X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১
সাঙ্গাকারার লাহোর-হামলা স্মরণ

‘ভেবেছিলাম পারানাভিতানা মারাই গেছে’

স্পোর্টস ডেস্ক
০৪ জুন ২০২০, ২০:১০আপডেট : ০৪ জুন ২০২০, ২০:২১

কুমার সাঙ্গাকারা এখন ক্রিকেট আইনের রক্ষক মেরিলিবোন ক্রিকেট ক্লাবের (এমসিসি) সভাপতি তিনি। মার্চ মাসে করোনাভাইরাস মহামারিতে সারাবিশ্ব অবরুদ্ধ হয়ে পড়ার আগে এমসিসি দল নিয়ে পাকিস্তানে ক্রিকেট খেলে এসেছেন। ক্রিকেট বিশ্বে তিনি এই বার্তাই ছড়িয়ে দিচ্ছেন, সব আন্তর্জাতিক দলগুলোরই উচিত পাকিস্তান সফরে যাওয়া। কিন্তু যে কারণে পাকিস্তান আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল প্রায় ১০ বছর, সেটির সঙ্গে তো জড়িয়ে আছে সাঙ্গাকারাদের নাম। ২০০৯ সালের ৩ মার্চ, লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে যাওয়ার পথে শ্রীলঙ্কা টেস্ট দলের ওপর যে ভয়ঙ্কর জঙ্গি হামলা হয়েছিল, সেই কারণে পাকিস্তানে এখনও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট পুরোপুরি ফেরেনি। স্কাই স্পোর্টসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সেই ভয়ঙ্কর স্মৃতিটা সম্প্রতি স্মরণ করেছেন কুমার সাঙ্গাকারা।

দুই দলের প্রথম টেস্টটি ড্র হয়েছিল। লাহোরে দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে শ্রীলঙ্কা ৬০৬ রানের পাহাড় গড়ার পর পাকিস্তান দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষ করেছিল ১ উইকেটে ১১০ রানে। শ্রীলঙ্কা টিম বাসের ওপর  ১২ জন বন্দুকধারী হামলা চালায় হয় যখন তারা তৃতীয় দিনের খেলার জন্য সকালে যাচ্ছিল গাদ্দাফি স্টেডিয়ামের দিকে।

সেই শ্রীলঙ্কা দলটির সহঅধিনায়ক সাঙ্গাকারা স্কাই স্পোর্টসের কাছে বলেন, ‘ওই সময় পাকিস্তানে যাওয়ার আগে নিরাপত্তা নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন ছিলাম। আমরা নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চিঠি লিখেছিলাম এবং যদি কিছু ঘটে সেই জন্য খেলোয়াড়দের বীমা করা যায় কি না সেই দাবিও জানিয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের সেই দাবি প্রত্যাখ্যান করে বলা হয়েছিল নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সবধরনের কাজ করা হয়েছে, সুতরাং আমরা সফরে গেলাম।’

সাঙ্গাকারার বিবরণে, ‘বাসের মধ্যে আমরা স্বভাবসুলভ হাসি-ঠাট্টায় মেতে উঠলাম। আজ সন্ধ্যায় কী করবো, সেটি নিয়েও কেউ কেউ বললো। আমাদের এক ফাস্ট বোলার বললো, “উইকেট এমন মরা যে আমার হয়তো হাড়েই চিড় ধরে যাবে। আমি চাই একটা বোমা ফাটুক, যাতে আমরা দ্রুত ফিরে যেতে পারি।” এর ঠিক ২০ সেকেন্ড পর সেটাই ঘটলো।’

‘আমাদের টিম ম্যাসিউর ছিল বাসের সামনে। আমরা গুলির শব্দ শুনতে পেলাম, ভেবেছিলাম হয়তো কোথাও পটকা ফাটানো হচ্ছে। সে উঠে দাঁড়ালো এবং বলতে লাগলো, “বসে পড়ো, তারা বাসে গুলি করছে।” দিলশানও সামনে ছিল, আমি ছিলাম মাঝখানে। মাহেলা (অধিনায়ক) একেবারে পেছনে, আর মুরালি ছিল আমার পেছনে যাতে থিলান সামারাবীরার সঙ্গে লাগতে পারে। মনে পড়ছে ওপেনার থারাঙ্গা পারানাভিতারানাও সামনে বসা ছিল’- বলতে বলতে গলা কেঁপে ওঠে সাঙ্গকারার, ‘নারকীয় পরিস্থিতির সৃষ্টি হলো। বাসের সিটগুলোর মাঝামাঝি জায়গায় আমরা লুকোলাম। শুরু করলো তারা গুলিবর্ষণ। যত পারা যায় বাসে গুলি চালালো তারা, গ্রেনেড ছুড়লো, একটা রকেট লাঞ্চারও। নিশ্চয়ই কোনও কারণ ছিল, কিন্তু জানি না কেন। তবে আমরা বেঁচে গেলাম।’

কে কীভাবে আহত হয়েছিলেন সেটির অনুপুঙ্খ বর্ণনা দিয়েছেন সাঙ্গাকারা, ‘থিলান আহত হলো। আমি প্লিন্টারের আঘাতে চোট পেলাম কাঁধে। অজন্তা মেন্ডিসও আহত। পারানাভিতানার বুক ভেসে যাচ্ছিল রক্তে, আর বলছিল তার গুলি লেগেছে। চারদিক থেকে উহ,-আহ, শব্দ শোনা যাচ্ছে। পল ফারব্রেসের ( কোচ) হাত ভেদ করে গেছে লোহার স্পাইক।  এর পর আমরা ৫০০ মিটার দূরের মাঠে ঢুকে গেলাম। নিরাপত্তা ব্যবস্থা অবশ্যই ঢিলেঢালা ছিল। দুর্ভাগ্যজনকভাবে যেসব নিরাপাত্তারক্ষী আমাদের নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিল, তারা সবাই মারা যায়, খুবই করুণ ছিল পরিস্থিতি।’

সাঙ্গাকারার বর্ণনায় উঠে এসেছে তাদের আহত হওয়ার পরের পরিস্থিতি, ‘তারা (জঙ্গি) আমাদের বাস ড্রাইভারকে গুলি করতে চেয়েছিল, কিন্তু ইঞ্চি দুয়েকের জন্য তারা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। বাস ড্রাইভারই আসল নায়ক, তিনি আমাদের জীবিত অবস্থায় সরাসরি বাসটি চালিয়ে মাঠে নিয়ে গিয়েছিলেন বলেই হয়তো আমরা রক্ষা পাই। সংকীর্ণ গেট পেরোতে প্রতিদিন তার বার চারেক চেষ্টা করতে হতো, এদিন একবারেই গেট পেরিয়ে ঢুকে যান মাঠে। আমরা বাস থেকে নামি। আমরা ভেবেছিলাম পারানাভিতানা মারাই গেছে। কিন্তু সে পিঠে হাত দিয়ে বললো, ‘কোনো  বড় ক্ষত নেই, সুতরাং আমি ঠিক আছি।” সে নামলো। থিলানের সারা শরীর দিয়ে রক্ত ঝরছিল, মারাত্মকভাবে গুলি লেগেছিল তার গায়ে। তাকে অ্যাম্বুলেন্সে নিয়ে যাওয়া হয় হাসাপাতালে। পরের অ্যাম্বুলেন্সে যাওয়ার কথা ছিল আমার আর অজন্তার, কিন্তু ওই অ্যাম্বুলেন্সে গুলি চালাতে শুরু করলো তারা। সুতরাং আমরা মাঠেই থাকলাম।’ 

ক্রিকেট মাঠে ফিল্ডারের হাতে ‘জীবন ফিরে পাওয়া’ নয়, সত্যিকার অর্থে জীবন ফিরে পাওয়া নিয়ে আরও কত কিছুই বলতে পারেন শ্রীলঙ্কার ক্রিকেট কিংবদন্তি, কিন্তু তিনি ‘সাইন অফ’ হওয়ার আগে যোগ করেছেন শুধু এই কথাগুলোই, ‘শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট দলের ওপর এই হামলার পর অনেকেই ঠাট্টা-মশকরা করেছে। কেউ কেউ হেসেছে। আচমকাই আমরা হলাম দুর্ভাগ্যের শিকার। কেউ ভাবতেই পারিনি “আমরা কেন”।

 

/পিকে/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
প্রতিবন্ধী শিল্পীদের আয়োজনে মঞ্চস্থ হলো ‘সার্কাস সার্কাস’ নাটক
প্রতিবন্ধী শিল্পীদের আয়োজনে মঞ্চস্থ হলো ‘সার্কাস সার্কাস’ নাটক
‘শো মাস্ট গো অন’
চিকিৎসা সুরক্ষা আইন জরুরি‘শো মাস্ট গো অন’
ছাদে আম পাড়তে গিয়ে নিচে পড়ে শিশুর মৃত্যু
ছাদে আম পাড়তে গিয়ে নিচে পড়ে শিশুর মৃত্যু
বেয়ারস্টো-শশাঙ্কে হেসেখেলে ২৬২ রান করে জিতলো পাঞ্জাব
বেয়ারস্টো-শশাঙ্কে হেসেখেলে ২৬২ রান করে জিতলো পাঞ্জাব
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!