X
শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪
২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

সিম নিবন্ধনে মোবাইল অপারেটরগুলোর প্রলোভন!

হিটলার এ. হালিম
১৮ মে ২০১৬, ০৭:২৭আপডেট : ১৯ মে ২০১৬, ১৭:২২

বায়োমেট্রিক পদ্ধতি বায়োমেট্রিক (আঙুলের ছাপ) পদ্ধতিতে গ্রাহকদের সিম নিবন্ধনে উৎসাহী করতে মোবাইলফোন অপারেটরগুলো নামমাত্র মূল্যে ইন্টারনেট অফার করছে। অথচ স্বল্প মেয়াদের এই ইন্টারনেট কিনতে গ্রাহককে অন্য সময় অধিক অর্থ ব্যয় করতে হয়। বিষয়টিকে সংশ্লিষ্টরা দেখছেন, প্রলোভন হিসেবে। তারা বলছেন, মূলত গ্রাহক ধরে রাখার স্বার্থেই অপারেটরগুলো এমন প্রলোভন দিচ্ছে। তারা বলছেন, ইন্টারনেটের দামের ঊর্ধ্বসীমা ও নিম্নসীমা বেঁধে না দেওয়ায় এমনটা হচ্ছে। অপারেটরগুলো সেই সুযোগটাই নিচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মোবাইলফোনের ভয়েস কলের ক্ষেত্রে দাম বেঁধে দেওয়ায় সেখানে এ ধরনের প্রলোভনের ঘটনা কমই ঘটে থাকে।
সাধারণত, যেকোনও অপারেটরের এক মাস মেয়াদে ১ গিগা ইন্টারনেট কিনতে গেলে অন্তত পৌনে তিনশত টাকা থেকে সোয়া তিনশত টাকা (ভ্যাটসহ) গুনতে হয়। অথচ বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধন করলে ৯ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে ১ গিগা ইন্টারনেট। যদিও মেয়াদ ৭ দিনের। অনেক অপারেটর ‘কিছু টাকা’ রিচার্জ করলে একাধিক গিগা ইন্টারনেট দিচ্ছে কিস্তিতে অর্থাৎ একেক মাসে এক গিগা করে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গ্রাহককে এই প্রলোভন দেখাতে গিয়ে অপারেটরগুলো আসলে নিজেদের গোমর ফাঁস করে দিয়েছে। অপারেটররা চাইলেই যে কম দামে ইন্টারনেট দিতে পারে এটা এখন পরিষ্কার।   

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, গ্রামীণফোন বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধন করলে ৯ টাকায় ১ জিবি ইন্টারনেট দিচ্ছে। মেয়াদ ৭ দিন (রাত ২টা থেকে দুপুর ১২টা)। বাংলালিংক ৩ জিবি ইন্টারনেট দিচ্ছে বোনাস। ১৯ টাকা রিচার্জ করে বন্ধ সংযোগ চালু করলে গ্রাহক পাবেন ৩ জিবি ফ্রি ইন্টারনেট। এই বোনাস ৩ ভাগে (১ জিবি করে) দেওয়া হবে।

 আরও পড়তে পারেন:  তিন শতাধিক কারখানা বন্ধের প্রক্রিয়ায়: নাটক নাকি বাস্তবতা!

আর রবি দিচ্ছে ৯ টাকায় ১ জিবি ইন্টারনেট। মেয়াদ ৭দিন। এয়ারটেল বন্ধ বা সচল সিম বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধন করে ১৯ টাকা রিচার্জ করলে দিচ্ছে ৩ জিবি ইন্টারনেট। বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে রেজিস্ট্রেশন করে ৭ দিনের মধ্যে ১৯ টাকা রিচার্জ করলে এই অফার উপভোগ করা যাবে। টেলিটক সিম নিবন্ধন করে ১০ টাকা রিচার্জ করলে তিন মাসে দেবে ৩ জিবি ইন্টারনেট।

এদিকে, এক মাস মেয়াদে (২৮-৩০ দিন) এক গিগা ইন্টারনেট কিনতে গেলে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীকে খরচ করতে হয় (ভ্যাটসহ) রবির ১ জিবির জন্য ৩১৬ টাকা, গ্রামীণফোনের ১ জিবির জন্য ৩২৯ টাকা (দুই গিগার জন্য ৪১৯ টাকা)। বাংলালিংকের ইন্টারনেটের জন্য দিতে হয় ৩১৭ টাকা। টেলিটকের ১ গিগা ইন্টারনেট কিনতে গ্রাহককে গুনতে হয় ২৭৫ টাকা (ভ্যাট ছাড়া)।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মোবাইল অপারেটরগুলোর সংগঠন অ্যামটবের মহাসচিব ও প্রধান নির্বাহী টিআইএম নূরুল কবির বলেন, গ্রাহককে উৎসাহ দেওয়ার জন্য এটা করা হচ্ছে। যেন সবাই সময় মতো সিম নিবন্ধন করেন। অনেকেই ‘করছি’, ‘করব’ বলে সময় পার করছেন। মূলত তাদের আকৃষ্ট করতেই এই অফার দেওয়া হচ্ছে।  

বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিসিএল) সূত্রে জানা গেছে, সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে বর্তমানে দেশে আসছে ২০০ গিগা ব্যান্ডউইথ। এর মধ্যে ১১১ গিগার বেশি ব্যবহার হচ্ছে। অন্যদিকে আইটিসিগুলো (ইন্টারন্যাশনাল টেরিস্ট্রিয়াল ক্যাবল) ভারত থেকে ১৭০-১৮০ গিগা ব্যান্ডউইথ আমদানি করছে। আইটিসিগুলোর চেয়েও কম দামে বিএসসিসিএল ব্যান্ডউইথ বিক্রি করা শুরু করেছে সম্প্রতি। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মনোয়ার হোসেন বলেন, বর্তমানে ১ মেগা ব্যান্ডউইথ বিক্রি হচ্ছে ৬২৫ টাকায়।

যদিও এই টাকা দিয়ে ব্যান্ডউইথ কিনতে পারবেন ১০ গিগার বেশি ব্যান্ডউইথ যারা কিনবেন তারাই। দেখা গেছে, এই পরিমাণ ব্যান্ডউইথ কেনার সক্ষমতা কেবল মোবাইলফোন অপারেটরগুলোরই রয়েছে।

অন্যদিকে, বিএসসিসিএল আইআইজিগুলোর কাছে ১ মেগা ব্যান্ডউইথ বিক্রি করে ৬২৫ থেকে ৯০০ টাকার মধ্যে। এদিকে, ‘লাস্ট মাইল ক্যাবল’ অর্থাৎ ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে এই পরিমাণ ব্যান্ডউইথ বিক্রি করেন ১ হাজার ৮০ টাকায়। ১ মেগা ব্যান্ডউইথের দাম সাধারণ ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের জন্য ৬২৫ টাকা নয় বরং ১ হাজার ৮০ টাকা। এই টাকার সঙ্গে যুক্ত হয় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মী, ব্যবস্থাপনা, অফিস ভাড়াসহ প্রায় ১৫টি উপাদান। এর সঙ্গে মুনাফা যুক্ত হয়ে তা ঘাড়ে চাপে গ্রাহকের। মোবাইলফোন অপারেটরগুলোর সঙ্গে এসব উপাদান যুক্ত হলেও তারা ব্যান্ডউইথ কেনে প্রায় অর্ধেক দামে। অথচ সাধারণ গ্রাহকের কাছ থেকে অপারেটরগুলো নেয় চড়া দাম।

আরও পড়তে পারেন: তিন মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৮ হাজার ৪০ কোটি টাকা

 

নাম ও পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে একটি মোবাইল অপারেটরের শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, সব অপারেটরেরই একটা ব্যবসায়িক টার্গেট থাকে। সেই টার্গেট পূরণ করতে এটা করা হয়ে থাকে। মূল দাম এবং ছাড়কৃত দামের মধ্যে গড় করেই আমরা মুনাফা বের করে থাকি।

জানতে চাইলে ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন আইএসপিএবির সভাপতি এম এ হাকিম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, মোবাইলফোন অপারেটররা স্পিড (গতি) বিক্রি করছে না, ইন্টারনেটের ভলিউম বিক্রি করছে। ডাটা ক্যাপিং করছে ওরা। স্পিড বাড়িয়ে যদি ডাটা ক্যাপিং না করে তাহলে তারা এটা করতে পারবে না। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, ধরা যাক কেউ একজন ইউটিউব দেখবেন। ইউটিউব দেখতে তার ৪ গিগা ব্যান্ডউইথ লাগবে। অপারেটর তার কাছে ৪ বা ৫ গিগার একটা প্যাকেজ বিক্রি করবে। এটাই ডাটা ক্যাপিং। তিনি বলেন, অনেকের অনেক অলস ব্যান্ডউইথ পড়ে থাকে। তখন অপারেটররা চায় যতটুকু পারা যায় বাজার থেকে টাকা তুলে নিতে। মোবাইলফোন অপারেটররা একটা টাইম ডিউরেশন ঠিক করে এখন কম দামে ইন্টারনেট বিক্রি করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাদের ধারণা কেউ ২৪ ঘণ্টা ইন্টারনেট ব্যবহার করে না। ফলে তাদের প্যাকেজ ঠিক করতে সুবিধা হয়। আসলে গ্রাহককে চমক দিতেই অপারেটররা এই কাজ করছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

/এমএনএইচ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ব্রিটেনে আশ্রয় আবেদন বাতিল, বাংলাদেশিদের দ্রুত ফেরত পাঠাতে চুক্তি
ব্রিটেনে আশ্রয় আবেদন বাতিল, বাংলাদেশিদের দ্রুত ফেরত পাঠাতে চুক্তি
গাইবান্ধায় আগুনে পুড়ে ছাই ১০ দোকান
গাইবান্ধায় আগুনে পুড়ে ছাই ১০ দোকান
আজ বিশ্ব টেলিযোগাযোগ ও তথ্য সংঘ দিবস
আজ বিশ্ব টেলিযোগাযোগ ও তথ্য সংঘ দিবস
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে নিহত বৈমানিক আসিম জাওয়াদের পরিবারের সাক্ষাৎ
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে নিহত বৈমানিক আসিম জাওয়াদের পরিবারের সাক্ষাৎ
সর্বাধিক পঠিত
সিলেটে বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
সিলেটে বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
ফুল দিয়ে বরণ, রিট দিয়ে শুরু কোন্দল!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিফুল দিয়ে বরণ, রিট দিয়ে শুরু কোন্দল!
এমপিও আবেদন সরাসরি অধিদফতরে পাঠানো যাবে না
এমপিও আবেদন সরাসরি অধিদফতরে পাঠানো যাবে না
এডিপি: সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাচ্ছে যে ১০ প্রকল্প
এডিপি: সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাচ্ছে যে ১০ প্রকল্প
জাহাজে ওঠার পর কোরআনের সুরা শুনিয়ে দস্যুদের নিবৃত্ত করা হয়
জাহাজে ওঠার পর কোরআনের সুরা শুনিয়ে দস্যুদের নিবৃত্ত করা হয়