X
শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪
২৭ বৈশাখ ১৪৩১

‘ভাবতেই পারিনি গুলি লাগার পরও খেলতে পারবো’

তানজীম আহমেদ, চট্টগ্রাম থেকে
১৯ অক্টোবর ২০১৯, ২২:৫৫আপডেট : ১৯ অক্টোবর ২০১৯, ২২:৫৭

জামাল ভূঁইয়া বাবা-মা বাংলাদেশি হলেও তার জন্ম ডেনমার্কে। কৈশোরে পা রাখার আগেই ফুটবলের সঙ্গে ভালোবাসা শুরু জামাল ভূঁইয়ার। ডেনিশ দল এফসি কোপেনহেগেনের জুনিয়র দলে সুযোগ পেলেও সিনিয়র দলে আর খেলা হয়নি। একসময় নাড়ীর টানে চলে আসেন বাংলাদেশে। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ২০১৩ সালে প্রথম জাতীয় দলের জার্সি পরা জামাল এখন বাংলাদেশের অধিনায়ক, দেশের অন্যতম সেরা মিডফিল্ডার। বাংলা তেমন ভালো বলতে পারেন না। তবে তাতে দমে না গিয়ে মানিয়ে নিয়েছেন বাংলাদেশের সঙ্গে। ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে তিনি অকপট।

প্রশ্ন: আগের চেয়ে এখন অনেক স্বাচ্ছন্দ্যে বাংলা বলেন। কীভাবে উন্নতি হলো?

জামাল: আমি এটা নিয়ে ভাবি না।

প্রশ্ন: বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনে কয়েকজন সাংবাদিক বলেছেন, বাংলা বলতে পারেন না বলে আপনি বাংলাদেশি নন। কথাটা শুনে নিশ্চয়ই কষ্ট পেয়েছেন।

জামাল: আমার বাবা-মা বাঙালি। আমি পাঁচটি ভাষায় কথা বলতে পারি—সুইডিশ, ডেনিশ, নরওয়েজিয়ান, ইংরেজি ও বাংলা। আমার বাবা-মা ঘরে সবসময় বাংলা বলেন। তবে এখানেই বাংলা অনেক বেশি শিখেছি। ভাঙা ভাঙা বাংলা বললেও যোগাযোগ করতে কোনও সমস্যা হচ্ছে না বাংলাদেশে।  

প্রশ্ন: আপনার বাবা-মা কবে ডেনমার্কে যান?

জামাল: আমার দাদা ১৯৬৩ সালে ডেনমার্কে যান। বাবা যান এর চার বছর পর। আর মা যান ১৯৭১ সালে। আমার বাবার ছিল ফ্যাব্রিক ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি। তিনি একটা সুপার শপও কিনেছিলেন। আমার জন্ম ডেনমার্কের রাজধানী কোপেনহেগেনে, বেড়ে ওঠাও সেখানে।

প্রশ্ন: এফসি কোপেনহেগেনের বিপক্ষে আপনি নাকি গোল করেছিলেন?

জামাল: হ্যাঁ, কোপেনহেগেনের বিপক্ষে একটা গোল করার দুই দিন পর তাদের জুনিয়র দলের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলাম। আমার বয়স তখন ১৪ বছর। আমি সবসময় কোপেনহেগেনে খেলতে চেয়েছিলাম। কারণ তারা ডেনমার্কের সবচেয়ে বড় দল।

শুরু থেকে বেশ নজর কেড়েছেন জামাল প্রশ্ন: আপনার জীবনে গুলিতে আহত হওয়ার মতো ভয়ঙ্কর ঘটনা আছে। ঘটনাটা একটু বলুন।

জামাল:  সেটা ২০০৭ সালের ঘটনা। আমার বয়স তখন ১৬/১৭ বছর। স্কুল থেকে বাসায় ফিরছিলাম। আমরা যেখানে থাকতাম, সেই জায়গাটা তেমন ভালো ছিল না।  আমি অবশ্য ভয় পেতাম না। তবে সেদিন একজন লোক আমাকে তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরতে বলেন। তার সঙ্গে কথা বলার কয়েক মিনিট পর আমাকে লক্ষ্য করে চারটি গুলি করা হয়। একটি কনুইয়ে আর অন্যটি তলপেটে লাগে। বাকি দুটি গুলি বেরিয়ে যায় শরীর ঘেঁষে। দুই দিন কোমায় ছিলাম, তিন/চার মাস হাসপাতালে থাকতে হয়েছিল। সেরে উঠে ১৪ মাস পর ফুটবল খেলতে শুরু করি।

প্রশ্ন: আবার খেলতে পারবেন কখনও ভাবতে পেরেছিলেন?

জামাল: না, আমি ভেবেছিলাম ফুটবল ছেড়ে দিতে হবে। খেলতে না পারলে  ভালোভাবে লেখাপড়া করার কথাও ভেবেছিলাম। কিন্তু কোপেনহেগেন যুব দলের কোচ জনি লারসন আমাকে মাঠে ফিরতে উৎসাহ দেন। তিনি নিকলাস বেন্ডনারের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। আর্সেনালে যাওয়ার আগে কোপেনহেগেনে খেলতেন বেন্ডনার। আমি আবার খেলা শুরু করলাম, ওই ঘটনার ৭ মাস পর ট্রেনিংয়ে গেলাম। সেই সময় আমার ওজন ১৪ কেজি কমে গিয়েছিল।

প্রশ্ন: সেই স্মৃতি কি এখনও আপনাকে তাড়িয়ে বেড়ায়?

জামাল: আমার জীবনে এটা কষ্টের স্মৃতি হয়ে থাকবে। সেই ঘটনার পর আমি প্রায়ই রাতে দুঃস্বপ্ন দেখতাম। এটা আমার ফুটবল-জীবনে বিশাল ছাপ রেখে গেছে। তখন কোপেনহেগেন জুনিয়র দলের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় ছিলাম আমি। ক্লাব আমাকে সিনিয়র দলে পাঠাতে চেয়েছিল। কিন্তু আমার দুর্ভাগ্য! প্রথমদিকে অনেক কাঁদতাম। কিন্তু পরে ভাগ্যকে মেনে নিয়েছি।

জামালের ওপর জেমির আস্থা অনেক প্রশ্ন: বাংলাদেশের জীবন তো উপভোগ করছেন। ডেনমার্কে কি প্রায়ই যান?

জামাল: হ্যাঁ, যখনই ছুটি পাই, ডেনমার্কে চলে যাই। কারণ এখানে আমাকে একা থাকতে হয়। আমার বাবা-মা আর বড় দুই ভাই ডেনমার্কে থাকেন।

প্রশ্ন: এখন কি নিজেকে বাংলাদেশি বলে মনে হয়?

জামাল: আমি সবসময় নিজেকে বাংলাদেশি মনে করি। এই দেশকে নিজের বাড়ির মতো মনে হয়। বাংলাদেশে আমার অনেক আত্মীয় আছে।

প্রশ্ন: বাবা-মা নিশ্চয়ই আপনাকে নিয়ে গর্ব করেন?

জামাল: আমার তো তা-ই মনে হয়। যদিও তারা এ বিষয়ে খুব একটা কথা বলেন না। বাড়িতে আমিও ফুটবল নিয়ে তেমন কথা বলি না।

প্রশ্ন:  কিছু দিন আগেস্প্যানিশ লা লিগায় ধারাভাষ্য দিয়েছিলেন। অভিজ্ঞতাটা কেমন?

জামাল: দারুণ অভিজ্ঞতা। আগামী মাসে আবার ধারাভাষ্য দিতে বার্সেলোনায় যাচ্ছি। এরই মধ্যে আমার টিকিট পাঠিয়ে দিয়েছে ওরা।

প্রশ্ন:  অবসরেরপর কী করতে চান?

জামাল: জানি না কী করবো। এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নেইনি। এখন শুধু ফুটবল নিয়ে ভাবতে চাই।

/টিএ/এফএইচএম/এএআর/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
থামছে না মায়ের কান্না-আহাজারি, বাবা শোকে পাথর
থামছে না মায়ের কান্না-আহাজারি, বাবা শোকে পাথর
ঢাবিতে মাস্টার্সে ভর্তিতেও পরীক্ষা নেওয়ার পরিকল্পনা
ঢাবিতে মাস্টার্সে ভর্তিতেও পরীক্ষা নেওয়ার পরিকল্পনা
৯ বছর পলাতক থাকা আসামি গ্রেফতার
৯ বছর পলাতক থাকা আসামি গ্রেফতার
‘বিএনপি সন্ত্রাসের পাঁয়তারা করছে, রাজধানী ছেড়ে দিলে সমস্যা হতে পারে’
‘বিএনপি সন্ত্রাসের পাঁয়তারা করছে, রাজধানী ছেড়ে দিলে সমস্যা হতে পারে’
সর্বাধিক পঠিত
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নামের বানান ভুল লিখলো সওজ, চলছে সমালোচনা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নামের বানান ভুল লিখলো সওজ, চলছে সমালোচনা
৫ জনকে হারিয়ে বিপুল ভোটে ভাইস চেয়ারম্যান সেই সুইটি
৫ জনকে হারিয়ে বিপুল ভোটে ভাইস চেয়ারম্যান সেই সুইটি
দেশের ব্যাংকগুলো ধ্বংস হচ্ছে, তার উদাহরণ এনআরবিসি: জিএম কাদের
দেশের ব্যাংকগুলো ধ্বংস হচ্ছে, তার উদাহরণ এনআরবিসি: জিএম কাদের
২০ মিনিটে লালখানবাজার থেকে বিমানবন্দর, চলবে না অটোরিকশা-বাইক
২০ মিনিটে লালখানবাজার থেকে বিমানবন্দর, চলবে না অটোরিকশা-বাইক
রাশিয়াকে ঠেকাতে আরও অস্ত্র চাইলেন জেলেনস্কি
রাশিয়াকে ঠেকাতে আরও অস্ত্র চাইলেন জেলেনস্কি