X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

‘মাশরাফির মতো বুদ্ধিদীপ্ত ক্রিকেটার বাংলাদেশে আর নেই’

রবিউল ইসলাম, টন্টন থেকে
১৭ জুন ২০১৯, ২১:০৪আপডেট : ১৭ জুন ২০১৯, ২৩:৪৬

ক্যারিবিয়ান কিংবদন্তি অ্যান্ডি রবার্টস স্যার অ্যান্ডি রবার্টসের খেলোয়াড়ি জীবন শেষ হয় ১৯৮৩ সালে। কিন্তু ক্রিকেট থেকে দূরে থাকতে পারেননি ওয়েস্ট ইন্ডিজের কিংবদন্তি ফাস্ট বোলার। ৬৮ বছর বয়সেও তরুণদের নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। ২০০১ সালে তরুণ পেসারদের নিয়ে কাজ করতে গিয়েছিলেন বাংলাদেশে। বিকেএসপিতে দুই সপ্তাহের ক্যাম্পে মাশরাফি মুর্তজার বোলিং ভালো লেগেছিল রবার্টসের। তখন থেকেই বাংলাদেশের অধিনায়ককে তার ডাক নাম ‘কৌশিক’ নামে চেনেন এই ক্যারিবীয় গ্রেট।

প্রতিভা চিনতে ভুল হয়নি তার। সে সময় বয়সভিত্তিক দলে খেলা মাশরাফির ভেতর দুর্দান্ত এক পেসারকে খুঁজে পেয়েছিলেন রবার্টস। ২০০১ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশ সফরে আসে জিম্বাবুয়ে। সে বছরের জুনে বিসিবিকে দেওয়া রিপোর্টে মাশরাফির কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করে তাকে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট দলে নেওয়ার সুপারিশ করেন রবার্টস। শুরুতে নির্বাচকদের মধ্যে দ্বিধা থাকলেও পরে ক্যারিবীয় কিংবদন্তির সুপারিশেই সুযোগ পান মাশরাফি।

যদিও ১৭ বছরের এক তরুণকে টেস্ট ক্রিকেটের কঠিন আঙিনায় নামিয়ে দেওয়ার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল সংবাদ মাধ্যমে। বাংলাদেশ ছাড়ার আগে রবার্টস কিন্তু স্পষ্ট ভাষায় বলে যান, ‘আমি নিজেও এত কম বয়সে একজন ফাস্ট বোলারকে টেস্ট ক্রিকেটে খেলানোর পক্ষে নই। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে সেটা বিবেচনা করা যেতেই পারে। একজন বোলার ব্যতিক্রমী প্রতিভাবান হলে এবং অন্যদের চেয়ে এগিয়ে থাকলে তাকে টেস্টে খেলানো দোষের কিছু নয়। কৌশিক তেমনই একজন ব্যতিক্রমী ফাস্ট বোলার।’

কয়েকদিন আগে মাশরাফির সঙ্গে ফোনে কথা হয় রবার্টসের। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচের আগে অনুজ্জ্বল পারফরম্যান্সের কারণে সমালোচিত সাবেক শিষ্যকে সাহস দিতে ফোন করেছিলেন তিনি। আজ বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচ মাঠে বসে দেখছেন। গতকাল (রবিবার) টন্টনের কর্নার হাউজ হোটেলে বাংলা ট্রিবিউনকে একান্ত সাক্ষাৎকারে মাশরাফিকে নিয়ে অনেক কথাই বললেন ৫৬টি টেস্ট ও ৪৭টি ওয়ানডে খেলা  রবার্টস।

বাংলা ট্রিবিউন: কেমন আছেন?

অ্যান্ডি রবার্টস: এমনিতে ভালোই আছি। তবে বয়স হয়েছে তো, তাই চলা-ফেরা করতে কষ্ট হয়।

বাংলা ট্রিবিউন: মাশরাফির সঙ্গে কথা হয়েছে?

রবার্টস: আমি তার দীর্ঘদিনের ফ্যান। তাকে আমি কৌশিক নামেই চিনি। হঠাৎ মাশরাফি বললে চিনতে পারি না। ফোনে কথা হয়েছে তার সঙ্গে। সমালোচনা হচ্ছে, তাই সে বেশ হতাশ। তাকে বলেছি, জীবনের প্রতিটি দিন ভালো যায় না। ভালো-খারাপ মিলিয়েই জীবন।

বাংলা ট্রিবিউন: বিশ্বকাপে কয়েক ম্যাচ ভালো করতে না পারায় মাশরাফিকে নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে। আপনি এটাকে কীভাবে দেখছেন?

রবার্টস: ভক্তরা যখন অনেক প্রত্যাশা করে, তখন তেমন কিছু না পেলে সমালোচনা তো করবেই। এটা বন্ধ করা যাবে না। কৌশিকের ক্যারিয়ার অনেক দীর্ঘ। সে  ভালো ক্রিকেটার। তার মতো বুদ্ধিদীপ্ত ক্রিকেটার সম্ভবত বাংলাদেশে আর  নেই। বাংলাদেশের ক্রিকেটকে সে অনেক দূর নিয়ে গেছে। তাকে যথেষ্ট সম্মান দেওয়া উচিত, দেশের জন্য তার ভালোবাসাকে প্রত্যেকের সম্মান জানানো উচিত।

বাংলা ট্রিবিউন: বাংলাদেশকে অনেক দিন ধরে দেখছেন। বাংলাদেশের ক্রিকেটে মাশরাফির অবদান কতটা বলে মনে করেন?

রবার্টস: যদি তোমরা সামনে এগোতে চাও, তাহলে আমার মনে হয় বিশ্বকাপের পরের সময়টাই সেরা সময়। কৌশিক তার কাজটা করেছে। তোমরা তো দেখতেই পাচ্ছ সে বাংলাদেশের একজন সাহসী যোদ্ধা। সে যে দলের প্রয়োজনে বিভিন্ন ভূমিকা পালন করছে সেটা দেখে খুবই ভালো লাগছে।

বাংলা ট্রিবিউন: মাশরাফিকে খুঁজে পাওয়ার গল্প শুনতে চাই।

রবার্টস: ১৬/১৭ বছর বয়সে তাকে আমি বিকেএসপিতে দেখেছিলাম। আমি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে সাজেস্ট করি ওর দিকে নজর রাখতে। বাংলাদেশ ছাড়ার আগে কৌশিককে আমি কিছু পরামর্শ দিয়ে এসেছিলাম। ওই সময় আমি তার মধ্যে এমন কিছু খুঁজে পেয়েছিলাম, যা অন্যদের ছিল না। সত্যিকার অর্থেই কৌশিকের মেধা অন্যরকম। তখনই আমি তার মধ্যে ভালো করার খিদে দেখেছিলাম। তার আগ্রাসন, গতি প্রতিপক্ষকে ভয় পাইয়ে দিতো। তাই তাকে ভীষণ পছন্দ করেছিলাম। এত ইনজুরি না হলে মাশরাফি বিশ্ব ক্রিকেটকে আরও অনেক কিছু দিতে পারতো।

বাংলা ট্রিবিউন: ৭টি অস্ত্রোপচারের পরও মাশরাফি খেলে যাচ্ছেন। আপনি নিশ্চয়ই খুব অবাক?

রবার্টস: আমি সত্যিই বিস্মিত। এখনও সে কীভাবে খেলে যাচ্ছে? হাঁটুতে এত অস্ত্রোপচারের পর একজন মানুষ কীভাবে খেলে যেতে পারে? তাকে অনেক যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়েছে।

বাংলা ট্রিবিউন: মাশরাফিকে কিছু বলার আছে?

রবার্টস: কৌশিকের জন্য শুভকামনা। আমি যে এ কথা বলেছি, সেটা তাকে জানিয়ে দিতে পারেন।

অ্যান্ডি রবার্টসের সঙ্গে বাংলা ট্রিবিউন প্রতিবেদক বাংলা ট্রিবিউন: বাংলাদেশে দ্রুতগতির বোলার না আসার কারণ কী?

রবার্টস: একটা সময় বাংলাদেশে কোনও ফাস্ট বোলারই ছিল না। কৌশিক তরুণ হলেও শিখতে আগ্রহী ছিল। আমি জানি না বাংলাদেশে এখন কোনও ফাস্ট বোলার আছে কিনা। আপনারা মাঠে যাদের খেলতে দেখেন তারাই যে সেরা খেলোয়াড় এমন কোনও কথা নেই। কারণ কখনও কখনও আপনাদের সেরা খেলোয়াড় দলে সুযোগ না-ও পেতে পারে। অবশ্য উপমহাদেশের উইকেট, আবহাওয়া পেস সহায়ক নয়। হয়তো এটাও একটা কারণ। তবে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব।

বাংলা ট্রিবিউন: আপনাদের সময়ের মতো এখন তেমন ফাস্ট বোলার দেখা যায় না। এর কারণ কী?

রবার্টস:  নানা কারণে এখনকার ফাস্ট বোলারদের ক্যারিয়ার তেমন লম্বা হয় না।  দ্রুতগতির বোলার হতে গেলে কিছু ব্যাপার মেনটেইন করতে হয়, কঠোর পরিশ্রম করতে হয়, সুশৃঙ্খল জীবন যাপনে অভ্যস্ত হতে হয়। শুধু তাহলেই ফাস্ট বোলিংয়ে উন্নতি করা সম্ভব। সবচেয়ে বড় কথা, হার্ডওয়ার্ক করতে হবে, নিজের প্রতি কমিটেড থাকতে হবে। তাহলেই শুধু সাফল্য সম্ভব।

বাংলা ট্রিবিউন: বয়স হলেও এখনও তো ক্রিকেটের সঙ্গেই আছেন।

রবার্টস: আমি সব সময় চেষ্টা করি তরুণদের ফাস্ট বোলিং শেখাতে। কিন্তু সমস্যা হলো তরুণরা বুড়ো মানুষদের কথা শুনতে আগ্রহী নয়(হাসি)।

/আরআই/এএআর/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা