবল প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছিল। কিন্তু বছর খানেক চলার পর অর্থাভাবে বন্ধ হয়ে গেছে সেই প্রকল্প। এখন শুধু ক্রিকেট কোচিং সেন্টার চলছে ঐতিহ্যবাহী ক্লাবটির।

উন্নত দেশে, এমনকি পাশের দেশ ভারতেও কিশোরদের জন্য দীর্ঘমেয়াদি অনুশীলনের ব্যবস্থা থাকে। তবে বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় ক্লাবগুলো এক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে। অবশ্য বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনই যেখানে শিশু-কিশোরদের জন্য একাডেমি করতে ব্যর্থ, সেখানে ক্লাবগুলোর ঘাড়ে দায় চাপানোও ঠিক নয়।  

এ প্রসঙ্গে দেশের অন্যতম সেরা কোচ মারুফুল হকের মন্তব্য, ‘বাইরের দেশে, বিশেষ করে উন্নত দেশে ফুটবলে আগ্রহী বাচ্চাদের ছোটবেলাতেই প্রশিক্ষণ শুরু হয়ে যায়। ৮/৯ বছর বয়সে তারা একাডেমিতে ঢুকেও যায়। ক্লাবগুলোতে শিশুদের জন্য খেলার ব্যবস্থা থাকে, তাই শিশুরাও খেলার মধ্যে থাকে। কিন্তু আমাদের এখানে ক্লাবগুলো শুধু লিগ বা বড় প্রতিযোগিতার জন্য দল গড়ে। শিশুদের জন্য ক্লাবগুলোর ভূমিকা কমই বলা যায়।’

শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের কোচ সাইফুল বারী টিটুর আহ্বান, ‘খেলাধুলায় শিশু-কিশোরদের অংশগ্রহণ বাড়াতে হলে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। ছোট-বড় সব ক্লাবেই খেলাধুলার চর্চা বাড়াতে হবে। না হলে তরুণ প্রজন্ম খেলাধুলা থেকে দূরে সরে যাবে।’

ব্যতিক্রম উদাহরণ নয়

অবশ্য ব্যতিক্রম যে নেই, তা নয়। সাইফ স্পোর্টিং ক্লাব ৫০ জন কিশোর নিয়ে আবাসিক ক্যাম্প চালিয়ে যাচ্ছে। ভবিষ্যতে শিশু-কিশোরদের নিয়ে বড় পরিসরে কাজ করার পরিকল্পনা তাদের। ক্লাবটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাসিরউদ্দীন চৌধুরী বলেছেন, ‘আমাদের নিজস্ব মাঠ হলে শিশু-কিশোরদের নিয়ে বড় পরিসরে কাজ করতে পারবো। তখন ইউরোপীয় স্টাইলে কাজ করবো আমরা।’

আশার কথা, ব্যক্তিগত উদ্যোগে হলেও ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে খেলোয়াড় বেরিয়ে আসছে। এ কারণে ক্রিকেট, ফুটবল সহ অন্যান্য খেলার ‘পাইপলাইন’ সমৃদ্ধ হচ্ছে দিন দিন।

ছবি: নাসিরুল ইসলাম

/টিএ/ইউআই/এএআর/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
বার্সেলোনার সঙ্গে থাকছেন জাভি!
বার্সেলোনার সঙ্গে থাকছেন জাভি!
চার বছরেও পাল্টায়নি ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি, প্রশ্ন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে
চার বছরেও পাল্টায়নি ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি, প্রশ্ন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী